ঢাকা , মঙ্গলবার, ২২ অক্টোবর ২০২৪, ৭ কার্তিক ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

দাম্ভিকতা দেখিয়েছে সাহেদ, র‍্যাবকে ছুঁড়ে দিয়েছে চ্যালেঞ্জ!

  • পোস্ট হয়েছে : ০৪:৪২ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৫ জুলাই ২০২০
  • 34

বিজনেস আওয়ার প্রতিবেদক : রিজেন্ট গ্রুপের চেয়ারম্যান মো. সাহেদকে গ্রেফতারের পর প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদ করেছে র‍্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‍্যাব)। বুধবার (১৫ জুলাই) সকাল ৯টায় সাতক্ষীরা থেকে ঢাকায় আনার পর সাহেদকে প্রথমে র‍্যাব সদর দফতরে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়।

এসময় তিনি দাম্ভিকতা দেখান এবং ছয় মাসের বেশি তাকে আটকে রাখা যাবে না বলেও চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দেন র‍্যাব কর্মকর্তাদের দিকে। জিজ্ঞাসাবাদের সময় সাহেদ বেশ কয়েকবার দম্ভোক্তি করেন। বলে জানিয়েছেন জিজ্ঞাসাবাদে অংশ নেওয়া র‍্যাবের এক কর্মকর্তা।

র‍্যাব সুত্রে জানা গেছে, র‍্যাব কর্মকর্তাদের চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিয়ে সাহেদ বলেন, আমাকে ছয় মাসের বেশি আটকে রাখা যাবে না। ছয় মাস পর আমি ফের বের হবো। আর যেসব সংবাদমাধ্যম ও সংবাদকর্মীরা আমাকে নিয়ে ফলাও করে সংবাদ প্রচার করছে তাদেরও দেখে নেব আমি।

সাহেদের চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দেওয়া নিয়ে জানতে চাইলে র‍্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক লেফটেন্যান্ট কর্নেল আশিক বিল্লাহ বলেন, সাহেদ একজন ঠান্ডা মাথার প্রতারক। তিনি আগেও জেলে গেছেন। ফলে আইনি বিষয়গুলো তার জানা। সে এমন অনেক কথায় বলেছে।

সাহেদকে আটকের পরে সংবাদ সম্মেলনে কথা বলেন র‌্যাবের মহাপরিচালক চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুন। তিনি এসময় সাহেদের বিরুদ্ধে প্রতারণার কিছু অভিযোগ তুলে ধরেন এবং কীভাবে তাকে ধরা সম্ভব হলো সেসব নিয়ে কথা বলেন।

তিনি বলেন, সাতক্ষীরা থেকে আটক করে ঢাকায় আনার পর সাহেদ ও তার সঙ্গী গ্রেফতারকৃত মাসুদকে নিয়ে অভিযানে যায় র‍্যাব। সেখানে রিজেন্ট গ্রুপের এক কার্যালয় থেকে এক লাখ ৪৬ হাজার জাল টাকা উদ্ধার করা হয়।

গত কয়দিন সে কোথায় ছিল জানাতে গিয়ে ডিজি বলেন, জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, একেকদিন একেক জায়গায় আত্মগোপনে ছিল। ঢাকা কক্সবাজার সাতক্ষীরা অঞ্চলে সুকৌশলে আত্মগোপনে ছিল সে। দেড়হাজার কোমড়পুর সীমান্তে লবঙ্গবাতি খাল দিয়ে দেশত্যাগের চেষ্টা করলে সে ধরা পড়ে। তার বিরুদ্ধে আইনানুগ কার্যক্রম গ্রহণ প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।

কীভাবে এই প্রতারককে ধরা হলো সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাব দিতে গিয়ে র‌্যাবের ডিজি বলেন, ইতোমধ্যে আপনারা জেনেছেন সাহেদ কী মানের প্রতারণার কাজ করতে পারে। গত কয়েকদিন ধরেই সে এক জায়গা থেকে এক জায়গা পরিবর্তন করছিল। আমরা তাকে ফলো করেছি। এবং সবশেষে গ্রেফতার করতে সমর্থ হয়েছি।

ঢাকা কবে ছেড়েছে প্রশ্নে র‍্যাব মহাপরিচালক জানান, সে ঢাকা ছেড়েছে আবার ঢাকায় ফিরেছে, আবার বেরিয়েছে। এসবের মধ্যেই ছিল। এই পুরো সময়টাতে সে কখনও ব্যক্তিগত গাড়ি, কখনও হেঁটে, কখনও ট্রাকে চলাচল করছিল। অবশেষে নৌকা দিয়ে পার হওয়ার সময় আমরা তাকে ধরতে সক্ষম হয়েছি।

করোনা পরীক্ষার রিপোর্টের নামে প্রতারণা করছিল উল্লেখ করে সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, বিনামূল্যে পরীক্ষা করার কথা থাকলেও ৩৫০০ থেকে ৪০০০ টাকা করে নেওয়া হতো এবং পুনরায় পরীক্ষার জন্য ১০০০ গ্রহণ করতো।

এখন পর্যন্ত ১০ হাজারের অধিক পরীক্ষা করে ৬ হাজার ভুয়া রিপোর্ট দিয়েছে সাহেদের প্রতিষ্ঠান। একদিকে রোগীর কাছ থেকে টাকা হাতিয়ে নিয়েছে, আরেক দিকে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের বিলেরও জন্য জমা দিয়েছে সাহেদের হাসপাতাল রিজেন্ট।

তিনি বলেন, ‘মামলার যিনি তদন্ত কর্মকর্তা আমরা তাকে হ্যান্ডওভার করব, পরবর্তী ব্যবস্থা মামলার তদন্তকারী অফিসার নিশ্চয়ই যিনি তদন্ত করবেন তিনি একজন অভিজ্ঞ কর্মকর্তা তার মেধা, দক্ষতার আলোকে এবং আইনের আলোকে উনি তার ব্যবস্থা নেবেন।’

চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, ‘ভুক্তভোগী যারা আমাদের কাছে আসছেন তাদেরকে আমরা আইনানুগ পরামর্শ দিচ্ছি। সহায়তা করছি, কীভাবে তিনি আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য থানায় যাবেন বা আমাদের কাছে যদি আসতে চান আমরা সে সহায়তা প্রদান করছি।

বিজনেস আওয়ার/১৫ জুলাই, ২০২০/এ

ফেসবুকের মাধ্যমে আপনার মতামত জানান:
ট্যাগ :

আপনার মতামত লিখুন

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার মেইলে তথ্য জমা করুন

দাম্ভিকতা দেখিয়েছে সাহেদ, র‍্যাবকে ছুঁড়ে দিয়েছে চ্যালেঞ্জ!

পোস্ট হয়েছে : ০৪:৪২ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৫ জুলাই ২০২০

বিজনেস আওয়ার প্রতিবেদক : রিজেন্ট গ্রুপের চেয়ারম্যান মো. সাহেদকে গ্রেফতারের পর প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদ করেছে র‍্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‍্যাব)। বুধবার (১৫ জুলাই) সকাল ৯টায় সাতক্ষীরা থেকে ঢাকায় আনার পর সাহেদকে প্রথমে র‍্যাব সদর দফতরে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়।

এসময় তিনি দাম্ভিকতা দেখান এবং ছয় মাসের বেশি তাকে আটকে রাখা যাবে না বলেও চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দেন র‍্যাব কর্মকর্তাদের দিকে। জিজ্ঞাসাবাদের সময় সাহেদ বেশ কয়েকবার দম্ভোক্তি করেন। বলে জানিয়েছেন জিজ্ঞাসাবাদে অংশ নেওয়া র‍্যাবের এক কর্মকর্তা।

র‍্যাব সুত্রে জানা গেছে, র‍্যাব কর্মকর্তাদের চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিয়ে সাহেদ বলেন, আমাকে ছয় মাসের বেশি আটকে রাখা যাবে না। ছয় মাস পর আমি ফের বের হবো। আর যেসব সংবাদমাধ্যম ও সংবাদকর্মীরা আমাকে নিয়ে ফলাও করে সংবাদ প্রচার করছে তাদেরও দেখে নেব আমি।

সাহেদের চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দেওয়া নিয়ে জানতে চাইলে র‍্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক লেফটেন্যান্ট কর্নেল আশিক বিল্লাহ বলেন, সাহেদ একজন ঠান্ডা মাথার প্রতারক। তিনি আগেও জেলে গেছেন। ফলে আইনি বিষয়গুলো তার জানা। সে এমন অনেক কথায় বলেছে।

সাহেদকে আটকের পরে সংবাদ সম্মেলনে কথা বলেন র‌্যাবের মহাপরিচালক চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুন। তিনি এসময় সাহেদের বিরুদ্ধে প্রতারণার কিছু অভিযোগ তুলে ধরেন এবং কীভাবে তাকে ধরা সম্ভব হলো সেসব নিয়ে কথা বলেন।

তিনি বলেন, সাতক্ষীরা থেকে আটক করে ঢাকায় আনার পর সাহেদ ও তার সঙ্গী গ্রেফতারকৃত মাসুদকে নিয়ে অভিযানে যায় র‍্যাব। সেখানে রিজেন্ট গ্রুপের এক কার্যালয় থেকে এক লাখ ৪৬ হাজার জাল টাকা উদ্ধার করা হয়।

গত কয়দিন সে কোথায় ছিল জানাতে গিয়ে ডিজি বলেন, জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, একেকদিন একেক জায়গায় আত্মগোপনে ছিল। ঢাকা কক্সবাজার সাতক্ষীরা অঞ্চলে সুকৌশলে আত্মগোপনে ছিল সে। দেড়হাজার কোমড়পুর সীমান্তে লবঙ্গবাতি খাল দিয়ে দেশত্যাগের চেষ্টা করলে সে ধরা পড়ে। তার বিরুদ্ধে আইনানুগ কার্যক্রম গ্রহণ প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।

কীভাবে এই প্রতারককে ধরা হলো সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাব দিতে গিয়ে র‌্যাবের ডিজি বলেন, ইতোমধ্যে আপনারা জেনেছেন সাহেদ কী মানের প্রতারণার কাজ করতে পারে। গত কয়েকদিন ধরেই সে এক জায়গা থেকে এক জায়গা পরিবর্তন করছিল। আমরা তাকে ফলো করেছি। এবং সবশেষে গ্রেফতার করতে সমর্থ হয়েছি।

ঢাকা কবে ছেড়েছে প্রশ্নে র‍্যাব মহাপরিচালক জানান, সে ঢাকা ছেড়েছে আবার ঢাকায় ফিরেছে, আবার বেরিয়েছে। এসবের মধ্যেই ছিল। এই পুরো সময়টাতে সে কখনও ব্যক্তিগত গাড়ি, কখনও হেঁটে, কখনও ট্রাকে চলাচল করছিল। অবশেষে নৌকা দিয়ে পার হওয়ার সময় আমরা তাকে ধরতে সক্ষম হয়েছি।

করোনা পরীক্ষার রিপোর্টের নামে প্রতারণা করছিল উল্লেখ করে সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, বিনামূল্যে পরীক্ষা করার কথা থাকলেও ৩৫০০ থেকে ৪০০০ টাকা করে নেওয়া হতো এবং পুনরায় পরীক্ষার জন্য ১০০০ গ্রহণ করতো।

এখন পর্যন্ত ১০ হাজারের অধিক পরীক্ষা করে ৬ হাজার ভুয়া রিপোর্ট দিয়েছে সাহেদের প্রতিষ্ঠান। একদিকে রোগীর কাছ থেকে টাকা হাতিয়ে নিয়েছে, আরেক দিকে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের বিলেরও জন্য জমা দিয়েছে সাহেদের হাসপাতাল রিজেন্ট।

তিনি বলেন, ‘মামলার যিনি তদন্ত কর্মকর্তা আমরা তাকে হ্যান্ডওভার করব, পরবর্তী ব্যবস্থা মামলার তদন্তকারী অফিসার নিশ্চয়ই যিনি তদন্ত করবেন তিনি একজন অভিজ্ঞ কর্মকর্তা তার মেধা, দক্ষতার আলোকে এবং আইনের আলোকে উনি তার ব্যবস্থা নেবেন।’

চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, ‘ভুক্তভোগী যারা আমাদের কাছে আসছেন তাদেরকে আমরা আইনানুগ পরামর্শ দিচ্ছি। সহায়তা করছি, কীভাবে তিনি আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য থানায় যাবেন বা আমাদের কাছে যদি আসতে চান আমরা সে সহায়তা প্রদান করছি।

বিজনেস আওয়ার/১৫ জুলাই, ২০২০/এ

ফেসবুকের মাধ্যমে আপনার মতামত জানান: