ঢাকা , বুধবার, ২৩ অক্টোবর ২০২৪, ৮ কার্তিক ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

সাহেদকাণ্ডে সমালোচকদের ভূমিকায় চটেছেন শেখ হাসিনা

  • পোস্ট হয়েছে : ১০:৫৫ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১৮ জুলাই ২০২০
  • 77

বিজনেস আওয়ার প্রতিবেদক : করোনা পরীক্ষায় রিজেন্ট হাসপাতালের অনিয়ম উদঘাটন এবং প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান সাহেদ করিমকে গ্রেফতার করে তাকে গ্রেফতার করে বিচারের মুখোমুখি করেছে সরকারই। এ ক্ষেত্রে সাহেদ করিমের দলীয় পরিচয়ও দেখা হয়নি।

অথচ রিজেন্ট গ্রুপের অনিয়ম প্রকাশিত হওয়ার পর আওয়ামী লীগ ও সরকারের সঙ্গে প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান সাহেদ করিমের ঘনিষ্ঠতাকে গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে তুলে ধরা হচ্ছে এবং প্রচার করা হচ্ছে। এতেই চটেছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। দলের একাধিক শীর্ষ নেতা এ তথ্য জানিয়েছেন।

দলটির নেতারা বলছেন, সাহেদ করিমের অপরাধ উদঘাটন ও গ্রেফতারে অন্য কারও ভূমিকা নেই। গণমাধ্যম থেকে শুরু করে সমালোচকরা এই ঘটনায় আওয়ামী লীগ ও সরকারকেই দোষারোপ করছে। অথচ সাহেদকে গ্রেফতারে ধীরগতির বিষয়েও অসন্তোষ প্রকাশ করেন শেখ হাসিনা। এরপরই তাকে গ্রেফতারে তৎপর হয়ে ওঠে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।

আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজেই এমন ইঙ্গিত দিয়েছিলেন। গত ৯ জুলাই সংসদ অধিবেশনের সমাপনী বক্তব্যে তিনি বলেছিলেন, ‘দুর্নীতি, অনিয়মের সঙ্গে জড়িত আমরা যাকেই পাচ্ছি এবং যেখানেই পাচ্ছি তাকে ধরছি। আর ধরছি বলেই, চোর ধরে যেন চোর হয়ে যাচ্ছি।

আমরা ধরি আবার আমাদেরকেই দোষারোপ করা হয়। এটাই হচ্ছে দুর্ভাগ্য। এর আগে তো দুর্নীতিটাই নীতি ছিল। অনিয়মটাই নিয়ম ছিল। সেভাবেই রাষ্ট্র চলেছে। যতদূর পারি শুদ্ধ করার চেষ্টা করে যাচ্ছি। আমাদের প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকবে। এই অনিয়মগুলো আমরা নিশ্চয়ই মানব না।

সাহেদ করিম ইস্যুতে আওয়ামী লীগ নেতাদের কেউ কেউ আকারে ইঙ্গিতে গণমাধ্যমের নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিদের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন। তাদের ভাষ্যমতে, সাহেদ করিমের উত্থানে গণমাধ্যমের ভূমিকাও কম ছিল না। আওয়ামী লীগ ও সরকারের শীর্ষ স্থানীয়দের সঙ্গে সাহেদ করিমের যে সব ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে, এ রকম ছবি গণমাধ্যমের নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিদের সঙ্গেও রয়েছে।

আওয়ামী লীগের সম্পাদকমণ্ডলীর এক সদস্য বলেন, আমার তো মনে হয়, সাহেদ করিমকে গ্রেফতার করায় গণমাধ্যমকর্মীরা সবচেয়ে বেশি ক্ষুব্ধ হয়েছেন। কারণ সাহেদ করিম একটা গণমাধ্যমের মালিক এবং গণমাধ্যমের অনেক শীর্ষ ও নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিদের সঙ্গে তার সবচেয়ে বেশি সখ্যতা রয়েছে।

দলটির সভাপতিমণ্ডলীর আরেক সদস্য বলেন, শুধু সাহেদ নয়, যেকোনো অপরাধীর অপরাধ সামনে আসার পরই সবাই ওই অপরাধীর সঙ্গে আওয়ামী লীগ ও সরকারের সম্পর্ক খোঁজে। বিষয়গুলো এমনভাবে উপস্থাপন করার চেষ্টা করে যেন আওয়ামী লীগ ও সরকারই এ সমস্ত অপরাধের জন্য দায়ী।

অথচ এ সমস্ত অপরাধীদের খুঁজে বের করে শাস্তির মুখোমুখি করছে সরকারই। এখানে অন্য কারও কোনো ভূমিকা নেই। আর এই প্রবণতায় চটেছেন আমাদের নেত্রী (শেখ হাসিনা)।

এ সব বিষয়ে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, স্বাস্থ্য খাতে যে শুদ্ধি অভিযান শুরু হয়েছে তা পর্যায়ক্রমে তৃণমূলে ছড়িয়ে যাবে। কেউই জবাবদিহিতার ঊর্ধ্বে নয়। দলীয় পরিচয় দিয়ে অনিয়ম ঢাকা যাবে না। শেখ হাসিনা জনগণের মনের ভাষা বোঝেন। তার কাছে কোনো অপরাধীর ছাড় নেই।

উল্লেখ্য, করোনা পরীক্ষা ও আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসা বিষয়ে নানা জাল জালিয়াতি করায় রিজেন্ট গ্রুপের চেয়ারম্যান সাহেদ করিমকে গ্রেফতার করেছে র‍্যাব। বর্তমানে ১০ দিনের রিমান্ডে রয়েছেন করোনাকালে দেশের মানুষের সঙ্গে সবচেয়ে বড় প্রতারণা করা সাহেদ।

তার সঙ্গে রাষ্ট্রের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তির ছবি ফেসবুক ছড়িয়ে পড়ায় বিষয়টি নিয়ে ব্যাপক সমালোচনা হচ্ছে।সাহেদ দীর্ঘদিন ধরে নিজেকে আওয়ামী লীগের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিষয়ক উপ-কমিটির সদস্য বলে পরিচয় দিয়ে আসছিলেন এবং এ পরিচয়েই তিনি বিভিন্ন টেলিভিশনের টক-শোতে অংশ নিয়েছিলেন।

কিন্তু সম্প্রতি তার মালিকানাধীন রিজেন্ট হাসপাতালে করোনাভাইরাসের নমুনা পরীক্ষা ছাড়াই রিপোর্ট দেয়ার জালিয়াতি র‌্যাবের অভিযানে ধরা পড়লে সাহেদ পালিয়ে যান। পরে প্রধান কার্যালয়সহ রিজেন্টের দুই হাসপাতাল সিলগালা করে দেয়া হয়। অবশ্য বুধবার (১৫ জুলাই) সাতক্ষীরার সীমান্ত এলাকা থেকে সাহেদকে গ্রেফতার করে র‌্যাব।

বিজনেস আওয়ার/১৮ জুলাই, ২০২০/এ

ফেসবুকের মাধ্যমে আপনার মতামত জানান:
ট্যাগ :

আপনার মতামত লিখুন

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার মেইলে তথ্য জমা করুন

সাহেদকাণ্ডে সমালোচকদের ভূমিকায় চটেছেন শেখ হাসিনা

পোস্ট হয়েছে : ১০:৫৫ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১৮ জুলাই ২০২০

বিজনেস আওয়ার প্রতিবেদক : করোনা পরীক্ষায় রিজেন্ট হাসপাতালের অনিয়ম উদঘাটন এবং প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান সাহেদ করিমকে গ্রেফতার করে তাকে গ্রেফতার করে বিচারের মুখোমুখি করেছে সরকারই। এ ক্ষেত্রে সাহেদ করিমের দলীয় পরিচয়ও দেখা হয়নি।

অথচ রিজেন্ট গ্রুপের অনিয়ম প্রকাশিত হওয়ার পর আওয়ামী লীগ ও সরকারের সঙ্গে প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান সাহেদ করিমের ঘনিষ্ঠতাকে গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে তুলে ধরা হচ্ছে এবং প্রচার করা হচ্ছে। এতেই চটেছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। দলের একাধিক শীর্ষ নেতা এ তথ্য জানিয়েছেন।

দলটির নেতারা বলছেন, সাহেদ করিমের অপরাধ উদঘাটন ও গ্রেফতারে অন্য কারও ভূমিকা নেই। গণমাধ্যম থেকে শুরু করে সমালোচকরা এই ঘটনায় আওয়ামী লীগ ও সরকারকেই দোষারোপ করছে। অথচ সাহেদকে গ্রেফতারে ধীরগতির বিষয়েও অসন্তোষ প্রকাশ করেন শেখ হাসিনা। এরপরই তাকে গ্রেফতারে তৎপর হয়ে ওঠে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।

আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজেই এমন ইঙ্গিত দিয়েছিলেন। গত ৯ জুলাই সংসদ অধিবেশনের সমাপনী বক্তব্যে তিনি বলেছিলেন, ‘দুর্নীতি, অনিয়মের সঙ্গে জড়িত আমরা যাকেই পাচ্ছি এবং যেখানেই পাচ্ছি তাকে ধরছি। আর ধরছি বলেই, চোর ধরে যেন চোর হয়ে যাচ্ছি।

আমরা ধরি আবার আমাদেরকেই দোষারোপ করা হয়। এটাই হচ্ছে দুর্ভাগ্য। এর আগে তো দুর্নীতিটাই নীতি ছিল। অনিয়মটাই নিয়ম ছিল। সেভাবেই রাষ্ট্র চলেছে। যতদূর পারি শুদ্ধ করার চেষ্টা করে যাচ্ছি। আমাদের প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকবে। এই অনিয়মগুলো আমরা নিশ্চয়ই মানব না।

সাহেদ করিম ইস্যুতে আওয়ামী লীগ নেতাদের কেউ কেউ আকারে ইঙ্গিতে গণমাধ্যমের নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিদের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন। তাদের ভাষ্যমতে, সাহেদ করিমের উত্থানে গণমাধ্যমের ভূমিকাও কম ছিল না। আওয়ামী লীগ ও সরকারের শীর্ষ স্থানীয়দের সঙ্গে সাহেদ করিমের যে সব ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে, এ রকম ছবি গণমাধ্যমের নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিদের সঙ্গেও রয়েছে।

আওয়ামী লীগের সম্পাদকমণ্ডলীর এক সদস্য বলেন, আমার তো মনে হয়, সাহেদ করিমকে গ্রেফতার করায় গণমাধ্যমকর্মীরা সবচেয়ে বেশি ক্ষুব্ধ হয়েছেন। কারণ সাহেদ করিম একটা গণমাধ্যমের মালিক এবং গণমাধ্যমের অনেক শীর্ষ ও নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিদের সঙ্গে তার সবচেয়ে বেশি সখ্যতা রয়েছে।

দলটির সভাপতিমণ্ডলীর আরেক সদস্য বলেন, শুধু সাহেদ নয়, যেকোনো অপরাধীর অপরাধ সামনে আসার পরই সবাই ওই অপরাধীর সঙ্গে আওয়ামী লীগ ও সরকারের সম্পর্ক খোঁজে। বিষয়গুলো এমনভাবে উপস্থাপন করার চেষ্টা করে যেন আওয়ামী লীগ ও সরকারই এ সমস্ত অপরাধের জন্য দায়ী।

অথচ এ সমস্ত অপরাধীদের খুঁজে বের করে শাস্তির মুখোমুখি করছে সরকারই। এখানে অন্য কারও কোনো ভূমিকা নেই। আর এই প্রবণতায় চটেছেন আমাদের নেত্রী (শেখ হাসিনা)।

এ সব বিষয়ে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, স্বাস্থ্য খাতে যে শুদ্ধি অভিযান শুরু হয়েছে তা পর্যায়ক্রমে তৃণমূলে ছড়িয়ে যাবে। কেউই জবাবদিহিতার ঊর্ধ্বে নয়। দলীয় পরিচয় দিয়ে অনিয়ম ঢাকা যাবে না। শেখ হাসিনা জনগণের মনের ভাষা বোঝেন। তার কাছে কোনো অপরাধীর ছাড় নেই।

উল্লেখ্য, করোনা পরীক্ষা ও আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসা বিষয়ে নানা জাল জালিয়াতি করায় রিজেন্ট গ্রুপের চেয়ারম্যান সাহেদ করিমকে গ্রেফতার করেছে র‍্যাব। বর্তমানে ১০ দিনের রিমান্ডে রয়েছেন করোনাকালে দেশের মানুষের সঙ্গে সবচেয়ে বড় প্রতারণা করা সাহেদ।

তার সঙ্গে রাষ্ট্রের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তির ছবি ফেসবুক ছড়িয়ে পড়ায় বিষয়টি নিয়ে ব্যাপক সমালোচনা হচ্ছে।সাহেদ দীর্ঘদিন ধরে নিজেকে আওয়ামী লীগের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিষয়ক উপ-কমিটির সদস্য বলে পরিচয় দিয়ে আসছিলেন এবং এ পরিচয়েই তিনি বিভিন্ন টেলিভিশনের টক-শোতে অংশ নিয়েছিলেন।

কিন্তু সম্প্রতি তার মালিকানাধীন রিজেন্ট হাসপাতালে করোনাভাইরাসের নমুনা পরীক্ষা ছাড়াই রিপোর্ট দেয়ার জালিয়াতি র‌্যাবের অভিযানে ধরা পড়লে সাহেদ পালিয়ে যান। পরে প্রধান কার্যালয়সহ রিজেন্টের দুই হাসপাতাল সিলগালা করে দেয়া হয়। অবশ্য বুধবার (১৫ জুলাই) সাতক্ষীরার সীমান্ত এলাকা থেকে সাহেদকে গ্রেফতার করে র‌্যাব।

বিজনেস আওয়ার/১৮ জুলাই, ২০২০/এ

ফেসবুকের মাধ্যমে আপনার মতামত জানান: