বিজনেস আওয়ার প্রতিবেদক : একদিনের ব্যবধানে পাল্টে গেল বাংলাদেশ ব্যাংক। তাদের সঙ্গে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) একটি ফলপ্রসু বৈঠক শেষে শেয়ারবাজারে যখন বড় উত্থান, ঠিক ওইদিন সন্ধ্যায় তা ধসের জন্য এক বিতর্কিত বিজ্ঞপ্তি দিয়ে বসল বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃপক্ষ। যার পেছনে ষড়যন্ত্র দেখছেন অনেকে।
শেয়ারবাজারের গত কয়েকদিনের পতনে বাংলাদেশ ব্যাংকের বিনিয়োগ সীমায় ব্যাংক ও লিজিং কোম্পানির বন্ডের বিনিয়োগকে অন্তর্ভূক্ত রাখা ও বাজার দরের পরিবর্তে কস্ট প্রাইসকে (ক্রয় মূল্য) বিবেচনায় নিয়ে বিনিয়োগ সীমা গণনা করাকে কারন হিসেবে মনে করা হয়।
যা সমাধানের লক্ষ্যে মঙ্গলবার (৩০ নভেম্বর) বাংলাদেশ ব্যাংক ও শেয়ারবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) মধ্যে বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। এতে বিএসইসির কমিশনার অধ্যাপক ড. শেখ সামসুদ্দিন আহমেদের নেতৃত্বে ৩ সদস্যের একটি দল বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে বৈঠক করেন। আর বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষে ডেপুটি গভর্ণর সাজেদুর রহমানের নেতৃত্বে ১০-১২ জনের একটি দল অংশগ্রহন করে।
বৈঠক শেষে ওইদিনই সন্ধ্যায় শেখ সামসুদ্দিন আহমেদ বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিনিধিদের উপস্থিতিতে গণমাধ্যমকে বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংক শেয়ারবাজারের উন্নয়নে খুবই আন্তরিক। তারা বন্ডে বিনিয়োগকে বিনিয়োগ সীমার বাহিরে রাখার এবং বিনিয়োগ সীমা গণনায় বাজার দরের পরিবর্তে কস্ট প্রাইসকে বিবেচনায় নেওয়ার দাবির সঙ্গে একমত হয়েছেন।
এছাড়াও বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে স্ট্যাবিলাইজেশন ফান্ডে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের অর্থ জমা দেওয়াকে উৎসাহিত করা, ব্যাংক ও লিজিং কোম্পানির জন্য কর্পোরেট গভর্ণেন্স কোড (সিজিসি) পরিপালন করা ও নগদ লভ্যাংশে উৎসাহিত করবে বলে জানান তিনি। এসবের কোন বিরোধীতা বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিনিধিরা করেননি বা আপত্তি তোলেননি।
যাতে করে বিএসইসি কমিশনারের বক্তব্য গণমাধ্যমে উঠে আসে। এতে করে বিনিয়োগকারীদের বাজারের প্রতি আস্থা ফিরে আসে। যার ফলে ওই সভার পরের দিনই শেয়ারবাজারে বড় উত্থান হয়। একদিনেই দেশের প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) মূল্যসূচক ডিএসইএক্স বেড়েছে ১৪৪ পয়েন্ট।
কিন্তু এই উত্থানের পরে আজ সন্ধ্যায় বিএসইসির সঙ্গে দ্বিমত জানিয়ে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তি দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এতে জানানো হয়েছে, বিএসইসির প্রতিনিধির বরাত দিয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে উক্ত সভায় কতিপয় বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণের যে সংবাদ প্রকাশ করা হয়েছে, তা সঠিক নয়।
শেয়ারবাজারের উত্থানের পরে বাংলাদেশ ব্যাংকের এই বিতর্কিত কার্যক্রমে ষড়যন্ত্রের আভাস পাচ্ছেন শেয়ারবাজার সংশ্লিষ্টরা। এ বিষয়ে জানতে চাইলে একাধিক বাজার সংশ্লিষ্ট জানান, বিএসইসির কমিশনার যেসব বক্তব্য তুলে ধরেছেন, তা বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিনিধিদের সামনেই বলেছেন। তাতে তারা কোন আপত্তি তোলেনি। কিন্তু পরেরদিন শেয়ারবাজারে বড় উত্থান হতেই সন্ধ্যায় এক আজগুবি বিজ্ঞপ্তি দিয়ে বসলেন। এর পেছনে ষড়যন্ত্র থাকতে পারে। হয়তো কোন একটি পক্ষ মাঝখানে থেকে কলকাঠি নাড়ছেন। তারা শেয়ারবাজারের ভালো চাইছেন না।
এদিকে বিশ্বস্ত সূত্রে জানা গেছে, বাংলাদেশ ব্যাংক বিএসইসির বক্তব্যের পরেরদিন বিজ্ঞপ্তি দিয়ে আপত্তি তুললেও তারা বিএসইসির কমিশনারের বক্তব্য প্রদানের সময় যেমন কিছু বলেননি, একইভাবে বিজ্ঞপ্তি দেওয়ার আগেও বিএসইসিকে কিছু জানাননি। অনেকটা একপেশে তারা বিজ্ঞপ্তি দিয়েছেন। অথচ দেশের অর্থনীতির উন্নয়নের স্বার্থে আলাপ-আলোচনা বা সমঝোতার মাধ্যমে বিজ্ঞপ্তি দিতে পারতেন, যদি বিএসইসির কমিশনারের বক্তব্য সঠিক নাও হয়ে থাকে।
বিজনেস আওয়ার/০১ ডিসেম্বর, ২০২১/আরএ