বিজনেস আওয়ার প্রতিবেদক : শেয়ারবাজারের উন্নয়নে নানা পদক্ষেপ নিচ্ছে অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলামের নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। যে কমিশন প্রাথমিক গণপ্রস্তাবে (আইপিও) উন্নয়নেও কাজ করছে। কিন্তু তারপরেও একমি পেস্টিসাইডসের মতো কোম্পানি গোজাঁমিলের আর্থিক হিসাব দিয়ে শেয়ারবাজার থেকে টাকা উত্তোলন করে নিয়ে চলে গেছে।
কোম্পানিটির আর্থিক হিসাব যেমন প্রতারক নিরীক্ষক দিয়ে নিরীক্ষা করা হয়েছে, ঠিক একইভাবে আঙ্গুল ফুলে কলা গাছের মতো কোম্পানিটি আইপিওর আগে ৬ মাসে ৩ কোটি থেকে হয়ে গেছে ১০৫ কোটির। যে কোম্পানিটির আর্থিক হিসাবে রয়েছে গোজাঁমিলে ভরা। একই তথ্য যেমন পৃষ্টাভেদে ভিন্ন বা অনেকটা কপি পেস্ট করতে ভুল করার মতো ও মিথ্যা তথ্য প্রদান করা হয়েছে।
দেখা গেছে, প্রসপেক্টাসের ৭৮ পৃষ্টায় শেয়ারপ্রতি পরিচালন নগদ প্রবাহ (এনওসিএফপিএস) হিসেবে বিগত ৫টি আর্থিক হিসাবে যা দেখানো হয়েছে, তার সঙ্গে একই বিষয়ে ২১৬ পৃষ্টায় প্রদত্ত তথ্যের মিল নেই। তারা ৭৮ পৃষ্টায় এনওসিএফপিএস হিসেবে ২০১৯-২০ অর্থবছরে ২.২৮ টাকা, ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ২.৫৯ টাকা, ২০১৭-১৮ অর্থবছরে ১.৯৭ টাকা, ২০১৬-১৭ অর্থবছরে ২ টাকা ও ২০১৫-১৬ অর্থবছরে ১.৪৫ টাকা দেখিয়েছে।
কিন্তু একই বিষয়ে ২১৬ পৃষ্টায় ২০১৯-২০ অর্থবছরে ২.১১ টাকা, ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ১.৯৪ টাকা, ২০১৭-১৮ অর্থবছরে ১.৪১ টাকা, ২০১৬-১৭ অর্থবছরে ১.৪৪ টাকা ও ২০১৫-১৬ অর্থবছরে ১.০৪ টাকা দেখিয়েছে।
আরও পড়ুন…..
প্রতারক নিরীক্ষকের নিরীক্ষা দিয়ে শেয়ারবাজারে একমি পেস্টিসাইডস
একমি পেস্টিসাইডসের ‘নো’ ডিভিডেন্ড, তলব করবে বিএসইসি
আইপিওর আগে ছয় মাসে ৩ কোটি থেকে একমি পেস্টিসাইডস ১০৫ কোটির কোম্পানি
এদিকে ৭৯ পৃষ্টায় বেসিক ইপিএস হিসেবে যে তথ্য প্রকাশ করা হয়েছে, তার সঙ্গে ২১৬ ও ২১৭ পৃষ্টায় প্রদত্ত একই বিষয়ের কোন মিল নেই। তারা ৭৯ পৃষ্টায় ২০১৯-২০ অর্থবছরে ২.০০ টাকা, ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ২.১৩ টাকা, ২০১৭-১৮ অর্থবছরে ১.৪৭ টাকা, ২০১৬-১৭ অর্থবছরে ১.৪১ টাকা ও ২০১৫-১৬ অর্থবছরে ১.১০ টাকা ইপিএস দেখিয়েছে।
কিন্তু একই বিষয়ে ২১৬ ও ২১৭ পৃষ্টায় ২০১৯-২০ অর্থবছরে ১.৮৫ টাকা, ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ১.৫৯ টাকা, ২০১৭-১৮ অর্থবছরে ১.০৫ টাকা, ২০১৬-১৭ অর্থবছরে ১.০১ টাকা ও ২০১৫-১৬ অর্থবছরে ০.৭৯ টাকা দেখিয়েছে।
৯৬ পৃষ্টায় কোন পরিচালক শেয়ারবাজারের সঙ্গে জড়িত না এবং শেষ ৩ বছরে কোন তালিকাভুক্ত কোম্পানির সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিল না বলে তথ্য প্রকাশ করা হয়েছে। অথচ ২২ পৃষ্টায় কোম্পানিটির স্বতন্ত্র পরিচালক অধ্যাপক এম শাহজাহান মিনা ব্যাংক এশিয়া সিকিউরিটিজের পরিচালক ও তালিকাভুক্ত কোম্পানি বাংলাদেশ শিপিং কর্পোরেশনের পরিচালক বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
ল্যান্ড ডেভেলপমেন্টের বিস্তারিত চাওয়া হলেও একমি পেস্টিসাইডস ৫৭ পৃষ্টায়, জমির বিস্তারিত তথ্যে তা প্রকাশ করেনি। কোম্পানিটির ৩.৩৩ কোটি টাকার ল্যান্ড ডেভেলপমেন্টবাবদ সম্পদ দেখিয়েছে।
১৪৯ পৃষ্টায় ২০১২-১৩ অর্থবছরে পরিশোধিত মূলধনের ৯.৪৪ কোটি টাকা জমি ও জমি উন্নয়নসহ অন্যান্যবাবদ কাজে ব্যবহার করা হয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে। তবে ৫৭ পৃষ্টা অনুযায়ি, ওই অর্থবছরে জমি কেনা হয়নি।
এদিকে বিএএস-১৬ অনুযায়ি, ল্যান্ড ডেভেলপমেন্ট অবচয়যোগ্য সম্পদ। এরমধ্যে প্রাচীর, রাস্তা ইত্যাদি সম্পদ থাকে। যেগুলোর নির্দিষ্ট আয়ুস্কাল আছে। কিন্তু কোম্পানি কর্তৃপক্ষ ল্যান্ড ডেভেলপমেন্টের উপর অবচয় চার্জ করে না। যাতে কোম্পানি কর্তৃপক্ষ নিয়মিতভাবে মুনাফা ও সম্পদ বেশি দেখিয়ে আসছে।
এ বিষয়ে জানতে একমি পেস্টিসাইডসের প্রধান অর্থ কর্মকর্তা (সিএফও) সেলিম রেজার সঙ্গে যোগাযোগ করলে, তিনি দীর্ঘসময় ধরে নানা তালবাহানা করেন। কিন্তু তারপরেও তিনি কোন মন্তব্য দেননি।
বিজনেস আওয়ার/২৪ নভেম্বর, ২০২১/আরএ
2 thoughts on “বিএসইসির কঠোর অবস্থানের মধ্যেই অর্থ তুলে নিল গোজাঁমিলের একমি পেস্টিসাইডস”