ঢাকা , শনিবার, ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ২৮ ভাদ্র ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

আইএফআইসি ব্যাংকের এমডির বছরে ২১ বার বিদেশ সফর, দায়িত্বশীলতা নিয়ে প্রশ্ন

  • পোস্ট হয়েছে : ০৭:৪৭ অপরাহ্ন, রবিবার, ৯ জানুয়ারী ২০২২
  • 105

বিজনেস আওয়ার প্রতিবেদক: শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানি আইএফআইসি ব্যাংক লিমিটেডের গত ৯ বছর ধরে ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহীর দায়িত্ব পালন করছেন মোহাম্মাদ শাহ আলম সরোয়ার। তবে তিনি বছরের বেশিরভাগ সময় বিদেশে অবস্থান করায় তার দায়িত্বশীলতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। একাধিক দায়িত্বশীল সূত্রে জানা গেছে এমন তথ্য।

এদিকে দেশের প্রথম সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্বে প্রতিষ্ঠিত আইএফআইসি ব্যাংকের প্রভাবশালী একটি পক্ষ এ ব্যাংকারকে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর হিসেবেও দেখতে চায় । বিয়য়টি বাংলাদেশ ব্যাংকের নজরে এসেছে। এজন্য প্রভাবশালী এ ব্যাংকারের বিরুদ্ধে মৃদু অভিযোগও তুলেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। তার ঘনঘন বিদেশ সফর নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে পুরো ব্যাংক খাতে। বিদেশ যাওয়া ঠেকাতে প্রজ্ঞাপন পর্যন্ত জারি করতে বাধ্য হয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

সূত্র জানিয়েছে, ২০১৯ সালের চার মাসই বিদেশে কাটিয়েছেন তিনি। বছরটিতে মোট ২১ বার বিদেশ সফর করেছেন, যা ব্যাংক খাতে রেকর্ড তৈরি করেছে। এতে ব্যাংকের পরিচালনায় সমস্যা তৈরি হওয়া, সার্বিক কর্মকাণ্ডে গতি কমে যাওয়া ও আর্থিক ক্ষতি হচ্ছে বলে পর্যবেক্ষণ দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

আইএফআইসি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের বিদেশ সফর-সংক্রান্ত প্রতিবেদনটি এখন অর্থ মন্ত্রণালয়ে। এতবার বিদেশ সফর করতে তিনি মোট ছুটি কাটিয়েছেন ১১৭ দিন। এভাবে বছরের তিন ভাগের এক ভাগ সময়, অর্থাৎ চার মাসই বিদেশে ছিলেন। এ সময় তিনি সবচেয়ে দীর্ঘ সময় কাটিয়েছেন টানা ২১ দিন।

কর্মকর্তারা বলছেন, কোনো ব্যাংকের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের বিদেশ সফরের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। কিন্তু ঘনঘন ও লম্বা ছুটি নিয়ে ব্যাংকের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তির বিদেশ সফর ক্ষতিকর। তার এমন বিদেশ সফরে ব্যাংকের আর্থিক স্বাস্থ্য, পরিচালনগত ঝুঁকি ও সার্বিক গতিশীলতা নিয়ে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

দায়িত্বশীল সূত্র বলছে, ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহীর এত বিদেশ সফর নিয়ে আইএফআইসি ব্যাংকের অভ্যন্তরেও সমালোচনার জন্ম হয়েছে। বিষয়টি ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ পর্যন্ত গিয়ে ঠেকেছে।

জানা গেছে, ব্যাংকের কর্যক্রমে ক্ষতি হওয়া ও বিশৃঙ্খলা তৈরির শঙ্কায় ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালকদের বিদেশ সফরের লাগাম টানতে একটি প্রজ্ঞাপন জারি করে বাংলাদেশ ব্যাংক। ২০২০ সালের ২৩ মার্চ জারি করা ওই প্রজ্ঞাপনে উল্লেখ করা হয়, ‘সম্প্রতি পরিলক্ষিত হচ্ছে যে, কতিপয় ব্যাংক-কোম্পানির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা অফিস কিংবা ব্যক্তিগত ছুটিতে দীর্ঘদিনের জন্য বাংলাদেশের বাইরে অবস্থান করছেন। এতে ব্যাংকের কর্মকাণ্ডে গতিশীলতা হ্রাসের পাশাপাশি ব্যবস্থাপনা ও পরিচালনগত ঝুঁকিসহ আর্থিক ক্ষতির আশঙ্কা সৃষ্টি হচ্ছে।’

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অর্থ মন্ত্রণালয়ের এক দায়িত্বশীল কর্মকর্তা জানিয়েছেন, প্রতিবেদন পাওয়ার পরই আইএফআইসি ব্যাংকের প্রতি নির্দেশনা দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। সেখানে ব্যবস্থাপনা পরিচালকের অফিশিয়াল বা ব্যক্তিগত কাজে দীর্ঘদিনের জন্য দেশের বাইরে থাকতে নিষেধ করা হয়েছে। একই সঙ্গে দীর্ঘদিনের জন্য ছুটিতে থাকতে বিশেষ অনুমোদন নেয়ার জন্য পরামর্শ দেয়া হয়েছে।

প্রসঙ্গত, প্রথম প্রজন্মের ব্যাংক হিসেবে আইএফআইসি ব্যাংক দেশের শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত হয় ১৯৮৬ সালে। বর্তমানে ব্যাংকটির মালিকানার অংশীদার হিসেবে রয়েছে রাষ্ট্র। মোট শেয়ারের ৩২ দশমিক ৭৫ শতাংশই রাষ্ট্রীয় মালিকানায়। অবশিষ্ট শেয়ারের মধ্যে ৩৯ দশমিক ১৯ শতাংশ সাধারণ বিনিয়োগকারীদের, শূন্য দশমিক ৮৪ শতাংশ বিদেশি বিনিয়োগকারীদের, ২১ দশমিক শূন্য আট শতাংশ প্রাতিষ্ঠানিক পর্যায়ে এবং উদ্যোক্তাদের কাছে রয়েছে ছয় দশমিক ১৪ শতাংশ। সর্বশেষ ব্যাংকটির শেয়ার হাতবদল হয়েছে ১৬ টাকা ৯০ পয়সায়। প্রতিষ্ঠার পর থেকে ব্যাংকটি এখনও নগদ লভ্যাংশ দেয়নি। সর্বশেষ গত বছর বিনিয়োগকারীদের পাঁচ শতাংশ বোনাস লভ্যাংশ দিয়েছে। এ সময়ে ব্যাংকটির নিট মুনাফা ছিল ১১৩ কোটি ৩০ লাখ টাকা।

বিজনেস আওয়ার/০৯ জানুয়ারি, ২০২২/এএইচ

ফেসবুকের মাধ্যমে আপনার মতামত জানান:
ট্যাগ :

আপনার মতামত লিখুন

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার মেইলে তথ্য জমা করুন

সর্বাধিক পঠিত

আইএফআইসি ব্যাংকের এমডির বছরে ২১ বার বিদেশ সফর, দায়িত্বশীলতা নিয়ে প্রশ্ন

পোস্ট হয়েছে : ০৭:৪৭ অপরাহ্ন, রবিবার, ৯ জানুয়ারী ২০২২

বিজনেস আওয়ার প্রতিবেদক: শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানি আইএফআইসি ব্যাংক লিমিটেডের গত ৯ বছর ধরে ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহীর দায়িত্ব পালন করছেন মোহাম্মাদ শাহ আলম সরোয়ার। তবে তিনি বছরের বেশিরভাগ সময় বিদেশে অবস্থান করায় তার দায়িত্বশীলতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। একাধিক দায়িত্বশীল সূত্রে জানা গেছে এমন তথ্য।

এদিকে দেশের প্রথম সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্বে প্রতিষ্ঠিত আইএফআইসি ব্যাংকের প্রভাবশালী একটি পক্ষ এ ব্যাংকারকে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর হিসেবেও দেখতে চায় । বিয়য়টি বাংলাদেশ ব্যাংকের নজরে এসেছে। এজন্য প্রভাবশালী এ ব্যাংকারের বিরুদ্ধে মৃদু অভিযোগও তুলেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। তার ঘনঘন বিদেশ সফর নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে পুরো ব্যাংক খাতে। বিদেশ যাওয়া ঠেকাতে প্রজ্ঞাপন পর্যন্ত জারি করতে বাধ্য হয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

সূত্র জানিয়েছে, ২০১৯ সালের চার মাসই বিদেশে কাটিয়েছেন তিনি। বছরটিতে মোট ২১ বার বিদেশ সফর করেছেন, যা ব্যাংক খাতে রেকর্ড তৈরি করেছে। এতে ব্যাংকের পরিচালনায় সমস্যা তৈরি হওয়া, সার্বিক কর্মকাণ্ডে গতি কমে যাওয়া ও আর্থিক ক্ষতি হচ্ছে বলে পর্যবেক্ষণ দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

আইএফআইসি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের বিদেশ সফর-সংক্রান্ত প্রতিবেদনটি এখন অর্থ মন্ত্রণালয়ে। এতবার বিদেশ সফর করতে তিনি মোট ছুটি কাটিয়েছেন ১১৭ দিন। এভাবে বছরের তিন ভাগের এক ভাগ সময়, অর্থাৎ চার মাসই বিদেশে ছিলেন। এ সময় তিনি সবচেয়ে দীর্ঘ সময় কাটিয়েছেন টানা ২১ দিন।

কর্মকর্তারা বলছেন, কোনো ব্যাংকের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের বিদেশ সফরের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। কিন্তু ঘনঘন ও লম্বা ছুটি নিয়ে ব্যাংকের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তির বিদেশ সফর ক্ষতিকর। তার এমন বিদেশ সফরে ব্যাংকের আর্থিক স্বাস্থ্য, পরিচালনগত ঝুঁকি ও সার্বিক গতিশীলতা নিয়ে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

দায়িত্বশীল সূত্র বলছে, ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহীর এত বিদেশ সফর নিয়ে আইএফআইসি ব্যাংকের অভ্যন্তরেও সমালোচনার জন্ম হয়েছে। বিষয়টি ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ পর্যন্ত গিয়ে ঠেকেছে।

জানা গেছে, ব্যাংকের কর্যক্রমে ক্ষতি হওয়া ও বিশৃঙ্খলা তৈরির শঙ্কায় ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালকদের বিদেশ সফরের লাগাম টানতে একটি প্রজ্ঞাপন জারি করে বাংলাদেশ ব্যাংক। ২০২০ সালের ২৩ মার্চ জারি করা ওই প্রজ্ঞাপনে উল্লেখ করা হয়, ‘সম্প্রতি পরিলক্ষিত হচ্ছে যে, কতিপয় ব্যাংক-কোম্পানির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা অফিস কিংবা ব্যক্তিগত ছুটিতে দীর্ঘদিনের জন্য বাংলাদেশের বাইরে অবস্থান করছেন। এতে ব্যাংকের কর্মকাণ্ডে গতিশীলতা হ্রাসের পাশাপাশি ব্যবস্থাপনা ও পরিচালনগত ঝুঁকিসহ আর্থিক ক্ষতির আশঙ্কা সৃষ্টি হচ্ছে।’

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অর্থ মন্ত্রণালয়ের এক দায়িত্বশীল কর্মকর্তা জানিয়েছেন, প্রতিবেদন পাওয়ার পরই আইএফআইসি ব্যাংকের প্রতি নির্দেশনা দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। সেখানে ব্যবস্থাপনা পরিচালকের অফিশিয়াল বা ব্যক্তিগত কাজে দীর্ঘদিনের জন্য দেশের বাইরে থাকতে নিষেধ করা হয়েছে। একই সঙ্গে দীর্ঘদিনের জন্য ছুটিতে থাকতে বিশেষ অনুমোদন নেয়ার জন্য পরামর্শ দেয়া হয়েছে।

প্রসঙ্গত, প্রথম প্রজন্মের ব্যাংক হিসেবে আইএফআইসি ব্যাংক দেশের শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত হয় ১৯৮৬ সালে। বর্তমানে ব্যাংকটির মালিকানার অংশীদার হিসেবে রয়েছে রাষ্ট্র। মোট শেয়ারের ৩২ দশমিক ৭৫ শতাংশই রাষ্ট্রীয় মালিকানায়। অবশিষ্ট শেয়ারের মধ্যে ৩৯ দশমিক ১৯ শতাংশ সাধারণ বিনিয়োগকারীদের, শূন্য দশমিক ৮৪ শতাংশ বিদেশি বিনিয়োগকারীদের, ২১ দশমিক শূন্য আট শতাংশ প্রাতিষ্ঠানিক পর্যায়ে এবং উদ্যোক্তাদের কাছে রয়েছে ছয় দশমিক ১৪ শতাংশ। সর্বশেষ ব্যাংকটির শেয়ার হাতবদল হয়েছে ১৬ টাকা ৯০ পয়সায়। প্রতিষ্ঠার পর থেকে ব্যাংকটি এখনও নগদ লভ্যাংশ দেয়নি। সর্বশেষ গত বছর বিনিয়োগকারীদের পাঁচ শতাংশ বোনাস লভ্যাংশ দিয়েছে। এ সময়ে ব্যাংকটির নিট মুনাফা ছিল ১১৩ কোটি ৩০ লাখ টাকা।

বিজনেস আওয়ার/০৯ জানুয়ারি, ২০২২/এএইচ

ফেসবুকের মাধ্যমে আপনার মতামত জানান: