শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানি লিগ্যাসি ফুটওয়্যার। তাই কোম্পানিটির আর্থিক হিসাব অতালিকাভুক্ত কোম্পানির থেকে ভালোভাবে উপস্থাপন হবে, এটাই স্বাভাবিকভাব। কিন্তু এ কোম্পানিটির আর্থিক হিসাবে ব্যয়কে নিট মুনাফা দেখানোর মতো নজিরবিহীন ভুল তথ্য তুলে ধরা হয়েছে।
এ কোম্পানি কর্তৃপক্ষ চলতি অর্থবছরের প্রথমার্ধের (জুলাই-ডিসেম্বর ২১) আর্থিক হিসাবের সঙ্গে আগের অর্থবছরের প্রথমার্ধের তুলনামূলক তথ্যে ট্যাক্স প্রভিশনিংয়ের ব্যয়কে নিট মুনাফা হিসাবে দেখিয়েছে। যা তুলনামূলক অ্যাকাউন্টস ছাড়াও আগের অর্থবছরের প্রথমার্ধের (জুলাই-ডিসেম্বর ২০) আর্থিক হিসাবে এমনটি করা হয়েছে। অথচ কর পূর্ববর্তী মুনাফা থেকে ট্যাক্স প্রভিশনিং বাদ দিয়ে যে অংশ থাকার কথা, সেটাকে নিট মুনাফা দেখানো উচিত।
ব্যক্তি থেকে শুরু করে কোম্পানি পর্যায়ে নিট মুনাফা বের করার নিয়ম একইরকম। এক্ষেত্রে মোট আয় থেকে ব্যয় বাদ দেওয়ার পরে যা থাকবে, সেটা নিট মুনাফা। সরকারকে প্রদত্ত রাজস্বও ব্যয়। তাই আয় থেকে এই ব্যয়ও বাদ দিতে হয়। কিন্তু লিগ্যাসি ফুটওয়্যার কর্তৃপক্ষ আয় থেকে ব্যয় বাদ দেওয়ার পরিবর্তে ব্যয়কেই নিট মুনাফা দেখিয়েছে।
দেখা গেছে, লিগ্যাসি ফুটওয়্যারের গত অর্থবছরের প্রথমার্ধে কর পূর্ববর্তী মুনাফা ছিল ৮৯ লাখ ৭২ হাজার ৬৩০ টাকা। এই মুনাফার উপরে কোম্পানি কর্তৃপক্ষ সরকারকে সম্ভাব্য প্রদত্ত হিসাবে ১১ লাখ ২১ হাজার ৫৭৯ টাকার ট্যাক্স প্রভিশনিং করেছে। ফলে কর পূর্ববর্তী মুনাফা থেকে ট্যাক্স প্রভিশিনিং ব্যয় হিসাবে বাদ যাবে। যাতে নিট মুনাফা হবে ৭৮ লাখ ৫১ হাজার ৫১ টাকা।
কিন্তু কোম্পানি কর্তৃপক্ষ ট্যাক্স প্রভিশনিং বাবদ ১১ লাখ ২১ হাজার ৫৭৯ টাকার ব্যয়কেই নিট মুনাফা দেখিয়েছে। এছাড়া এই ব্যয়কে বিবেচনায় নিয়ে শেয়ার প্রতি মুনাফা (ইপিএস) গণনা করেছে।
লিগ্যাসি ফুটওয়্যার কর্তৃপক্ষ গত অর্থবছরের প্রথমার্ধে ব্যয়কে বিবেচনায় ইপিএস দেখিয়েছে ০.০৯ টাকা। যেখানে ওই অর্থবছরের ২য় প্রান্তিকেই (অক্টোবর-ডিসেম্বর ২০) ইপিএস হয়েছিল ০.৪১ টাকা। আর ১ম প্রান্তিকে ইপিএস হয়েছিল ০.০৬ টাকা। এ হিসাবে দুই প্রান্তিকের যোগফল হয় ০.৪৭ টাকা।
এ বিষয়ে এক মার্চেন্ট ব্যাংকের সিইও এবং কস্ট অ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট অ্যাকাউন্টেন্ট বিজনেস আওয়ারকে বলেন, এটা খুবই হাস্যকর অ্যাকাউন্টস তৈরী করেছে লিগ্যাসি ফুটওয়্যার। ব্যয় কখনো নিট মুনাফা হতে পারে না। আয় থেকে ব্যয় বাদ দেওয়ার পরে যা থাকে, সেটা নিট মুনাফা। হয়তো পিয়ন পর্যায়ের কাউকে দিয়ে ওই অ্যাকাউন্টস বানানো হয়েছে। অন্যথায় সুস্থ মস্তিস্কের কারো পক্ষে এমন অ্যাকাউন্টস বানানো সম্ভব না।
এই ভুলের দায়ভার শেয়ারবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলো এড়াতে পারে না বলে তিনি মনে করেন। তারা যদি সঠিকভাবে কাজ করত, তাহলে এমন একটি অবাস্তব অ্যাকাউন্টস অবশ্যই তাদের দৃষ্টিগোচর হতো।
এদিকে ওই ভুল ও ব্যয়ের নিট মুনাফাকে কোম্পানির রিটেইন আর্নিংসে যোগ করেছে লিগ্যাসি ফুটওয়্যার কর্তৃপক্ষ। এর মাধ্যমে কোম্পানির সঠিক নিট সম্পদ দেখানো হয়নি।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) নির্বাহি পরিচালক ও মূখপাত্র মোহাম্মদ রেজাউল করিম বিজনেস আওয়ারকে বলেন, আন্তর্জাতিক হিসাব মান (আইএএস) মেনে কোম্পানিগুলোর আর্থিক হিসাব জমা ও বিনিয়োগকারীদের উদ্দেশ্যে প্রকাশের বাধ্যবাধকতা রয়েছে। কেউ যদি হিসাব মান লঙ্ঘন করে আর্থিক হিসাব প্রকাশ করে থাকে, তাহলে কমিশন সে বিষয় খতিয়ে দেখবে।
একই বিষয়ে জানতে লিগ্যাসি ফুটওয়্যারের টিঅ্যান্ডটি নাম্বারে ফোন দিলে রিসিপশন থেকে শেয়ার বিভাগে দেওয়া হয়। ওই বিভাগের এক কর্মকর্তা বিস্তারিত জানার পরে বলেন, কোম্পানি সচিব মো. আবুল কাশেম এ বিষয়ে ভালো বলতে পারবেন। তবে তিনি দেশে নেই। কানাডায় চিকিৎসা নিচ্ছেন। কবে আসবেন সেটা এই মুহূর্তে বলা যাচ্ছে না। অ্যাকাউন্টসের দায়িত্ব পালন করা প্রধান অর্থ কর্মকর্তার (সিএফও) সঙ্গে যোগাযোগ করতে চাইলে তিনি বলেন, উনি এই বিভাগের দায়িত্বে সেটা ঠিক আছে। কিন্তু উনি আরও অন্যান্য বিভাগ দেখেন। তাই অ্যাকাউন্টসের বিষয়ে জানতে চাইলে কোম্পানি সচিবের জন্য অপেক্ষা করতে হবে।
আরও পড়ুন…..
শেয়ার কারসাজি করতে লিগ্যাসি ফুটওয়্যারের লভ্যাংশ প্রতারণা
ইউনিক হোটেল থেকে তালিকাভুক্ত ৩৪ কোম্পানিতে বিনিয়োগ
উল্লেখ্য, ১৩ কোটি ৭ লাখ ৯৯ হাজার ৮০০ টাকার পরিশোধিত মূলধনের লিগ্যাসি ফুটওয়্যারে ১৪ কোটি ৩০ লাখ ৭২ হাজার ১৯৩ টাকার নিট সম্পদ রয়েছে। এতে করে শেয়ারপ্রতি নিট সম্পদ দাঁড়িয়েছে ১০.৯৪ টাকায়। এই সম্পদ মূল্যের প্রতিটি শেয়ারের দর রয়েছে ৬১.২০ টাকায়।
বিজনেস আওয়ার/০৩ মার্চ, ২০২২/আরএ
One thought on “ব্যয়কে মুনাফা দেখিয়েছে লিগ্যাসি ফুটওয়্যার”