1. [email protected] : anjuman : anjuman
  2. [email protected] : user : user
  3. [email protected] : Admin : Admin
  4. [email protected] : Nayan Babu : Nayan Babu
ভাঙন তান্ডবে দিশেহারা যমুনা পাড়ের মানুষ
শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৯:৪৩ অপরাহ্ন

ভাঙন তান্ডবে দিশেহারা যমুনা পাড়ের মানুষ

  • পোস্ট হয়েছে : রবিবার, ১২ জুলাই, ২০২০
print sharing button

বিজনেস আওয়ার প্রতিবেদক (টাঙ্গাইল) : ভাঙন তান্ডবে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন যমুনা নদীর তীরবর্তী মানুষ। ভাঙনরোধে পানি উন্নয়ন বোর্ডের জিও ব্যাগ ফেলা কার্যক্রম চললেও নিয়ন্ত্রণে আসছেনা ভাঙন। এতে জমি জমা হারিয়ে দিশেহারা গ্রামবাসি এখন অন্যত্র সরিয়ে নিচ্ছেন বসবাসের ঘরবাড়ি। অনেকে আবার ভাঙনে ঘরবাড়ি হারিয়ে সর্বশান্ত হয়ে পড়েছেন। এমন চিত্র দেখা গেছে টাঙ্গাইলের কালিহাতী উপজেলা গোহালিয়াবাড়ী ইউনিয়নের ৮ নং ওয়ার্ডের আলীপুর আর বেলটিয়া গ্রামে।

স্থানীয়দের দেয়া তথ্যে জানা যায়, আলীপুর গ্রামটি নিয়ে গঠিত উপজেলা গোহালিয়াবাড়ী ইউনিয়ন পরিষদের ৮ নং ওয়ার্ড। এ ওয়ার্ডের ভোটার সংখ্যা এক হাজার সাত’শ জন। দীর্ঘদিনের নদী ভাঙনের কবলে পড়ে গ্রামটির অধিকাংশ ভোটারই এখন বসবাস করছেন বেলটিয়া গ্রামে। বন্যার শুরুতেই এ গ্রামের অর্ধশতাধিক ঘরবাড়ি আর প্রায় ৪০ বিঘা ফসলী জমি নদী গর্ভে বিলীন হয়েছে।

বিলীন হয়েছে এক কিলোমিটার কাঁচা সড়ক। এখন ভাঙনের কবলে রয়েছে ১৯৩৫ সালে স্থাপিত ৩নং বেলটিয়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় (আলীপুর), দুটি মসজিদ আর ১৯৮২ সালে স্থাপিত আলীপুর দারুচ্ছুন্নাহ দাখিল মাদ্রাসাসহ দুই শতাধিক ঘরবাড়ি আর শত শত বিঘা আবাদী জমি।

চলতি বছরের জুনে যমুনার ভাঙনরোধে উপজেলার গোহালিয়াবাড়ী ইউনিয়ন পরিষদের বেলটিয়া আর আলীপুর গ্রামের দেড়শ মিটার এলাকায় দশ হাজার নয়’শ জিও ব্যাগ ফেলেছে পানি উন্নয়ন বোর্ড। তবে এতেও ভাঙন বন্ধ না হওয়ায় সম্প্রতি ড্রেজারের মাধ্যমে নদী থেকে বালু উত্তোলন করে ভাঙন কবলিত বেলটিয়া গ্রামের কিছু অংশে আবার ফেলা হচ্ছে বালু।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয়দের অভিযোগ, পানি উন্নয়ন বোর্ডের জিও ব্যাগ আর বালু অপরিকল্পিতভাবে ফেলার কারণে গ্রাম গুলোতে ভাঙন আরো তীব্র হয়ে উঠেছে। ভাঙন তীব্র হওয়ায় দ্রুতই তাদের ঘরবাড়ি আর জমিজমা নদী গর্ভে বিলীন হয়েছে। এছাড়াও যে সকল স্থানে জিও ব্যাগ আর ড্রেজারের মাধ্যমে নদী থেকে উত্তোলন করে ফেলা বালুও ভাঙনরোধ করতে পারছেনা। জোড়াতালির পরিবর্তে স্থায়ী বাঁধ নির্মাণের দাবি করেছেন ভুক্তভোগীরা। এরপরও রয়েছে ঘরবাড়ি হারানো ক্ষতিগ্রস্থদের বাদ রেখে ঘরবাড়ি না হারানো ব্যক্তিদের সরকারী সহায়তা দেবার অভিযোগ।

ভাঙনের শিকার রহিমা বেগম বলেন, যমুনার ভাঙন কবলে পড়ে এখন আমরা সর্বশান্ত। নদীর পেটে গেছে আমাগো জমিজমা। এখন জীবন বাঁচাইতে নৌকায় মাথা গোজার ঘর, আসবাবপত্র আর পরিবার পরিজন নিয়ে অন্যত্র সইরা যাইতাছি।

ভাঙন আতঙ্কিত মমতা বলেন, জমিজমা নদীর পেটে গেছে এখন ভয়ে আছি কখন হারামু ঘরবাড়ি। ছোট ছোট বাচ্চাগুলারে নিয়া কৈ যামু কিছুই বুঝবার পারতাছিনা।

পঞ্চাশ উর্দ্ধো আমেনা বলেন, নদীর ভাঙন দেইখা ঘরবাড়ি ভাংছি। এগুলারে এখন কৈ নিমু আর কি করমু এটাই ভাবতাছি। আল্লাহ ছাড়া আমাগো দেখবার কেউ নাই।

বেলটিয়া গ্রামের সাহাদত হোসেন জানান, চলতি বন্যায় তার চারটি ঘর, একটি দোকান আর ২০ শতাংশ আবাদী জমি নদী গর্ভে বিলীন হলেও তিনি পাননি কোন সরকারী সহায়তা।

আলীপুর গ্রামের আব্দুল আজিজ বলেন, ঘরবাড়িসহ তার ৫৫শতাংশ জমি নদী গর্ভে হারালেও তিনি পাননি কোন সরকারী সহায়তা। তবে ওই গ্রামের ঘরবাড়ি না হারানো ব্যক্তিরা ঠিকই পেয়েছেন সরকারী সহায়তা।

অভিযোগ স্বীকার করে ওই গ্রামের সাবেক সংরক্ষিত মহিলা সদস্য লুৎফুন্নেসা বলেন, গত ২০০৩ থেকে টানা ২০১৬ সাল পর্যন্ত সংরক্ষিত মহিলা সদস্য পদটির দায়িত্ব পালন করেছেন তিনি। দীর্ঘদিন যাবৎ ক্ষতিগ্রস্থদের বাদ রেখে এ সকল সুবিধা পাচ্ছেন অন্যরা। অসংখ্যবার অভিযোগ করেও এ সমস্যার সমাধান করতে পারেননি তিনি। স্বজনপ্রীতির মাধ্যমে এ ধরণের অপকর্ম চলছে বলেও জানান তিনি।

গোহালিয়াবাড়ী ইউনিয়ন পরিষদের ৮ নং ওয়ার্ড সদস্য আব্দুল খালেক বলেন, গত জুনে ওয়ার্ডের দেড়শ মিটার এলাকায় দশ হাজার নয়শতটি জিও ব্যাগ ফেলা হয়েছে। এরপরও ভয়াবহ ভাঙন চলছে তার ওয়ার্ডে। ভাঙনে কবলে পড়ে ইতোমধ্যেই নদী গর্ভে বিলীন হয়েছে ৪০টি ঘরবাড়ি, প্রায় ৪০ বিঘা ফসলী জমি আর এক কিলোমিটার কাঁচা সড়ক। এরপরও ভাঙনের শঙ্কায় রয়েছে ১৯৩৫ সালে স্থাপিত ৩নং বেলটিয়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় (আলীপুর), দুটি মসজিদ আর ১৯৮২ সালে স্থাপিত আলীপুর দারুচ্ছুন্নাহ দাখিল মাদ্রাসাসহ দুই শতাধিক ঘরবাড়ি আর শত শত বিঘা আবাদী জমি।

ক্ষতিগ্রস্থদের পরিবর্তে সরকারী সুবিধা নিচ্ছেন অন্যরা এমন অভিযোগ অস্বীকার করে তিনি বলেন, গত বৃহস্পতিবার (৯ জুলাই) দুপুরে উপজেলার গোহালিয়াবাড়ি ইউনিয়নের যমুনা নদীর ভাঙনে ক্ষতিগ্রস্থ এলাকা বেলটিয়া গ্রাম পরিদর্শনে আসেন পানিসম্পদ উপমন্ত্রী এ কে এম এনামুল হক শামীম।

তিনি ওইদিন গত ৪ জুলাই নদী ভাঙনে ক্ষতিগ্রস্থ ৩৭টি পরিবারকে নগদ ১০ হাজার করে টাকা ও ত্রাণ সামগ্রী বিতরণ করেন। এর মধ্যে ওই সহায়তা পেয়েছেন তার ওয়ার্ডের ৯জন। তবে এর পরে নদী ভাঙনের শিকার হয় আরো ২০টি ঘরবাড়ি। তাই ওই সহায়তার তালিকায় বাকি নামগুলো অর্ন্তভুক্ত করা যায়নি।

গোহালিয়াবাড়ি ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান হযরত আলী তালুকদার বলেন, পরিষদের অর্ন্তভুক্ত ৭ ও ৮ নং ওয়ার্ডের বেলটিয়া আর আলীপুরে ব্যাপক শুরু হয়েছে। বিষয়টি মাননীয় স্থানীয় সংসদ সদস্য আর পানি উন্নয়ন বোর্ডকে অবহিত করা হয়েছে।

বক্তব্য গ্রহণের চেষ্টায় টাঙ্গাইল পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলীর ব্যক্তিগত মুঠোফোনে একাধিকবার চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি।

এ প্রসঙ্গে টাঙ্গাইল-৪ (কালিহাতী) আসনের সংসদ সদস্য আলহাজ্ব হাছান ইমাম খান সোহেল হাজারী বলেন, ভাঙনরোধে নদীর দুইপাড়ে পাকা বাঁধ নির্মাণের জন্য ২৪১ কোটি টাকার টেন্ডার হয়েছে। পানি কমলেই এ কাজ শুরু হবে।

এছাড়াও নদী ভাঙন এলাকা পরিদর্শণে এসে নদীতে স্থায়ী প্রতিরক্ষা কাজ করার আশ্বাস দিয়েছেন পানিসম্পদ উপমন্ত্রী এ কে এম এনামুল হক শামীম। এ সময় তিনি, ক্ষতিগ্রস্থদের মাঝে প্রধানমন্ত্রীর দেয়া জনপ্রতি দশ হাজার, বিশ কেজি করে চাল আর শুকনো খাবার বিতরণ করেন। পরিকল্পনা অনুসারে ভাঙন এলাকায় জিও ব্যাগ ফেলেছে পানি উন্নয়ন বোর্ড।

বিজনেস আওয়ার/১২ জুলাই, ২০২০/টিএ/এ

ফেসবুকের মাধ্যমে আপনার মতামত জানান:

শেয়ার দিয়ে সবাইকে দেখার সুযোগ করে দিন

এ বিভাগের আরো সংবাদ