শেয়ারবাজার থেকে অর্থ উত্তোলনের অপেক্ষায় থাকা একমি পেস্টিসাইডস বিজনেস আওয়ারে সোমবার (০৪ অক্টোবর) প্রকাশিত “প্রতারক নিরীক্ষকের নিরীক্ষা দিয়ে শেয়ারবাজার থেকে অর্থ উত্তোলনের অপেক্ষায় একমি পেস্টিসাইডস” শীর্ষক সংবাদের প্রতিবাদ জানিয়েছে। ওইদিন সকালে সংবাদ প্রকাশের পরে বিকালে অফিসে এসে প্রতিবাদলিপি দিয়ে গেছে। অথচ কোম্পানি কর্তৃপক্ষের সঙ্গে দুই সপ্তাহের বেশি যোগাযোগ করলেও নানা তালবাহানার মাধ্যমে সংবাদ প্রকাশের আগে কোন ধরনের মন্তব্য প্রদান করেনি।
প্রতিবাদলিপিতে একমি পেস্টিসাইডস জানিয়েছে, সর্বশেষ অডিটর হিসেবে রমেন্দ্র নাথ বসাক ২০২০ সালের ৩০ জুনের আর্থিক হিসাবে গত ১৮ নভেম্বও সাক্ষর করেন। অথচ নিরীক্ষকদের রেগুলেটর প্রতিষ্ঠান আইসিএবির কাউন্সিল তার বিরুদ্ধে চলতি বছরের ২২ জুন ব্যবস্থা নেয়। তাদের পদক্ষেপ নেওয়ার সঙ্গে আমাদের অডিট রিপোর্টটির ব্যবধান ৭ মাসেরও বেশি। তাছাড়া রমেন্দ্র নাথ সিলভার কম্পোজিট নামে একটি প্রতিষ্ঠানের ২টি অডিট রিপোর্ট স্বাক্ষর ও ইস্যু করেন। যার পরিপ্রেক্ষিতে আইসিএবি ব্যবস্থা নেয়। এর সাথে আমাদের কোম্পানির অডিট রিপোর্ট স্বাক্ষর ও ইস্যুর কোন সম্পর্ক নাই।
এছাড়া রমেন্দ্র নাথের ফার্ম এখনো বিএসইসির নির্ধারিত ও অনুমোদিত প্যানেল অডিটরস তালিকায় আছেন। এদিকে রমেন্দ্র নাথ বিগত ৩০ জুন আইসিএবির সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে একটি রিট করেছেন। যেটি সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশক্রমে হাইকোর্টে বিচারাধীন অবস্থায় আছে। অথচ আপনাদের প্রতিনিধি কোনোরূপ যাচাই-বাছাই ব্যাতিরেকেই ভুল ও অসত্য সংবাদটি আপনার প্রকাশিত অনলাইন পোর্টালে প্রকাশ করল, তাহা আমাদের বোধগম্য না। ইহা নিতান্তই আমাদের নিকট অনভিপ্রেত ও অনাকাক্সিক্ষত। আমরা এই ভুল, অসত্য, মিথ্যা, বানোয়াট ও ভিত্তিহীন সংবাদের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই।
প্রতিবেদকের বক্তব্য
ভালো কাজের জন্য কোন নিরীক্ষা ফার্মের নিরীক্ষা কাজে আইসিএবির নিষেধাজ্ঞার নজির আছে কিনা, তা জানা নেই। নিশ্চয় প্রতারনা, বিতর্কিত বা বেআইনী কাজের জন্যই আইসিএবি তার সদস্যদের নিষেধাজ্ঞা দিয়ে থাকে। সিলভা কম্পোজিটে এ জাতীয় কাজের জন্যই রমেন্দ্র নাথ বসাকের নিরীক্ষায় নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে। যে নিরীক্ষক কোম্পানিটির একই সময়ের দুই রকম অ্যাকাউন্টস নিরীক্ষা করেছে এবং সঠিক বলে সার্টিফিকেট দিয়েছে। যা দেশের ইতিহাসে নজিরবিহীন ঘটনা। এই জঘন্যতম কাজের জন্য তার নিরীক্ষা কাজের উপর ৫ বছরের নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে।
এমনই একজন বিতর্কিত নিরীক্ষক দিয়ে নিরীক্ষা কাজ করিয়েছে একমি পেস্টিসাইডস। যে সিলভার কম্পোজিটের ওয়ান ব্যাংকের কাছে জমা দেয়া ২০১৮-১৯ হিসাব বছরে একটি আর্থিক প্রতিবেদনে আয় ৪৯৯ কোটি ৭৯ লাখ টাকা এবং আইএফআইসি ব্যাংকের কাছে জমা দেয়া একই বছরের আরেকটি আর্থিক প্রতিবেদনে দেখানো ৭৩৪ কোটি ১৭ লাখ টাকার আয়ের হিসাবে সার্টিফাইড করেছেন। কোম্পানি ও নিরীক্ষক পরস্পরের যোগসাজশে ইচ্ছাকৃতভাবে একই সময়ের দুটি নিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদন তৈরি করেছে এবং ব্যাংক ও এনবিআরের কাছ থেকে অবৈধ সুবিধা নেয়ার জন্য করা হয়েছে বলে মনে করে এফআরসি। যে নিরীক্ষকের এই নিজরবিহীন কাজের বিষয়টি বিভিন্ন গণমাধ্যমে গুরুত্বসহকারে প্রকাশ করাও হয়েছে।
এদিকে একজন যেদিন দোষী প্রমাণিত হয়, সেদিন থেকেই যে অপকর্ম করেন তা নয়। রমেন্দ্র নাথ আরও আগে থেকেই অপকর্মের সঙ্গে জড়িত। এই নিরীক্ষক একমি পেস্টিসাইডসের নিরীক্ষার আগেই সিলভার ২০১৮-১৯ অর্থবছরের আর্থিক হিসাব নিরীক্ষায় জালিয়াতি করেছেন।
তাই এমন বিতর্কিত নিরীক্ষক দিয়ে একমি পেস্টিসাইডসের নিরীক্ষা শতভাগ সঠিক হয়েছে, বলা কঠিন। যে নিরীক্ষক একই কোম্পানির দুই রকম রকম আর্থিক হিসাব নিরীক্ষা করতে পারে, তাকে দিয়ে ব্যক্তিস্বার্থে কোন কাজ করানো অসম্ভব হওয়ার কথা না। তবে বিভিন্ন কোম্পানির ন্যায় বিনিয়োগকারীদের স্বার্থে একমি পেস্টিসাইডসও শেয়ারবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন প্রথম শ্রেণীর নিরীক্ষক দিয়ে পূণঃরায় নিরীক্ষা করে কোম্পানির আর্থিক হিসাবের সত্যতা যাচাই করতে পারেন।
এদিকে যাচাই-বাছাই ছাড়াই ভুল সংবাদ প্রকাশ করা হয়েছে বলে দাবি করলেও এ বিষয়ে জানতে একমি পেস্টিসাইডসের প্রধান অর্থ কর্মকর্তা (সিএফও) সেলিম রেজার সঙ্গে কয়েক দফায় যোগাযোগ করা হয়। তিনি গত দুই সপ্তাহের বেশি সময় ধরে নানা তালবাহানা করেন। কিন্তু তারপরেও তিনি কোন মন্তব্য দেননি। যা প্রকাশিত সংবাদেও তুলে ধরা হয়েছে।
সেলিম রেজা গত ১৯ সেপ্টেম্বরে ইস্যু ম্যানেজার প্রতিষ্ঠান শাহজালাল ইক্যুইটি ম্যানেজমেন্টে দেখা করতে বললেও ওইদিন কোন মন্তব্য না করে পরে জানাবেন বলে জানান। এরপরে ২৭ সেপ্টেম্বর একই প্রতিষ্ঠানে দুপুর ৩টায় যেতে বললেও তিনি ওইদিন দেখা করেননি। এরপরে কোম্পানিতে ২৮ সেপ্টেম্বর সাক্ষাত করতে বলেন। কিন্তু ওইদিন কোন মন্তব্য দেন না। তবে লিখিত পাঠিয়ে দেবেন বলে জানান। কিন্তু এখন পর্যন্ত পাঠাননি।