ঢাকা , রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

স্টক এক্সচেঞ্জের পরিচালকদের এতো মিটিং, কিন্তু ফলাফল….

দেশের প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) পরিচালনা পর্ষদের মিটিং নিয়ে ডিমিউচ্যুয়ালাইজেশনের পর থেকেই নানা খবর বাহিরে ছড়িয়েছে। স্বতন্ত্র পরিচালকেরা সভায় কোন ভূমিকা রাখেন না এবং নিস্ক্রিয় থাকেন বলে অভিযোগ আছে। এমনকি তারা শুধুমাত্র বোর্ড মিটিং ফি নেওয়ার জন্য অংশগ্রহণ করেন বলেও গুঞ্জন আছে। যাদের কেউ কেউ আবার বোর্ড মিটিংয়ে ঘুমিয়েও পড়েন।

স্টক এক্সচেঞ্জের উন্নয়নে ২০১৩ সালে মালিকানা থেকে ব্যবস্থাপনা (ডিমিউচ্যুয়ালাইজেশন) পৃথক করা হয়েছে। এতে স্বতন্ত্র পরিচালকদের আধিপাত্য ও সংখ্যাগরিষ্ঠতা দিয়ে এই আইন করা হয়েছে। এমনকি এখন স্টক এক্সচেঞ্জের পর্ষদে চেয়ারম্যান স্বতন্ত্র পরিচালক থেকে নিতে হয়। এছাড়া ১৩ পরিচালনা পর্ষদের আসনে ৭জনই স্বতন্ত্র। কিন্তু তাদের ভূমিকা এখনো শেয়ারহোল্ডার পরিচালকদের থেকে কম। এর পেছনে রয়েছে শেয়ারবাজার সর্ম্পক্যে তাদের অজ্ঞতা। যাতে ডিমিউচ্যুয়ালাইজেশন পরবর্তী ২ মেয়াদ বা ৬ বছর পার হয়ে গেলেও কোন উন্নতি হয়নি।

উভয় স্টক এক্সচেঞ্জেই নিয়মিত পরিচালনা পর্ষদের সভাসহ বিভিন্ন কমিটির মিটিং অনুষ্ঠিত হয়। এতে স্টক এক্সচেঞ্জের ব্যয়ের পাল্লা কম না। প্রতি বোর্ড মিটিংয়ে উভয় স্টক এক্সচেঞ্জ উপস্থিত পরিচালকদের ফিবাবদ ১০ হাজার করে সম্মানি দেয়। এছাড়া ডিএসই কমিটি মিটিংয়ে উপস্থিত পরিচালকদের ১০ হাজার টাকা ও সিএসই ৫ হাজার টাকা করে সম্মানি ফি দেয়। একইসঙ্গে ডিএসইর চেয়ারম্যানকে গাড়ি, ড্রাইভার, জ্বালানি খরচ দেওয়া হয়। কিন্তু এখনো মিটিং হয় গতানুগতিক। যাতে উন্নতি হয় না স্টক এক্সচেঞ্জের।

ডিএসইর এক সদস্য বিজনেস আওয়ারকে বলেন, নামে মাত্র ডিমিউচ্যুয়ালাইজেশন হয়েছে। এতে ডিএসইর কোন উপকার হয়নি। পর্ষদে চেয়ারম্যানসহ ৭জন স্বতন্ত্র পরিচালক থাকলেও তাদের সক্রিয় কোন ভূমিকা নেই। এখনো শেয়ারহোল্ডার পরিচালকদেরকেই সব বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে হয়। শেয়ারবাজার সর্ম্পক্যে স্বতন্ত্র পরিচালকদের বাস্তবিক জ্ঞানের অভাবের কারনে এমনটি হচ্ছে। যে কারনে তারা পর্ষদ সভায় এসে নিস্ক্রিয় থাকে। আর ফি নিয়ে চলে যায়। অথচ ডিমিউচ্যুয়ালাইজেশন করার উদ্দেশ্য এমন ছিল না।

আরও পড়ুন……
এখনো এফডিআর নির্ভর করে চলে স্টক এক্সচেঞ্জ
ডিএসইর এক ব্রোকারের থেকেও সিএসইর লেনদেন কম
শীর্ষ ৪ কর্মকর্তার পেছনে ডিএসইর মাসে ব্যয় ৩৩ লাখ টাকা, কিন্তু ফলাফল…

দেখা গেছে, ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) ২০১৮-১৯ অর্থবছরে পরিচালনা পর্ষদের সভা হয়েছে ২৩টি। এছাড়া পরিচালকদের বিভিন্ন কমিটির মধ্যে নমিনেশন অ্যান্ড রিমিউনারেশন কমিটির ১০টি, অডিট অ্যান্ড রিস্ক ম্যানেজমেন্ট কমিটির ৮টি, আপিলস কমিটির ৪টি, কনফ্লিক্ট মিটিগেশন কমিটির ৪টি এবং রেগুলেটরি অ্যাফেয়ার্স কমিটির ১৮টি মিটিং অনুষ্ঠিত হয়েছে।

ডিএসইর বোর্ড এবং বিভিন্ন কমিটির ২০১৮-১৯ অর্থবছরে মোট মিটিং হয়েছে ৯১টি। এতে ১২ পরিচালকের অংশগ্রহণ ছিল ৪৪৬ বার। এতে ফি বাবদ ব্যয় হয়েছে ৪৪ লাখ ৫৯ হাজার টাকা। এই ফির পেছনে ভ্যাট ও ট্যাক্সবাবদ ৮ লাখ ৮৭ হাজার ৯১৯ টাকা ব্যয় হয়েছে। যাতে মোট ব্যয় হয়েছে ৫৩ লাখ ৪৬ হাজার ৯১৯ টাকা। যার পরিমাণ ২০১৯-২০ অর্থবছরে বেড়ে হয়েছে ৭০ লাখ ৮২ হাজার টাকা।

স্টক এক্সচেঞ্জটিতে ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ২৩টি অর্থাৎ প্রতি মাসে গড়ে প্রায় ২টি করে বোর্ড মিটিং হয়েছে। এতো মিটিং হওয়ার পরেও উন্নতি নেই। এমন পরিস্থিতিতে তাদের এতো মিটিংয়ের কার্যকরিতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে অনেকের মনে।

ফির বাহিরেও পরিচালকদের পেছনে দুপুরের খাবার, নাস্তাসহ আরও আনুষাঙ্গিক ব্যয় হয়। এছাড়া স্টক এক্সচেঞ্জের অর্থে পরিচালকদের বিদেশ ভ্রমনও হয়। ডিএসইর ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ১ পরিচালকের সিঙ্গাপুর ভ্রমনে ৪ লাখ ৪০ হাজার টাকা ব্যয় হয়েছিল। এছাড়া ২০১৯-২০ অর্থবছরেও পরিচালকদের পেছনে বিদেশ ভ্রমনের ব্যয় আছে।

অন্যদিকে সিএসইতে ২০১৮-১৯ অর্থবছরে পরিচালনা পর্ষদের সভা হয়েছে ৯টি। এছাড়া পরিচালকদের বিভিন্ন কমিটির মধ্যে নমিনেশন অ্যান্ড রিমিউনারেশন কমিটির ৫টি, অডিট অ্যান্ড রিস্ক ম্যানেজমেন্ট কমিটির ৫টি, আপিলস কমিটির ৪টি, কনফ্লিক্ট মিটিগেশন কমিটির ৪টি এবং রেগুলেটরি অ্যাফেয়ার্স কমিটির ৪টি মিটিং অনুষ্ঠিত হয়েছে।

সিএসইর বোর্ড এবং বিভিন্ন কমিটির মিটিংয়ে ১২ পরিচালকের অংশগ্রহণ ফি বাবদ ব্যয় হয়েছে ১৫ লাখ ২০ হাজার ৫৬ টাকা। এই ফির পেছনে ভ্যাট ও ট্যাক্সবাবদ ১ লাখ ৯৪ হাজার ৬১৯ টাকা ব্যয় হয়েছে। যাতে মোট ব্যয় হয়েছে ১৭ লাখ ১৪ হাজার ৬৭৫ টাকা।

বিজনেস আওয়ার/০৬ জুলাই, ২০২০/আরএ

ফেসবুকের মাধ্যমে আপনার মতামত জানান:
ট্যাগ :

3 thoughts on “স্টক এক্সচেঞ্জের পরিচালকদের এতো মিটিং, কিন্তু ফলাফল….

আপনার মতামত লিখুন

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার মেইলে তথ্য জমা করুন

স্টক এক্সচেঞ্জের পরিচালকদের এতো মিটিং, কিন্তু ফলাফল….

পোস্ট হয়েছে : ১০:০১ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ৬ জুলাই ২০২০

দেশের প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) পরিচালনা পর্ষদের মিটিং নিয়ে ডিমিউচ্যুয়ালাইজেশনের পর থেকেই নানা খবর বাহিরে ছড়িয়েছে। স্বতন্ত্র পরিচালকেরা সভায় কোন ভূমিকা রাখেন না এবং নিস্ক্রিয় থাকেন বলে অভিযোগ আছে। এমনকি তারা শুধুমাত্র বোর্ড মিটিং ফি নেওয়ার জন্য অংশগ্রহণ করেন বলেও গুঞ্জন আছে। যাদের কেউ কেউ আবার বোর্ড মিটিংয়ে ঘুমিয়েও পড়েন।

স্টক এক্সচেঞ্জের উন্নয়নে ২০১৩ সালে মালিকানা থেকে ব্যবস্থাপনা (ডিমিউচ্যুয়ালাইজেশন) পৃথক করা হয়েছে। এতে স্বতন্ত্র পরিচালকদের আধিপাত্য ও সংখ্যাগরিষ্ঠতা দিয়ে এই আইন করা হয়েছে। এমনকি এখন স্টক এক্সচেঞ্জের পর্ষদে চেয়ারম্যান স্বতন্ত্র পরিচালক থেকে নিতে হয়। এছাড়া ১৩ পরিচালনা পর্ষদের আসনে ৭জনই স্বতন্ত্র। কিন্তু তাদের ভূমিকা এখনো শেয়ারহোল্ডার পরিচালকদের থেকে কম। এর পেছনে রয়েছে শেয়ারবাজার সর্ম্পক্যে তাদের অজ্ঞতা। যাতে ডিমিউচ্যুয়ালাইজেশন পরবর্তী ২ মেয়াদ বা ৬ বছর পার হয়ে গেলেও কোন উন্নতি হয়নি।

উভয় স্টক এক্সচেঞ্জেই নিয়মিত পরিচালনা পর্ষদের সভাসহ বিভিন্ন কমিটির মিটিং অনুষ্ঠিত হয়। এতে স্টক এক্সচেঞ্জের ব্যয়ের পাল্লা কম না। প্রতি বোর্ড মিটিংয়ে উভয় স্টক এক্সচেঞ্জ উপস্থিত পরিচালকদের ফিবাবদ ১০ হাজার করে সম্মানি দেয়। এছাড়া ডিএসই কমিটি মিটিংয়ে উপস্থিত পরিচালকদের ১০ হাজার টাকা ও সিএসই ৫ হাজার টাকা করে সম্মানি ফি দেয়। একইসঙ্গে ডিএসইর চেয়ারম্যানকে গাড়ি, ড্রাইভার, জ্বালানি খরচ দেওয়া হয়। কিন্তু এখনো মিটিং হয় গতানুগতিক। যাতে উন্নতি হয় না স্টক এক্সচেঞ্জের।

ডিএসইর এক সদস্য বিজনেস আওয়ারকে বলেন, নামে মাত্র ডিমিউচ্যুয়ালাইজেশন হয়েছে। এতে ডিএসইর কোন উপকার হয়নি। পর্ষদে চেয়ারম্যানসহ ৭জন স্বতন্ত্র পরিচালক থাকলেও তাদের সক্রিয় কোন ভূমিকা নেই। এখনো শেয়ারহোল্ডার পরিচালকদেরকেই সব বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে হয়। শেয়ারবাজার সর্ম্পক্যে স্বতন্ত্র পরিচালকদের বাস্তবিক জ্ঞানের অভাবের কারনে এমনটি হচ্ছে। যে কারনে তারা পর্ষদ সভায় এসে নিস্ক্রিয় থাকে। আর ফি নিয়ে চলে যায়। অথচ ডিমিউচ্যুয়ালাইজেশন করার উদ্দেশ্য এমন ছিল না।

আরও পড়ুন……
এখনো এফডিআর নির্ভর করে চলে স্টক এক্সচেঞ্জ
ডিএসইর এক ব্রোকারের থেকেও সিএসইর লেনদেন কম
শীর্ষ ৪ কর্মকর্তার পেছনে ডিএসইর মাসে ব্যয় ৩৩ লাখ টাকা, কিন্তু ফলাফল…

দেখা গেছে, ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) ২০১৮-১৯ অর্থবছরে পরিচালনা পর্ষদের সভা হয়েছে ২৩টি। এছাড়া পরিচালকদের বিভিন্ন কমিটির মধ্যে নমিনেশন অ্যান্ড রিমিউনারেশন কমিটির ১০টি, অডিট অ্যান্ড রিস্ক ম্যানেজমেন্ট কমিটির ৮টি, আপিলস কমিটির ৪টি, কনফ্লিক্ট মিটিগেশন কমিটির ৪টি এবং রেগুলেটরি অ্যাফেয়ার্স কমিটির ১৮টি মিটিং অনুষ্ঠিত হয়েছে।

ডিএসইর বোর্ড এবং বিভিন্ন কমিটির ২০১৮-১৯ অর্থবছরে মোট মিটিং হয়েছে ৯১টি। এতে ১২ পরিচালকের অংশগ্রহণ ছিল ৪৪৬ বার। এতে ফি বাবদ ব্যয় হয়েছে ৪৪ লাখ ৫৯ হাজার টাকা। এই ফির পেছনে ভ্যাট ও ট্যাক্সবাবদ ৮ লাখ ৮৭ হাজার ৯১৯ টাকা ব্যয় হয়েছে। যাতে মোট ব্যয় হয়েছে ৫৩ লাখ ৪৬ হাজার ৯১৯ টাকা। যার পরিমাণ ২০১৯-২০ অর্থবছরে বেড়ে হয়েছে ৭০ লাখ ৮২ হাজার টাকা।

স্টক এক্সচেঞ্জটিতে ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ২৩টি অর্থাৎ প্রতি মাসে গড়ে প্রায় ২টি করে বোর্ড মিটিং হয়েছে। এতো মিটিং হওয়ার পরেও উন্নতি নেই। এমন পরিস্থিতিতে তাদের এতো মিটিংয়ের কার্যকরিতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে অনেকের মনে।

ফির বাহিরেও পরিচালকদের পেছনে দুপুরের খাবার, নাস্তাসহ আরও আনুষাঙ্গিক ব্যয় হয়। এছাড়া স্টক এক্সচেঞ্জের অর্থে পরিচালকদের বিদেশ ভ্রমনও হয়। ডিএসইর ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ১ পরিচালকের সিঙ্গাপুর ভ্রমনে ৪ লাখ ৪০ হাজার টাকা ব্যয় হয়েছিল। এছাড়া ২০১৯-২০ অর্থবছরেও পরিচালকদের পেছনে বিদেশ ভ্রমনের ব্যয় আছে।

অন্যদিকে সিএসইতে ২০১৮-১৯ অর্থবছরে পরিচালনা পর্ষদের সভা হয়েছে ৯টি। এছাড়া পরিচালকদের বিভিন্ন কমিটির মধ্যে নমিনেশন অ্যান্ড রিমিউনারেশন কমিটির ৫টি, অডিট অ্যান্ড রিস্ক ম্যানেজমেন্ট কমিটির ৫টি, আপিলস কমিটির ৪টি, কনফ্লিক্ট মিটিগেশন কমিটির ৪টি এবং রেগুলেটরি অ্যাফেয়ার্স কমিটির ৪টি মিটিং অনুষ্ঠিত হয়েছে।

সিএসইর বোর্ড এবং বিভিন্ন কমিটির মিটিংয়ে ১২ পরিচালকের অংশগ্রহণ ফি বাবদ ব্যয় হয়েছে ১৫ লাখ ২০ হাজার ৫৬ টাকা। এই ফির পেছনে ভ্যাট ও ট্যাক্সবাবদ ১ লাখ ৯৪ হাজার ৬১৯ টাকা ব্যয় হয়েছে। যাতে মোট ব্যয় হয়েছে ১৭ লাখ ১৪ হাজার ৬৭৫ টাকা।

বিজনেস আওয়ার/০৬ জুলাই, ২০২০/আরএ

ফেসবুকের মাধ্যমে আপনার মতামত জানান: