বিজনেস আওয়ার প্রতিবেদক : শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত ন্যাশনাল টি কোম্পানি গত ২ অর্থবছরে বড় লোকসান গুণেছে এবং ওই সময় নগদ প্রবাহের মন্দাবস্থা তৈরী হয়েছে। যাতে করে কোম্পানিটির ঋণ আরও বেড়েছে। এই পরিস্থিতিতে কোম্পানিটির নগদ অর্থের বা তারল্য ঝুঁকির সম্ভাবনা তৈরী হয়েছে। যা থেকে ঋণ খেলাপিসহ দৈনন্দিন কার্যক্রম পরিচালনা ব্যাহত হতে পারে।
নিরীক্ষক জানিয়েছেন, ন্যাশনাল টি কোম্পানি কর্তৃপক্ষ গত ২ অর্থবছর ইতিবাচক বা পজিটিভ পরিচালন নগদ প্রবাহ করতে ব্যর্থ হয়েছে। অর্থাৎ গত ২ অর্থবছরে কাচাঁমাল ক্রয়, পণ্য বিক্রয়, বেতনাদি প্রদান, রাজস্ব প্রদান শেষে হাতে টাকা রাখতে পারেনি। এসব কাজ করতে বরং নিজস্ব অর্থ থেকে বা ঋণ নিয়ে অর্থ যোগান দিতে হয়েছে। যে কোম্পানিটির ওই ২ অর্থবছরে নিট লোকসান হয়েছে ৫৭ কোটি ৬৮ লাখ টাকা। যাতে করে পুঞ্জীভূত লোকসান দাড়িঁয়েছে ৪৩ কোটি ৪৬ লাখ টাকায়।
এই পরিস্থিতিতে ন্যাশনাল টির ঋণের পরিমাণ বাড়ছে। যাতে করে ২০২১ সালের ৩০ জুন ৬ কোটি ৬০ লাখ টাকার পরিশোধিত মূলধনের কোম্পানিটির দীর্ঘমেয়াদি ও স্বল্পমেয়াদি ঋণের পরিমাণ দাড়িঁয়েছে ২০০ কোটি ৫০ লাখ টাকা। এরমধ্যে ২০২০-২১ অর্থবছরে নেওয়া হয়েছে ৪৮ কোটি ২ লাখ টাকা।
ন্যাশনাল টির ব্যবসার এই পরিস্থিতি যদি চলতে থাকে, তাহলে কোম্পানিটি আর্থিক জটিলতায় পড়বে বলে জানিয়েছেন নিরীক্ষক। যেমন ব্যাংক ঋণ পরিশোধের ক্ষেত্রে ব্যর্থ হবে।
কোম্পানির আর্থিক হিসাবে স্থায়ী সম্পদের মধ্যে ‘বিয়ারার প্লান্টস’ হিসাবে ২০১ কোটি ৪১ লাখ ১ হাজার ৫৮৫ টাকা দেখানো হয়েছে। যে সম্পদের নির্দিষ্ট আয়ুস্কাল রয়েছে। ফলে হিসাব মান অনুযায়ি অবশ্যই ওই সম্পদ অবচয়যোগ্য। যদিও কোম্পানি কর্তৃপক্ষ ২০২০-২১ অর্থবছরে লাম্প সাম হিসাবে ২ কোটি ৭০ লাখ ৬০ হাজার ২৫০ টাকার অবচয়জনিত সঞ্চিতি গঠন করেছে। কিন্তু কো্ম্পানি কর্তৃপক্ষ ওই সম্পদের আয়ুস্কাল ব্যাখ্যা ও হিসাবে অন্তর্ভূক্ত করেনি। এছাড়া বিগত বছরগুলোতে অবচয় চার্জ না করার জন্য রিটেইন আর্নিংসের সঙ্গে সমন্বয় করেনি।
এদিকে কোম্পানির ওই সম্পদের উপর অবচয় নিয়ে কোন পলিসি না থাকায়, নিরীক্ষক পূঞ্জীভূত অবচয় ও ২০২০-২১ অর্থবছরের অবচয় নির্ণয় করতে পারেনি। এছাড়া কোম্পানির লাম্প সাম অবচয়জনিত সঞ্চিতি গঠনের কোন ভিত্তিও খুজে পায়নি।
আরও পড়ুন……
শ্যামপুর সুগারের উৎপাদন অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ
শ্রম আইন অনুযায়ি প্রতিবছরে করপূর্ববর্তী মুনাফার উপরে ৫ শতাংশ হারে ফান্ড গঠন করতে হয়। যা শ্রমিকদের মাঝে বিতরন করতে হবে। কিন্তু ন্যাশনাল টি কর্তৃপক্ষ পূর্বের বছরগুলোতে এই ধরনের ফান্ড গঠন করেনি। তবে গত ২ অর্থবছর লোকসানের কারনে ওই ২ বছর ফান্ড গঠনের প্রয়োজন পড়েনি।
নিয়মিত ভালো ব্যবসা করা ন্যাশনাল টির ২০১৯-২০ ও ২০২০-২১ অর্থবছরে বড় লোকসান হয়। কোম্পানিটির ২০১৯-২০ অর্থবছরে শেয়ারপ্রতি লোকসান হয় ৫৫.৭১ টাকা। যার পরিমাণ ২০২০-২১ অর্থবছরে হয়েছে ৩১.৬৮ টাকা। করোনায় এমন লোকসান করলেও আগের বছরের ন্যায় চলতি অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকেও (জুলাই-সেপ্টেম্বর ২১) মুনাফা হয়েছে। আগের বছরের ২.১১ টাকার শেয়ারপ্রতি মুনাফা (ইপিএস) এ বছরের প্রথম প্রান্তিকে বেড়ে হয়েছে ৩.৪৫ টাকা।

উল্লেখ্য, ব্যবসায় বড় ধাক্কা খেলেও ৬ কোটি ৬০ লাখ টাকার স্বল্প মূলধনী ন্যাশনাল টির শেয়ার দর আকাশচুম্বি। ১০ টাকা অভিহিত মূল্যের শেয়ারটি সোমবার (২৪ জানুয়ারি) লেনদেন শেষে দাড়িঁয়েছে ৮০৩.৪০ টাকায়। যে শেয়ারটি মঙ্গলবার (২৫ জানুয়ারি) সকাল ১১ টায় ৮৬৩.৬০ টাকায় লেনদেন হচ্ছে।
বিজনেস আওয়ার/২৫ জানুয়ারি, ২০২২/আরএ
One thought on “তারল্য ঝুঁকিতে ন্যাশনাল টি”