বিজনেস আওয়ার প্রতিবেদক : শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত ২২ কোম্পানির ৬১ পরিচালককে ন্যূনতম ২ শতাংশ শেয়ার ধারনে ৪৫ দিনের আলটিমেটাম দিয়েছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। অন্যথায় পরিচালক পদ থেকে অপসারন করা হবে। এ নিয়ে গত ২ জুলাই ওইসব পরিচালককে চিঠি দিয়েছে নিয়ন্ত্রক সংস্থাটি।
২০১১ সালের ২২ ডিসেম্বর শেয়ারবাজার ও বিনিয়োগকারীদের স্বার্থে পরিচালকদের ব্যক্তিগতভাবে ২ শতাংশ ও সম্মিলিতভাবে ৩০ শতাংশ শেয়ার ধারন বাধ্যতামূলক করে নির্দেশনা দেয় সাবেক ড. এম খায়রুল হোসেনের নেতৃত্বাধীন কমিশন। এমন নির্দেশনা বিশ্বের কোথাও নেই এবং কোম্পানি আইনের সঙ্গেও সাংঘর্ষিক। তারপরেও ওই কমিশন নির্দেশনাটি দিয়েছিল বাজারে সাময়িক চাহিদা তৈরী করার জন্য। যে কারনে ওই নির্দেশনাটি কয়েক মাস বাস্তবায়ন করতে চেয়েছিল। কিন্তু ওই কমিশন পরবর্তীতে নির্দেশনাটি আর প্রত্যাহার করে নেয়নি।
শুরুতে এই নির্দেশনাটি নিয়ে কয়েকটি কোম্পানির পরিচালক উচ্চ-আদালতে মামলা করেছিলেন। ওইসময় শেয়ারবাজারের শোচণীয় অবস্থা ও বিএসইসির ২সিসি এর ক্ষমতাবলে ন্যূনতম শেয়ার ধারনের নির্দেশনাটি টিকে গিয়েছিল। যে কারনে ওইসময় পরিচালকদের আইনজীবী ড. কামাল বলেছিলেন, বিএসইসিকে ২সিসি দ্ধারা সুপার সুপার পাওয়ারের অধিকার দেওয়া হয়েছে। অন্যথায় এই নির্দেশনাটি টিকত না।
বিএসইসির ন্যূনতম শেয়ার ধারনের নির্দেশনার শুরুতে বাজারে পরিচালকদের শেয়ার ক্রয়ের চাহিদাও বেড়েছিল। এছাড়া ওই নির্দেশনা পরিপালনে ব্যর্থ হয়ে আওয়ামীলীগের সাবেক সাধারন সম্পাদক আব্দুল জলিল মার্কেন্টাইল ব্যাংকের পরিচালক থেকে বাদ পড়েছিলেন। এমন অনেক পরিচালককে তখন পর্ষদ থেকে সড়ে যেতে হয়েছিল।
কয়েক মাসের জন্য ন্যূনতম শেয়ার ধারনের নির্দেশনা দেওয়ার কথা শুরুতে ভাবলেও পরবর্তীতে খায়রুল কমিশন আরও কঠোর হয়েছে। সম্মিলিতভাবে সব তালিকাভুক্ত কোম্পানির পরিচালকদের ৩০ শতাংশ শেয়ার ধারন করা বাস্তবে সম্ভব হবে না বলে তারাও নানা নির্দেশনা জুড়ে দিয়েছে। এছাড়া ২ শতাংশ শেয়ার ধারনে ব্যর্থদের ক্ষেত্রে কড়াকড়ি আরোপ করেছে।
সর্বশেষ ২০১৯ সালের ২১ মে উদ্যোক্তা/পরিচালকেরা সম্মিলিতভাবে ৩০ শতাংশ শেয়ার ধারন ছাড়া সংশ্লিষ্ট কোম্পানির বোনাস শেয়ারসহ কোনভাবে পরিশোধিত মূলধন বাড়াতে পারবে না বলে সিদ্ধান্ত নেয় বিগত কমিশন। এক্ষেত্রে কোম্পানি রাইট শেয়ার, আরপিও, একত্রীকরন করার ক্ষেত্রে অযোগ্য হবে। এছাড়া ৩০ শতাংশ শেয়ার ধারন ছাড়া কোন পরিচালক এবং উদ্যোক্তা ওই কোম্পানির শেয়ার বিক্রয় বা হস্তান্তর বা বন্ধক রাখতে পারবে না।
ওইদিন কমিশন সিদ্ধান্ত নেয়, স্বতন্ত্র পরিচালক ব্যতিত উদ্যোক্তা/পরিচালকদের সম্মিলিত ৩০ শতাংশ শেয়ার ধারনে ব্যর্থ কোম্পানিকে উভয় স্টক এক্সচেঞ্জে ট্রেডিং বোর্ডে পৃথক একটি ক্যাটাগরি গঠন করবে। এছাড়া কোন পরিচালকের ২ শতাংশ শেয়ার ধারনে ব্যর্থতার কারনে শূণ্য পদে ২ শতাংশ শেয়ার ধারন করে এমন শেয়ারহোল্ডারদের মধ্য হতে পরবর্তী ৩০ কার্যদিবসের মধ্যে পূরণ করতে হবে। আর কোন কোম্পানি বা প্রতিষ্ঠান, কোন তালিকাভুক্ত কোম্পানির প্রতি অন্যুন ২ শতাংশ শেয়ার ধারনের জন্য উক্ত কোম্পানি ব্যক্তিকে ওই তালিকাভুক্ত কোম্পানির জন্য পরিচালক মনোনীত করতে পারবে।
জানা গেছে, যে ২২ কোম্পানির পরিচালককে নোটিশ দেওয়া হয়েছে তার মধ্যে বেশির ভাগই বিমা খাতের কোম্পানি। কোম্পানিগুলো হলো- মার্কেন্টাইল ইনস্যুরেন্স, প্রাইম ইসলামী লাইফ ইনস্যুরেন্স, প্রগ্রেসিভ লাইফ ইনস্যুরেন্স, প্রভাতী ইনস্যুরেন্স, ইউনাইটেড এয়ার, ফু–ওয়াং সিরামিক, পূরবী জেনারেল ইনস্যুরেন্স, স্ট্যান্ডার্ড ইনস্যুরেন্স, ওয়াটা কেমিক্যালস, বাংলাদেশ ন্যাশনাল ইনস্যুরেন্স, প্যারামাউন্ট ইনস্যুরেন্স, এশিয়া ইনস্যুরেন্স, বাংলাদেশ জেনারেল ইনস্যুরেন্স, কন্টিনেন্টাল ইনস্যুরেন্স, দুলামিয়া কটন, ইস্টার্ন ইনস্যুরেন্স, এক্সিম ব্যাংক, ইমাম বাটন, ইনটেক লিমিটেড, কর্ণফুলী ইনস্যুরেন্স, কে অ্যান্ড কিউ, মেঘনা লাইফ ইনস্যুরেন্স,।
বিজনেস আওয়ার/০৫ জুলাই, ২০২০/আরএ