রেজোয়ান আহমেদ : শেয়ারবাজারে বুক বিল্ডিং পদ্ধতিতে কোম্পানির শেয়ার দর নির্ধারনে যোগ্য বিনিয়োগকারীদের মেধাকে কাজে লাগানোর চেষ্টা করা হলেও তারা অযোগ্যতার প্রমাণ দিয়েছেন। যার ফলশ্রুতিতে তাদের মূল্যায়িত কোম্পানিগুলোর গড় ৬১ টাকার শেয়ার দর এখন ৪৭ টাকা নেমে এসেছে। এক্ষেত্রে গড়ে শেয়ার দর কমেছে ১৪ টাকা বা ২৩ শতাংশ। যা সার্বিক শেয়ারবাজারকে নিম্ন ধারায় নিয়ে গেছে।
বিভিন্ন মহল থেকে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যা্ন্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন কোম্পানিগুলোর বেশি প্রিমিয়াম দেয় এমন অভিযোগের প্রেক্ষিতে কমিশন ২০১৫ সালে পাবলিক ইস্যু রুলস সংশোধনের মাধ্যমে বুক বিল্ডিং পদ্ধতি চালু করে। এই পদ্ধতিতে একটি কোম্পানির শেয়ার দর কত হওয়া উচিত, তা এককভাবে নির্ধারন করে যোগ্য বিনিয়োগকারীরা। এই যোগ্য বিনিয়োগকারীদের তালিকায় রয়েছে- মার্চেন্ট ব্যাংকার, পোর্টফোলিও ম্যানেজার, অ্যাসেট ম্যানেজার ও তাদের পরিচালিত মিউচ্যুয়াল ফান্ড, স্টক ডিলার, ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান, বীমা কোম্পানি, অলটারনেটিভ ইনভেস্টমেন্ট ফান্ড ও ফান্ডের ম্যানেজার, অনুমোদিত পেনশন ও প্রভিডেন্ট ফান্ড।
২০১৬ সালে চালু হওয়ার পরে বুক বিল্ডিং পদ্ধতিতে ৬টি কোম্পানি শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত হয়েছে। এই কোম্পানিগুলোর শেয়ারে যোগ্য বিনিয়োগকারীরা গড়ে ৬০.৬৭ টাকা কাট-অফ প্রাইস নির্ধারন করে। তবে কোম্পানিগুলোর বর্তমানে গড় বাজার দর নেমে এসেছে ৪৬.৬৮ টাকায়। যা যোগ্য বিনিয়োগকারীদের মূল্যায়িত দরের তুলনায় ১৩.৯৯ টাকা বা ২৩ শতাংশ কম।
এ বিষয়ে বিএসইসির এক কর্মকর্তা বিজনেস আওয়ারকে বলেন, কমিশন কখনোই শেয়ার দর নির্ধারন করেনি। তারপরেও আগে প্রিমিয়াম নিয়ে প্রশ্ন তোলা হতো। অথচ এখন সেই সমালোচনাকারীরাই কোম্পানির শেয়ার দর অতিমূল্যায়ন করছে। যার ফলে ওইসব কোম্পানির শেয়ার দর তাদের মূল্যায়িত কাট-অফ প্রাইসের নিচে চলে এসেছে। তবে কমিশন এই সমস্যাও দূর করতে এরইমধ্যে বুক বিল্ডিং পদ্ধতির সংশোধন করেছে।
আরও পড়ুন…..
বর্তমান কমিশনের গড় ২২ টাকা ইস্যু মূল্যের শেয়ারের বাজার দর ৩৪ টাকা
যোগ্য বিনিয়োগকারীদের মূল্যায়িত ৬টি কোম্পানির মধ্যে ৫টির বা ৮৩ শতাংশ কোম্পানির শেয়ার দর এখন কাট-অফ প্রাইসের নিচে লেনদেন হচ্ছে। মাত্র ১টি কোম্পানির শেয়ার দর কাট-অফ প্রাইসের উপরে রয়েছে। তবে সেটাও কাট-অফ প্রাইসের কাছেই অবস্থান করছে।
বিএসইসির চেয়ারম্যান ড. এম খায়রুল হোসেন বিজনেস আওয়ারকে বলেন, শেয়ারবাজারের উন্নয়নে যোগ্য বিনিয়োগকারীদের যথাযথ ভূমিকা রাখা দরকার। এজন্য আগামিতে শেয়ারের কাট-অফ প্রাইস নির্ধারনে সবাইকে সচেতন হতে হবে। যাতে ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ সুরক্ষিত হয়।
যোগ্য বিনিয়োগকারীদের মূল্যায়িত কোম্পানিগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি দর হারিয়েছে আমান কটন ফাইব্রাস। এ কোম্পানিটির শেয়ার দর কমেছে ৪২ শতাংশ। এরপরে ৪০ শতাংশ কমে দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে বসুন্ধরা পেপার মিলস। আর তৃতীয় অবস্থানে থাকা এসকোয়্যার নিট কম্পোজিটের শেয়ার দর কমেছে ৩৮ শতাংশ।
বিএসইসির সাবেক চেয়ারম্যান এবি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বিজনেস আওয়ারকে বলেন, বুক বিল্ডিং পদ্ধতিতে যোগ্যতা অনুযায়ি অনেক কোম্পানির যথার্থ দর নির্ধারন হয় না। অনেকে এই পদ্ধতিটি অপব্যবহারের মাধ্যমে কাট-অফ প্রাইস অতিমূল্যায়িত করছে। যে কারনে সেকেন্ডারি মার্কেটে শেয়ার দর কাট-অফ প্রাইসের নিচে নেমে যাচ্ছে। এটা দুঃখজনক।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আবু আহমেদ বিজনেস আওয়ারকে বলেন, যাদেরকে ইলিজিবল বা যোগ্য বিনিয়োগকারী বলা হচ্ছে, এরা আসলে যোগ্য না। বিডিংয়ে এরা পাতানো ম্যাচ খেলে। তাই সবার আগে যোগ্য বিনিয়োগকারী খুজে বের করতে হবে।
নিম্নে যোগ্য বিনিয়োগকারীদের মূল্যায়িত শেয়ার দর ও ১২ অক্টোবরের বাজার দর তুলে ধরা হল-
কোম্পানির নাম | কাট-অফ প্রাইস (টাকা) | বাজার দর (টাকা) | হ্রাস-বৃদ্ধি |
আমান কটন ফাইব্রাস | ৪০ | ২৩.১০ | (৪২%) |
বসুন্ধরা পেপার মিলস | ৮০ | ৪৭.৮০ | (৪০%) |
এসকোয়্যার নিট কম্পোজিট | ৪৫ | ২৭.৭০ | (৩৮%) |
একমি ল্যাবরেটরিজ | ৮৫ | ৭৩.৩০ | (১৪%) |
রানার অটোমোবাইলস | ৭৫ | ৬৭.১০ | (১১%) |
আমরা নেটওয়ার্ক | ৩৯ | ৪১.১০ | ৫% |
গড় | ৬০.৬৭ টাকা | ৪৬.৬৮ টাকা | (২৩%) |
বিজনেস আওয়ার/১৩ অক্টোবর, ২০১৯/আরএ