ঢাকা , রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

৪০ টাকা ইস্যু মূল্যের জিবিবি পাওয়ারের ঠিকানা এখন ‘জেড’ ক্যাটাগরি

  • পোস্ট হয়েছে : ০৪:১৩ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৮ মার্চ ২০১৯
  • 57

রেজোয়ান আহমেদ : ঋণ পরিশোধের মাধ্যমে মুনাফা বাড়ানোর লক্ষ্যে শেয়ারবাজার থেকে অর্থ উত্তোলন করলেও জিবিবি পাওয়ারে তার প্রতিফলন হয়নি। কোম্পানিটির ঋণ পরিশোধের মাধ্যমে সুদজনিত ব্যয় হ্রাস সত্ত্বেও প্রাথমিক গণপ্রস্তাবের (আইপিও) পূর্বের চেয়ে মুনাফা কমে এসেছে। আর ব্যবসায় এই পতনে কোম্পানিটি এখন শেয়ারবাজারের সর্বনিম্ন ‘জেড’ ক্যাটাগরিতে পতিত হয়েছে। যে কোম্পানিটি উচ্চ দরে শেয়ার ইস্যু করলেও তার দর এখন অভিহিত মূল্যের কাছে।

ডিএসই ব্রোকার্স এসোসিয়েশনের (ডিবিএ) সভাপতি শাকিল রিজভী বিজনেস আওয়ারকে বলেন, শেয়ারবাজার থেকে অর্থ উত্তোলনের ৭ বছরেও মুনাফা না বাড়া হতাশাজনক। এছাড়া ৪০ টাকার মতো উচ্চ দরে শেয়ার ইস্যু করা কোম্পানির ‘জেড’ ক্যাটাগরিতে নেমে আসা স্বাভাবিক ঘটনা না। এর মাধ্যমে শেয়ারবাজারে আসার আগে বিভিন্ন কোম্পানির কৃত্রিম মুনাফা দেখানোর যে অভিযোগ রয়েছে, তার সত্যতা পাওয়া যায়।

সুদজনিত ব্যয় কমানোর লক্ষ্যে জিবিবি পাওয়ার ২০১২ সালে শেয়ারবাজার থেকে ৮২ কোটি টাকা সংগ্রহ করে। এক্ষেত্রে কোম্পানিটি প্রতিটি শেয়ার ইস্যু করে ৩০ টাকা প্রিমিয়ামসহ মোট ৪০ টাকায়। ২০১০ সালের ব্যবসায় শেয়ারপ্রতি মুনাফা (ইপিএস) ২.৮৩ টাকা ও ২২.৫২ টাকা শেয়ারপ্রতি সম্পদ (এনএভিপিএস) দেখিয়ে এই দরে শেয়ার ইস্যু করা হয়। যা উত্তোলনে ইস্যু ম্যানেজারের দায়িত্ব পালন করে আইডিএলসি ইনভেস্টমেন্টস।

জিবিবি পাওয়ারের পরিচালনা পর্ষদ ২০১৭-১৮ অর্থবছরের ব্যবসায় গত বছরের ২৮ অক্টোবরের সভায় শেয়ারহোল্ডারদের জন্য কোন প্রকার লভ্যাংশ না দেওয়ার সুপারিশ করে। এর ফলে কোম্পানিটি ২৯ অক্টোবর ‘জেড’ ক্যাটাগরিতে পতিত হয়।

কোম্পানিটির ২০১০ সালে নিট মুনাফা হয়েছিল ১০ কোটি ৭৩ লাখ টাকা বা শেয়ার প্রতি মুনাফা (ইপিএস) ২.৮৩ টাকা। ওই বছরে ১৩ কোটি ২ লাখ টাকার সুদজনিত ব্যয় শেষে এই মুনাফা হয়েছিল। তবে সর্বশেষ ২০১৭-১৮ অর্থবছরে সুদজনিত ব্যয় ১ কোটি ৬ লাখ টাকায় নেমে আসলেও মুনাফায় কোন উত্থান হয়নি। বরং তালিকাভুক্তির পূর্বের মুনাফা কমে এসেছে ৯ কোটি ৫৭ লাখ টাকায় বা ইপিএস ০.৯৪ টাকায়।

জিবিবি পাওয়ারের ২০১০ সালের ৩১ ডিসেম্বর ৮৮ কোটি ৩১ লাখ টাকার দীর্ঘমেয়াদি ও ১ কোটি ৩৪ লাখ টাকার স্বল্পমেয়াদি ঋণ ছিল। তবে বর্তমানে কোম্পানিটির দীর্ঘমেয়াদি কোন ঋণ নেই। আর ২০১৭-১৮ অর্থবছর শেষে স্বল্পমেয়াদি ঋণের পরিমাণ দাড়িয়েছে ১৭ কোটি ৯৪ লাখ টাকায়।

এদিকে কোম্পানিটির মুনাফা না বাড়লেও নিয়মিত বোনাস শেয়ার দিয়ে পরিশোধিত মূলধন দ্বিগুণ করা হয়েছে। যাতে ইপিএস কমে তলানিতে নেমেছে। কোম্পানিটির আইপিও পূর্ব ৩০ কোটি ৫০ লাখ টাকার পরিশোধিত মূলধন এখন ১০১ কোটি ৮০ লাখ টাকায় উন্নিত হয়েছে। যা আইপিও’র অর্থের মধ্যে ২০ কোটি ৫০ লাখ টাকা, ২০১১ সালের ২৫ শতাংশ, ২০১২-২০১৪ সাল পর্যন্ত ১৫ শতাংশ ও ২০১৭ সালে ৫ শতাংশ বোনাস শেয়ার প্রদানের মাধ্যমে বাড়ানো হয়েছে।

ভালো ব্যবসায় দেখিয়ে জিবিবি পাওয়ার উচ্চ দরে শেয়ার ইস্যু করলেও তার কোন সুফল পাচ্ছে না বিনিয়োগকারীরা। প্রতিটি শেয়ারে ৪০ টাকা বিনিয়োগ করা কোম্পানি থেকে ২০১৭-১৮ অর্থবছরে শেয়ারহোল্ডারদের লভ্যাংশ প্রাপ্তি শূন্য। আর শেয়ার দর নেমে এসেছে ১০.৭০ টাকায়।

বিজনেস আওয়ার/১৮ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯/আরএ

ফেসবুকের মাধ্যমে আপনার মতামত জানান:
ট্যাগ :

আপনার মতামত লিখুন

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার মেইলে তথ্য জমা করুন

৪০ টাকা ইস্যু মূল্যের জিবিবি পাওয়ারের ঠিকানা এখন ‘জেড’ ক্যাটাগরি

পোস্ট হয়েছে : ০৪:১৩ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৮ মার্চ ২০১৯

রেজোয়ান আহমেদ : ঋণ পরিশোধের মাধ্যমে মুনাফা বাড়ানোর লক্ষ্যে শেয়ারবাজার থেকে অর্থ উত্তোলন করলেও জিবিবি পাওয়ারে তার প্রতিফলন হয়নি। কোম্পানিটির ঋণ পরিশোধের মাধ্যমে সুদজনিত ব্যয় হ্রাস সত্ত্বেও প্রাথমিক গণপ্রস্তাবের (আইপিও) পূর্বের চেয়ে মুনাফা কমে এসেছে। আর ব্যবসায় এই পতনে কোম্পানিটি এখন শেয়ারবাজারের সর্বনিম্ন ‘জেড’ ক্যাটাগরিতে পতিত হয়েছে। যে কোম্পানিটি উচ্চ দরে শেয়ার ইস্যু করলেও তার দর এখন অভিহিত মূল্যের কাছে।

ডিএসই ব্রোকার্স এসোসিয়েশনের (ডিবিএ) সভাপতি শাকিল রিজভী বিজনেস আওয়ারকে বলেন, শেয়ারবাজার থেকে অর্থ উত্তোলনের ৭ বছরেও মুনাফা না বাড়া হতাশাজনক। এছাড়া ৪০ টাকার মতো উচ্চ দরে শেয়ার ইস্যু করা কোম্পানির ‘জেড’ ক্যাটাগরিতে নেমে আসা স্বাভাবিক ঘটনা না। এর মাধ্যমে শেয়ারবাজারে আসার আগে বিভিন্ন কোম্পানির কৃত্রিম মুনাফা দেখানোর যে অভিযোগ রয়েছে, তার সত্যতা পাওয়া যায়।

সুদজনিত ব্যয় কমানোর লক্ষ্যে জিবিবি পাওয়ার ২০১২ সালে শেয়ারবাজার থেকে ৮২ কোটি টাকা সংগ্রহ করে। এক্ষেত্রে কোম্পানিটি প্রতিটি শেয়ার ইস্যু করে ৩০ টাকা প্রিমিয়ামসহ মোট ৪০ টাকায়। ২০১০ সালের ব্যবসায় শেয়ারপ্রতি মুনাফা (ইপিএস) ২.৮৩ টাকা ও ২২.৫২ টাকা শেয়ারপ্রতি সম্পদ (এনএভিপিএস) দেখিয়ে এই দরে শেয়ার ইস্যু করা হয়। যা উত্তোলনে ইস্যু ম্যানেজারের দায়িত্ব পালন করে আইডিএলসি ইনভেস্টমেন্টস।

জিবিবি পাওয়ারের পরিচালনা পর্ষদ ২০১৭-১৮ অর্থবছরের ব্যবসায় গত বছরের ২৮ অক্টোবরের সভায় শেয়ারহোল্ডারদের জন্য কোন প্রকার লভ্যাংশ না দেওয়ার সুপারিশ করে। এর ফলে কোম্পানিটি ২৯ অক্টোবর ‘জেড’ ক্যাটাগরিতে পতিত হয়।

কোম্পানিটির ২০১০ সালে নিট মুনাফা হয়েছিল ১০ কোটি ৭৩ লাখ টাকা বা শেয়ার প্রতি মুনাফা (ইপিএস) ২.৮৩ টাকা। ওই বছরে ১৩ কোটি ২ লাখ টাকার সুদজনিত ব্যয় শেষে এই মুনাফা হয়েছিল। তবে সর্বশেষ ২০১৭-১৮ অর্থবছরে সুদজনিত ব্যয় ১ কোটি ৬ লাখ টাকায় নেমে আসলেও মুনাফায় কোন উত্থান হয়নি। বরং তালিকাভুক্তির পূর্বের মুনাফা কমে এসেছে ৯ কোটি ৫৭ লাখ টাকায় বা ইপিএস ০.৯৪ টাকায়।

জিবিবি পাওয়ারের ২০১০ সালের ৩১ ডিসেম্বর ৮৮ কোটি ৩১ লাখ টাকার দীর্ঘমেয়াদি ও ১ কোটি ৩৪ লাখ টাকার স্বল্পমেয়াদি ঋণ ছিল। তবে বর্তমানে কোম্পানিটির দীর্ঘমেয়াদি কোন ঋণ নেই। আর ২০১৭-১৮ অর্থবছর শেষে স্বল্পমেয়াদি ঋণের পরিমাণ দাড়িয়েছে ১৭ কোটি ৯৪ লাখ টাকায়।

এদিকে কোম্পানিটির মুনাফা না বাড়লেও নিয়মিত বোনাস শেয়ার দিয়ে পরিশোধিত মূলধন দ্বিগুণ করা হয়েছে। যাতে ইপিএস কমে তলানিতে নেমেছে। কোম্পানিটির আইপিও পূর্ব ৩০ কোটি ৫০ লাখ টাকার পরিশোধিত মূলধন এখন ১০১ কোটি ৮০ লাখ টাকায় উন্নিত হয়েছে। যা আইপিও’র অর্থের মধ্যে ২০ কোটি ৫০ লাখ টাকা, ২০১১ সালের ২৫ শতাংশ, ২০১২-২০১৪ সাল পর্যন্ত ১৫ শতাংশ ও ২০১৭ সালে ৫ শতাংশ বোনাস শেয়ার প্রদানের মাধ্যমে বাড়ানো হয়েছে।

ভালো ব্যবসায় দেখিয়ে জিবিবি পাওয়ার উচ্চ দরে শেয়ার ইস্যু করলেও তার কোন সুফল পাচ্ছে না বিনিয়োগকারীরা। প্রতিটি শেয়ারে ৪০ টাকা বিনিয়োগ করা কোম্পানি থেকে ২০১৭-১৮ অর্থবছরে শেয়ারহোল্ডারদের লভ্যাংশ প্রাপ্তি শূন্য। আর শেয়ার দর নেমে এসেছে ১০.৭০ টাকায়।

বিজনেস আওয়ার/১৮ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯/আরএ

ফেসবুকের মাধ্যমে আপনার মতামত জানান: