বিনোদন ডেস্ক : চারিদিকে উৎসবের আমেজ। ঘরে ঘরে সামর্থ্য অনুযায়ি বাহারি নানা খাবারের আয়োজন। ছোট-বড় সবার পরনেই নতুন কাপড়। বাবা-ছেলে, ভাই-বন্ধু সকলে মিলে দলবেঁধে ঈদের নামাজ পড়তে যাওয়া। একের বাড়িতে অন্যের নিমন্ত্রণ। আরো কত কি আনন্দ যে নিহিত থাকে ঈদকে ঘিরে বলে শেষ করা যাবে না।
করোনাভাইরাসের ভয়াবহ থাবায় টালমাটাল সারা দুনিয়া। আমাদের দেশেও এ ভাইরাসের সংক্রমণে বিপর্যস্ত জনজীবন। প্রতিদিনই দেশজুড়ে বাড়ছে আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা। লকডাউনের কারণে সব মানুষই প্রায় ঘরবন্দি। এমন অবস্থায় ঈদ এবার কতটুকু আনন্দ নিয়ে আসবে তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না।
ঘরে থেকে কেমন হবে এবারের ঈদ উদযাপন তা জানিয়েছেন শোবিজের ক’জন তারকা…
আবুল হায়াত
ছোটবেলায় ঈদের আনন্দ ছিল অন্যরকম। এখন ঈদের আনন্দ পরিবারের সবার সঙ্গে ভাগ করে নেই। এই আনন্দ ভাগাভাগিতে জীবনের ছন্দ খুঁজে পাওয়া যায়। তবে এবারের ঈদ আমাদের জন্য কতটা আনন্দের হবে বলতে পারছি না। আমরা গেল দুই মাসের মতো সবাই ঘরবন্দি হয়ে আছি।
আরো কতদিন এভাবে থাকতে হবে বলা যাচ্ছে না। আমাদের মতো সারা বিশ্বে একই পরিস্থিতি। এরমধ্যেই আমাদের ঈদ উদযাপন করতে হবে। এবারের ঈদটা নিজের জন্য এবং নিজের পরিবারের জন্য আমরা ঘরে থাকবো। আগামী ঈদটা সবার সঙ্গে ভাগ করবো। সবার জন্য রইলো আমার ঈদের শুভেচ্ছা।
দিলারা জামান
ঈদ মানেই আনন্দ। বরাবরতো তাই হয়ে আসছে। কিন্তু এবারের ঈদ হবে একবারেই অন্যরকম। করোনার কারণে কতদিন হলো ঘরবন্দি হয়ে আছি। কোথাও বের হতে পারছি না। ঈদেও তাই হবে। ঘরে বসেই দিনটি কাটাতে হবে। পরিবারের যারা একসঙ্গে আছে তাদের সবার ঈদের দিনটা ভালো কাটুক সেই আশা করছি।
ড. ইনামুল হক
আমরা এখন একটা প্রতিকূল অবস্থার মধ্যে আছি। করোনা ভাইরাসে সারা বিশ্বের মানুষ আজ দিশেহারা। নিজেকে এবং নিজের পরিবারকে সুরক্ষিত রাখার জন্য সবাই আজ ঘরবন্দি। এমন সময়ে ঈদের আনন্দ কেমন হবে সেটা সহজেই অনুমান করা যায়।
প্রতিদিন আমাদের দেশে করোনা আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা বাড়ছে। একটা অনিশ্চিত সময়ের মধ্যে আমরা আছি বলতে হয়। আমি মন থেকে চাই, যে যেখানে আছি সেখান থেকেই এই ঈদ কাটাবো। বেঁচে থাকলে আগামী ঈদ আমাদের জন্য অনেক সুন্দর হবে। সবাইকে ঈদের শুভেচ্ছা।
আফরান নিশো
ঈদ এলেই ছোটবেলার কথা খুব মনে পড়ে। হৈ-হুল্লোড়, ছোটাছুটি, মুরব্বিদের কাছ থেকে সেলামি নেওয়া- আরো কত কী। কিন্তু এবারের ঈদ অন্য সময়ের চেয়ে আলাদা। এবার ঈদের দিন বাসায় থাকতে হবে। করোনাভাইরাসের কারণে দীর্ঘদিন ধরে গৃহবন্দি হয়ে আছি। ভেবেছিলাম অচিরেই সব ঠিক হয়ে যাবে। কিন্তু তাতো আর হলো না। তাই এমন পরিস্থিতি মেনে নেওয়া ছাড়া কোনো উপায় নেই। প্রতি ঈদেই লং ড্রাইভে যাওয়া আমার অভ্যাসে পরিণত হয়েছিল। এবার তাতে ছেদ পড়লো। তবে বাসায় ঈদ উদযাপন করলেও আত্মীয়-স্বজনদের সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ হবে।
রবি চৌধুরী
ঈদ মানে আনন্দ। আর সে আনন্দ সবার সঙ্গে ভাগ করে নেয়াতেই প্রকৃত সুখ নিহিত। কিন্তু এবারতো সেটা পারছি না। করোনা নামের এক অদৃশ্য শক্তির সঙ্গে যুদ্ধ করছি আমরা। এ ভাইরাসের সংক্রমণ থেকে বাঁচতে ঘরবন্দি থাকতে হচ্ছে। কেউ কারো বাসায় যেতে পাবছি না। ঈদের দিনেও ঘরেই বন্দি থাকতে হবে।
আত্মীয়-স্বজন বন্ধু-বান্ধব কারো সঙ্গেই ঈদের আনন্দ ভাগ করে নিতে পারবো না। আর সবচেয়ে কষ্ট লাগছে নিন্ম আয়ের মানুষদের কথা ভেবে। তাদের জন্য ঈদের আনন্দ উপভোগ করাটা অনেক কঠিন হয়ে যাবে। কারণ করোনার কারণে দীর্ঘদিন ধরে তাদের স্বাভাবিক রোজগার বন্ধ। দোয়া রইলো তারাও যেন ঈদের আনন্দ উপভোগ করতে পারেন।
মেহজাবিন চৌধুরী
পরিবারের মানুষদের ছাড়া তো ঈদের কথা ভাবতেই পারি না। কাছের মানুষদের সঙ্গে দেখা, গল্প-গান-আড্ডায় মেতে উঠা, মজার সব খাবার খাওয়া, বেড়াতে যাওয়া, দিন শেষে টিভিতে বিভিন্ন অনুষ্ঠান দেখা- এভাবেই ঈদ উপযাপনের পরিকল্পনা থাকে প্রতি বছর। কিন্তু এবারের ঈদের সময়টা বড় নিষ্ঠুর হয়ে ধরা দিয়েছে। করোনার কারণে বন্দিজীবনে আছি। তাই ঈদের মতো বড় একটি আনন্দ উৎসব যে কিভাবে কাটবে বুঝে উঠতে পারছি না। ঘরে থেকেই যতটা সম্ভব প্রিয়জনের সঙ্গে আনন্দ ভাগাভাগি করে নেওয়ার চেষ্টা করবো। এই দিনটিতে যেন সব শ্রেণির মানুষের মুখে হাসি থাকে- এটাই মনে-প্রাণে প্রার্থনা করি।।
পরীমনি
বিপদ-আপদ যতই আসুক, আমরা তা জয় করতে পারবো- এটাই বিশ্বাস করি। এ জন্য ঈদের দিনটাও প্রতিবারের মতোই প্রিয়জনদের সঙ্গে উৎসবের মতো কাটাতে চাই। এটা ঠিক যে, করোনার কারণে কিছু বিধিনিষেধ মানতেই হবে। তাই বলে আমার উৎসব মাটি হয়ে যাবে এটা ভুলেও মনে করি না। আগে ঈদগুলোয় কীভাবে আনন্দে মেতেছি তা নিয়েও হতাশা প্রকাশ করতে চাই না। ঘরে থেকেও ধনী-গরিব সবার সঙ্গে আনন্দময় ঈদ উপযাপন করা যায়, এবার সেটাই করার চেষ্টা করবো।
সুমাইয়া শিমু
ছোটবেলার ঈদটা ছিল অন্য রকম মজার। রোজা শুরুর পর থেকে ঈদ যখন আসি-আসি করছে, সে সময় থেকেই শুরু হতো আমাদের উত্তেজনা। আমাদের মানে আমি, আমার বড় বোন ও বড় ভাই। পরিবারে আমি সবার ছোট। তাই আহলাদ, আবদার ও ঈদের নতুন কাপড় আমার সবই ছিল বেশি। সাত-আটটা নতুন পোশাক পেতাম। আর ঈদ সেলামির কথা কী বলবো!
ঈদ সেলামির চকচকে টাকা রাখার জন্য আগে থেকেই নতুন ব্যাগ ঠিক করে রাখতাম। সারাদিন কাটতো ভাইবোন-বন্ধুবান্ধবের সঙ্গে হৈ-হুল্লোড় করে। তখন ঈদের দিন বাসায় কেউ ঘুমালে আমার বিস্ময়ের সীমা থাকতো না। ভাবতাম, ঈদের দিনে পড়ে পড়ে ঘুমায়, এ আবার কেমন মানুষ। বড়ই আজব! কিন্তু এখন আমিই ঈদের দিনে কখনো কখনো ঘুমিয়ে নাক ডাকি। আর এবার যেহেতু কারো সঙ্গে দেখা করার উপায় নেই, তাই ঈদের দিন আমার চিরচেনা এই অভ্যাসের পরিবর্তন হওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম।
আশনা হাবিব ভাবনা
যে কোনো বারের চেয়ে এবারের ঈদ উদযাপন অন্যরকম হতে যাচ্ছে। জীবনে প্রথমবারের মতো ঘরবন্দি ঈদ। সব সময় ঢাকাতেই ঈদ উদযাপন করি। এবার ঈদে বেশি আনন্দ করতে পারবো না। কারণ এখন করোনাভাইরাসের কারণে ঘরবন্দি সবাই। ঘরেই কাটাতে হবে ঈদের দিনটিও। ঈদে অসহায় মানুষের মুখে হাসি ফোটাতে পারলে ভালো লাগে। তাই অসহায় মানুষদের সাহায্য-সহযোগিতার চেষ্টা করবো।
এই বিশেষ দিনে প্রিয়জনদের উপহার দিয়ে চমকে দিতে দারুণ পছন্দ করি। এবারো তাদের জন্য থাকবে উপহার। ঈদের দিন সালোয়ার-কামিজ পরতেই বেশি স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করি। কোথাও যেহেতু যাওয়া হবে না, তাই প্রিয় পোশাক পরে পরিবারের সব সদস্যের সঙ্গে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করবো। মায়ের সঙ্গে ঘরের বিভিন্ন কাজ করবো। নিজেও মজার মজার রান্নাবান্না করে সবাইকে খাওয়াবো।
মাহিয়া মাহি
পরিচিত সবাই জানে, আমি কোনো কিছুই আগে থেকে পরিকল্পনা করে করি না। মন যখন যা চায়, সেটা নিয়েই মেতে উঠি। কাজের বিষয়েও সিদ্ধান্ত নেই হুটহাট। কিন্তু এবার ঈদ উপযাপন নিয়ে আলাদা করে ভাবতে হচ্ছে। করোনার কারণে যেহেতু ঘরবন্দি থাকতে হবে, তাই ঈদের দিনটি গৃহিণী হয়েই কাটানোর ইচ্ছা। রান্নাবান্না, প্রিয়জনদের আড্ডা, ভক্তদের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় – এ সবরের মধ্য দিয়েই দিনটা কাটবে। সেইসঙ্গে চেষ্টা করবো, ঈদের দিন অসহায় মানুষদের সঙ্গে আনন্দ ভাগাভাগি করে নেওয়ার।
বিজনেস আওয়ার/২৩ মে, ২০২০/এ