ঢাকা , বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

শিক্ষাকার্যক্রম আন্তর্জাতিক মানসম্মত হলেই সার্বিক উন্নয়ন ত্বরান্বিত হবে

  • পোস্ট হয়েছে : ০৯:৫৫ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৭ অক্টোবর ২০২১
  • 1

বিজনেস আওয়ার : শিক্ষা জাতির মেরুদণ্ড। শিক্ষার উন্নয়ন মানে জাতির উন্নয়ন। যে দেশের শিক্ষা ব্যবস্থা যত উন্নত সে দেশও তত উন্নত। শিক্ষা ব্যবস্থার উন্নয়ন নির্ভর করে শিক্ষা কার্যক্রম ও পাঠ্যক্রমের ধরন বাস্তবায়নের উপর।

শিক্ষা গবেষকবৃন্দ তাদের গবেষণার ফল স্বরূপ ধাপে ধাপে যে পদক্ষেপগুলো নিয়ে থাকেন তা যদি বাস্তবমুখী, বিজ্ঞান সম্মত, ব্যবহারিক হয়, তা যে কোন দেশের জন্য ইতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। বাংলাদেশে শিক্ষা ও শিক্ষাব্যবস্থা নিয়ে গবেষণা কিন্তু কম হয়নি, নানা সময়ে বিভিন্ন কমিশন গঠন করে নানাবিধ শিক্ষা কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়েছে। বাংলাদেশের শিক্ষা কার্যক্রমের বার বার পরিবর্তন ও পরিমার্জন প্রয়োজন হয়। সরকার পরিবর্তনের সাথে শিক্ষা নীতিও পরিবর্তন লক্ষ্য করা গেছে। তবে শিক্ষাব্যবস্থায় শিক্ষা কার্যক্রম যতদিন আন্তর্জাতিক মানসম্মত ও টেকসই না হবে ততদিন আমাদের দেশের সার্বিক উন্নয়নও ত্বরান্বিত হবে না।

শিক্ষা কার্যক্রম বা কারিকুলাম (Curriculum) আসলে কি বা আমাদের দেশে কি ধরনের শিক্ষা কার্যক্রম চালু আছে তা জানা আমাদের আবশ্যক। শিক্ষা কার্যক্রম বা কারিকুলাম বলতে কোন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান কর্তৃক নির্ধারিত শিক্ষা পরিকল্পনা, পাঠ্যক্রম প্রণয়ন, শ্রেণিবিন্যাস ও শিক্ষার মানদণ্ড নিরূপণকে বুঝায়। স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা কার্যক্রম ক্রমউন্নয়নশীল বিধায় তা বিভিন্ন রকমের হয়ে থাকে। এক কথায়, কারিকুলাম বলতে শিক্ষক তার ছাত্র-ছাত্রীদের বয়স, স্তর ও মানভেদে যে শিক্ষা পরিকল্পনা করে থাকেন তাকেই বুঝায়।

শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ধরন, স্তর ও মাধ্যম হিসাবে শিক্ষা কার্যক্রমে ভেদাভেদ থাকতে পারে। আমাদের দেশে নানা ধরনের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রয়েছে যেমন, সাধারণ শিক্ষা, মাদ্রাসা শিক্ষা ও কারিগরি শিক্ষা। আবার এসবেরই বিভিন্ন স্তর রয়েছে যেমন, প্রাক প্রথমিক, প্রাথমিক, মাধ্যমিক, উচ্চ মাধ্যমিক ও উচ্চতর শিক্ষাস্তর। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ধরন ও স্তর যাই হোক না কেন, এদের সাধারণ শিক্ষার মাধ্যম কিন্তু দুটি; একটি বাংলা ও অন্যটি ইংরেজি। ইংরেজি মাধ্যম শিক্ষা বাংলাদশে খুব জনপ্রিয় না হলেও ইদানীং অভিভাবকের মাঝে এ মাধ্যম সম্পর্কে জানার ব্যাপক কৌতূহল এবং আগ্রহ তৈরি হয়েছে। একসময় শুধুমাত্র উচ্চবিত্ত পরিবারের সন্তানেরা এই মাধ্যমে পড়াশুনা করত। কিন্তু এখন উচ্চ মধ্যবিত্ত, মধ্যবিত্ত এমনকি নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারও ইংরেজী মাধ্যমের স্কুলে তাদের সন্তানদের পড়ায়।

অভিভাবকরা কেন তাদের ছেলে-মেয়েকে ইংরেজি মাধ্যমে পড়াতে বেশি আগ্রহী হয়ে থাকে সেটি আমরা জানার চেষ্টা করিঃ

১। ইংরেজি মাধ্যম শিক্ষা কার্যক্রম মূলত বিশ্বখ্যাত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পরিচালিত আন্তর্জাতিক মান সম্পন্ন শিক্ষা কার্যক্রম।
২। সারা বিশ্বে এর গ্রহণযোগ্যতা আছে।
৩। ইংরেজি ভাষা এখন আন্তর্জাতিক যোগাযোগের সর্বাপেক্ষা জনপ্রিয় মাধ্যম।
৪। জ্ঞান-বিজ্ঞান চর্চার সবচেয়ে ব্যাপকভাবে প্রচলিত ভাষা এখন ইংরেজি।
৫। আন্তর্জাতিক অঙ্গনে আইন আদালতের ভাষা ইংরেজি।
৬। দেশে উচ্চ শিক্ষার ভাষাও ইংরেজি।
৭। দেশের সরকারি আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর পদ ও পদবী আন্তর্জাতিক ভাবে স্বীকৃত ইংরেজি।
৮। ব্যবসা-বাণিজ্যে ও আমদানি-রপ্তানিতে ভাব প্রকাশ ও লেনদেনের ভাষা ইংরেজি।
৯। কম্পিউটার, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তিতে সকল ডিভাইস ও যন্ত্রাংশের নামও ইংরেজি।
১০। মাতৃভাষার পাশাপাশি বিশ্বের প্রায় সকল দেশের দ্বিতীয় ভাষা ইংরেজি।
১১। যারা দেশে উচ্চমর্যাদার চাকরি বা বিদেশে সেটেল হতে চায় তারাও ইংরেজি মাধ্যমে শিক্ষা নিতে চায়।
১২ । দেশে বিদেশে মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানিতে যারা কাজ করতে চায় তাদেরও ইংরেজি মাধ্যম পছন্দ।
১৩। চিকিৎসা শাস্ত্র, বিজ্ঞান, ইঞ্জিনিয়ারিং কিংবা হিসাব বিজ্ঞানের ভাষাও কিন্তু ইংরেজি।

এ কথা অস্বীকার করা যায় না যে, ইংরেজি এখন একটি বিশ্বজনীন ভাষা। এ ভাষা জানা যে অতি জরুরি সে কথা আমাদের কাছে স্পষ্ট। আধুনিক বিশ্বে উন্নতির শিখরে উঠতে গেলে ইংরেজি ভাষা জানার বিকল্প নেই। আর ইংরেজিতে পারদর্শী হতে গেলে আমাদের ছেলে মেয়েদের অবশ্যই ইংরেজি মাধ্যমে পড়ালেখা করতে হবে এবং তা হওয়া উচিত ক্যামব্রিজ, এডেক্সেল, আইবি ইত্যাদি কারিকুলামের যে কোন একটিতে। কারণ এসব কারিকুলাম বিশ্বব্যাপী একযোগে একই ধারায়, একই শিক্ষাক্রম বা পাঠ্যক্রমে শিক্ষাদান করা হয়। তবে আইবি কারিকুলাম অনেক বেশি ব্যয়বহুল । আমাদের দেশে দুই তিনটি স্কুল আইবি কারিকুলামে পাঠদান করে। আমাদের দেশসহ বিশ্বের বেশিরভাগ দেশে ইদানিং ক্যামব্রিজ কারিকুলাম বেশি জনপ্রিয়।

ইংরেজি মাধ্যম শিক্ষা কার্যক্রমে পাঠদান, পরীক্ষা কার্যক্রম ও মূল্যায়ন প্রক্রিয়া আন্তর্জাতিক মান অনুসরণ করে সম্পন্ন করা হয়ে থাকে। বাংলা মাধ্যমে যেখানে মুখস্থ বিদ্যার উপর জোর দেয়া হয়, সেখানে ইংরেজি মাধ্যমে উদ্ভাবনী এবং সৃজনশীলতার উপর জোর দেয়া হয়। বাংলা মাধ্যম যেখানে গতানুগতিক; ইংরেজী মাধ্যম সেখানে বিশ্বের প্রথম সারির বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক প্রতিনিয়ত পরিবর্তনশীল এবং বিজ্ঞান সম্মত।

শিল্প বিপ্লবের পর এবং গত ১৫০ বছরের বিশ্ব ইতিহাস পর্যালাচনা করলে দেখা যাবে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় ব্রিটেন এবং আমেরিকাকে অনুসরন করছে। আধুনিক নেতৃত্ব এবং জ্ঞান ব্যবস্থাপনার জন্যে। সমাজ সংস্কার, গবেষনা, বৈজ্ঞানিক আবিষ্কার, সম্পদ ব্যাবস্থাপনা, সামাজিক অবকাঠামো উন্নয়ন, চিকিৎসা শাস্ত্রের উদ্ভাবন অধিকাংশই ঘটে চলেছে ইংরেজি কথা বলা দেশে।

ব্রিটিশ শাসনের সময়ে আমাদের এই পাক-ভারত উপমহাদেশে ইংরেজি মাধ্যম শিক্ষা কার্যক্রম শুরু হয় যা আজও বিদ্যমান। এস এফ এক্স গ্রীন হেরাল্ড ইন্টারন্যাশনাল স্কুল বাংলাদেশের প্রথম ইংরেজি মাধ্যম স্কুল, যা ১৯১২ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। বর্তমানে দেশে প্রায় ১৫০ এর বেশি ইংরেজি মাধ্যম স্কুলে প্রায় ৪ লাখ ছাত্র -ছাত্রী আছে। আমাদের দেশের ছাত্র-ছাত্রীরা উন্নত ভবিষ্যত গড়ার লক্ষ্যে ইংরেজি মাধ্যম স্কুলে পড়াশুনা করে। অভিভাবকরা তাদের কষ্টার্জিত অর্থ বিনিয়োগ করে সন্তানদেরকে আন্তর্জাতিক মান সম্পন্ন নাগরিক করে গড়ে তুলেন। দুঃখজনকভাবে এখনও আমাদের সরকারের ইংরেজি মাধ্যম স্কুলে কোনো বিনিয়োগ নেই। সরকারের উচিত ইংরেজি মাধ্যম শিক্ষায় বিনিয়োগ করা। ২০১৭ সালের গেজেট অনুযায়ী ইংরেজি মাধ্যম স্কুলগুলো চলছে কিনা তা তদারক করা। টিউশন ফি যৌক্তিক পর্যায়ে নামিয়ে আনা। বিশ্বমানের ইংরেজি মাধ্যমে পড়াশোনা করা শিক্ষার্থীরা যেনো অবাধে দেশেও উচ্চ শিক্ষা এবং সরকারি-বেসরকারি চাকরির সুযোগ পায় সেই ব্যবস্থা করা। আশা করি সরকার বাস্তব সম্মত পদক্ষেপ নিয়ে বিশ্বমানের শিক্ষায় শিক্ষিত জনশক্তি দিয়ে দেশকে সারা বিশ্বে উন্নয়নের রোল মডেল হিসাবে দাঁড় করাবে।

এ কে এম আশরাফুল হক
সভাপতি, বাংলাদেশ ইংলিশ মিডিয়াম স্কুল পেরেন্টস ফোরাম
চেয়ারম্যান, স্টেপিং-স্টোন ইন্টারন্যাশনাল স্কুল বাংলাদেশ

ফেসবুকের মাধ্যমে আপনার মতামত জানান:
ট্যাগ :

আপনার মতামত লিখুন

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার মেইলে তথ্য জমা করুন

শিক্ষাকার্যক্রম আন্তর্জাতিক মানসম্মত হলেই সার্বিক উন্নয়ন ত্বরান্বিত হবে

পোস্ট হয়েছে : ০৯:৫৫ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৭ অক্টোবর ২০২১

বিজনেস আওয়ার : শিক্ষা জাতির মেরুদণ্ড। শিক্ষার উন্নয়ন মানে জাতির উন্নয়ন। যে দেশের শিক্ষা ব্যবস্থা যত উন্নত সে দেশও তত উন্নত। শিক্ষা ব্যবস্থার উন্নয়ন নির্ভর করে শিক্ষা কার্যক্রম ও পাঠ্যক্রমের ধরন বাস্তবায়নের উপর।

শিক্ষা গবেষকবৃন্দ তাদের গবেষণার ফল স্বরূপ ধাপে ধাপে যে পদক্ষেপগুলো নিয়ে থাকেন তা যদি বাস্তবমুখী, বিজ্ঞান সম্মত, ব্যবহারিক হয়, তা যে কোন দেশের জন্য ইতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। বাংলাদেশে শিক্ষা ও শিক্ষাব্যবস্থা নিয়ে গবেষণা কিন্তু কম হয়নি, নানা সময়ে বিভিন্ন কমিশন গঠন করে নানাবিধ শিক্ষা কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়েছে। বাংলাদেশের শিক্ষা কার্যক্রমের বার বার পরিবর্তন ও পরিমার্জন প্রয়োজন হয়। সরকার পরিবর্তনের সাথে শিক্ষা নীতিও পরিবর্তন লক্ষ্য করা গেছে। তবে শিক্ষাব্যবস্থায় শিক্ষা কার্যক্রম যতদিন আন্তর্জাতিক মানসম্মত ও টেকসই না হবে ততদিন আমাদের দেশের সার্বিক উন্নয়নও ত্বরান্বিত হবে না।

শিক্ষা কার্যক্রম বা কারিকুলাম (Curriculum) আসলে কি বা আমাদের দেশে কি ধরনের শিক্ষা কার্যক্রম চালু আছে তা জানা আমাদের আবশ্যক। শিক্ষা কার্যক্রম বা কারিকুলাম বলতে কোন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান কর্তৃক নির্ধারিত শিক্ষা পরিকল্পনা, পাঠ্যক্রম প্রণয়ন, শ্রেণিবিন্যাস ও শিক্ষার মানদণ্ড নিরূপণকে বুঝায়। স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা কার্যক্রম ক্রমউন্নয়নশীল বিধায় তা বিভিন্ন রকমের হয়ে থাকে। এক কথায়, কারিকুলাম বলতে শিক্ষক তার ছাত্র-ছাত্রীদের বয়স, স্তর ও মানভেদে যে শিক্ষা পরিকল্পনা করে থাকেন তাকেই বুঝায়।

শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ধরন, স্তর ও মাধ্যম হিসাবে শিক্ষা কার্যক্রমে ভেদাভেদ থাকতে পারে। আমাদের দেশে নানা ধরনের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রয়েছে যেমন, সাধারণ শিক্ষা, মাদ্রাসা শিক্ষা ও কারিগরি শিক্ষা। আবার এসবেরই বিভিন্ন স্তর রয়েছে যেমন, প্রাক প্রথমিক, প্রাথমিক, মাধ্যমিক, উচ্চ মাধ্যমিক ও উচ্চতর শিক্ষাস্তর। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ধরন ও স্তর যাই হোক না কেন, এদের সাধারণ শিক্ষার মাধ্যম কিন্তু দুটি; একটি বাংলা ও অন্যটি ইংরেজি। ইংরেজি মাধ্যম শিক্ষা বাংলাদশে খুব জনপ্রিয় না হলেও ইদানীং অভিভাবকের মাঝে এ মাধ্যম সম্পর্কে জানার ব্যাপক কৌতূহল এবং আগ্রহ তৈরি হয়েছে। একসময় শুধুমাত্র উচ্চবিত্ত পরিবারের সন্তানেরা এই মাধ্যমে পড়াশুনা করত। কিন্তু এখন উচ্চ মধ্যবিত্ত, মধ্যবিত্ত এমনকি নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারও ইংরেজী মাধ্যমের স্কুলে তাদের সন্তানদের পড়ায়।

অভিভাবকরা কেন তাদের ছেলে-মেয়েকে ইংরেজি মাধ্যমে পড়াতে বেশি আগ্রহী হয়ে থাকে সেটি আমরা জানার চেষ্টা করিঃ

১। ইংরেজি মাধ্যম শিক্ষা কার্যক্রম মূলত বিশ্বখ্যাত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পরিচালিত আন্তর্জাতিক মান সম্পন্ন শিক্ষা কার্যক্রম।
২। সারা বিশ্বে এর গ্রহণযোগ্যতা আছে।
৩। ইংরেজি ভাষা এখন আন্তর্জাতিক যোগাযোগের সর্বাপেক্ষা জনপ্রিয় মাধ্যম।
৪। জ্ঞান-বিজ্ঞান চর্চার সবচেয়ে ব্যাপকভাবে প্রচলিত ভাষা এখন ইংরেজি।
৫। আন্তর্জাতিক অঙ্গনে আইন আদালতের ভাষা ইংরেজি।
৬। দেশে উচ্চ শিক্ষার ভাষাও ইংরেজি।
৭। দেশের সরকারি আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর পদ ও পদবী আন্তর্জাতিক ভাবে স্বীকৃত ইংরেজি।
৮। ব্যবসা-বাণিজ্যে ও আমদানি-রপ্তানিতে ভাব প্রকাশ ও লেনদেনের ভাষা ইংরেজি।
৯। কম্পিউটার, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তিতে সকল ডিভাইস ও যন্ত্রাংশের নামও ইংরেজি।
১০। মাতৃভাষার পাশাপাশি বিশ্বের প্রায় সকল দেশের দ্বিতীয় ভাষা ইংরেজি।
১১। যারা দেশে উচ্চমর্যাদার চাকরি বা বিদেশে সেটেল হতে চায় তারাও ইংরেজি মাধ্যমে শিক্ষা নিতে চায়।
১২ । দেশে বিদেশে মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানিতে যারা কাজ করতে চায় তাদেরও ইংরেজি মাধ্যম পছন্দ।
১৩। চিকিৎসা শাস্ত্র, বিজ্ঞান, ইঞ্জিনিয়ারিং কিংবা হিসাব বিজ্ঞানের ভাষাও কিন্তু ইংরেজি।

এ কথা অস্বীকার করা যায় না যে, ইংরেজি এখন একটি বিশ্বজনীন ভাষা। এ ভাষা জানা যে অতি জরুরি সে কথা আমাদের কাছে স্পষ্ট। আধুনিক বিশ্বে উন্নতির শিখরে উঠতে গেলে ইংরেজি ভাষা জানার বিকল্প নেই। আর ইংরেজিতে পারদর্শী হতে গেলে আমাদের ছেলে মেয়েদের অবশ্যই ইংরেজি মাধ্যমে পড়ালেখা করতে হবে এবং তা হওয়া উচিত ক্যামব্রিজ, এডেক্সেল, আইবি ইত্যাদি কারিকুলামের যে কোন একটিতে। কারণ এসব কারিকুলাম বিশ্বব্যাপী একযোগে একই ধারায়, একই শিক্ষাক্রম বা পাঠ্যক্রমে শিক্ষাদান করা হয়। তবে আইবি কারিকুলাম অনেক বেশি ব্যয়বহুল । আমাদের দেশে দুই তিনটি স্কুল আইবি কারিকুলামে পাঠদান করে। আমাদের দেশসহ বিশ্বের বেশিরভাগ দেশে ইদানিং ক্যামব্রিজ কারিকুলাম বেশি জনপ্রিয়।

ইংরেজি মাধ্যম শিক্ষা কার্যক্রমে পাঠদান, পরীক্ষা কার্যক্রম ও মূল্যায়ন প্রক্রিয়া আন্তর্জাতিক মান অনুসরণ করে সম্পন্ন করা হয়ে থাকে। বাংলা মাধ্যমে যেখানে মুখস্থ বিদ্যার উপর জোর দেয়া হয়, সেখানে ইংরেজি মাধ্যমে উদ্ভাবনী এবং সৃজনশীলতার উপর জোর দেয়া হয়। বাংলা মাধ্যম যেখানে গতানুগতিক; ইংরেজী মাধ্যম সেখানে বিশ্বের প্রথম সারির বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক প্রতিনিয়ত পরিবর্তনশীল এবং বিজ্ঞান সম্মত।

শিল্প বিপ্লবের পর এবং গত ১৫০ বছরের বিশ্ব ইতিহাস পর্যালাচনা করলে দেখা যাবে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় ব্রিটেন এবং আমেরিকাকে অনুসরন করছে। আধুনিক নেতৃত্ব এবং জ্ঞান ব্যবস্থাপনার জন্যে। সমাজ সংস্কার, গবেষনা, বৈজ্ঞানিক আবিষ্কার, সম্পদ ব্যাবস্থাপনা, সামাজিক অবকাঠামো উন্নয়ন, চিকিৎসা শাস্ত্রের উদ্ভাবন অধিকাংশই ঘটে চলেছে ইংরেজি কথা বলা দেশে।

ব্রিটিশ শাসনের সময়ে আমাদের এই পাক-ভারত উপমহাদেশে ইংরেজি মাধ্যম শিক্ষা কার্যক্রম শুরু হয় যা আজও বিদ্যমান। এস এফ এক্স গ্রীন হেরাল্ড ইন্টারন্যাশনাল স্কুল বাংলাদেশের প্রথম ইংরেজি মাধ্যম স্কুল, যা ১৯১২ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। বর্তমানে দেশে প্রায় ১৫০ এর বেশি ইংরেজি মাধ্যম স্কুলে প্রায় ৪ লাখ ছাত্র -ছাত্রী আছে। আমাদের দেশের ছাত্র-ছাত্রীরা উন্নত ভবিষ্যত গড়ার লক্ষ্যে ইংরেজি মাধ্যম স্কুলে পড়াশুনা করে। অভিভাবকরা তাদের কষ্টার্জিত অর্থ বিনিয়োগ করে সন্তানদেরকে আন্তর্জাতিক মান সম্পন্ন নাগরিক করে গড়ে তুলেন। দুঃখজনকভাবে এখনও আমাদের সরকারের ইংরেজি মাধ্যম স্কুলে কোনো বিনিয়োগ নেই। সরকারের উচিত ইংরেজি মাধ্যম শিক্ষায় বিনিয়োগ করা। ২০১৭ সালের গেজেট অনুযায়ী ইংরেজি মাধ্যম স্কুলগুলো চলছে কিনা তা তদারক করা। টিউশন ফি যৌক্তিক পর্যায়ে নামিয়ে আনা। বিশ্বমানের ইংরেজি মাধ্যমে পড়াশোনা করা শিক্ষার্থীরা যেনো অবাধে দেশেও উচ্চ শিক্ষা এবং সরকারি-বেসরকারি চাকরির সুযোগ পায় সেই ব্যবস্থা করা। আশা করি সরকার বাস্তব সম্মত পদক্ষেপ নিয়ে বিশ্বমানের শিক্ষায় শিক্ষিত জনশক্তি দিয়ে দেশকে সারা বিশ্বে উন্নয়নের রোল মডেল হিসাবে দাঁড় করাবে।

এ কে এম আশরাফুল হক
সভাপতি, বাংলাদেশ ইংলিশ মিডিয়াম স্কুল পেরেন্টস ফোরাম
চেয়ারম্যান, স্টেপিং-স্টোন ইন্টারন্যাশনাল স্কুল বাংলাদেশ

ফেসবুকের মাধ্যমে আপনার মতামত জানান: