বিজনেস আওয়ার প্রতিবেদক : বাংলাদেশ মার্চেন্ট ব্যাংকার্স এসোসিয়েশনের (বিএমবিএ) সভাপতি ছায়েদুর রহমান বলেন, অধিকাংশ সময় প্রাথমিক গণপ্রস্তাবের (আইপিওর) শেয়ারহোল্ডারদেরকে আগের অর্থবছরের জন্য লভ্যাংশ দিতে হয়। অথচ আইপিও অর্থ ওই অর্থবছরে পায়নি। যেমন একটি কোম্পানি যদি জুন বা জুলাই মাসে আইপিও অনুমোদন পায় এবং অক্টোবর-নভেম্বরে এজিএম করে, তাহলে তাকে পূর্বের বছরের উপর আইপিও শেয়ারহোল্ডারদেরকে লভ্যাংশ দিতে হয়। এটা আনজাস্টিফাইড কাজ। যা মোটেই কাম্য না। এই জায়গাগুলোতে অ্যাড্রেস করা উচিত। তাহলে হয়তো ভালো ব্যবসায়িরা শেয়ারবাজারে আসার প্রতি উৎসাহিত হবেন।
শনিবার (১৮ জুলাই) চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ (সিএসই) আয়োজিত ‘শেয়ারবাজারে করোনাভাইরাসের প্রভাব ও পুণ:রুদ্ধারের উপায়’ শীর্ষক সেমিনারে তিনি এ কথা বলেন।
তিনি বলেন, আজকে সবাই বলছে ভালো কোম্পানির কথা। কেনো ভালো কোম্পানি আসে না। আরজেএসসিতে ১ লাখ ৫৫ হাজারের বেশি কোম্পানি নিবন্ধিত হয়েছে। কিন্তু আমাদের শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানির সংখ্যা ৩২৫টির মতো। আমার অভিজ্ঞতায় দুই ধরনের কোম্পানিকে শেয়ারবাজারে আসতে দেখেছি। এক হলো আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও টেলিকম আইনগত বাধ্যবাধকতার কারনে আসে। দ্বিতীয়ত যেসব প্রতিষ্ঠান ব্যাংক থেকে ঋণ সুবিধা পাচ্ছে না, তারা আসে। কিন্তু সত্যিকার অর্থে যাদেরকে চাচ্ছি, তারা কেনো আসছে না, সেই সীমাবদ্ধতা দূর করা দরকার।
ছায়েদুর রহমান বলেন, আমার দৃষ্টিতে শেয়ারবাজার ভালো কোম্পানি না আসার পেছনে কয়েকটি কারন রয়েছে। এরমধ্যে রয়েছে, ছোট বা বড় যেসব প্রতিষ্ঠান ভালো ব্যবসা করছে, তারা খুব সহজেই ঋণ পাচ্ছে। যে কারনে তারা শেয়ারবাজারে আসতে আগ্রহী হচ্ছে না। ওইসব কোম্পানিকে কিভাবে প্রণোদনা দিয়ে আনা যায়, সেদিকে কাজ করা যেতে পারে।
বিএমবিএর এই সভাপতি বলেন, আমরা শুধু আইনের শাসনের কথা বলছি। বেশি শাসন করতে করতে সবাইকে ভয় দেখিয়ে দেব। আমরা শাসন না বলে পদ্ধতিগত উন্নয়ন বলতে পারি। আর ভালো কোম্পানিগুলোকে ফেসিলিটেড দিতে হবে। এক্ষেত্রে দুটি স্টক এক্সচেঞ্জ উদ্যোগ নিলে কমিশন আইনগত সহায়তা দিতে পারে। স্টক এক্সচেঞ্জের পক্ষ থেকে মার্কেটিংয়ের উদ্যোগটা নেওয়া হলেই বরং বৃহৎ ও লাভজনক প্রতিষ্ঠানগুলো আনা সহজ হবে।
এ বছর বাজেটে অতালিকাভুক্ত কোম্পানির করহার কমানোর বিষয়টি হতাশ করেছে বলে জানান বিএমবিএ সভাপতি। তিনি বলেন, যেখানে তালিকাভুক্ত ও অতালিকাভুক্ত কোম্পানির করহার ব্যবধান বাড়িয়ে উদ্যোক্তাদেরকে উৎসাহিত করা দরকার, সেখানে বাজেটে কমানোর মাধ্যমে নিরুৎসাহিত করা হয়েছে। এই নিরুৎসাহিত পরিস্থিতিতে ভালো কোম্পানিকে উৎসাহিত করতে পারব না। আমরা যদি সিস্টেমেটিক পদ্ধতিতে তাদেরকে উৎসাহিত না করতে পারি, তাহলে কিন্তু উন্নয়ন হবে না। শুধুমাত্র রেগুলেশনই হবে। আর রেগুলেটরি ফ্রেমওয়ার্কের প্রতি বিরক্ত হয়ে উদ্যোক্তারা শেয়ারবাজার থেকে দুরত্ব বজায় রাখবে।
তিনি বলেন, এবারের বাজেট বক্তৃতায় অর্থমন্ত্রী মহোদয় ১৫১ নম্বর ক্লজে বলেছেন, লভ্যাংশের উপর দ্বৈত করহার প্রত্যাহার করা হয়েছে। কিন্তু বাস্তবে সে বিষয়টি দেখছি না। যদি প্রত্যাহার করা হয়ে থাকে তাহলে কিন্তু লভ্যাংশের উপর এআইটি কেটে রাখার কথা না। কিন্তু রাখা হচ্ছে। এ বিষয়টিতে জরুরী ভিত্তিতে কাজ করা দরকার।
আরও পড়ুন……
আইসিবি বিনিয়োগ সক্ষমতা হারিয়ে ফেলেছে- আবুল হোসেন
বিদেশী বিনিয়োগকারীরাও ম্যানুপুলেট করে–বিএসইসি চেয়ারম্যান
শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ করে কোন ব্যাংক সমস্যায় নেই-আজম জে চৌধুরী
ফ্লোর প্রাইসের কারনে শেয়ারবাজারে সবচেয়ে বড় ক্ষতি হয়েছে : ব্র্যাক ব্যাংকের এমডি
বিদেশীদের মতে বাংলাদেশের শেয়ারবাজারে বিনিয়োগযোগ্য কোম্পানি ৭-৮টি : এমসিসিআই সভাপতি
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিএসইসির চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম। অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন- ডিএসইর এমডি কাজী সানাউল হক, সিএসইর চেয়ারম্যান আসিফ ইব্রাহিম ও এমডি মামুন-উর-রশীদ, আইসিবির এমডি আবুল হোসেন, বিএমবিএ সভাপতি ছায়েদুর রহমান, ডিবিএ সভাপতি শরীফ আনোয়ার হোসেন, এমসিসিআই সভাপতি নিহাদ কবির, বাংলাদেশ এসোসিয়েশন অব পাবলিকলি লিস্টেড কোম্পানিজের (বিএপিএলসি) সভাপতি আজম জে চৌধুরী।
বিজনেস আওয়ার/১৮ জুলাই, ২০২০/আরএ