ঢাকা , শুক্রবার, ২৯ নভেম্বর ২০২৪, ১৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

সন্তানেরা সম্পত্তির জন্য বাবার লাশ ২৯ ঘণ্টা আটকে রাখলেন

  • পোস্ট হয়েছে : ০৪:৩২ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১০ ফেব্রুয়ারী ২০২২
  • 38

বিজনেস আওয়ার প্রতিবেদক : রংপুরের তারাগঞ্জ উপজেলার প্রামাণিকপাড়া গ্রামের সহিদার রহমান প্রামাণিক (৬৫) ছিলেন স্থানীয় একটি বেসরকারি কলেজের চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী। তিনবার বিয়ে করা সহিদার প্রথম দুই স্ত্রীকে তালাক দিয়ে থাকতেন তৃতীয় স্ত্রীর সঙ্গে। তাঁর সাত সন্তান রয়েছে। তবে প্রথম দুই স্ত্রীর তিন সন্তানের খোঁজ নিতেন না তিনি। মঙ্গলবার রাত ১০টার দিকে মারা যান সহিদার রহমান। এরপর তাঁর লাশ দাফন নিয়ে দিনভর চলে নাটকীয়তা। মৃত্যুর ২৯ ঘণ্টা পর বুধবার দিবাগত রাত তিনটার সময় অনেকটাই নিভৃতে দাফন করা হয় সহিদারের লাশ।
স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, মৃত্যুর পর বুধবার সকালে পারিবারিক কবরস্থানে সহিদার রহমানের দাফনের জন্য কবর খনন করা হয়। বেলা দুইটায় ছিল জানাজার সময়। সে জন্য আগেই বাড়ির পাশে তারাগঞ্জের ওকড়াবাড়ি ফারুকিয়া আলিম মাদ্রাসা মাঠে লাশ নেওয়া হয়। সবাই যখন জড়ো হয়ে জানাজার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন, তখন ছুটে এসে সহিদারের লাশের জানাজা ও দাফনে বাধা দেন প্রথম ও দ্বিতীয় স্ত্রীর সন্তানেরা। এরপর সমস্যার সমাধানে দফায় দফায় বৈঠক করেন প্রতিবেশীরা। কিন্তু সমঝোতায় পৌঁছাতে পারেননি। রাত তিনটা পর্যন্ত সেখানেই পড়ে ছিল সহিদারের লাশ।
সহিদারের প্রথম স্ত্রীর সন্তান ভুট্টু প্রামাণিক (৪০) বলেন, ‘আমি স্ত্রী-সন্তান নিয়ে অন্যের ভিটায় বসবাস করছি। আমার বাবার দুই একর আবাদি জমিসহ পাকা বাড়ি ও বসতভিটা রয়েছে ৩৫ শতক। আমাদের দুই ভাইকে বাড়ি করার জন্য কমপক্ষে ১২ শতক জমি দিতে হবে। অন্যথায় বাবার লাশ দাফন করতে দেব না।’

সহিদারের দ্বিতীয় স্ত্রীর সন্তান আশরাফুজ্জামান বলেন, ‘বাবার সব সম্পত্তি দখলে নিয়েছেন আমার তৃতীয় মা। আমরাও সন্তান হিসেবে ওই সম্পত্তির ভাগিদার। কাজেই ন্যায্য ভাগ না দেওয়া পর্যন্ত লাশ দাফন হবে না।’

এ বিষয়ে সহিদারের তৃতীয় স্ত্রী আঞ্জুয়ারা বেগম বলেন, ‘স্বামীর সব সম্পত্তি আমি কিনে নিয়েছি। এ জমির ভাগ আমি কাউকে দেব না। লাশ দাফন করতে দিক বা না দিক, তাতে আমার কিছু যায়–আসে না।’
সংশ্লিষ্ট এলাকার ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য রবিউল ইসলাম বুধবার রাত নয়টার দিকে প্রথম আলোকে বলেন, ‘দুপুর থেকে মৃত সহিদারের স্ত্রী ও সন্তানদের সঙ্গে বারবার সমঝোতা করার চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়েছি। কেউ ছাড় না দেওয়ায় লাশ এখন পর্যন্ত মাদ্রাসা মাঠে পড়ে আছে।’

আজ বৃহস্পতিবার সকালে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মীমাংসা না হওয়ায় বুধবার রাতে সহিদার রহমানের প্রথম ও দ্বিতীয় স্ত্রীর সন্তানেরা চলে যান। এরপর রাত সাড়ে তিনটার দিকে কয়েকজন আত্মীয়কে নিয়ে লাশ দাফন করে তৃতীয় স্ত্রীর সন্তানেরা।

বিজনেস আওয়ার/ ১০ ফেব্রুয়ারি, ২০২২/ জে ভি

ফেসবুকের মাধ্যমে আপনার মতামত জানান:
ট্যাগ :

আপনার মতামত লিখুন

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার মেইলে তথ্য জমা করুন

সন্তানেরা সম্পত্তির জন্য বাবার লাশ ২৯ ঘণ্টা আটকে রাখলেন

পোস্ট হয়েছে : ০৪:৩২ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১০ ফেব্রুয়ারী ২০২২

বিজনেস আওয়ার প্রতিবেদক : রংপুরের তারাগঞ্জ উপজেলার প্রামাণিকপাড়া গ্রামের সহিদার রহমান প্রামাণিক (৬৫) ছিলেন স্থানীয় একটি বেসরকারি কলেজের চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী। তিনবার বিয়ে করা সহিদার প্রথম দুই স্ত্রীকে তালাক দিয়ে থাকতেন তৃতীয় স্ত্রীর সঙ্গে। তাঁর সাত সন্তান রয়েছে। তবে প্রথম দুই স্ত্রীর তিন সন্তানের খোঁজ নিতেন না তিনি। মঙ্গলবার রাত ১০টার দিকে মারা যান সহিদার রহমান। এরপর তাঁর লাশ দাফন নিয়ে দিনভর চলে নাটকীয়তা। মৃত্যুর ২৯ ঘণ্টা পর বুধবার দিবাগত রাত তিনটার সময় অনেকটাই নিভৃতে দাফন করা হয় সহিদারের লাশ।
স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, মৃত্যুর পর বুধবার সকালে পারিবারিক কবরস্থানে সহিদার রহমানের দাফনের জন্য কবর খনন করা হয়। বেলা দুইটায় ছিল জানাজার সময়। সে জন্য আগেই বাড়ির পাশে তারাগঞ্জের ওকড়াবাড়ি ফারুকিয়া আলিম মাদ্রাসা মাঠে লাশ নেওয়া হয়। সবাই যখন জড়ো হয়ে জানাজার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন, তখন ছুটে এসে সহিদারের লাশের জানাজা ও দাফনে বাধা দেন প্রথম ও দ্বিতীয় স্ত্রীর সন্তানেরা। এরপর সমস্যার সমাধানে দফায় দফায় বৈঠক করেন প্রতিবেশীরা। কিন্তু সমঝোতায় পৌঁছাতে পারেননি। রাত তিনটা পর্যন্ত সেখানেই পড়ে ছিল সহিদারের লাশ।
সহিদারের প্রথম স্ত্রীর সন্তান ভুট্টু প্রামাণিক (৪০) বলেন, ‘আমি স্ত্রী-সন্তান নিয়ে অন্যের ভিটায় বসবাস করছি। আমার বাবার দুই একর আবাদি জমিসহ পাকা বাড়ি ও বসতভিটা রয়েছে ৩৫ শতক। আমাদের দুই ভাইকে বাড়ি করার জন্য কমপক্ষে ১২ শতক জমি দিতে হবে। অন্যথায় বাবার লাশ দাফন করতে দেব না।’

সহিদারের দ্বিতীয় স্ত্রীর সন্তান আশরাফুজ্জামান বলেন, ‘বাবার সব সম্পত্তি দখলে নিয়েছেন আমার তৃতীয় মা। আমরাও সন্তান হিসেবে ওই সম্পত্তির ভাগিদার। কাজেই ন্যায্য ভাগ না দেওয়া পর্যন্ত লাশ দাফন হবে না।’

এ বিষয়ে সহিদারের তৃতীয় স্ত্রী আঞ্জুয়ারা বেগম বলেন, ‘স্বামীর সব সম্পত্তি আমি কিনে নিয়েছি। এ জমির ভাগ আমি কাউকে দেব না। লাশ দাফন করতে দিক বা না দিক, তাতে আমার কিছু যায়–আসে না।’
সংশ্লিষ্ট এলাকার ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য রবিউল ইসলাম বুধবার রাত নয়টার দিকে প্রথম আলোকে বলেন, ‘দুপুর থেকে মৃত সহিদারের স্ত্রী ও সন্তানদের সঙ্গে বারবার সমঝোতা করার চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়েছি। কেউ ছাড় না দেওয়ায় লাশ এখন পর্যন্ত মাদ্রাসা মাঠে পড়ে আছে।’

আজ বৃহস্পতিবার সকালে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মীমাংসা না হওয়ায় বুধবার রাতে সহিদার রহমানের প্রথম ও দ্বিতীয় স্ত্রীর সন্তানেরা চলে যান। এরপর রাত সাড়ে তিনটার দিকে কয়েকজন আত্মীয়কে নিয়ে লাশ দাফন করে তৃতীয় স্ত্রীর সন্তানেরা।

বিজনেস আওয়ার/ ১০ ফেব্রুয়ারি, ২০২২/ জে ভি

ফেসবুকের মাধ্যমে আপনার মতামত জানান: