বিজনেস আওয়ার প্রতিবেদক : ঈদ উপলক্ষে ঢাকা ছাড়ছে মানুষ। এতে করে করোনাভাইরাসের হটস্পট ঢাকা থেকে সারাদেশেই ছড়িয়ে পড়বে করোনা রোগী। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, শুরুতে বাংলাদেশ ভালো অবস্থাতে ছিল। কিন্তু করোনা দেশব্যাপী ছড়িয়ে গেলে সামাল দেওয়া কঠিন। ঢাকা থেকে মানুষ গ্রামে যাওয়াতে সে সম্ভাবনা তৈরি হয়ে গেলো।
বিশেষজ্ঞরা আরও বলছেন, ঢাকা ও এর আশেপাশের জেলাগুলো ছাড়া বিভিন্ন জেলাতে এখনও সংক্রমণের হার কম ছিল। কিন্তু সেসব জায়গায় এখন সংক্রমণের ঝুঁকি তৈরি হলো। এখন বলা যায়, ৬৪ জেলা নয় পুরো বাংলাদেশেই করোনা ছড়িয়ে গেলো। আর এটা বোঝা যাবে এখন থেকে আরও ১৪-২১ দিন পর। সংক্রমণ তো কম-বেশি সব জায়গাতেই আছে, তবে এখন আরও বেশি হবে।
দেশে প্রথম করোনা আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয় গত ৮ মার্চ। প্রথম করোনা রোগী মারা যান ১৮ মার্চ। করোনাতে এখন পর্যন্ত মারা গেছেন ৪৩২ জন। আর দেশে মোট করোনা শনাক্ত হয়েছে ৩০ হাজার ২০৫ জনের।
২২ মে করোনা নিয়ে নিয়মিত অনলাইন বুলেটিনে স্বাস্থ্য অধিদফতরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. নাসিমা সুলতানা ঈদের ছুটিতে শহর ছেড়ে কাউকে গ্রামে না যাওয়ার অনুরোধ জানিয়ে তিনি বলেন, গ্রামে যাওয়ার কারণে করোনা সংক্রমণের ঝুঁকি অনেক বেড়ে যেতে পারে। শহর থেকে গ্রামের দিকে যাবেন না। যারা শহর থেকে গ্রামে যেতে চাচ্ছেন, আপনার কারণে সেই প্রিয়জন না ঝুঁকিতে পড়েন।
অধ্যাপক নাসিমা আরও বলেন, অনুগ্রহ করে সহযোগিতা করুন, সরকারের সব নির্দেশনা মেনে চলুন এবং চলাচল বন্ধ করুন। নিজে সুস্থ থাকুন এবং প্রিয়জনকে সুস্থ রাখুন।
এ প্রসঙ্গে করোনা বিষয়ক জাতীয় টেকনিক্যাল কমিটির সদস্য অধ্যাপক ডা. নজরুল ইসলাম বলেন, আগে ঢাকার বাইরে করোনা কম ছিল, এবার সেটা ছড়াবে। ঢাকা মহানগরে ৫৬ শতাংশ আর ঢাকা বিভাগে ৮৭ শতাংশ রোগী ছিল। আর ১৩ শতাংশ ছিল সাত বিভাগে। এখন এই হার অনেক বেড়ে যাবে। ঢাকা থেকে পুরো বাংলাদেশে ছড়িয়ে পড়বে।
তিনি আরও বলেন, শুধু বাস সার্ভিস ছাড়া সবই ছেড়ে দেওয়া হয়েছে, এটা ভালো সিদ্ধান্ত হয়নি। ঢাকায় লকডাউন কার্যকর করা যায়নি, পুরো দেশকে কী করে করবে।
ঈদের ছুটিতে যেভাবে মানুষ ঢাকা ছেড়েছে তাতে পুরো দেশেই করোনা রোগী ছড়িয়ে পড়বে বলে মন্তব্য করে জনস্বাস্থ্য ও স্বাস্থ্য ব্যবস্থা বিশেষজ্ঞ এবং পাবলিক হেলথ, বাংলাদেশের নির্বাহী পরিচালক তৌফিক জোয়ার্দার বলেন, প্রায় দু’মাসের লকডাউনের পরিস্থিতিতে থেকে যখন ঈদ আসে তখন মানুষকে আটকে রাখা কঠিন। জনগণের বিপক্ষে গিয়ে সরকারের পক্ষে পদক্ষেপ নেওয়া বেশ কঠিন। যদিও এটা ঠেকানো উচিত ছিল।
তিনি বলেন, ‘অ্যাগ্রেসিভ টেস্টিং এবং কন্টাক্ট ট্রেসিং করে রোগী খুঁজে বের করা দরকার ছিল। কিন্তু ঢাকা থেকে এখন যেভাবে মানুষ বাইরে যাচ্ছে তাতে করে সে সম্ভাবনা নষ্ট হয়ে গেলো। এখন ট্রান্সমিশন এমন পর্যায়ে যাবে যে, প্রপার টেস্ট এবং এতো মানুষের কন্টাক্টও ট্রেস করা যাবে না। ঢাকা থেকে এত মানুষ যাওয়ার ফলে ট্রান্সমিশন লেভেল এমন পর্যায়ে চলে যেতে পারে যেখান থেকে একে কন্টেইন করা কঠিন হয়ে যাবে।
শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিক্যাল কলেজের ভাইরোলজি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. জাহিদুর রহমান বলেন, যারা ঢাকা ছেড়েছেন তাদের মধ্যে লক্ষণবিহীন ক্যারিয়ার হিসেবে রয়েছেন অনেকেই। এখন তারা অন্যদেরকে সংক্রমিত করবে। যার কারণে ঢাকার বাইরে সংক্রমণের হার বহুগুণে বেড়ে গেলো।
বিজনেস আওয়ার/২৩ মে, ২০২০/এ