1. [email protected] : anjuman : anjuman
  2. [email protected] : user : user
  3. [email protected] : Admin : Admin
  4. [email protected] : Nayan Babu : Nayan Babu
সাড়ে ৬ হাজার স্কয়ার ফিটের জমিতে ১৪৫০০ স্কয়ার ফিট আয়তনের ছাউনি-কাঠামো
শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০২:৫৯ অপরাহ্ন

সাড়ে ৬ হাজার স্কয়ার ফিটের জমিতে ১৪৫০০ স্কয়ার ফিট আয়তনের ছাউনি-কাঠামো

ইব্রাহিম হোসাইন (রেজোয়ান)
  • পোস্ট হয়েছে : রবিবার, ২৭ মার্চ, ২০২২
print sharing button

শেয়ারবাজারে আসার আগে অস্বাভাবিক পরিশোধিত মূলধন বাড়ানো স্টার অ্যাডহেসিভে জমির তুলনায়ও অস্বাভাবিক ছাউনি-কাঠামো দেখিয়েছে। এ কোম্পানি কর্তৃপক্ষ তাদের সাড়ে ৬ হাজারের কম স্কয়ার ফিটের জমিতে ৭০০০ স্কয়ার ফিটের গোডাউনের ছাউনি এবং ৭৫০০ স্কয়ার ফিটের ভবন (প্রতিটি ফ্লোর) দেখিয়েছে। কয়েক দফায় কারখানা সরেজমিনে পরিদর্শনে এর সত্যতা পেয়েছে বলেও ভেরিফিকেশন রিপোর্ট দিয়েছে ইস্যু ম্যানেজার এএএ ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট কর্তৃপক্ষ। তবে প্রকৌশলীরা সাড়ে ৬ হাজার স্কয়ার ফিটের জমিতে এমন কাঠামো কিভাবে সম্ভব, তা বুঝতে পারছেন না।

স্টার অ্যাডহেসিভের আর্থিক হিসাব অনুযায়ি, কোম্পানিটির ১৪.৫০ শতাংশ বা ৬৩১১.৮৫ স্কয়ার (শতাংশ প্রতি ৪৩৫.৩০ স্কয়ার ফিট) ফিট জমি রয়েছে। কিন্তু কোম্পানি কর্তৃপক্ষ প্রসপেক্টাসের ৪৭ পৃষ্টায় ওই জমিতে ৭ হাজার স্কয়ার ফিটের ১টি গোডাউন শেড ও ৩০ হাজার স্কয়ার ফিটের ৪ তলা ভবন রয়েছে বলে জানিয়েছে। অর্থাৎ জমি লেগেছে গোডাউন শেডে ৭ হাজার স্কয়ার ফিট ও ৪ তলা ভবনে প্রতি ফ্লোর বিবেচনায় ৭৫০০ স্কয়ার ফিট। এ হিসাবে ৬৩১১.৮৫ স্কয়ার ফিটের জমিতে ১৪ হাজার ৫০০ স্কয়ার ফিট আয়তনের কাঠামো তৈরী করা হয়েছে।

প্রসপেক্টাসে কোম্পানির জমির ঠিকানার বাহিরে আরও ৮ হাজার স্কয়ার ফিটের গোডাউন শেড (সিরিয়ালের ৩ নম্বরটি ) দেখানো হয়েছে। যেটা কোম্পানির নিজস্ব জমির ঠিকানা থেকে ভিন্ন জায়গায় উল্লেখ। কিন্তু প্রসপেক্টাসের ৪৫ পৃষ্টায় কোম্পানি কোন সম্পদ লীজ নেয়নি বলে উল্লেখ করেছে। জমি ভাড়া নিয়ে যদি ওই গোডাউন শেড তৈরী করা হয়ে থাকে, তাহলে লীজ চুক্তি থাকার কথা। অন্যথায় যেকোন সময় জমির মালিক নিজের স্বার্থে গোডাউন শেড তুলে দিতে পারে। কিন্তু চুক্তি থাকলে, সেটা কঠিন হয়।

জমির তুলনায় ভূমিতেই এতো বড় আয়তনের কাঠামো নির্মাণের কোন ব্যাখ্যা নেই প্রকৌশলীদের কাছে। তাদের কাছে জমির তুলনায় দ্বিগুণের বেশি ভূমিতেই কাঠামোর আকার কিভাবে সম্ভব, তা বোধগম্য নয়।

এ বিষয়ে প্রকৌশলী মো: হাবিবুর রহমান বিজনেস আওয়ারকে বলেন, সাড়ে ৬ হাজার স্কয়ার ফিটের থেকে কম জমিতে ৭ হাজার স্কয়ার ফিটের ছাউনিই হবে না। সেখানে আরও ৩০ হাজার স্কয়ার ফিটের ৪ তলা ভবন কিভাবে সম্ভব। এক্ষেত্রেও তো প্রতিটি ফ্লোর বিবেচনায় মাটিতে গ্রাউন্ড ফ্লোর নির্মাণে সাড়ে ৭ হাজার স্কয়ার ফিটের জমি লেগেছে। এটা সম্ভব না। জমি ও কাঠামোর হিসাবের মধ্যে কোথাও গরমিল আছে।

তবে ইস্যু ম্যানেজার এএএ ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্টের প্রতিনিধি দল কয়েক দফায় সরেজমিনে পরিদর্শনে কোম্পানি কর্তৃপক্ষের দেখানো জমির তুলনায় এমন অস্বাভাবিক কাঠামোর সত্যতা পেয়েছে বলে ভেরিফিকেশন রিপোর্ট দিয়েছে। যে রিপোর্টে সাক্ষর করেছেন ইস্যু ম্যানেজার প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ ওবায়দুর রহমান। কারখানা পরিদর্শন দলে আরও ছিলেন স্টার অ্যাডহেসিভের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আজিজ আল কায়সার ও প্রধান অর্থ কর্মকর্তা (সিএফও) মো. জুলফিকার আলী।

প্রসপেক্টাসে ভেরিফিকেশন রিপোর্টে ইস্যু ম্যানেজার উল্লেখ করেছে, স্টার অ্যাডহেসিভকে শেয়ারাবাজারে আনতে তারা বিগত প্রায় ২ বছর কাজ করেছে। ওইসময় ইস্যু ম্যানেজারের বিভিন্ন টিম স্টার অ্যাডহেসিভের অফিস ও কারখানা কয়েক দফায় পরিদর্শন করেছে। এছাড়া কিআইওর জন্য ৫টি ভিন্ন টিম দিয়ে প্রক্রিয়াটি করেছে। যারা স্টার অ্যাডহেসিভের প্রদত্ত সকল প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টস যাচাই করেছে।

এ বিষয়ে শেয়ারবাজার বিশ্লেষক অধ্যাপক আবু্ আহমেদ বিজনেস আওয়ারকে বলেন, জমি ও কাঠামোর ক্ষেত্রে সন্দেহ তৈরী হলে বিএসইসি ও ডিএসইর সরেজমিনে গিয়ে সত্যতা যাচাই করা উচিত। প্রয়োজনে আরেকটি অডিটর প্রতিষ্ঠান দিয়ে নিরীক্ষা করিয়ে শেয়ারবাজারে আনা উচিত।

তিন কারনে জমির তুলনায় অস্বাভাবিক আকারের কাঠামো দেখানো হতে পারে বলে বিজনেস আওয়ারকে জানান নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক মার্চেন্ট ব্যাংকের প্রধান নির্বাহি কর্মকর্তা। এক্ষেত্রে প্রথমত সম্পদ বাড়িয়ে দেখানোর জন্য এমনটি করা হতে পারে। দ্বিতীয়ত রেগুলেটরসহ স্টেকহোল্ডারদের আকৃষ্ট করার জন্য হতে পারে। এর বাহিরে কোথাও ভুল করেও এমনটি হতে পারে। অন্যথায় সাড়ে ৬ হাজার স্কয়ার ফিটের জমিতে সাড়ে ১৪ হাজার স্কয়ার ফিট আয়তনের কাঠামো সম্ভব না।

এ বিষয়ে ডিএসইর প্রধান পরিচালন কর্মকর্তা (সিওও) মো. সাইফুর রহমান মজুমদার বিজনেস আওয়ারকে বলেন, স্টার অ্যাডহেসিভ শেয়ারবাজার থেকে খুব অল্প টাকা সংগ্রহ করবে। তারপরেও জমি ও কাঠামোর মধ্যে যে অভিযোগ উঠেছে, তা খতিয়ে দেখব।

আরও পড়ুন…..
স্টার অ্যাডহেসিভে আজিজ আল কায়সারের নিয়োগে আইনের ব্যত্যয়
শেয়ারবাজারে আসার আগে আড়াই মাসে ২০ লাখ টাকার স্টার অ্যাডহেসিভ ১৫ কোটি

বিএসইসির নির্বাহি পরিচালক ও মূখপাত্র মোহাম্মদ রেজাউল করিম বলেন, বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে গত ২২ মার্চ স্টার অ্যাডহেসিভের অফিসে কোম্পানির প্রধান অর্থ কর্মকর্তা (সিএফও) মো. জুলফিকার আলী, কোম্পানি সচিব আসলাম মিয়া ও পারটেক্স স্টার গ্রুপের হেড অব বিজনেস ডেভেলপমেন্টের মো. শিব্বির হোসাইনের সঙ্গে সাক্ষাতে তারা বলেন, আমাদের জমিতে ৭ হাজার স্কয়ার ফিটের গোডাউন শেড ও ৩০ হাজার স্কয়ার ফিটের ৪ তলা ভবন আছে। এটা ঠিক। এছাড়া ৮ হাজার স্কয়ার ফিটের একটি গোডাউন শেড ভাড়ায় নেওয়া আছে। কিন্তু সাড়ে ১৪ শতাংশ জমিতে ৭ হাজার স্কয়ারি ফিটের শেড ও ৩০ হাজার স্কয়ার ফিটের ভবন কিভাবে নির্মাণ করা হয়েছে, সেটা ইঞ্জিনিয়াররা বলতে পারবেন। তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে আপনাকে জানাবো। তবে এরপরে এখন পর্যন্ত জানাননি।

একই বিষয়ে জানতে চাইলে ইস্যু ম্যানেজার এএএ ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্টের মোহাম্মদ ওবায়দুর রহমান কোন মন্তব্য করতে অনাগ্রহ প্রকাশ করেন।

এদিকে সাধারনত বিভিন্ন কোম্পানি পরিশোধিত মূলধন ও পরিচালকদের শেয়ার সংখ্যা বাড়িয়ে দেখানোর জন্য জমি উন্নয়ন ব্যয় বেশি দেখায়। এক্ষেত্রে কেউ কেউ জমির থেকে জমির উন্নয়ন বেশিও দেখিয়ে থাকে। এর মাধ্যমে পরিশোধিত মূলধন ও পরিচালকদের শেয়ার বেশি দেখানো হয়।

স্টার অ্যাডহেসিভের প্রসপেক্টাসের ৪৫ পৃষ্টানুযায়ি, কোম্পানিটির জন্য নারায়নগঞ্জে ২০১৮ সালের ১৯ ফেব্রুয়ারি ১৪.৫০ শতাংশ কেনা জমির মূল্য দেখানো হয়েছে ১১ লাখ ৫৫ হাজার টাকা। তবে এই মূল্যের জমিতে রেজিস্ট্রিসহ উন্নয়ন ব্যয় (মাটি ভরাট, লেভেলিং ও ড্রেসিং) হিসাবে সম্পদ দেখানো হয়েছে ৫৮ লাখ ৬৫ হাজার ৬৪০ টাকা। এক্ষেত্রে দলিল মূল্যের উপর ১০ শতাংশ রেজিস্ট্রি ব্যয় ধরলেও উন্নয়ন ব্যয় থাকে ৫৭ লাখ ৫ হাজার ১৪০ টাকা। অর্থাৎ জমির থেকে কয়েকগুণ বেশি মাটি ভরাট বাবদ ব্যয় দেখানো হয়েছে। যেখানে ৮০ হাজার টাকা মূল্যের ১ শতক জমিতে মাটি ভরাটে ব্যয় হয়েছে ৩ লাখ ৯৬ হাজার ৫৬১ টাকার বেশি।

জমির চেয়ে কয়েকগুণ বেশি উন্নয়ন ব্যয়ের বিষয়ে কোম্পানির ওই ৩ কর্মকর্তা বলেন, প্রকৃতপক্ষে যে দরে জমি কেনা হয়েছে, তার চেয়ে কম দরে রেজিস্ট্রি করা হয়েছে। এ কারনে রেজিস্ট্রির অতিরিক্ত অংশ জমি উন্নয়ন ব্যয় হিসাবে দেখানো হয়েছে।

বিজনেস আওয়ার/২৭ মার্চ, ২০২২/আরএ

ফেসবুকের মাধ্যমে আপনার মতামত জানান:

শেয়ার দিয়ে সবাইকে দেখার সুযোগ করে দিন

এ বিভাগের আরো সংবাদ