ঢাকা , শনিবার, ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ২৯ ভাদ্র ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

অন্যায়ের বিরুদ্ধে শাস্তি প্রদান থেমে নেই

  • পোস্ট হয়েছে : ১২:১০ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১৬ মার্চ ২০২২
  • 64

বিজনেস আওয়ার প্রতিবেদক : বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিবলী-রুবাইয়াত-উল-ইসলাম বলেন, আমরা এখনো মনিটরিংয়ে গুরুত্ব দিয়ে থাকি। তবে আগে শাস্তির খবর গণমাধ্যমে দেওয়া হলেও এখন তা করা হয় না। তাই বলে অন্যায়ের বিরুদ্ধে জরিমানা বা শাস্তি প্রদান থেমে নেই। গত কমিশন সভায়ও ৫ জনকে জরিমানা করা হয়েছে।

মঙ্গলবার (১৫ মার্চ) ডিএসই ভবনে আয়োজিত ‘বিনিয়োগকারীদের ফান্ড ও সিকিউরিটিজের সুরক্ষা জোরদারকরন’ শীর্ষক অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন। এতে বিশেষ অতিথি হিসেবে বিএসইসির কমিশনার আব্দুল হালিম উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠানটিতে সভাপতিত্ব করেন ডিএসইর চেয়ারম্যান মো. ইউনুসুর রহমান।

এর আগে ডিএসইর চেয়ারম্যান বলেন, বর্তমান কমিশন দায়িত্ব নেওয়ার শুরুতে অনেক কাজ করেছে। অন্যায়কারীদের বিরুদ্ধে শাস্তি দিয়েছে। তবে সেটা এখন দেখা যায় না। তার এই কথা প্রতিউত্তরে মনিটরিং ও শাস্তির বিষয়টি তুলে ধরেন বিএসইসি চেয়ারম্যান।

ব্রোকারদের উদ্দেশ্যে শিবলী বলেন, নিজের সম্পদের চেয়ে বিনিয়োগকারীদের সম্পদকে বেশি ভালো করে রক্ষা করতে হবে। তাদের সম্পদ ব্রোকারদের কাছে আমানত। এই আমানত যারা রক্ষা করতে পারে না, তারা মানুষই না। আমানতের সুরক্ষার বিষয়ে প্রতিটি ধর্মে গুরুত্বারোপ করা হয়েছে।

তিনি বলেন, গত ২ মাসে ৫০০ ফাইল ক্লিয়ার করা হয়েছে। চাইলে সবাইকেই জরিমানা করা যেত।

অর্থ আত্মসাতকারী ৩ ব্রোকারেজ হাউজের বিষয়ে বিএসইসি চেয়ারম্যান বলেন, তাদেরকে ডেকে ৬০-৭০ কোটি টাকা কোথায় রেখেছেন, তা জিজ্ঞেস করেছিলাম। কিন্তু কোন জবাব দেয়নি, চুপ করে ছিল। এতো টাকাতো বস্তায় ভরে বাসায় নিয়ে রাখাও সম্ভব না। যেহেতু জবাব দেয়নি, নিশ্চয় অনিয়ম করেছে। এ কারনে পাসপোর্ট জব্দ, এয়ারপোর্ট ও বাসা থেকে গ্রেফতার পর্যন্ত করাতে হয়েছে। কিন্তু এসব করতে আমাদের ভালো লাগে না। আমরা চাই সবাই ভালোভাবে ব্যবসা করুক।

এই সমস্যা কাটিয়ে উঠতে সব ব্রোকারদেরকে নিয়মকানুন মেনে চলার আহবান করেছেন বিএসইসি চেয়ারম্যান। তা করতে গিয়ে যদি কারও কোন সমস্যা হয়, তাহলে কমিশন সেদিকটি বিবেচনা করবে বলে জানান। এই কমিশন বিনিয়োগকারীদের পাশাপাশি ব্রোকারদের উন্নয়নেও কাজ করছে। যে কারনে গত সপ্তাহে দেশ-বিদেশে ফোন দিয়ে হাজার হাজার টাকা ব্যয় করে শেয়ারবাজারের কঠিন সময় নিয়ন্ত্রণে এনেছে। এ কাজ যদি কমিশন না করত, তাতে করে বিএসইসির কারও বেতন-ভাতা বন্ধ থাকত না।

অনুষ্ঠানে বিএসইসির কমিশনার আব্দুল হালিম ব্রোকারদেরকে তাদের প্রতিষ্ঠানের মধ্যে নিয়মকানুন মেনে চলার আহবান করেছেন। এতে করে মানুষের মধ্যে আস্থা তৈরী হবে। তাহলে শেয়ারবাজারে পুঁজির কোন সংকট হবে না বলে মনে করেন তিনি। কারন মানুষের কাছে অনেক অলস অর্থ রয়েছে জানান তিনি।

বিএসইসির এই কমিশনার বলেন, অনেক ব্রোকার হাউজের কমপ্লায়েন্ট অফিসারই নিয়মকানুন মানেন না। অথচ তিনি কমপ্লায়েন্ট অফিসার। এছাড়া এসোসিয়েশনের নেতাসহ ডিএসইর সাবেক কিছু নেতাও আইন অমান্য করেন। তাহলে তারা কিসের নেতা। যারা নিজেরাই আইন মেনে চলেন না। তাই ওইসব সম্মানি ব্যক্তিদেরকে সম্মান রক্ষার জন্য আইন মেনে চলার আহবান করেছেন তিনি। অন্যথায় কমিশন যদি ব্যবস্থা নেয়, তখন কোন সুপারিশে কাজ হবে না। আর সুপারিশে অন্যায়কে প্রশ্রয় দেওয়া কমিশনের কাজ না বলেও জানান তিনি।

আব্দুল হালিম বলেন, কিছু কিছু প্রতিষ্ঠানে এমন সব অনিয়ম পাওয়া যায়, যা মানার অযোগ্য। যার মধ্য থেকে এরইমধ্যে ২০-২৫টি ব্রোকার প্রতিষ্ঠানকে রেড জোনে রাখা হয়েছে।

ডিএসইর চেয়ারম্যান ইউনুসুর রহমান বলেন, শেয়ারবাজারের ৬৫ বছরের ইতিহাসে ব্রোকারদের অর্থ আত্মসাতের ঘটনা খুব একটা ঘটেনি। তবে গত দেড় বছরে ৩টি বড় দূর্ঘটনা ঘটেছে। যা দুঃশ্চিন্তার মধ্যে ফেলে দিয়েছে। বর্তমান কমিশন অনেক কাজ করলেও তাদের সময়ে ওই ৩টি ঘটনায় বিনিয়োগকারীরা টাকা ফেরত পাচ্ছে না। এরফলে বাজারে আস্থা কমবে।

তিনি বলেন, তামহা সিকিউরিটিজের ঘটনায় আমার পরিচিত একজন তার ৫০-৬০ লাখ টাকা আত্মসাতের ঘটনা জানিয়েছেন। কিন্তু বিষয়টি নিয়ে স্টক এক্সচেঞ্জে আলোচনা
করে জানতে পারলাম, এই টাকা উদ্ধারে দ্রুত করণীয় কিছু নেই। আইনগত দূর্বলতার কারনে আত্মসাৎকারী ঘুরে বেড়াচ্ছে এবং ভুক্তভোগী সব হারিয়ে বিনা চিকিৎসায় মৃত্যূর দিকে চলে যাচ্ছে। আমাদেরকে এই সমস্যা কাটিয়ে উঠেত হবে।

এই সমস্যা কাটিয়ে উঠতে চাইনিজদের মতো ব্রোকারেজ হাউজগুলোর পরিবর্তে ফান্ড ম্যানেজমেন্ট ব্যাংকের মাধ্যমে করা যায় কিনা, তা কমিশনকে ভেবে দেখার আহবান করেছেন ডিএসইর এই চেয়ারম্যান। এছাড়া রেড জোনে থাকা ব্রোকারেজ হাউজগুলোতে প্রতিদিন মনিটরিং করার কথা বলেছেন।

অনুষ্ঠানে অন্যান্যদের মধ্যে ডিএসইর এমডি তারিক আমিন ভূইয়া, ডিবিএ সভাপতি রিচার্ড ডি রোজারিও ও সিডিবিএল এর এমডি শুভ্র কান্তি চৌধুরী বক্তব্য রাখেন।

বিজনেস আওয়ার/১৫ মার্চ, ২০২২/আরএ

ফেসবুকের মাধ্যমে আপনার মতামত জানান:
ট্যাগ :

আপনার মতামত লিখুন

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার মেইলে তথ্য জমা করুন

সর্বাধিক পঠিত

অন্যায়ের বিরুদ্ধে শাস্তি প্রদান থেমে নেই

পোস্ট হয়েছে : ১২:১০ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১৬ মার্চ ২০২২

বিজনেস আওয়ার প্রতিবেদক : বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিবলী-রুবাইয়াত-উল-ইসলাম বলেন, আমরা এখনো মনিটরিংয়ে গুরুত্ব দিয়ে থাকি। তবে আগে শাস্তির খবর গণমাধ্যমে দেওয়া হলেও এখন তা করা হয় না। তাই বলে অন্যায়ের বিরুদ্ধে জরিমানা বা শাস্তি প্রদান থেমে নেই। গত কমিশন সভায়ও ৫ জনকে জরিমানা করা হয়েছে।

মঙ্গলবার (১৫ মার্চ) ডিএসই ভবনে আয়োজিত ‘বিনিয়োগকারীদের ফান্ড ও সিকিউরিটিজের সুরক্ষা জোরদারকরন’ শীর্ষক অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন। এতে বিশেষ অতিথি হিসেবে বিএসইসির কমিশনার আব্দুল হালিম উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠানটিতে সভাপতিত্ব করেন ডিএসইর চেয়ারম্যান মো. ইউনুসুর রহমান।

এর আগে ডিএসইর চেয়ারম্যান বলেন, বর্তমান কমিশন দায়িত্ব নেওয়ার শুরুতে অনেক কাজ করেছে। অন্যায়কারীদের বিরুদ্ধে শাস্তি দিয়েছে। তবে সেটা এখন দেখা যায় না। তার এই কথা প্রতিউত্তরে মনিটরিং ও শাস্তির বিষয়টি তুলে ধরেন বিএসইসি চেয়ারম্যান।

ব্রোকারদের উদ্দেশ্যে শিবলী বলেন, নিজের সম্পদের চেয়ে বিনিয়োগকারীদের সম্পদকে বেশি ভালো করে রক্ষা করতে হবে। তাদের সম্পদ ব্রোকারদের কাছে আমানত। এই আমানত যারা রক্ষা করতে পারে না, তারা মানুষই না। আমানতের সুরক্ষার বিষয়ে প্রতিটি ধর্মে গুরুত্বারোপ করা হয়েছে।

তিনি বলেন, গত ২ মাসে ৫০০ ফাইল ক্লিয়ার করা হয়েছে। চাইলে সবাইকেই জরিমানা করা যেত।

অর্থ আত্মসাতকারী ৩ ব্রোকারেজ হাউজের বিষয়ে বিএসইসি চেয়ারম্যান বলেন, তাদেরকে ডেকে ৬০-৭০ কোটি টাকা কোথায় রেখেছেন, তা জিজ্ঞেস করেছিলাম। কিন্তু কোন জবাব দেয়নি, চুপ করে ছিল। এতো টাকাতো বস্তায় ভরে বাসায় নিয়ে রাখাও সম্ভব না। যেহেতু জবাব দেয়নি, নিশ্চয় অনিয়ম করেছে। এ কারনে পাসপোর্ট জব্দ, এয়ারপোর্ট ও বাসা থেকে গ্রেফতার পর্যন্ত করাতে হয়েছে। কিন্তু এসব করতে আমাদের ভালো লাগে না। আমরা চাই সবাই ভালোভাবে ব্যবসা করুক।

এই সমস্যা কাটিয়ে উঠতে সব ব্রোকারদেরকে নিয়মকানুন মেনে চলার আহবান করেছেন বিএসইসি চেয়ারম্যান। তা করতে গিয়ে যদি কারও কোন সমস্যা হয়, তাহলে কমিশন সেদিকটি বিবেচনা করবে বলে জানান। এই কমিশন বিনিয়োগকারীদের পাশাপাশি ব্রোকারদের উন্নয়নেও কাজ করছে। যে কারনে গত সপ্তাহে দেশ-বিদেশে ফোন দিয়ে হাজার হাজার টাকা ব্যয় করে শেয়ারবাজারের কঠিন সময় নিয়ন্ত্রণে এনেছে। এ কাজ যদি কমিশন না করত, তাতে করে বিএসইসির কারও বেতন-ভাতা বন্ধ থাকত না।

অনুষ্ঠানে বিএসইসির কমিশনার আব্দুল হালিম ব্রোকারদেরকে তাদের প্রতিষ্ঠানের মধ্যে নিয়মকানুন মেনে চলার আহবান করেছেন। এতে করে মানুষের মধ্যে আস্থা তৈরী হবে। তাহলে শেয়ারবাজারে পুঁজির কোন সংকট হবে না বলে মনে করেন তিনি। কারন মানুষের কাছে অনেক অলস অর্থ রয়েছে জানান তিনি।

বিএসইসির এই কমিশনার বলেন, অনেক ব্রোকার হাউজের কমপ্লায়েন্ট অফিসারই নিয়মকানুন মানেন না। অথচ তিনি কমপ্লায়েন্ট অফিসার। এছাড়া এসোসিয়েশনের নেতাসহ ডিএসইর সাবেক কিছু নেতাও আইন অমান্য করেন। তাহলে তারা কিসের নেতা। যারা নিজেরাই আইন মেনে চলেন না। তাই ওইসব সম্মানি ব্যক্তিদেরকে সম্মান রক্ষার জন্য আইন মেনে চলার আহবান করেছেন তিনি। অন্যথায় কমিশন যদি ব্যবস্থা নেয়, তখন কোন সুপারিশে কাজ হবে না। আর সুপারিশে অন্যায়কে প্রশ্রয় দেওয়া কমিশনের কাজ না বলেও জানান তিনি।

আব্দুল হালিম বলেন, কিছু কিছু প্রতিষ্ঠানে এমন সব অনিয়ম পাওয়া যায়, যা মানার অযোগ্য। যার মধ্য থেকে এরইমধ্যে ২০-২৫টি ব্রোকার প্রতিষ্ঠানকে রেড জোনে রাখা হয়েছে।

ডিএসইর চেয়ারম্যান ইউনুসুর রহমান বলেন, শেয়ারবাজারের ৬৫ বছরের ইতিহাসে ব্রোকারদের অর্থ আত্মসাতের ঘটনা খুব একটা ঘটেনি। তবে গত দেড় বছরে ৩টি বড় দূর্ঘটনা ঘটেছে। যা দুঃশ্চিন্তার মধ্যে ফেলে দিয়েছে। বর্তমান কমিশন অনেক কাজ করলেও তাদের সময়ে ওই ৩টি ঘটনায় বিনিয়োগকারীরা টাকা ফেরত পাচ্ছে না। এরফলে বাজারে আস্থা কমবে।

তিনি বলেন, তামহা সিকিউরিটিজের ঘটনায় আমার পরিচিত একজন তার ৫০-৬০ লাখ টাকা আত্মসাতের ঘটনা জানিয়েছেন। কিন্তু বিষয়টি নিয়ে স্টক এক্সচেঞ্জে আলোচনা
করে জানতে পারলাম, এই টাকা উদ্ধারে দ্রুত করণীয় কিছু নেই। আইনগত দূর্বলতার কারনে আত্মসাৎকারী ঘুরে বেড়াচ্ছে এবং ভুক্তভোগী সব হারিয়ে বিনা চিকিৎসায় মৃত্যূর দিকে চলে যাচ্ছে। আমাদেরকে এই সমস্যা কাটিয়ে উঠেত হবে।

এই সমস্যা কাটিয়ে উঠতে চাইনিজদের মতো ব্রোকারেজ হাউজগুলোর পরিবর্তে ফান্ড ম্যানেজমেন্ট ব্যাংকের মাধ্যমে করা যায় কিনা, তা কমিশনকে ভেবে দেখার আহবান করেছেন ডিএসইর এই চেয়ারম্যান। এছাড়া রেড জোনে থাকা ব্রোকারেজ হাউজগুলোতে প্রতিদিন মনিটরিং করার কথা বলেছেন।

অনুষ্ঠানে অন্যান্যদের মধ্যে ডিএসইর এমডি তারিক আমিন ভূইয়া, ডিবিএ সভাপতি রিচার্ড ডি রোজারিও ও সিডিবিএল এর এমডি শুভ্র কান্তি চৌধুরী বক্তব্য রাখেন।

বিজনেস আওয়ার/১৫ মার্চ, ২০২২/আরএ

ফেসবুকের মাধ্যমে আপনার মতামত জানান: