বিজনেস আওয়ার প্রতিবেদক : গত জুন মাসে কর্মীদের বেতন কমানোর কমানোর ঘোষণা দেয় ব্যাংক মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকস (বিএবি)। অবশ্য বিএবি’র এই ঘোষণার আগেই সিটি ব্যাংক বেতন কমানোর ঘোষণা দেয়। এরপর এক্সিম ব্যাংকের বেতন কমানোর মধ্য দিয়ে এই যাত্রার শুরু হয়।
সিটি ব্যাংকের মতোই টিকে থাকার তাগিদে কর্মীদের বেতনভাতা কমানোর উদ্যোগ নিয়েছে আরও বেশ কয়েকটি ব্যাংক। গত মাসে বেতন কমানোর তালিকায় নাম লেখায় বেসরকারি এবি ব্যাংক। গত মাস থেকেই এন্ট্রি লেভেল থেকে এমডি পর্যন্ত ৩ ও ৫ শতাংশ হারে বেতনভাতা কর্তন করেছে ব্যাংকটি। এদিকে চলতি জুলাই মাসে এই তালিকায় যুক্ত হয় ওয়ান ব্যাংক।
ব্যাংক কর্মকর্তা-কর্মচারীদের স্বার্থ রক্ষায় কাজ করা ব্যাংকার্স ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশন বাংলাদেশের সভাপতি কাজী মো. সফিকুর রহমান বলেন, প্রথমে এবি ব্যাংক বেতন কমিয়েছে। এ পর্যন্ত এবি ব্যাংক ছাড়াও আরও তিনটি ব্যাংক বেতন কমিয়েছে। এগুলো হলো ওয়ান ব্যাংক, এক্সিম ব্যাংক ও সিটি ব্যাংক।
এ বিষয়ে এক্সিম ব্যাংকের চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম মজুমদার বলেন, গাছ বাঁচিয়ে রাখলেই গাছ থেকে ফল পাওয়া যাবে। এই মুহূর্তে ব্যাংকগুলোকে টিকে থাকতে হবে। যেসব ব্যাংকের আয় কমে গেছে, তাদের ব্যয়ও কমাতে হবে। এক্ষেত্রে বেতন কমিয়ে অথবা অন্য যে কোনও পদ্ধতি গ্রহণ করে টিকে থাকতে হবে।
তিনি বলেন, তার ব্যাংকের যারা ৪০ হাজার টাকার বেশি বেতন পান, আগামী দেড় বছরের জন্য তাদের ১৫ শতাংশ বেতনভাতা কমিয়ে দেওয়া হয়েছে। করোনার কারণে চলমান সংকটে অনেক ব্যাংক অতিরিক্ত খরচ বহন করতে পারছে না। ফলে বাধ্য হয়ে ভবিষ্যতে টিকে থাকতে এমন সিদ্ধান্ত নিতে হচ্ছে।
এদিকে মহামারি করোনার আর্থিক ক্ষতি পুষিয়ে নিতে এবি ব্যাংক গত মে ও জুন মাসের বেতন ৫ শতাংশ কমায় ব্যাংকটি। এছাড়া সমালোচনার মধ্যেও চলতি মাসে কর্মীদের বেতন কমানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে বেসরকারি খাতের ওয়ান ব্যাংক। ব্যাংকটি তাদের কর্মকর্তাদের বেতন ৫ থেকে ১০ শতাংশ পর্যন্ত কমিয়েছে।
গত ১ জুলাই থেকে বেতন কমানোর সিদ্ধান্ত কার্যকর হয়েছে জানিয়ে বৃহস্পতিবার (৯ জুলাই) এ সংক্রান্ত একটি অফিস আদেশ জারি করেছে ব্যাংকটি।
আদেশে বলা হয়েছে, পরিচালনা পর্ষদের সিদ্ধান্ত মোতাবেক অফিসার থেকে সিনিয়র প্রিন্সিপাল অফিসার পর্যায়ের কর্মকর্তা, যাদের বেতন ৫০ হাজার টাকার বেশি তাদের বেতন ৫ শতাংশ কমানো হয়েছে। অ্যাসিস্ট্যান্ট ভাইস প্রেসিডেন্ট (এভিপি) থেকে শুরু করে উচ্চপর্যায়ের কর্মকর্তাদের বেতন কমানো হয়েছে ১০ শতাংশ।
বেতনের পাশাপাশি অন্যান্য সুযোগ সুবিধা ৫ ও ১০ শতাংশ হারে কমানো হবে। তবে ৫০ হাজার টাকা বা তার নিচে যারা বেতন পান তাদের বেতন কমানো হবে না। আর ৫০ হাজার টাকার ওপরে যারা বেতন পান তাদের বেতন কমানোর পর যদি ৫০ হাজার টাকার নিচে নেমে আসে তাহলে তার বেতন ৫০ হাজার টাকা নির্ধারিত হবে।
আদেশে আরও বলা হয়েছে, করানোভাইরাসের ক্ষতি মোকাবিলায় খরচ কমানোর উদ্যোগ হিসেবে ব্যাংকে এই উদ্যোগের অংশ হিসেবে বেতন কর্মকর্তা পর্যায়ে কমানো হয়েছে। আশা করি এতে কর্মকর্তারা মনোক্ষুণ্ন হবেন না বরং বিশেষ পরিস্থিতি মোকাবিলায় মনোবল চাঙা রেখে সঠিকভাবে কাজ করবেন।
সুদিন আসলে আবার সব ঠিক হবে বলেও কর্মীদের আশ্বস্ত করা হয়েছে আদেশে। ব্যাংকের স্থায়ী ও চুক্তিভিত্তিক সবার জন্যই এ নিয়ম কার্যকর হবে বলে জানানো হয়েছে।
করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবে আর্থিক ক্ষতি পুষিয়ে নিতে কর্মীদের ১৬ শতাংশ বেতনভাতা কমানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে বেসরকারি খাতের দ্য সিটি ব্যাংক লিমিটেড। কর্মকর্তাদের বেতনের কমে যাওয়া ১৬ শতাংশের মধ্যে ১০ শতাংশ বেতন ও অন্যান্য সুযোগ সুবিধা ৬ শতাংশ।
সিটি ব্যাংক এর বেতন কমানোর এই সিদ্ধান্ত গত ১ জুন থেকেই কার্যকর হয়েছে। বহাল থাকবে ২০২১ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত। ব্যাংকটি আগামী বছর (২০২১ সালে) পারফরমেন্স বোনাস ও ইনক্রিমেন্টও দেবে না। এছাড়া বেসরকারি আল আরাফাহ ইসলামী ব্যাংকের বেতন কমানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে তাদের পরিচালনা পর্ষদ।
বিজনেস আওয়ার/১৩ জুলাই, ২০২০/এ