বিজনেস আওয়ার প্রতিবেদক : বর্তমানে দেশে করোনা সংক্রমণের ১৮তম সপ্তাহ চলছে। জুন জুড়েই বাংলাদেশে করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ চূড়ান্ত পর্যায়ে ছিল। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) তথ্য-উপাত্তই এমন চিত্র হাজির করছে। তথ্য অনুসারে, বাংলাদেশে সংক্রমণের ১৪, ১৫, ১৬ ও ১৭তম সপ্তাহজুড়ে আক্রান্ত ও মৃত্যু সমান্তরালভাবে পিকে ওঠে। ১৮তম সপ্তাহে এসে এ দুটির রেখাচিত্র নিম্নমুখী।
মাঝে একদিন মৃত্যুর সংখ্যা বেশি হলেও সাপ্তাহিক হিসাবের গড়ে ঊর্ধ্বমুখী প্রভাব পড়েনি। বরং মৃত্যুহারে দিনে দিনে নিচে নেমে এসেছে। এমনকি সর্বশেষ রোববার ৫৫ জনের মৃত্যু হলেও তাতে মোট গড় মৃত্যুহার বাড়েনি, বরং আগের কয়েক দিনের মতোই ১.২৬ শতাংশ ছিল।
ওই তথ্যানুযায়ী, বাংলাদেশে ১৪-১৭তম সপ্তাহ পর্যন্ত শনাক্তের সংখ্যা ছিল যথাক্রমে ২১ হাজার ৩৫৩, ২৪ হাজার ৩০৬, ২৫ হাজার ২০৩ ও ২২ হাজার ৪১৩। চার সপ্তাহে মোট ৯১ হাজার ৩৭৫। যা এ পর্যন্ত মোট সংক্রমণের ৫২.৪২ শতাংশ।
অন্যদিকে মৃত্যু ছিল সপ্তাহপ্রতি যথাক্রমে ২৯৩, ২৮৬, ২৭০ ও সর্বোচ্চ ৩০২ জন। আর ১৮তম সপ্তাহে মোট শনাক্ত হয় ২০ হাজার ৬১১ জন। এই সপ্তাহে এসে মৃত্যু কমে আসে ২৫৯ জনে। আগের চার সপ্তাহে মোট মৃত্যু এক হাজার ১৫১ জন, যা এখন পর্যন্ত মোট মৃত্যুর ৫৬.০৯ শতাংশ।
এদিকে জন হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের তথ্যসূত্র বাংলাদেশের পরিস্থিতি উন্নতির দিকে বলেই ইঙ্গিত করছে। তাদের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, বিশ্বের ১৬০ দেশের মধ্যে জনসংখ্যার তুলনায় বাংলাদেশে করোনায় মৃত্যুহার মাত্র ১.২২ এবং অবস্থান ৯২তম। দুই সপ্তাহ আগে এই সূচকে বাংলাদেশের অবস্থা আরো খারাপ ছিল।
অন্যদিকে শনাক্তের তুলনায় মৃত্যুহারের সূচকে ওই ১৬০ দেশের মধ্যে বাংলাদেশ এখন রয়েছে ১২৯ নম্বরে (১.২৬ শতাংশ)। যেখানে মৃত্যুহার ২৭ শতাংশ নিয়ে এক নম্বরে রয়েছে ইয়েমেন, ১৫.৮ শতাংশ নিয়ে দ্বিতীয় স্থানে বেলজিয়াম। আর ব্রিটেনের অবস্থান তৃতীয়, দেশটিতে মৃত্যুহার ১৫.৫ শতাংশ।
শনাক্তের তুলনায় মৃত্যুহারের এই তালিকায় ভারতের অবস্থান বাংলাদেশের চেয়ে অনেক পেছনে। গত পাঁচ দিনের হিসাবে সর্বোচ্চ সংখ্যায় শনাক্তকৃত ২০টি দেশের মধ্যে ১৬তম অবস্থানে রয়েছে বাংলাদেশ। ভারত রয়েছে চার নম্বরে।
অন্যদিকে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার দক্ষিণ-পূর্ব আঞ্চলিক ১১ দেশের মধ্যে শনাক্তের তুলনায় মৃত্যুহারের সূচকে বাংলাদেশের অবস্থান পাঁচ নম্বরে। এখানে সর্বোচ্চ মৃত্যু ভারতে। তারপর রয়েছে ইন্দোনেশিয়া, মিয়ানমার ও থাইল্যান্ড। তবে মালদ্বীপ, শ্রীলংকা ও নেপালের অবস্থা বাংলাদেশের চেয়ে তুলনামূলক ভালো।
এ প্রসঙ্গে আইইডিসিআর’র উপদেষ্টা ড. মুশতাক হোসেন বলেন, জুনে আমরা ওপরে ছিলাম। চলতি সপ্তাহে কিছুটা নিচে আছি। কিন্তু এখনই পিক থেকে নেমে গেছে বলার মতো অবস্থায় আসেনি। এজন্য আরো দুই সপ্তাহ পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে রাখতে হবে। যদি নিচে নামার ধারা অব্যাহত থাকে তবেই আমরা নিশ্চিত হব যে পিক থেকে নেমে গেছি।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পরিসংখ্যান অনুসারে, বেশির ভাগ দেশেই সংক্রমণ ১০-২০ সপ্তাহের মধ্যে পিকে ওঠে। এ পর্যায়টি টানা তিন থেকে চার সপ্তাহ থাকে। এ সময় আক্রান্ত ও মৃত্যু প্রায় সমান্তরালভাবে ওপরে ওঠে। এরপর কখনো একসঙ্গে নিচে নামতে থাকে, আবার কখনো সংক্রমণের তুলনায় মৃত্যুহার দ্রুত কমে যেতে থাকে।
যেমন ভারতের ক্ষেত্রে দেখা যায়, সেখানে এখন সংক্রমণের ২১তম সপ্তাহ চলছে। আর ১৪ সপ্তাহ থেকে টানা সংক্রমণ ও মৃত্যু দুটোই বাড়ছিল। এর মধ্যে ১৯তম সপ্তাহে এসে সেখানে সর্বোচ্চ মৃত্যু হয় এবং আক্রান্ত হয় বেশি। এরপর ধীরে ধীরে নিচের দিকে নামে।
চলতি সপ্তাহে সেখানে সংক্রমণ বেশি থাকলেও মৃত্যু তুলনামূলক কমে যাচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্রে চলছে এখন সংক্রমণের ২৫তম সপ্তাহ। এর মধ্যে ১৪, ১৫, ১৬তম সপ্তাহে সর্বোচ্চ মৃত্যু ছিল। আক্রান্ত তখন প্রথম দফায় চূড়ায় ওঠে।
বিভিন্ন সূচক ও অন্যান্য দেশের পরিস্থিতির দিকে দৃষ্টি রেখে দেশের সংশ্লিষ্ট খাতের বিশেষজ্ঞদের পর্যবেক্ষণ হচ্ছে, বাংলাদেশ গত প্রায় দুই সপ্তাহ ধরে মৃত্যুর সূচকে ভালোর দিকে যাচ্ছে। কিন্তু এখন যে পিক থেকে নিচের দিকে সংক্রমণ নেমে যাচ্ছে, এই অবস্থা ধরে রাখার জন্য অবশ্যই সংক্রমণ প্রতিরোধে আরো কার্যকর ব্যবস্থা নিতে হবে। তা না হলে যেকোনো সময় আবার ওপরের দিকে উঠে যেতে পারে।
বিজনেস আওয়ার/০৬ জুলাই, ২০২০/এ