রেজোয়ান আহমেদ : গত কয়েক বছর ধরে অ্যাডভান্সড কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজের (এসিআই) মুনাফার উত্থানের পথে কাটা হয়ে রয়েছে সাবসিডিয়ারি কোম্পানির লোকসান। তবে এবার সেই কাটা আরেক ধাপ এগিয়ে চলতি অর্থবছরের ৯ মাসে (জুলাই ১৮- মার্চ ১৯) এসিআইকে লোকসানে নামিয়েছে। এবার সাবসিডিয়ারি কোম্পানিগুলোর সুদের ভারে আগের বছরের একইসময়ের তুলনায় এসিআইয়ের সমন্বিত ব্যবসায় ১৬৭ শতাংশ পতন হয়েছে। কোম্পানিটির ৮ শতাংশ বিক্রয় ও ৪ শতাংশ পরিচালন মুনাফা বৃদ্ধি সত্ত্বেও সুদজনিত ব্যয় বৃদ্ধিতে লোকসানে নেমেছে। এছাড়া লোকসানের আরেকটি কারন হিসেবে রয়েছে এসিআইয়ের ৩য় প্রান্তিকের (জানুয়ারি-মার্চ ১৯) ব্যবসায় নামমাত্র মুনাফা অর্জন।
এসিআইয়ের আগের অর্থবছরের ৯ মাসের তুলনায় ৪৭ শতাংশ সুদজিনত ব্যয় বৃদ্ধিতে কোম্পানিটির সমন্বিত হিসাবের ব্যবসায় লোকসান হয়েছে। এছাড়া এসিআইয়ের তৃতীয় প্রান্তিকের ব্যবসায় মাত্র ২ কোটি ১ লাখ টাকার মুনাফা হয়েছে। যাতে কোম্পানিটির ৬ মাসের একক হিসাবের ১৩.৩০ টাকার ইপিএস ৯ মাসে বেড়ে হয়েছে ১৩.৭১ টাকা।
সাবসিডিয়ারি কোম্পানির কারনে নিয়মিতভাবে ব্যবসায় পিছিয়ে পড়ছে এসিআই। কোম্পানিটির প্রথমার্ধে সমন্বিতভাবে ইপিএস হয়েছিল ৪৪ পয়সা। যা নিয়ে শেয়ারবাজার সংশ্লিষ্টদের মধ্যে সন্দেহ তৈরী হয়। এরই আলোকে এসিআইয়ের আর্থিক হিসাবের সত্যতা যাছাইয়ে তদন্ত কমিটি গঠন করেছে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) কর্তৃপক্ষ।
এসিআইয়ের এককভাবে চলতি অর্থবছরের ৯ মাসে নিট মুনাফা হয়েছে ৬৮ কোটি ৩৮ লাখ টাকা বা শেয়ারপ্রতি ১৩.৭১ টাকা। তবে ১৪টি সাবসিডিয়ারি কোম্পানিসহ সমন্বিত হিসাবে নিট লোকসান হয়েছে ৩৭ কোটি ৫৪ লাখ টাকা বা শেয়ারপ্রতি ৫.৮১ টাকা। গত কয়েকবছর ধরে এসিআইয়ের মুনাফায় সাবসিডিয়ারি কোম্পানিগুলোর এমন নেতিবাচক প্রভাব আধিপাত্য বিস্তার করে রয়েছে। এক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি প্রভাব ফেলছে রিটেইল সুপারশপ স্বপ্ন ব্র্যান্ডের এসিআই লজিস্টিকস।
এদিকে আগের অর্থবছরের ৯ মাসে (জুলাই ১৭- মার্চ ১৮) এসিআইয়ের সমন্বিতভাবে নিট মুনাফা হয়েছিল ৪০ কোটি ৬ লাখ টাকা বা শেয়ারপ্রতি ৮.৬৪ টাকা। এ হিসাবে চলতি অর্থবছরের ৯ মাসে ব্যবসায় পতন হয়েছে ৭৭ কোটি ৫৯ লাখ টাকা বা ১৯৪ শতাংশ। যার পেছনে প্রধান কারন হিসাবে রয়েছে সাবসিডিয়ারি কোম্পানিগুলোর সুদজনিত ব্যয় বৃদ্ধি।
দেখা গেছে, চলতি অর্থবছরের ৯ মাসে ঋণের বিপরীতে এসিআইয়ের সমন্বিতভাবে সুদজনিত ব্যয় হয়েছে ২২৬ কোটি ৩২ লাখ টাকা। যার পরিমাণ আগের অর্থবছরের একইসময়ে হয়েছিল ১৫৪ কোটি ৩৬ লাখ টাকা। এ হিসাবে কোম্পানিটির সুদজনিত ব্যয় বেড়েছে ৭১ কোটি ৯৫ লাখ টাকা বা ৪৭ শতাংশ। আর সুদজনিত ব্যয়ের এই উত্থান কোম্পানিটির মুনাফায় ধস নামিয়েছে। অথচ ২২৬ কোটি ৩২ লাখ টাকার মধ্যে এসিআইয়ের এককভাবে সুদজনিত ব্যয় ৫০ কোটি ৫৫ লাখ টাকা।
এসিআইয়ের সাবসডিয়ারি কোম্পানিগুলোসহ ২০১৯ সালের ৩১ মার্চ মোট ঋণের পরিমাণ দাড়িঁয়েছে ৪ হাজার ১৬ কোটি ১৯ লাখ টাকা। যার পরিমাণ আগের বছরের ৩০ জুন ছিল ৩ হাজার ৪০৬ কোটি ৫১ লাখ টাকা। এ হিসাবে চলতি অর্থবছরের ৯ মাসে ঋণের পরিমাণ বেড়েছে ৬০৯ কোটি ৬৮ লাখ টাকা বা ১৮ শতাংশ। ৪ হাজার ১৬ কোটি ১৯ লাখ টাকার মধ্যে এসিআইয়ের এককভাবে ১ হাজার ৭২৯ কোটি ৫৪ লাখ টাকার ঋণ রয়েছে।
সমন্বিতভাবে চলতি অর্থবছরের ৯ মাসে এসিআইয়ের ৩৪৫ কোটি ২৩ লাখ টাকার বা ৮ শতাংশ বিক্রয় বৃদ্ধি হয়েছে। আগের অর্থবছরের ৯ মাসের ৪ হাজার ২৮২ কোটি ৬৭ লাখ টাকার বিক্রয় এ অর্থবছরের একইসময়ে বেড়ে হয়েছে ৪ হাজার ৬২৭ কোটি ৯০ লাখ টাকা। এই বিক্রয় বৃদ্ধিতে কোম্পানিটির পরিচালন মুনাফা বেড়েছে ৯ কোটি ৩৮ লাখ টাকা বা ৪ শতাংশ। যা কোম্পানিটির মুনাফায় ধস ঠেকাতে পারেনি।
এসিআইয়ের ১৪টি অধীনস্থ কোম্পানির মধ্যে রয়েছে – এসিআই ফরমুলেশন, এসিআই সল্ট, এসিআই ফুডস, এসিআই পিউর ফ্লাওয়ার, এসিআই অ্যাগ্রোলিঙ্ক, ক্রিয়েটিভ কমিউনিকেশন, এসিআই মটরস, প্রিমিয়াফ্রেক্স প্লাস্টিকস, এসিআই লজিস্টিকস (স্বপ্ন), এসিআই হেলথকেয়ার, এসিআই এডিবল ওয়েলস, এসিআই কেমিক্যালস, ইনফোলিটক্স বাংলাদেশ ও এসিআই বায়োটেক।
বিজনেস আওয়ার/২৮ এপ্রিল, ২০১৯/আরএ