ঢাকা , বৃহস্পতিবার, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ১৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

বাবা, গোসত খাইতে কইলজা ছটফট করে

  • পোস্ট হয়েছে : ০৬:৪৬ অপরাহ্ন, রবিবার, ১২ ডিসেম্বর ২০২১
  • 46

ডেস্ক রিপোর্ট: জীবন সংগ্রমী লড়াকু একজন সৈনিক। ১৩ বছর বয়সেই পিতা হারিয়ে এতিম হন। শৈশব থেকেই সংসারের হাল ধরতে হাতে তুলে নেন রিক্সা। যেই বয়সে হাতে উঠার কথা কলম, কিন্তু ভাগ্যের নির্মম পরিহাসে কলমের বদলে হাতে উঠলো রিক্সার প্যাডেল।

পা দিয়ে রিক্সার চাকা ঘুরার সাথে সাথে যেন চলে সংসারের চাকা। শৈশব থেকে কৈশোর এরপর বার্ধক্যে এসেও থামেনি জীবন সংগ্রামের চাকা। ৮২ বছর ধরে রিক্সা চালিয়ে প্রাণপণে জীবন লড়াইয়ে টিকে থেকেও হার মানেন নি। রিক্সার চাকা তার ভাগ্যের চাকা।

কিশোরগঞ্জের কটিয়াদী উপজেলার অদম্য এই মানুষটির নাম শাহাবুদ্দিন। তার বর্তমান বয়স ৯৫। জালালপুর ইউনিয়নের ফেকামারা গ্রামে তার বাড়ি। জীর্ণশীর্ণ শরীর নিয়ে বাজারের দোকানে সহযোগিতার জন্যে হাত পেতে ভিক্ষা চাইছেন।

শাহাবুদ্দিনের সাথে কথা বলে জানা যায়, তার কোন ছেলে সন্তান নেই। ৩ মেয়ের বিয়ে হয়ে গেছে। মেয়েরা এবং মেয়ের জামাইরা কোন সহযোগিতা করেন না তাকে। তার মধ্যে এক মেয়ের স্বামী ডিভোর্স দিয়ে দেবার ফলে এখন পিতার বাড়িতেই থাকছেন। বাড়িতে স্ত্রী ও এক মেয়েকে নিয়ে খুবই কষ্টে মানবেতর জীবনযাপন করতে হচ্ছে বৃদ্ধ শাহাবুদ্দিনের। ছোট ঝুপড়ি ঘরে থাকেন। বৃষ্টি হলে পানি পড়ে। শীতের সময় অসহনীয় কষ্ট করতে হয়। এখন শীতবস্ত্রের অভাবে ভুগছেন।

কথা বলার মাঝেই পানিতে দুচোখ টলমল করছিলো তার। তিনি জানান, এই বয়সে এসেও তিনি বিশ্রম নিতে পারছেন না। নিজের ও সংসারের খাবার যোগান দিতে নাজুক শরীর নিয়ে ভিক্ষা করতে হচ্ছে। বয়স্ক ভাতা কয়েকমাস আগে থেকে পাচ্ছেন। তবে তা দিয়ে সংসার চলেনা। ঔষধের পিছনেই সব খরচ হয়ে যায়।

বৃদ্ধ শাহাবুদ্দিন বলেন, অহন (বর্তমানে) জিনিসপত্রের যে দাম বাড়ছে, তাতে আমার মতো গরিব কেমনে বাইচা থাহুম? যতদিন শরিল শক্তি ছিল কর্ম করে চলেছি। এখন শরিলের কাছে হাইরা গেছি। সারাদিন ভিক্ষা কইরা দু’ টেহাও (টাকা) পাই না। এইডা দিয়ে কেমনে বাইচা (বেঁচে) থাকমু? মাছের ও গোসতের মেলা দাম। কবে ঈদে কয়েক টুকরো গোসত খাইছিলাম স্ত্রী’ ও মেয়েরে লইয়া। বাজারে এক কেজি গরুর গোসতের দাম ৫৫০ টাকা। খাসির গোসত কেজি ৭৫০ টাকা। দামের লাইগা কিনতে পারিনা। খাইতে মনডা ছটফট করে আমার। চাইলেও কিনে খাইতে পারিনা। আমরা ঘরের কেউ একবছর ধইরা গোসত খাইতে পারছি না রে বাবা। অনেকটা আক্ষেপ নিয়েই কথাগুলো বলেছেন শাহাবুদ্দিন।

তিনি আরও বলেন, ‘কোন বাজান যদি আমারে কিছু সহযোগিতা করতো, কেউ যদি ঘরটা তৈরি করে দিয়ে গরু ছাগল কিনে দিতো তাই দিয়ে বাকি জীবনটা চলতে পারতাম।’ সূত্র: বার্তা২৪.কম

বিজনেস আওয়ার/১২ ডিসেম্বর, ২০২১/এএইচ

ফেসবুকের মাধ্যমে আপনার মতামত জানান:
ট্যাগ :

আপনার মতামত লিখুন

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার মেইলে তথ্য জমা করুন

বাবা, গোসত খাইতে কইলজা ছটফট করে

পোস্ট হয়েছে : ০৬:৪৬ অপরাহ্ন, রবিবার, ১২ ডিসেম্বর ২০২১

ডেস্ক রিপোর্ট: জীবন সংগ্রমী লড়াকু একজন সৈনিক। ১৩ বছর বয়সেই পিতা হারিয়ে এতিম হন। শৈশব থেকেই সংসারের হাল ধরতে হাতে তুলে নেন রিক্সা। যেই বয়সে হাতে উঠার কথা কলম, কিন্তু ভাগ্যের নির্মম পরিহাসে কলমের বদলে হাতে উঠলো রিক্সার প্যাডেল।

পা দিয়ে রিক্সার চাকা ঘুরার সাথে সাথে যেন চলে সংসারের চাকা। শৈশব থেকে কৈশোর এরপর বার্ধক্যে এসেও থামেনি জীবন সংগ্রামের চাকা। ৮২ বছর ধরে রিক্সা চালিয়ে প্রাণপণে জীবন লড়াইয়ে টিকে থেকেও হার মানেন নি। রিক্সার চাকা তার ভাগ্যের চাকা।

কিশোরগঞ্জের কটিয়াদী উপজেলার অদম্য এই মানুষটির নাম শাহাবুদ্দিন। তার বর্তমান বয়স ৯৫। জালালপুর ইউনিয়নের ফেকামারা গ্রামে তার বাড়ি। জীর্ণশীর্ণ শরীর নিয়ে বাজারের দোকানে সহযোগিতার জন্যে হাত পেতে ভিক্ষা চাইছেন।

শাহাবুদ্দিনের সাথে কথা বলে জানা যায়, তার কোন ছেলে সন্তান নেই। ৩ মেয়ের বিয়ে হয়ে গেছে। মেয়েরা এবং মেয়ের জামাইরা কোন সহযোগিতা করেন না তাকে। তার মধ্যে এক মেয়ের স্বামী ডিভোর্স দিয়ে দেবার ফলে এখন পিতার বাড়িতেই থাকছেন। বাড়িতে স্ত্রী ও এক মেয়েকে নিয়ে খুবই কষ্টে মানবেতর জীবনযাপন করতে হচ্ছে বৃদ্ধ শাহাবুদ্দিনের। ছোট ঝুপড়ি ঘরে থাকেন। বৃষ্টি হলে পানি পড়ে। শীতের সময় অসহনীয় কষ্ট করতে হয়। এখন শীতবস্ত্রের অভাবে ভুগছেন।

কথা বলার মাঝেই পানিতে দুচোখ টলমল করছিলো তার। তিনি জানান, এই বয়সে এসেও তিনি বিশ্রম নিতে পারছেন না। নিজের ও সংসারের খাবার যোগান দিতে নাজুক শরীর নিয়ে ভিক্ষা করতে হচ্ছে। বয়স্ক ভাতা কয়েকমাস আগে থেকে পাচ্ছেন। তবে তা দিয়ে সংসার চলেনা। ঔষধের পিছনেই সব খরচ হয়ে যায়।

বৃদ্ধ শাহাবুদ্দিন বলেন, অহন (বর্তমানে) জিনিসপত্রের যে দাম বাড়ছে, তাতে আমার মতো গরিব কেমনে বাইচা থাহুম? যতদিন শরিল শক্তি ছিল কর্ম করে চলেছি। এখন শরিলের কাছে হাইরা গেছি। সারাদিন ভিক্ষা কইরা দু’ টেহাও (টাকা) পাই না। এইডা দিয়ে কেমনে বাইচা (বেঁচে) থাকমু? মাছের ও গোসতের মেলা দাম। কবে ঈদে কয়েক টুকরো গোসত খাইছিলাম স্ত্রী’ ও মেয়েরে লইয়া। বাজারে এক কেজি গরুর গোসতের দাম ৫৫০ টাকা। খাসির গোসত কেজি ৭৫০ টাকা। দামের লাইগা কিনতে পারিনা। খাইতে মনডা ছটফট করে আমার। চাইলেও কিনে খাইতে পারিনা। আমরা ঘরের কেউ একবছর ধইরা গোসত খাইতে পারছি না রে বাবা। অনেকটা আক্ষেপ নিয়েই কথাগুলো বলেছেন শাহাবুদ্দিন।

তিনি আরও বলেন, ‘কোন বাজান যদি আমারে কিছু সহযোগিতা করতো, কেউ যদি ঘরটা তৈরি করে দিয়ে গরু ছাগল কিনে দিতো তাই দিয়ে বাকি জীবনটা চলতে পারতাম।’ সূত্র: বার্তা২৪.কম

বিজনেস আওয়ার/১২ ডিসেম্বর, ২০২১/এএইচ

ফেসবুকের মাধ্যমে আপনার মতামত জানান: