ঢাকা , রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

তালিকাভুক্তির ৪ বছরেই চলতি মূলধনের ঘাটতিতে বন্ধ হওয়ার উপক্রম

ব্যবসা বাড়ানোর লক্ষ্যে ২০১৭ সালের নভেম্বরে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত করা হয় তারকাটা, পেরেক, ওয়েল্ডিং ইলেকট্রোডস, জি.আই ওয়ার ও ব্ল্যাক ওয়ার উৎপাদকারী ওয়াইম্যাক্স ইলেকট্রোডস কোম্পানিকে। কিন্তু শেয়ারবাজার থেকে টাকা উত্তোলনের ৪ বছরের মধ্যে চলতি মূলধন (দৈনন্দিন কার্যক্রম পরিচালনায় প্রয়োজনীয় অর্থ) ঘাটতিতে কোম্পানিটি বন্ধ হওয়ার উপক্রম তৈরী হয়েছে। অবশ্য এরইমধ্যে কোম্পানির অধিকাংশ বিভাগ (সেকশন) বন্ধ হয়ে গেছে। যে কোম্পানির চলতি অর্থবছরের প্রথমার্ধে (জুলাই-ডিসেম্বর ২১) বিক্রি মূল্যের চেয়ে উৎপাদনে ৫৪১ শতাংশের মতো অস্বাভাবিক ব্যয় ভবিষ্যতকে আরও সংকটে ফেলে দিয়েছে।

২০১৭ সালের ৬ নভেম্বর ইস্যু ম্যানেজার এমটিবি ক্যাপিটালের হাত ধরে শেয়ারবাজারে লেনদেন শুরু হওয়া ওয়াইম্যাক্স ইলেকট্রোডসের জন্য সাধারন বিনিয়োগকারীদের থেকে একই বছরে ১৫ কোটি টাকা সংগ্রহ করা হয়। মেশিনারীজ ও ইক্যুপমেন্ট ক্রয় এবং ঋণ পরিশোধের জন্য এই অর্থ সংগ্রহ করা হয়।

যা সংগ্রহের ৪ বছরের মধ্যেই দৈনন্দিন কার্যক্রম পরিচালনার মতো আর্থিক সংকটে পড়েছে ওয়াইম্যাক্স ইলেকট্রোডস। এর ফলে চলতি অর্থবছরের প্রথমার্ধে কোম্পানির অধিকাংশ সেকশন বন্ধ ছিল বলে আর্থিক হিসাবে জানানো হয়েছে।

আর্থিক হিসাব অনুযায়ি, ৬৭ কোটি ৮ লাখ টাকার পরিশোধিত মূলধনের কোম্পানিটিতে হাতে মাত্র ২ লাখ ৫৬ হাজার ৬০২ টাকা নগদ রয়েছে। আর এফডিআর হিসাবে রয়েছে ৬৯ লাখ ৯৭ হাজার টাকা। কিন্তু কোম্পানিটির এখনো প্লান্ট অ্যান্ড মেশিনারীজ ও ভবন নির্মাণ চলমান রয়েছে। যা শেষ করতে অর্থের দরকার।

চলতি মূলধন ঘাটতিকে একটি কোম্পানির জন্য বিপদ সংকেত বলে জানান দ্য ইনস্টিটিউট অব কস্ট অ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট অ্যাকাউন্টেন্ট অব বাংলাদেশের (আইসিএমএবি) সাবেক সভাপতি আবু সাঈদ মোঃ শায়খুল ইসলাম। তিনি বলেন, চলতি মূলধনের ঘাটতি মানে একটি কোম্পানি দূর্বল হয়ে পড়েছে। এবং এই সমস্যা কাটিয়ে উঠতে না পারলে পুরো কোম্পানি একসময় বন্ধ হয়ে যাবে।

এদিকে ওয়াইম্যাক্স ইলেকট্রোডের চলতি অর্থবছরের প্রথমার্ধে যে পরিমাণ পণ্য বিক্রি করেছে, তার পেছেনে উৎপাদন ব্যয় হয়েছে ৫০০ শতাংশের বেশি। যা অস্বাভাবিক ও ম্যানেজমেন্টের অদক্ষতাকে ফুটিয়ে তুলেছে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।

আরও পড়ুন….
ব্যয়কে মুনাফা দেখিয়েছে লিগ্যাসি ফুটওয়্যার

দেখা গেছে, কোম্পানিটির চলতি অর্থবছরের প্রথমার্ধে ৯০ লাখ ৬৫ হাজার টাকার পণ্য বিক্রি হয়েছে। এই পণ্য উৎপাদনে ৪ কোটি ৯৩ লাখ ৮৯ হাজার টাকা ব্যয় হয়েছে। অর্থাৎ বিক্রি মূল্যের চেয়ে বিক্রিত পণ্য উৎপাদনে ব্যয় হয়েছে ৫৪১ শতাংশ।

অথচ আগের অর্থবছরের প্রথমার্ধে (জুলাই-ডিসেম্বর ২০) করোনার প্রভাব প্রকোট থাকাকালীন সময় কোম্পানিটির বিক্রির পরিমাণ বেশি ছিল এবং উৎপাদন খরচ তার চেয়ে কম ছিল। ওই সময় কোম্পানিটির ৮ কোটি ৯৯ লাখ ৩৬ হাজার টাকার পণ্য বিক্রির বিপরীতে উৎপাদন খরচ হয়েছিল ৬ কোটি ৬৩ লাখ ৯২ হাজার টাকা। অর্থাৎ বিক্রি মূল্যের বিপরীতে উৎপাদন খরচ হয়েছিল ৭৪ শতাংশ।

এই পরিস্থিতিতে কোম্পানির ব্যবসায়িক ভবিষ্যত ভালো দেখছেন না শায়খুল ইসলাম। তিনি বলেন, এখনই যদি উৎপাদন খরচ কমানো ও চলতি মূলধন ঘাটতি কাটিয়ে উঠা না যায়, তাহলে ব্যবসা টিকিয়ে রাখা কঠিন হবে। এজন্য তিনি বিজনেস রিকভারী প্লান ও ফাইন্যান্সিয়াল রিকভারী প্লান করাকে গুরতুপূর্ণ মনে করেন। এর মাধ্যমে উৎপাদন ব্যয় কমিয়ে আনতে হবে এবং প্রয়োজনে স্থায়ী সম্পদ বিক্রি করে নগদ অর্থের পরিমাণ বাড়াতে হবে।

তিনি বলেন, কোম্পানির যে উৎপাদন ব্যয়, তাতে স্থায়ী খরচ বেড়েছে বলে প্রতিয়মান হচ্ছে। তবে এই ব্যয় কমাতে প্রয়োজনে লোকবল ছাটাই করতে হবে।

ওয়াইম্যাক্স ইলেকট্রোডসের চলতি বছরের প্রথমার্ধে বিক্রি মূল্য থেকে উৎপাদন ব্যয়, প্রশাসনিক ব্যয়, সুদজনিত ব্যয়, আয়কর ব্যয় শেষে নিট লোকসান হয়েছে ৫ কোটি ১৫ লাখ টাকা বা শেয়ারপ্রতি ০.৭৭ টাকা। যার পরিমাণ আগের অর্থবছরের প্রথমার্ধে ছিল নিট মুনাফা ৫১ লাখ টাকা বা শেয়ারপ্রতি ০.০৮ টাকা।

এ বিষয়ে ওয়াইম্যাক্স ইলেকট্রোডসের প্রধান অর্থ কর্মকর্তা (সিএফও) ফারুক হোসেন বিজনেস আওয়ারকে বলেন, আমরা এখনো চলতি মূলধনের ঘাটতিতে আছি। সমাধানের চেষ্টা করতেছি, কিন্তু পারছি না। হয়তো নিকট ভবিষ্যতে ভালো কিছু হবে। তবে বর্তমানে চলতি মূলধন ঘাটতির কারনে যেসব সমস্যা সাধারনত হয়, তার মধ্য দিয়ে যাচ্ছি। এমনকি এই সমস্যার কারনে উৎপাদনও খুবই ধীরগতি। বাজারে পণ্যের চাহিদা থাকা সত্ত্বেও উৎপাদন সমস্যায় বিক্রি বাড়াতে পারছি না।

বিজনেস আওয়ার/০৬ মার্চ, ২০২২/আরএ

ফেসবুকের মাধ্যমে আপনার মতামত জানান:
ট্যাগ :

One thought on “তালিকাভুক্তির ৪ বছরেই চলতি মূলধনের ঘাটতিতে বন্ধ হওয়ার উপক্রম

আপনার মতামত লিখুন

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার মেইলে তথ্য জমা করুন

তালিকাভুক্তির ৪ বছরেই চলতি মূলধনের ঘাটতিতে বন্ধ হওয়ার উপক্রম

পোস্ট হয়েছে : ০২:৪৯ অপরাহ্ন, রবিবার, ৬ মার্চ ২০২২

ব্যবসা বাড়ানোর লক্ষ্যে ২০১৭ সালের নভেম্বরে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত করা হয় তারকাটা, পেরেক, ওয়েল্ডিং ইলেকট্রোডস, জি.আই ওয়ার ও ব্ল্যাক ওয়ার উৎপাদকারী ওয়াইম্যাক্স ইলেকট্রোডস কোম্পানিকে। কিন্তু শেয়ারবাজার থেকে টাকা উত্তোলনের ৪ বছরের মধ্যে চলতি মূলধন (দৈনন্দিন কার্যক্রম পরিচালনায় প্রয়োজনীয় অর্থ) ঘাটতিতে কোম্পানিটি বন্ধ হওয়ার উপক্রম তৈরী হয়েছে। অবশ্য এরইমধ্যে কোম্পানির অধিকাংশ বিভাগ (সেকশন) বন্ধ হয়ে গেছে। যে কোম্পানির চলতি অর্থবছরের প্রথমার্ধে (জুলাই-ডিসেম্বর ২১) বিক্রি মূল্যের চেয়ে উৎপাদনে ৫৪১ শতাংশের মতো অস্বাভাবিক ব্যয় ভবিষ্যতকে আরও সংকটে ফেলে দিয়েছে।

২০১৭ সালের ৬ নভেম্বর ইস্যু ম্যানেজার এমটিবি ক্যাপিটালের হাত ধরে শেয়ারবাজারে লেনদেন শুরু হওয়া ওয়াইম্যাক্স ইলেকট্রোডসের জন্য সাধারন বিনিয়োগকারীদের থেকে একই বছরে ১৫ কোটি টাকা সংগ্রহ করা হয়। মেশিনারীজ ও ইক্যুপমেন্ট ক্রয় এবং ঋণ পরিশোধের জন্য এই অর্থ সংগ্রহ করা হয়।

যা সংগ্রহের ৪ বছরের মধ্যেই দৈনন্দিন কার্যক্রম পরিচালনার মতো আর্থিক সংকটে পড়েছে ওয়াইম্যাক্স ইলেকট্রোডস। এর ফলে চলতি অর্থবছরের প্রথমার্ধে কোম্পানির অধিকাংশ সেকশন বন্ধ ছিল বলে আর্থিক হিসাবে জানানো হয়েছে।

আর্থিক হিসাব অনুযায়ি, ৬৭ কোটি ৮ লাখ টাকার পরিশোধিত মূলধনের কোম্পানিটিতে হাতে মাত্র ২ লাখ ৫৬ হাজার ৬০২ টাকা নগদ রয়েছে। আর এফডিআর হিসাবে রয়েছে ৬৯ লাখ ৯৭ হাজার টাকা। কিন্তু কোম্পানিটির এখনো প্লান্ট অ্যান্ড মেশিনারীজ ও ভবন নির্মাণ চলমান রয়েছে। যা শেষ করতে অর্থের দরকার।

চলতি মূলধন ঘাটতিকে একটি কোম্পানির জন্য বিপদ সংকেত বলে জানান দ্য ইনস্টিটিউট অব কস্ট অ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট অ্যাকাউন্টেন্ট অব বাংলাদেশের (আইসিএমএবি) সাবেক সভাপতি আবু সাঈদ মোঃ শায়খুল ইসলাম। তিনি বলেন, চলতি মূলধনের ঘাটতি মানে একটি কোম্পানি দূর্বল হয়ে পড়েছে। এবং এই সমস্যা কাটিয়ে উঠতে না পারলে পুরো কোম্পানি একসময় বন্ধ হয়ে যাবে।

এদিকে ওয়াইম্যাক্স ইলেকট্রোডের চলতি অর্থবছরের প্রথমার্ধে যে পরিমাণ পণ্য বিক্রি করেছে, তার পেছেনে উৎপাদন ব্যয় হয়েছে ৫০০ শতাংশের বেশি। যা অস্বাভাবিক ও ম্যানেজমেন্টের অদক্ষতাকে ফুটিয়ে তুলেছে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।

আরও পড়ুন….
ব্যয়কে মুনাফা দেখিয়েছে লিগ্যাসি ফুটওয়্যার

দেখা গেছে, কোম্পানিটির চলতি অর্থবছরের প্রথমার্ধে ৯০ লাখ ৬৫ হাজার টাকার পণ্য বিক্রি হয়েছে। এই পণ্য উৎপাদনে ৪ কোটি ৯৩ লাখ ৮৯ হাজার টাকা ব্যয় হয়েছে। অর্থাৎ বিক্রি মূল্যের চেয়ে বিক্রিত পণ্য উৎপাদনে ব্যয় হয়েছে ৫৪১ শতাংশ।

অথচ আগের অর্থবছরের প্রথমার্ধে (জুলাই-ডিসেম্বর ২০) করোনার প্রভাব প্রকোট থাকাকালীন সময় কোম্পানিটির বিক্রির পরিমাণ বেশি ছিল এবং উৎপাদন খরচ তার চেয়ে কম ছিল। ওই সময় কোম্পানিটির ৮ কোটি ৯৯ লাখ ৩৬ হাজার টাকার পণ্য বিক্রির বিপরীতে উৎপাদন খরচ হয়েছিল ৬ কোটি ৬৩ লাখ ৯২ হাজার টাকা। অর্থাৎ বিক্রি মূল্যের বিপরীতে উৎপাদন খরচ হয়েছিল ৭৪ শতাংশ।

এই পরিস্থিতিতে কোম্পানির ব্যবসায়িক ভবিষ্যত ভালো দেখছেন না শায়খুল ইসলাম। তিনি বলেন, এখনই যদি উৎপাদন খরচ কমানো ও চলতি মূলধন ঘাটতি কাটিয়ে উঠা না যায়, তাহলে ব্যবসা টিকিয়ে রাখা কঠিন হবে। এজন্য তিনি বিজনেস রিকভারী প্লান ও ফাইন্যান্সিয়াল রিকভারী প্লান করাকে গুরতুপূর্ণ মনে করেন। এর মাধ্যমে উৎপাদন ব্যয় কমিয়ে আনতে হবে এবং প্রয়োজনে স্থায়ী সম্পদ বিক্রি করে নগদ অর্থের পরিমাণ বাড়াতে হবে।

তিনি বলেন, কোম্পানির যে উৎপাদন ব্যয়, তাতে স্থায়ী খরচ বেড়েছে বলে প্রতিয়মান হচ্ছে। তবে এই ব্যয় কমাতে প্রয়োজনে লোকবল ছাটাই করতে হবে।

ওয়াইম্যাক্স ইলেকট্রোডসের চলতি বছরের প্রথমার্ধে বিক্রি মূল্য থেকে উৎপাদন ব্যয়, প্রশাসনিক ব্যয়, সুদজনিত ব্যয়, আয়কর ব্যয় শেষে নিট লোকসান হয়েছে ৫ কোটি ১৫ লাখ টাকা বা শেয়ারপ্রতি ০.৭৭ টাকা। যার পরিমাণ আগের অর্থবছরের প্রথমার্ধে ছিল নিট মুনাফা ৫১ লাখ টাকা বা শেয়ারপ্রতি ০.০৮ টাকা।

এ বিষয়ে ওয়াইম্যাক্স ইলেকট্রোডসের প্রধান অর্থ কর্মকর্তা (সিএফও) ফারুক হোসেন বিজনেস আওয়ারকে বলেন, আমরা এখনো চলতি মূলধনের ঘাটতিতে আছি। সমাধানের চেষ্টা করতেছি, কিন্তু পারছি না। হয়তো নিকট ভবিষ্যতে ভালো কিছু হবে। তবে বর্তমানে চলতি মূলধন ঘাটতির কারনে যেসব সমস্যা সাধারনত হয়, তার মধ্য দিয়ে যাচ্ছি। এমনকি এই সমস্যার কারনে উৎপাদনও খুবই ধীরগতি। বাজারে পণ্যের চাহিদা থাকা সত্ত্বেও উৎপাদন সমস্যায় বিক্রি বাড়াতে পারছি না।

বিজনেস আওয়ার/০৬ মার্চ, ২০২২/আরএ

ফেসবুকের মাধ্যমে আপনার মতামত জানান: