রেজোয়ান আহমেদ : বহুজাতিক কোম্পানি গ্রামীণফোনের শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত হওয়ার মাধ্যমে সাধারন শেয়ারহোল্ডারদের লভ্যাংশ প্রদান শেষে নিট ৪৮৯ কোটি টাকা গেইন হয়েছে। শেয়ারবাজারে প্রাথমিক গণপ্রস্তাবে (আইপিও) ইস্যুকৃত শেয়ারের বিপরীতে কোম্পানিটি থেকে যে পরিমাণ লভ্যাংশ বিতরন করা হয়েছে, তার চেয়ে ওই পরিমাণ বেশি কর সুবিধা পেয়েছে। ফলে উন্নয়নের কথা বলে বহুজাতিক কোম্পানিকে শেয়ারবাজারের আনা হলেও নামমাত্র শেয়ার অফলোডের কারনে তা প্রশ্নবিদ্ধ।
জানা গেছে, ১ হাজার ২১৫ কোটি ১৭ লাখ টাকা পরিশোধিত মূলধন নিয়ে গ্রামীণফোন আইপিওতে ৬ কোটি ৯৪ লাখ ৩৯ হাজার ৪০০টি ও প্লেসমেন্টে ৬ কোটি ৫৬ লাখ ৮৫ হাজার ৮০০টি শেয়ার ইস্যু করে। অর্থাত মোট শেয়ার ইস্যু করে ১৩ কোটি ৫১ লাখ ২৫ হাজার ২০০টি। যা প্রতিষ্ঠানটির মোট শেয়ারের ১০ শতাংশ। বাকি ৯০ শতাংশ বা ১২১ কোটি ৫১ লাখ ৭৪ হাজার ৮২২টি শেয়ার উদ্যোক্তাদের হাতে রয়েছে।
তথ্য অনুসন্ধানে জানা গেছে, ২০০৯ সালে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত হওয়া গ্রামীণফোন ২০১৭ সাল পর্যন্ত সময়ে প্রতিটি শেয়ারে ১৩৪.৫ টাকার লভ্যাংশ দিয়েছে। যাতে এই ৯ বছরে সাধারণ শেয়ারহোল্ডাররা (উদ্যোক্তা/পরিচালক ব্যতীত) ১ হাজার ৮১৭ কোটি ৪৩ লাখ টাকার লভ্যাংশ পেয়েছে।
অপরদিকে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত হওয়ায় কোম্পানিটিকে ২ হাজার ৩০৬ কোটি ২৬ লাখ টাকার কর কম দিতে হয়েছে। ফলে কোম্পানিটি শেয়ারবাজারে আসার কারনে নিট ৪৮৮ কোটি ৮৩ লাখ টাকার কর সুবিধা পেয়েছে। ফলে প্রতিষ্ঠানটি থেকে রাষ্ট্র রাজস্ব বঞ্চিত হয়েছে।
কোম্পানিটি ১০ শতাংশ শেয়ার ইস্যুর কারণে সাধারণ শেয়ারহোল্ডারদের প্রাপ্ত লভ্যাংশ ও কর সুবিধায় ৪৮৮ কোটি ৮৩ লাখ টাকার পার্থক্য হয়েছে। তবে কোম্পানিটি ১৭ কোটি ১৪ লাখ ৬৯ হাজার ১৪৫টি বা ১২.৭০ শতাংশ শেয়ার ইস্যু করলে এ পার্থক্য শূন্য হতো। কারণ ১২.৭০ শতাংশ শেয়ার ধারনে সাধারণ শেয়ারহোল্ডাররা ২ হাজার ৩০৬ কোটি ২৬ লাখ টাকা লভ্যাংশ পাবে।
কোম্পানিটি ২০০৯ সাল থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত সময়ে প্রতিটি শেয়ারে ১৩৪.৫ টাকা করে লভ্যাংশ দিয়েছে। এ হিসাবে সাধারণ শেয়ারহোল্ডাররা ১ হাজার ৮১৭ কোটি ৪৩ লাখ টাকার লভ্যাংশ পেয়েছে। আর উদ্যোক্তা/পরিচালকেরা পেয়েছেন ১৬ হাজার ৩৪৪ কোটি ১০ লাখ টাকার লভ্যাংশ।
এদিকে গ্রামীণফোন এই সময়ে কর পূর্ব আয় করেছে ২৯ হাজার ৮৩ কোটি ৭০ লাখ টাকা। এ ক্ষেত্রে কোম্পানিটি শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত হওয়ায় ২০১৪ সাল পর্যন্ত ১০ শতাংশ ও ২০১৫ সালে ৫ শতাংশ হিসেবে ২ হাজার ৩০৬ কোটি ২৬ লাখ টাকার কর সুবিধা পেয়েছে।
এ প্রসঙ্গে অর্থনীতিবিদ এবিএম মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বলেছেন, ‘বহুজাতিক কোম্পানিগুলোকে শেয়ারবাজারে আনার জন্য উৎসাহিত করা উচিত। এসব কোম্পানির বিরুদ্ধে কর ফাঁকির কোনো অভিযোগ নাই। এ ছাড়া ভালো লভ্যাংশ দিচ্ছে ও শেয়ার দর ভালো। তবে শেয়ার ইস্যুর পরিমাণ বাড়াতে পারলে ভালো।’
ডিএসই ব্রোকার্স অ্যাসোসিয়েশনের (ডিবিএ) সভাপতি শাকিল রিজভী বলেন, ‘১০ শতাংশ শেয়ার ইস্যুতে কোনো বহুজাতিক কোম্পানিকে ১০ শতাংশ কর রেয়াত সুবিধা প্রদান করা উচিত না। এক্ষেত্রে শেয়ার ইস্যু বাড়ানো উচিত। অন্যথায় কর সুবিধা কমিয়ে দেওয়া দরকার। এ অবস্থায় বহুজাতিক কোম্পানিগুলোর মূল উদ্দেশ্য থাকে কর সুবিধা নেওয়া, তালিকাভুক্তি না। তাই বিষয়টি সংশ্লিষ্টদের মূল্যায়ন করে একটি নীতিমালা প্রণয়ন করা উচিত।’
এদিকে নামমাত্র শেয়ার ইস্যুর মাধ্যমে কোনো বহুজাতিক কোম্পানি শেয়ারবাজারে আসা ও না আসা সমান কথা বলে জানান শাকিল রিজভী। তার মতে, যদি শেয়ারবাজারে সাপ্লাই না বাড়ে তাহলে তালিকাভুক্ত হয়ে লাভ নেই। এ ছাড়া নামমাত্র শেয়ার ইস্যুর ক্ষেত্রে শেয়ার দর নিয়ে অল্পতে কারসাজি করা সহজ হয়ে উঠে।
এএফসি ক্যাপিটালের সিইও মাহবুব এইচ মজুমদার (এফসিএমএ) বলেছেন, ‘বহুজাতিক কোম্পানিগুলো নামমাত্র শেয়ার ইস্যুর মাধ্যমে কর সুবিধা নিচ্ছে। এতে শেয়ারবাজার প্রকৃতপক্ষে উপকৃত না হলেও কোম্পানিগুলো কোটি কোটি টাকার রাজস্ব সুবিধা পাচ্ছে। এক্ষেত্রে শেয়ার ইস্যুর পরিমাণ বাড়ানো উচিত।’
এ বিষয়ে গ্রামীনফোনের হেড অফ এক্সটার্নাল কমিউনিকেশনস সৈয়দ তালাত কামাল বলেন, বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের অন্যতম চালিকা শক্তি শেয়ারবাজারকে আরো সংহত করতে গ্রামীণফোন শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত হয়েছে। যার ফলে বাংলাদেশের সাধারন মানুষ গ্রামীণফোনের সাফল্যের অংশীদার হতে পারছে।
বিজনেস আওয়ার/০৬ জানুয়ারি, ২০১৯/আরএ
One thought on “শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্তিতে গ্রামীণফোনের নিট ৪৮৯ কোটি টাকা গেইন”