ঢাকা , শুক্রবার, ২৯ নভেম্বর ২০২৪, ১৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

এভাবে চলতে থাকলে ৫ বছরে হারিয়ে যাবে চিংড়ি রপ্তানি খাত

  • পোস্ট হয়েছে : ১২:১৭ অপরাহ্ন, সোমবার, ৯ মে ২০২২
  • 186

বিজনেস আওয়ার প্রতিবেদক : দেশের চিংড়ি রপ্তানি খাতের সময়টা ভালো যাচ্ছে না। বিশ্বের অন্যান্য দেশ এই খাতকে এগিয়ে নিতে অধিক উৎপাদনশীল ভেনামি চিংড়িতে প্রবেশ করলেও বাংলাদেশ সেদিকে যেতে পারেনি। যা সম্ভব করতে না পারলে আগামী ৫ বছরের মধ্যে বাংলাদেশের চিংড়ি রপ্তানি খাত হারিয়ে যাবে বলে মনে করেন এ খাতের সংগঠন বাংলাদেশ ফ্রোজেন ফুডস এক্সপোর্টার্স এসোসিয়েশনের সেক্রেটারি শেখ সোহেল পারভেজ।

এ খাতের সমস্যা ও সমাধান নিয়ে এক লেখায় সোহেল পারভেজ বলেন, আমরা স্বাধীনতার পর মাত্র ২.৩৮ কোটি টাকার হিমায়িত চিংড়ি ও মাছ রপ্তানি আরম্ভ করে ধীরে ধীরে ২০১৩-২০১৪ সাল পর্যন্ত ৫,০০০ কোটি টাকার উপরে রপ্তানি করে দেশের অর্থনীতিতে অবদান রেখে আসছি। এক সময় এই খাতটি দেশের রপ্তানি আয়ের দ্বিতীয় অবস্থানে ছিল। কিন্তু কাঁচামালের অভাবে ও বিরূপ প্রাকৃতিক কারণে ক্রমান্বয়ে এই খাতের আয় ধাপে ধাপে নিম্নমুখী হওয়ায় বর্তমানে আমরা সপ্তম স্থানে অবস্থান করছি।

নিম্নে ২০১৩-২০১৪ সাল থেকে ২০২০-২০২১ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশের হিমায়িত চিংড়ি ও মাছ রপ্তানির চিত্র দেয়া হলো –

উপরের পরিসংখ্যান থেকে দেখা যায় যে, ২০১৩-২০১৪ সালে ৫১০৫ কোটি টাকা (৬৩৮ মিলিয়ন ডলার) থেকে ২০২০-২০২১ সালে ৪০৮৬ কোটি টাকা (৪৭৭ মিলিয়ন ডলার) নেমে এসেছে।

হিমায়িত চিংড়ি ও মাছ রপ্তানি আয়ের এই নিম্নমুখীর মূল কারণগুলো হলো –

১।        বিগত বহু বছর যাবত চিংড়ি চাষযোগ্য এলাকায় ভরাটকৃত খাল-বিল পুনঃখনন না করা, প্রয়োজন অনুযায়ী চিংড়ি চাষের পুকুর খনন না করা, প্রয়োজনীয় বিদ্যুৎ না থাকা, বাঁধ নির্মান ও সংস্কার না করাসহ যাবতীয় অবকাঠামোর অভাবে চিংড়ি চাষযোগ্য জমির পরিমাণ কমে যাচ্ছে ও চিংড়ি মাছের উৎপাদন দিন দিন হ্রাস পাচ্ছে।

২।        সনাতনী পদ্ধতিতে চিংড়ি চাষ চালিয়ে যাওয়া এবং উন্নত সনাতনী পদ্ধতি ও আধুনিক সেমি ইনটেনসিভ পদ্ধতিতে চিংড়ি চাষ না করা। বর্তমানে সনাতনী পদ্ধতিতে প্রতি হেক্টরে উৎপাদন মাত্র গড়ে ২৫০-৩৫০ কেজি, যা পৃথিবীতে সবচেয়ে কম।

৩।        সেমি ইনটেনসিভ চাষ একটি Capital Intensive Project। প্রয়োজনীয় ব্যাংক ঋণ সহজ শর্তেকৃষি পণ্য হিসেবে কম সুদে না পাওয়া, প্রয়োজনীয় এসপিএফ পোনার অপ্রতুলতা ও আধুনিক প্রযুক্তি ও জ্ঞানের অভাবে বাগদা চিংড়ির সেমি ইনটেনসিভ পদ্ধতির চাষএখন পর্যন্ত প্রসার লাভ করতে পারে নাই।

সেমি ইনটেনসিভ চিংড়ি চাষে বিএফএফইএ-এর উদ্যোগ গ্রহণ।

১।        আমরা বিএফএফইএ ২০১৪ সালে কক্সবাজার এলাকায় খুরুস্কুলে আধুনিক পদ্ধতিতে একটি বাগদা চিংড়ি চাষের সেমি-ইনটেনসিভ পাইলট প্রজেক্ট বাস্তবায়ন করি। যাতে তৎকালীন মাননীয় মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী জনাব মোহাম্মদ ছায়েদুল হক এম.পি পোনা অবমুক্ত করেন ও একটি সেমিনারে প্রধান অতিথি হিসেবে অংশগ্রহণ করেন। পরবর্তীতে মৎস্য অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের উপস্থিতিতে বাগদা চিংড়ির আহরণ (হারভেস্ট) করা হয়। যার ফলাফল সন্তোষজনক এবং আমরা প্রতি হেক্টরে প্রায় ৩ হাজার কেজি চিংড়ি উৎপাদন করতে সক্ষম হই। এই সাফল্য দেখানোর জন্য দেশের বিভিন্ন অঞ্চল হতে চাষীদেরকে আমাদের উক্ত পাইলট প্রজেক্টে এনে হাতেকলমে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়।

২।        তারই ধারাবাহিকতায় কক্সবাজার ও খুলনা অঞ্চলে আরো প্রায় ২ হাজার একর জমিতে অনেকগুলো বাগদা চিংড়ির সেমি-ইনটেনসিভ প্রজেক্ট চালু করা হয়। যেখানে গড়ে প্রতি হেক্টরে ১ম বারে আনুমানিক ৩-৪ হাজার কেজি পর্যন্ত উৎপাদন হয়। পরবর্তীতে ফসল বিপর্যয়ের জন্য এর ধারাবাহিকতা রক্ষা করা যায় নাই। এদের মধ্যে কেউ কেউ সফলতা করলেও অধিকাংশ উদ্যোক্তা সফল হতে পারে নাই। বাগদা প্রজাতির Nature-ই এইরকম যে, ইহাকে খুব বেশি নিবিড় করা যায় না। আর বেশি নিবিড় করলেও টিকে থাকে না।

৩।        খুলনা অঞ্চলের পাইকগাছা, মংলা, সাতক্ষীরা, আশাশুনি বিভিন্ন জায়গায় অনেক উদ্যোক্তা সেমি ইনটেনসিভ-এর মাধ্যমে বাগদা চিংড়ি উৎপাদনে বিএফএফইএ কর্তৃক উৎসাহিত হয়। আমাদের রপ্তানির লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের উদ্দেশ্যে তাদেরকে অগ্রিম অর্থ দিয়ে উৎপাদনে সহায়তা করা হয়েছে। কিন্তু তাদের আওতা বহির্ভুত কারনে লোকসানের ভারসাম্য বহন করতে না পারায় অনেক উদ্যোক্তার অবকাঠামো নিস্ক্রিয়ভাবে পড়ে আছে।

এখন আমি বিগত কয়েক বছরের বাংলাদেশসহ সারা বিশ্বের সকল প্রজাতির চিংড়ি উৎপাদনের একটি চিত্র তুলে ধরছি –

উপরোক্ত পরিসংখ্যান হতে ইহা সহজে অনুমেয় যে, বিশ্বে এই অধিক ফলনশীল ভেনামি চিংড়ির উৎপাদন, চাহিদা ও জনপ্রিয়তা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। শুধুমাত্র এশিয়াতে ভেনামি চিংড়ি উৎপাদিত হয় ৩১,১২,১৭০ কেজি যেখানে বাংলাদেশের অবস্থান শূন্য। তাই ভেনামি চিংড়ি ছাড়া অন্য প্রজাতির উৎপাদন বৃদ্ধির সম্ভাবনা খুবই ক্ষীণ।

বাংলাদেশে চিংড়ির উৎপাদনের তুলনায় ফ্যাক্টরীর সংখ্যা বেশি। ফলশ্রুতিতে এ সেক্টরের কারখানাসমূহ তাদের সক্ষমতার ১২-১৫% এর বেশি কখনোই ব্যবহার করতে পারে নাই। তাই আমরা আমাদের কাঁচামালের সংকট উত্তরণের লক্ষ্যে এই অধিক ফলনশীল ভেনামি চিংড়ি মাছ চাষের অনুমতি প্রদানের জন্য ২০০৫ সাল হতে নিম্ন বর্ণিত সময় সময় ক্রমান্বয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নিকট আবেদন করে আসছি।

১। বিএফএফইএ হতে গত ২৩-১১-২০০৫ইং তারিখে মাননীয় মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী বরাবর হিমায়িত চিংড়ি ও মাছ রপ্তানি খাতের সমস্যাদি নিরসনের বিষয়ে পত্র দেয়া হয়েছিল। উক্ত পত্রে বাংলাদেশে নতুন প্রজাতির ভেনামি চিংড়ি চাষ প্রবর্তনের বিষয়টি উল্লেখ ছিল।

২।  পরবর্তীতে গত ১১-১২-২০১১ তারিখে অধিক ফলনশীল, বিশ্বব্যাপী ব্যাপক সমাদৃত ভেনামি চিংড়ি চাষ বাংলাদেশে প্রবর্তনের বিষয়ে অত্র এসোসিয়েশন হতে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব মহোদয় বরাবর আবেদন করা হয়েছিল।

৩। এছাড়াও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ও রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো কর্তৃক হিমায়িত খাদ্য রপ্তানি খাতের আয় হ্রাসের কারণ চিহ্নিতকরণ ও করণীয় নির্ধারণ বিষয়ে অনুষ্ঠিত গত ৬-১২-২০১২ইং তারিখ এবং ১২-৬-২০১৩ইং তারিখের সভার কার্যবিবরণীতে অধিক উৎপাদনশীল নতুন প্রজাতির ভেনামি চিংড়ি চাষে সম্ভাবনা যাচাইকল্পে পাইলট প্রকল্প গ্রহনের সুপারিশ করা হয়েছে।

৪।  উপরোক্ত আবেদনসমূহের পরেও আমরা মৎস্য অধিদপ্তর এবং মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ে অনেকগুলো সভা করেছি। কিন্তু আমরা ভেনামি চিংড়ি চাষের ব্যাপারে তাঁদের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে পারি নাই।

৫।  পরবর্তীতে ২০১৮ সালে তৎকালীন মাননীয় মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী জনাব নারায়ন চন্দ্র চন্দ এমপিকে প্রধান অতিথি করে “হিমায়িত চিংড়ি রপ্তানি বৃদ্ধিকল্পে বিজ্ঞানভিত্তিক চাষ বৃদ্ধি এবং আনুসাঙ্গিক প্রতিবন্ধকতা দূরীকরণ” শীর্ষক একটি সেমিনার গত ২৬ জুন, ২০১৮ তারিখে আয়োজন করা হয়। উক্ত সেমিনারের প্রধান অতিথি আমাদের তথ্য উপাত্তে সন্তুষ্টহয়ে অনতিবিলম্বে এই ভেনামি চাষের সম্ভাব্যতা যাচাই করার জন্য মৎস্য অধিদপ্তরকে নির্দেশনা প্রদান করেন।

৬।  তারই ধারাবাহিতকায় মৎস্য অধিদপ্তর হতে আমাদেরকে বিএফআরআই পাইকগাছায় একটি এবং কক্সবাজার অঞ্চলে একটি করে মোট ২টি পাইলট প্রজেক্টের অনুমতি প্রদান করা হয়। আপনারা সকলেই নিশ্চয়ই একমত হবেন যে, কোন প্রাইভেট উদ্যোক্তার পক্ষে কোটি কোটি টাকা খরচ করে একটি পাইলট প্রজেক্ট করা কতটুকু বাস্তবসম্মত। তারপরেও আমাদের বেঁচে থাকার ও দেশের রপ্তানির স্বার্থে BFRI-এর পাইকগাছার প্রজেক্টটি বাস্তবায়নে আমাদের সদস্যভূক্ত প্রতিষ্ঠান এম. ইউ সি ফুডস লিঃ এগিয়ে আসে। COVID-19 মহামারী মাথায় রেখে অনেক প্রতিবন্ধকতা অতিক্রম করে গত ৩১ মার্চ, ২০২১ তারিখে পাইকগাছায় BFRI-এর নির্বাচিত পুকুরে ভেনামির পোনা অবমুক্ত করা হয় এবং গত ১ জুলাই, ২০২১ তারিখে ভেনামি চিংড়ি আহরণ (Harvest) করা হয়। সেখানে প্রতি হেক্টরে গড় উৎপাদন হয়েছে প্রায় ৯,০০০ কেজি (মৎস্য অধিদপ্তরের তথ্যমতে), যা খুবই সন্তোষজনক।

আমরা মাননীয় মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী, সদ্য সাবেক সচিব ও বর্তমান মৎস্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালককে লিখিতভাবে এবং ব্যক্তিগতভাবে এই পাইলট প্রজেক্টের Harvesting-সহ যাবতীয় কার্যক্রম স্বচক্ষে অবলোকন করার জন্য অনুরোধ করেছিলাম। তাঁদের যথেষ্ট আগ্রহ থাকা সত্ত্বেও উক্ত সময়ে COVID-19 এর প্রকোপ বেশি থাকায় তাহারা যাইতে পারেন নাই। এই পাইলট প্রজেক্টের যাবতীয় কার্যক্রম তত্ত্বাবধানের জন্য যে একটি কারিগরী উপ-কমিটি গঠন করা হয়, তাঁদের তত্ত্বাবধানে যাবতীয় কার্যক্রম সম্পন্ন করা হয় এবং তাহারা কর্তৃপক্ষের নিকট একটি সন্তোষজনক প্রতিবেদন দাখিল করেন। এই প্রতিবেদন হতে দেখা যায় যে, পোনা অবমুক্ত থেকে আহরণ পর্যন্ত কোন পর্যায়েই এই চিংড়ি চাষের কোন রকম পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া হয় নাই (যেমন পরিবেশগত ও রোগ বালাইগত) এবং চিংড়ি মাছগুলো ছিল সম্পূর্ণ সুস্থ ও সবল।

এই পরিপ্রেক্ষিতে আমরা মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় এবং মৎস্য অধিদপ্তরকে ভেনামি চিংড়ি চাষটি SPF হ্যাচারীসহ বাণিজ্যিকভাবে চাষের উন্মুক্ত করার অনুরোধ করি। কিন্তু মৎস্য অধিদপ্তর ভেনামি চিংড়ি চাষের বাণিজ্যিকভাবে অনুমতি না দিয়ে আমাদেরকে আরো অধিক পাইলট প্রজেক্ট করার জন্য পরামর্শ দিচ্ছেন, যা করা আমাদের ব্যক্তি উদ্যোক্তা পর্যায়ে অনেকেই আগ্রহ প্রকাশ করছে না। এই সাফল্যজনক চাষের ফলাফলের পর আমরা বাণিজ্যিকভাবে চাষাবাদের অনুমতি প্রার্থনা করছি। আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত ভেনামি চাষে সার্বিক সাফল্য অর্জন করেছে এবং তাদের জলবায়ু ও প্রাকৃতিক অবস্থা আমাদের মতো। সারা বিশ্বে ৩০ বছর যাবত ভেনামি চাষ সফলভাবে হচ্ছে এবং যার ফলশ্রুতিতে ভেনামি চিংড়ি বিশ্বের ৭৭ ভাগ দখল করে নিয়েছে সেখানে আমাদের আরো অধিক পাইলট প্রজেক্ট করার প্রয়োজন আছে বলে মনে করি না। আমাদের মনে হচ্ছে, কোন এক অজানা আশংকা কর্তৃপক্ষের মনে কাজ করছে। ভেনামি চাষের অনুমতি দিলে যদি কোন কিছু ঘটে যায় বা হয়ে যায়, তার মধ্যে রোগবালাই, পরিবেশের ক্ষতি এবং ধীরে ধীরে যদি আমাদের বাগদা চিংড়ি চাষ বিলিন হয়ে যায় ইত্যাদি। যার মধ্যে কোনটাই সঠিক নয়।

এখানে উল্লেখ্য যে, ২০০৫ সাল হতে ২০২১ সাল পর্যন্ত এই দীর্ঘ সময় কেন ভেনামি চিংড়ি চাষকরা যাবে না, তার যুক্তিসঙ্গত কোন ব্যাখ্যা আমরা কারো নিকট হতে পাই নাই। যে কোন নতুন প্রযুক্তির পক্ষে বিপক্ষে মতামত থাকতে পারে। নতুন প্রযুক্তিতে যদি কোন Risk Factor থাকে তার Protective Measure নিয়ে নতুন প্রযুক্তি গ্রহণ করা বাঞ্ছনীয় বলে আমরা মনে করি। তাই চিংড়ির উৎপাদন বৃদ্ধিকল্পে বাগদা চিংড়ি চাষের পাশাপাশি ভেনামি চিংড়ির বাণিজ্যিকভাবে চাষ না করার কোন যুক্তি নাই।

আমাদের জানা মতে ভেনামি চিংড়ি চাষের সুফলগুলো নিম্নে তুলে ধরা হলোঃ

১।        বাগদা চিংড়ি সেমি-ইনটেনসিভ পদ্ধতিতে কোন অবস্থাতেই হেক্টর প্রতি গড়ে ৩০০০-৪০০০ কেজি এর বেশি উৎপাদন সম্ভব নয়, কেননা প্রতি স্কোয়ার মিটারে ১৫-২৫ টির বেশি পোনা দেওয়া যায়না। সেখানে ভেনামি চিংড়ি একই পদ্ধতিতে প্রতি হেক্টরে গড়ে ১০,০০০-২০,০০০ কেজি উৎপাদন করা সম্ভব হয়। প্রতি স্কোয়ার মিটারে ৪০-১৫০ টি ভেনামি পোনা মওজুদ করা যায়।

২।        ভেনামি চিংড়ির রোগ সহ্য ক্ষমতা বাগদা চিংড়ির তুলনায় অনেক বেশি।

৩।        বাগদা চিংড়ির তুলনায় ভেনামি চিংড়ির উৎপাদন খরচ আনুপাতিক হারে কম।

৪।        ভেনামি চিংড়ি কোন রাক্ষুসে প্রজাতী নয়। ভেনামি চিংড়ি ভীনদেশী জলাশয়ে বংশ বিস্তার করেনি। ফলে পরিবেশের কোন সমস্যা করবে না।

৫।        ভেনামি চিংড়ি চাষ অপেক্ষাকৃত কম লবণাক্ত পানিতে করা যায় (৬পিপিএম হতে ৩৫ পিপিএম)।

৬।       ভেনামি চিংড়ি চাষটি ১০০% SPF পোনার উপর নির্ভরশীল। চাষের জন্য সমুদ্র হতে মাদার ধরতে হবে না এবং নদী হতে পোনা ধরতে হবে না। অতএব জীববৈচিত্রের উপর কোন নেতিবাচক প্রভাব নেই।

৭।        উচ্চ মূল্যের বাগদা চিংড়ির সাথে কমদামের ভেনামি চিংড়ি বাজারজাত করলে আন্তর্জাতিক বাজারে চাহিদা ও রপ্তানি বৃদ্ধি পাবে।

৮।       কম দামের ভেনামি চিংড়ি দিয়ে অনেক প্রকারের High Value Added পণ্য তৈরি করা যায়। যার আন্তর্জাতিক বাজারে প্রচুর চাহিদা রয়েছে।

৯।        ভেনামি চিংড়ির উৎপাদনের পরিমান বেশি ও খরচ কম হওয়ায় লোকাল মার্কেটে কমদামে ভেনামি চিংড়ি সরবরাহ করে সাধারণ জনগণের আমিষের ঘাটতি পূরণ করা যাবে।

১০।      বর্তমানে দেশের জনগণের ক্রয়ক্ষমতা বৃদ্ধি পাওয়ায় বাগদা চিংড়ির একটি বৃহৎ অংশ লোকাল মার্কেটে চলে যাচ্ছে। লোকজন বাজারে কম দামে ভেনামি চিংড়ি পেলে উচ্চ মূল্যের বাগদা চিংড়ি লোকাল মার্কেট হতে কারখানায় চলে আসবে এবং রপ্তানি বৃদ্ধি পাবে।

১১।      চিংড়িতে যে সব মহামারী রোগ হয়, তার অধিকাংশই বাগদা ও ভেনামি উভয়েই হয়। আমরা ভেনামি এখন পর্যন্ত চাষ করি নাই। অথচ অধিকাংশ মারাত্মক রোগ আমাদের দেশে এসে গেছে। অতএব, ভেনামি আনার ফলে নতুন কোন ঝুঁকির কিছু দেখা যায় না। রোগ বালাইয়ের সাথে বায়োসিকিউরিটি ও ব্যবস্থাপনার সম্পর্ক বিদ্যমান। ভেনামির SPF, SPR মাদার ও পোনা পাওয়া যায়। চাষে গুড প্রাকটিস করলে রোগ বালাই নিয়ন্ত্রণ অনেকটাই সহজ।

উপরে উল্লেখিত বিষয়াদি পর্যালোচনা করলে দেখা যায় যে,

১।        আমাদের দেশীয় বাগদা চিংড়ির পাশাপাশি অধিক ফলনশীল ভেনামি প্রজাতির চিংড়ি বাণিজ্যিকভাবে চাষ করলে একদিকে যেমন উৎপাদন বৃদ্ধি পাবে, অপরদিকে মৎস্য প্রক্রিয়াজাত কারখানাগুলো সচল হবে এবং দেশের রপ্তানি আয় আরো বৃদ্ধি পাবে।

২।        কাঁচামালের স্বল্পতার কারনে আমাদের প্রক্রিয়াজাত কারখানাগুলোর মধ্যে বর্তমানে ২৮টি কারখানা সম্পূর্ণরূপে রুগ্ন হয়ে বন্ধ হয়ে আছে এবং বাকী ৪৮টি কারখানার মধ্যে প্রায় অর্ধেক আধারুগ্ন ও ২/৪টি বাদে বাকী কারখানাগুলো মূলধন ঘাটতি নিয়ে কোন রকমে বেঁচে আছে ও রপ্তানি কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। চিংড়ি উৎপাদনের এখনকার অবস্থা চলতে থাকলে অচিরেই এই সম্ভাবনাময় খাতটি ধ্বংস হয়ে যাবে। আমাদের অনেকগুলো মৎস্য প্রক্রিয়াজাত কারখানা ঋণ খেলাপি হয়ে মামলা মোকদ্দমার আওতায় চলে আসছে। অদুর ভবিষ্যতে আরো অনেকগুলো কারখানা মামলা মোকদ্দমার আওতায় চলে আসবে।

এখানে আরো উল্লেখ্য যে, হিমায়িত খাদ্য খাতে সরকারি বেসরকারি ও অন্যান্য আর্থিক প্রতিষ্ঠানে প্রায় ৩০০০ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ করেছে। বর্তমানে প্রায় ৪০% ঋণগ্রহীতা কাঁচামালের অভাবে রপ্তানি বন্ধ তথা রুগ্ন শিল্পে পরিণত হয়েছে এবং হতে যাচ্ছে। এ মুহুর্তে কাচাঁমালের উৎপাদন তথা সরবরাহ বৃদ্ধি হলে আমাদের কারখানাগুলোর যে প্রক্রিয়াজাত ও সংরক্ষণের ব্যবস্থা আছে, তা ব্যবহার করে বর্তমানে সাড়ে ৩ হাজার কোটি টাকার পরিবর্তে ৩০ হাজার কোটি টাকার রপ্তানি বৃদ্ধি করা সম্ভব। পক্ষান্তরে সরকারি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর বিনিয়োগও সুরক্ষা পাবে।

এখানে আরও উল্লেখযোগ্য যে, আমাদের বর্তমান সমস্যাদি উল্লেখ করে ইতোমধ্যে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করে তাঁহার বরাবরে আমরা একটি আকুল আবেদন করেছি (সংযুক্ত)। মুখ্য সচিবের মাধ্যমে আমরা মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষনে পত্র দিয়েছি। কিন্তু  কোভিড-১৯ এর উপক্রমের জন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সাথে সাক্ষাতে আমাদের সমস্যা তুলে ধরতে পারি নাই।

উপরে উল্লিখিত বিষয়াদি বাস্তবতার নিরিখে যথাযথ বিবেচনা নিয়ে আপনাদের সকলের প্রতি আমাদের আবেদন —

১।        বাণিজ্যিক ভিত্তিতে ভেনামির প্রজাতির চিংড়ির চাষের অনুমোদনসহ দেশের চিংড়ি মাছের উৎপাদন ও রপ্তানি বৃদ্ধির লক্ষ্যে যাবতীয় ব্যবস্থাদি জরুরী ভিত্তিতে নেওয়া আবশ্যক।

২।        যে সকল চাষীর ভেনামি চিংড়ি চাষের সক্ষমতা আছে, তাঁদেরকে একটি সহজ নীতিমালার মাধ্যমে ভেনামি চিংড়ির বাণিজ্যিক চাষের অনুমতি প্রদান করা। 

৩।        যাবতীয় অবকাঠামো উন্নয়নের জন্য প্রতিবেশী দেশ সমূহের মতো চিংড়ি সেক্টরের জন্য বিশেষ কোন বরাদ্দ নেই, যা করা একান্ত আবশ্যক।

৪।        চিংড়ির নিবিড় চাষের জন্য যে সকল যন্ত্রপাতি ও উপকরণসমূহ বিদেশ হতে আমদানি করতে হয়, তার উপর ‘শুন্য’ ট্যাক্স ধার্য করা আবশ্যক।

৫।        চাষের জন্য ব্যাংক ঋণের সুদের হার অন্যান্য কৃষিপণ্যের ন্যায় ৪% ও বিদ্যুৎ বিল কৃষি পণ্যের অনুরূপ করা আবশ্যক।

৬।       বিগত ১ দশক যাবৎ আমাদের আওতা বহির্ভুত যাবতীয় বাঁধা-বিপত্তির মধ্যে রপ্তানি কার্যক্রম চালিয়ে আসায় আমরা আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত। তাই সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সমন্বয়ে একটি কমিটি গঠনের মাধ্যমে আমাদের সমস্যাগুলো চিহ্নিত করে অন্যান্য খাতের ন্যায় আমাদের কারখানাগুলোর রপ্তানির সক্ষমতা ফিরে আনা ও পুনর্বাসনের অনুরোধ জানাচ্ছি।

বিজনেস আওয়ার/০৯ মে, ২০২২/আরএ

ফেসবুকের মাধ্যমে আপনার মতামত জানান:
ট্যাগ :

আপনার মতামত লিখুন

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার মেইলে তথ্য জমা করুন

এভাবে চলতে থাকলে ৫ বছরে হারিয়ে যাবে চিংড়ি রপ্তানি খাত

পোস্ট হয়েছে : ১২:১৭ অপরাহ্ন, সোমবার, ৯ মে ২০২২

বিজনেস আওয়ার প্রতিবেদক : দেশের চিংড়ি রপ্তানি খাতের সময়টা ভালো যাচ্ছে না। বিশ্বের অন্যান্য দেশ এই খাতকে এগিয়ে নিতে অধিক উৎপাদনশীল ভেনামি চিংড়িতে প্রবেশ করলেও বাংলাদেশ সেদিকে যেতে পারেনি। যা সম্ভব করতে না পারলে আগামী ৫ বছরের মধ্যে বাংলাদেশের চিংড়ি রপ্তানি খাত হারিয়ে যাবে বলে মনে করেন এ খাতের সংগঠন বাংলাদেশ ফ্রোজেন ফুডস এক্সপোর্টার্স এসোসিয়েশনের সেক্রেটারি শেখ সোহেল পারভেজ।

এ খাতের সমস্যা ও সমাধান নিয়ে এক লেখায় সোহেল পারভেজ বলেন, আমরা স্বাধীনতার পর মাত্র ২.৩৮ কোটি টাকার হিমায়িত চিংড়ি ও মাছ রপ্তানি আরম্ভ করে ধীরে ধীরে ২০১৩-২০১৪ সাল পর্যন্ত ৫,০০০ কোটি টাকার উপরে রপ্তানি করে দেশের অর্থনীতিতে অবদান রেখে আসছি। এক সময় এই খাতটি দেশের রপ্তানি আয়ের দ্বিতীয় অবস্থানে ছিল। কিন্তু কাঁচামালের অভাবে ও বিরূপ প্রাকৃতিক কারণে ক্রমান্বয়ে এই খাতের আয় ধাপে ধাপে নিম্নমুখী হওয়ায় বর্তমানে আমরা সপ্তম স্থানে অবস্থান করছি।

নিম্নে ২০১৩-২০১৪ সাল থেকে ২০২০-২০২১ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশের হিমায়িত চিংড়ি ও মাছ রপ্তানির চিত্র দেয়া হলো –

উপরের পরিসংখ্যান থেকে দেখা যায় যে, ২০১৩-২০১৪ সালে ৫১০৫ কোটি টাকা (৬৩৮ মিলিয়ন ডলার) থেকে ২০২০-২০২১ সালে ৪০৮৬ কোটি টাকা (৪৭৭ মিলিয়ন ডলার) নেমে এসেছে।

হিমায়িত চিংড়ি ও মাছ রপ্তানি আয়ের এই নিম্নমুখীর মূল কারণগুলো হলো –

১।        বিগত বহু বছর যাবত চিংড়ি চাষযোগ্য এলাকায় ভরাটকৃত খাল-বিল পুনঃখনন না করা, প্রয়োজন অনুযায়ী চিংড়ি চাষের পুকুর খনন না করা, প্রয়োজনীয় বিদ্যুৎ না থাকা, বাঁধ নির্মান ও সংস্কার না করাসহ যাবতীয় অবকাঠামোর অভাবে চিংড়ি চাষযোগ্য জমির পরিমাণ কমে যাচ্ছে ও চিংড়ি মাছের উৎপাদন দিন দিন হ্রাস পাচ্ছে।

২।        সনাতনী পদ্ধতিতে চিংড়ি চাষ চালিয়ে যাওয়া এবং উন্নত সনাতনী পদ্ধতি ও আধুনিক সেমি ইনটেনসিভ পদ্ধতিতে চিংড়ি চাষ না করা। বর্তমানে সনাতনী পদ্ধতিতে প্রতি হেক্টরে উৎপাদন মাত্র গড়ে ২৫০-৩৫০ কেজি, যা পৃথিবীতে সবচেয়ে কম।

৩।        সেমি ইনটেনসিভ চাষ একটি Capital Intensive Project। প্রয়োজনীয় ব্যাংক ঋণ সহজ শর্তেকৃষি পণ্য হিসেবে কম সুদে না পাওয়া, প্রয়োজনীয় এসপিএফ পোনার অপ্রতুলতা ও আধুনিক প্রযুক্তি ও জ্ঞানের অভাবে বাগদা চিংড়ির সেমি ইনটেনসিভ পদ্ধতির চাষএখন পর্যন্ত প্রসার লাভ করতে পারে নাই।

সেমি ইনটেনসিভ চিংড়ি চাষে বিএফএফইএ-এর উদ্যোগ গ্রহণ।

১।        আমরা বিএফএফইএ ২০১৪ সালে কক্সবাজার এলাকায় খুরুস্কুলে আধুনিক পদ্ধতিতে একটি বাগদা চিংড়ি চাষের সেমি-ইনটেনসিভ পাইলট প্রজেক্ট বাস্তবায়ন করি। যাতে তৎকালীন মাননীয় মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী জনাব মোহাম্মদ ছায়েদুল হক এম.পি পোনা অবমুক্ত করেন ও একটি সেমিনারে প্রধান অতিথি হিসেবে অংশগ্রহণ করেন। পরবর্তীতে মৎস্য অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের উপস্থিতিতে বাগদা চিংড়ির আহরণ (হারভেস্ট) করা হয়। যার ফলাফল সন্তোষজনক এবং আমরা প্রতি হেক্টরে প্রায় ৩ হাজার কেজি চিংড়ি উৎপাদন করতে সক্ষম হই। এই সাফল্য দেখানোর জন্য দেশের বিভিন্ন অঞ্চল হতে চাষীদেরকে আমাদের উক্ত পাইলট প্রজেক্টে এনে হাতেকলমে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়।

২।        তারই ধারাবাহিকতায় কক্সবাজার ও খুলনা অঞ্চলে আরো প্রায় ২ হাজার একর জমিতে অনেকগুলো বাগদা চিংড়ির সেমি-ইনটেনসিভ প্রজেক্ট চালু করা হয়। যেখানে গড়ে প্রতি হেক্টরে ১ম বারে আনুমানিক ৩-৪ হাজার কেজি পর্যন্ত উৎপাদন হয়। পরবর্তীতে ফসল বিপর্যয়ের জন্য এর ধারাবাহিকতা রক্ষা করা যায় নাই। এদের মধ্যে কেউ কেউ সফলতা করলেও অধিকাংশ উদ্যোক্তা সফল হতে পারে নাই। বাগদা প্রজাতির Nature-ই এইরকম যে, ইহাকে খুব বেশি নিবিড় করা যায় না। আর বেশি নিবিড় করলেও টিকে থাকে না।

৩।        খুলনা অঞ্চলের পাইকগাছা, মংলা, সাতক্ষীরা, আশাশুনি বিভিন্ন জায়গায় অনেক উদ্যোক্তা সেমি ইনটেনসিভ-এর মাধ্যমে বাগদা চিংড়ি উৎপাদনে বিএফএফইএ কর্তৃক উৎসাহিত হয়। আমাদের রপ্তানির লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের উদ্দেশ্যে তাদেরকে অগ্রিম অর্থ দিয়ে উৎপাদনে সহায়তা করা হয়েছে। কিন্তু তাদের আওতা বহির্ভুত কারনে লোকসানের ভারসাম্য বহন করতে না পারায় অনেক উদ্যোক্তার অবকাঠামো নিস্ক্রিয়ভাবে পড়ে আছে।

এখন আমি বিগত কয়েক বছরের বাংলাদেশসহ সারা বিশ্বের সকল প্রজাতির চিংড়ি উৎপাদনের একটি চিত্র তুলে ধরছি –

উপরোক্ত পরিসংখ্যান হতে ইহা সহজে অনুমেয় যে, বিশ্বে এই অধিক ফলনশীল ভেনামি চিংড়ির উৎপাদন, চাহিদা ও জনপ্রিয়তা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। শুধুমাত্র এশিয়াতে ভেনামি চিংড়ি উৎপাদিত হয় ৩১,১২,১৭০ কেজি যেখানে বাংলাদেশের অবস্থান শূন্য। তাই ভেনামি চিংড়ি ছাড়া অন্য প্রজাতির উৎপাদন বৃদ্ধির সম্ভাবনা খুবই ক্ষীণ।

বাংলাদেশে চিংড়ির উৎপাদনের তুলনায় ফ্যাক্টরীর সংখ্যা বেশি। ফলশ্রুতিতে এ সেক্টরের কারখানাসমূহ তাদের সক্ষমতার ১২-১৫% এর বেশি কখনোই ব্যবহার করতে পারে নাই। তাই আমরা আমাদের কাঁচামালের সংকট উত্তরণের লক্ষ্যে এই অধিক ফলনশীল ভেনামি চিংড়ি মাছ চাষের অনুমতি প্রদানের জন্য ২০০৫ সাল হতে নিম্ন বর্ণিত সময় সময় ক্রমান্বয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নিকট আবেদন করে আসছি।

১। বিএফএফইএ হতে গত ২৩-১১-২০০৫ইং তারিখে মাননীয় মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী বরাবর হিমায়িত চিংড়ি ও মাছ রপ্তানি খাতের সমস্যাদি নিরসনের বিষয়ে পত্র দেয়া হয়েছিল। উক্ত পত্রে বাংলাদেশে নতুন প্রজাতির ভেনামি চিংড়ি চাষ প্রবর্তনের বিষয়টি উল্লেখ ছিল।

২।  পরবর্তীতে গত ১১-১২-২০১১ তারিখে অধিক ফলনশীল, বিশ্বব্যাপী ব্যাপক সমাদৃত ভেনামি চিংড়ি চাষ বাংলাদেশে প্রবর্তনের বিষয়ে অত্র এসোসিয়েশন হতে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব মহোদয় বরাবর আবেদন করা হয়েছিল।

৩। এছাড়াও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ও রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো কর্তৃক হিমায়িত খাদ্য রপ্তানি খাতের আয় হ্রাসের কারণ চিহ্নিতকরণ ও করণীয় নির্ধারণ বিষয়ে অনুষ্ঠিত গত ৬-১২-২০১২ইং তারিখ এবং ১২-৬-২০১৩ইং তারিখের সভার কার্যবিবরণীতে অধিক উৎপাদনশীল নতুন প্রজাতির ভেনামি চিংড়ি চাষে সম্ভাবনা যাচাইকল্পে পাইলট প্রকল্প গ্রহনের সুপারিশ করা হয়েছে।

৪।  উপরোক্ত আবেদনসমূহের পরেও আমরা মৎস্য অধিদপ্তর এবং মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ে অনেকগুলো সভা করেছি। কিন্তু আমরা ভেনামি চিংড়ি চাষের ব্যাপারে তাঁদের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে পারি নাই।

৫।  পরবর্তীতে ২০১৮ সালে তৎকালীন মাননীয় মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী জনাব নারায়ন চন্দ্র চন্দ এমপিকে প্রধান অতিথি করে “হিমায়িত চিংড়ি রপ্তানি বৃদ্ধিকল্পে বিজ্ঞানভিত্তিক চাষ বৃদ্ধি এবং আনুসাঙ্গিক প্রতিবন্ধকতা দূরীকরণ” শীর্ষক একটি সেমিনার গত ২৬ জুন, ২০১৮ তারিখে আয়োজন করা হয়। উক্ত সেমিনারের প্রধান অতিথি আমাদের তথ্য উপাত্তে সন্তুষ্টহয়ে অনতিবিলম্বে এই ভেনামি চাষের সম্ভাব্যতা যাচাই করার জন্য মৎস্য অধিদপ্তরকে নির্দেশনা প্রদান করেন।

৬।  তারই ধারাবাহিতকায় মৎস্য অধিদপ্তর হতে আমাদেরকে বিএফআরআই পাইকগাছায় একটি এবং কক্সবাজার অঞ্চলে একটি করে মোট ২টি পাইলট প্রজেক্টের অনুমতি প্রদান করা হয়। আপনারা সকলেই নিশ্চয়ই একমত হবেন যে, কোন প্রাইভেট উদ্যোক্তার পক্ষে কোটি কোটি টাকা খরচ করে একটি পাইলট প্রজেক্ট করা কতটুকু বাস্তবসম্মত। তারপরেও আমাদের বেঁচে থাকার ও দেশের রপ্তানির স্বার্থে BFRI-এর পাইকগাছার প্রজেক্টটি বাস্তবায়নে আমাদের সদস্যভূক্ত প্রতিষ্ঠান এম. ইউ সি ফুডস লিঃ এগিয়ে আসে। COVID-19 মহামারী মাথায় রেখে অনেক প্রতিবন্ধকতা অতিক্রম করে গত ৩১ মার্চ, ২০২১ তারিখে পাইকগাছায় BFRI-এর নির্বাচিত পুকুরে ভেনামির পোনা অবমুক্ত করা হয় এবং গত ১ জুলাই, ২০২১ তারিখে ভেনামি চিংড়ি আহরণ (Harvest) করা হয়। সেখানে প্রতি হেক্টরে গড় উৎপাদন হয়েছে প্রায় ৯,০০০ কেজি (মৎস্য অধিদপ্তরের তথ্যমতে), যা খুবই সন্তোষজনক।

আমরা মাননীয় মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী, সদ্য সাবেক সচিব ও বর্তমান মৎস্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালককে লিখিতভাবে এবং ব্যক্তিগতভাবে এই পাইলট প্রজেক্টের Harvesting-সহ যাবতীয় কার্যক্রম স্বচক্ষে অবলোকন করার জন্য অনুরোধ করেছিলাম। তাঁদের যথেষ্ট আগ্রহ থাকা সত্ত্বেও উক্ত সময়ে COVID-19 এর প্রকোপ বেশি থাকায় তাহারা যাইতে পারেন নাই। এই পাইলট প্রজেক্টের যাবতীয় কার্যক্রম তত্ত্বাবধানের জন্য যে একটি কারিগরী উপ-কমিটি গঠন করা হয়, তাঁদের তত্ত্বাবধানে যাবতীয় কার্যক্রম সম্পন্ন করা হয় এবং তাহারা কর্তৃপক্ষের নিকট একটি সন্তোষজনক প্রতিবেদন দাখিল করেন। এই প্রতিবেদন হতে দেখা যায় যে, পোনা অবমুক্ত থেকে আহরণ পর্যন্ত কোন পর্যায়েই এই চিংড়ি চাষের কোন রকম পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া হয় নাই (যেমন পরিবেশগত ও রোগ বালাইগত) এবং চিংড়ি মাছগুলো ছিল সম্পূর্ণ সুস্থ ও সবল।

এই পরিপ্রেক্ষিতে আমরা মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় এবং মৎস্য অধিদপ্তরকে ভেনামি চিংড়ি চাষটি SPF হ্যাচারীসহ বাণিজ্যিকভাবে চাষের উন্মুক্ত করার অনুরোধ করি। কিন্তু মৎস্য অধিদপ্তর ভেনামি চিংড়ি চাষের বাণিজ্যিকভাবে অনুমতি না দিয়ে আমাদেরকে আরো অধিক পাইলট প্রজেক্ট করার জন্য পরামর্শ দিচ্ছেন, যা করা আমাদের ব্যক্তি উদ্যোক্তা পর্যায়ে অনেকেই আগ্রহ প্রকাশ করছে না। এই সাফল্যজনক চাষের ফলাফলের পর আমরা বাণিজ্যিকভাবে চাষাবাদের অনুমতি প্রার্থনা করছি। আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত ভেনামি চাষে সার্বিক সাফল্য অর্জন করেছে এবং তাদের জলবায়ু ও প্রাকৃতিক অবস্থা আমাদের মতো। সারা বিশ্বে ৩০ বছর যাবত ভেনামি চাষ সফলভাবে হচ্ছে এবং যার ফলশ্রুতিতে ভেনামি চিংড়ি বিশ্বের ৭৭ ভাগ দখল করে নিয়েছে সেখানে আমাদের আরো অধিক পাইলট প্রজেক্ট করার প্রয়োজন আছে বলে মনে করি না। আমাদের মনে হচ্ছে, কোন এক অজানা আশংকা কর্তৃপক্ষের মনে কাজ করছে। ভেনামি চাষের অনুমতি দিলে যদি কোন কিছু ঘটে যায় বা হয়ে যায়, তার মধ্যে রোগবালাই, পরিবেশের ক্ষতি এবং ধীরে ধীরে যদি আমাদের বাগদা চিংড়ি চাষ বিলিন হয়ে যায় ইত্যাদি। যার মধ্যে কোনটাই সঠিক নয়।

এখানে উল্লেখ্য যে, ২০০৫ সাল হতে ২০২১ সাল পর্যন্ত এই দীর্ঘ সময় কেন ভেনামি চিংড়ি চাষকরা যাবে না, তার যুক্তিসঙ্গত কোন ব্যাখ্যা আমরা কারো নিকট হতে পাই নাই। যে কোন নতুন প্রযুক্তির পক্ষে বিপক্ষে মতামত থাকতে পারে। নতুন প্রযুক্তিতে যদি কোন Risk Factor থাকে তার Protective Measure নিয়ে নতুন প্রযুক্তি গ্রহণ করা বাঞ্ছনীয় বলে আমরা মনে করি। তাই চিংড়ির উৎপাদন বৃদ্ধিকল্পে বাগদা চিংড়ি চাষের পাশাপাশি ভেনামি চিংড়ির বাণিজ্যিকভাবে চাষ না করার কোন যুক্তি নাই।

আমাদের জানা মতে ভেনামি চিংড়ি চাষের সুফলগুলো নিম্নে তুলে ধরা হলোঃ

১।        বাগদা চিংড়ি সেমি-ইনটেনসিভ পদ্ধতিতে কোন অবস্থাতেই হেক্টর প্রতি গড়ে ৩০০০-৪০০০ কেজি এর বেশি উৎপাদন সম্ভব নয়, কেননা প্রতি স্কোয়ার মিটারে ১৫-২৫ টির বেশি পোনা দেওয়া যায়না। সেখানে ভেনামি চিংড়ি একই পদ্ধতিতে প্রতি হেক্টরে গড়ে ১০,০০০-২০,০০০ কেজি উৎপাদন করা সম্ভব হয়। প্রতি স্কোয়ার মিটারে ৪০-১৫০ টি ভেনামি পোনা মওজুদ করা যায়।

২।        ভেনামি চিংড়ির রোগ সহ্য ক্ষমতা বাগদা চিংড়ির তুলনায় অনেক বেশি।

৩।        বাগদা চিংড়ির তুলনায় ভেনামি চিংড়ির উৎপাদন খরচ আনুপাতিক হারে কম।

৪।        ভেনামি চিংড়ি কোন রাক্ষুসে প্রজাতী নয়। ভেনামি চিংড়ি ভীনদেশী জলাশয়ে বংশ বিস্তার করেনি। ফলে পরিবেশের কোন সমস্যা করবে না।

৫।        ভেনামি চিংড়ি চাষ অপেক্ষাকৃত কম লবণাক্ত পানিতে করা যায় (৬পিপিএম হতে ৩৫ পিপিএম)।

৬।       ভেনামি চিংড়ি চাষটি ১০০% SPF পোনার উপর নির্ভরশীল। চাষের জন্য সমুদ্র হতে মাদার ধরতে হবে না এবং নদী হতে পোনা ধরতে হবে না। অতএব জীববৈচিত্রের উপর কোন নেতিবাচক প্রভাব নেই।

৭।        উচ্চ মূল্যের বাগদা চিংড়ির সাথে কমদামের ভেনামি চিংড়ি বাজারজাত করলে আন্তর্জাতিক বাজারে চাহিদা ও রপ্তানি বৃদ্ধি পাবে।

৮।       কম দামের ভেনামি চিংড়ি দিয়ে অনেক প্রকারের High Value Added পণ্য তৈরি করা যায়। যার আন্তর্জাতিক বাজারে প্রচুর চাহিদা রয়েছে।

৯।        ভেনামি চিংড়ির উৎপাদনের পরিমান বেশি ও খরচ কম হওয়ায় লোকাল মার্কেটে কমদামে ভেনামি চিংড়ি সরবরাহ করে সাধারণ জনগণের আমিষের ঘাটতি পূরণ করা যাবে।

১০।      বর্তমানে দেশের জনগণের ক্রয়ক্ষমতা বৃদ্ধি পাওয়ায় বাগদা চিংড়ির একটি বৃহৎ অংশ লোকাল মার্কেটে চলে যাচ্ছে। লোকজন বাজারে কম দামে ভেনামি চিংড়ি পেলে উচ্চ মূল্যের বাগদা চিংড়ি লোকাল মার্কেট হতে কারখানায় চলে আসবে এবং রপ্তানি বৃদ্ধি পাবে।

১১।      চিংড়িতে যে সব মহামারী রোগ হয়, তার অধিকাংশই বাগদা ও ভেনামি উভয়েই হয়। আমরা ভেনামি এখন পর্যন্ত চাষ করি নাই। অথচ অধিকাংশ মারাত্মক রোগ আমাদের দেশে এসে গেছে। অতএব, ভেনামি আনার ফলে নতুন কোন ঝুঁকির কিছু দেখা যায় না। রোগ বালাইয়ের সাথে বায়োসিকিউরিটি ও ব্যবস্থাপনার সম্পর্ক বিদ্যমান। ভেনামির SPF, SPR মাদার ও পোনা পাওয়া যায়। চাষে গুড প্রাকটিস করলে রোগ বালাই নিয়ন্ত্রণ অনেকটাই সহজ।

উপরে উল্লেখিত বিষয়াদি পর্যালোচনা করলে দেখা যায় যে,

১।        আমাদের দেশীয় বাগদা চিংড়ির পাশাপাশি অধিক ফলনশীল ভেনামি প্রজাতির চিংড়ি বাণিজ্যিকভাবে চাষ করলে একদিকে যেমন উৎপাদন বৃদ্ধি পাবে, অপরদিকে মৎস্য প্রক্রিয়াজাত কারখানাগুলো সচল হবে এবং দেশের রপ্তানি আয় আরো বৃদ্ধি পাবে।

২।        কাঁচামালের স্বল্পতার কারনে আমাদের প্রক্রিয়াজাত কারখানাগুলোর মধ্যে বর্তমানে ২৮টি কারখানা সম্পূর্ণরূপে রুগ্ন হয়ে বন্ধ হয়ে আছে এবং বাকী ৪৮টি কারখানার মধ্যে প্রায় অর্ধেক আধারুগ্ন ও ২/৪টি বাদে বাকী কারখানাগুলো মূলধন ঘাটতি নিয়ে কোন রকমে বেঁচে আছে ও রপ্তানি কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। চিংড়ি উৎপাদনের এখনকার অবস্থা চলতে থাকলে অচিরেই এই সম্ভাবনাময় খাতটি ধ্বংস হয়ে যাবে। আমাদের অনেকগুলো মৎস্য প্রক্রিয়াজাত কারখানা ঋণ খেলাপি হয়ে মামলা মোকদ্দমার আওতায় চলে আসছে। অদুর ভবিষ্যতে আরো অনেকগুলো কারখানা মামলা মোকদ্দমার আওতায় চলে আসবে।

এখানে আরো উল্লেখ্য যে, হিমায়িত খাদ্য খাতে সরকারি বেসরকারি ও অন্যান্য আর্থিক প্রতিষ্ঠানে প্রায় ৩০০০ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ করেছে। বর্তমানে প্রায় ৪০% ঋণগ্রহীতা কাঁচামালের অভাবে রপ্তানি বন্ধ তথা রুগ্ন শিল্পে পরিণত হয়েছে এবং হতে যাচ্ছে। এ মুহুর্তে কাচাঁমালের উৎপাদন তথা সরবরাহ বৃদ্ধি হলে আমাদের কারখানাগুলোর যে প্রক্রিয়াজাত ও সংরক্ষণের ব্যবস্থা আছে, তা ব্যবহার করে বর্তমানে সাড়ে ৩ হাজার কোটি টাকার পরিবর্তে ৩০ হাজার কোটি টাকার রপ্তানি বৃদ্ধি করা সম্ভব। পক্ষান্তরে সরকারি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর বিনিয়োগও সুরক্ষা পাবে।

এখানে আরও উল্লেখযোগ্য যে, আমাদের বর্তমান সমস্যাদি উল্লেখ করে ইতোমধ্যে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করে তাঁহার বরাবরে আমরা একটি আকুল আবেদন করেছি (সংযুক্ত)। মুখ্য সচিবের মাধ্যমে আমরা মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষনে পত্র দিয়েছি। কিন্তু  কোভিড-১৯ এর উপক্রমের জন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সাথে সাক্ষাতে আমাদের সমস্যা তুলে ধরতে পারি নাই।

উপরে উল্লিখিত বিষয়াদি বাস্তবতার নিরিখে যথাযথ বিবেচনা নিয়ে আপনাদের সকলের প্রতি আমাদের আবেদন —

১।        বাণিজ্যিক ভিত্তিতে ভেনামির প্রজাতির চিংড়ির চাষের অনুমোদনসহ দেশের চিংড়ি মাছের উৎপাদন ও রপ্তানি বৃদ্ধির লক্ষ্যে যাবতীয় ব্যবস্থাদি জরুরী ভিত্তিতে নেওয়া আবশ্যক।

২।        যে সকল চাষীর ভেনামি চিংড়ি চাষের সক্ষমতা আছে, তাঁদেরকে একটি সহজ নীতিমালার মাধ্যমে ভেনামি চিংড়ির বাণিজ্যিক চাষের অনুমতি প্রদান করা। 

৩।        যাবতীয় অবকাঠামো উন্নয়নের জন্য প্রতিবেশী দেশ সমূহের মতো চিংড়ি সেক্টরের জন্য বিশেষ কোন বরাদ্দ নেই, যা করা একান্ত আবশ্যক।

৪।        চিংড়ির নিবিড় চাষের জন্য যে সকল যন্ত্রপাতি ও উপকরণসমূহ বিদেশ হতে আমদানি করতে হয়, তার উপর ‘শুন্য’ ট্যাক্স ধার্য করা আবশ্যক।

৫।        চাষের জন্য ব্যাংক ঋণের সুদের হার অন্যান্য কৃষিপণ্যের ন্যায় ৪% ও বিদ্যুৎ বিল কৃষি পণ্যের অনুরূপ করা আবশ্যক।

৬।       বিগত ১ দশক যাবৎ আমাদের আওতা বহির্ভুত যাবতীয় বাঁধা-বিপত্তির মধ্যে রপ্তানি কার্যক্রম চালিয়ে আসায় আমরা আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত। তাই সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সমন্বয়ে একটি কমিটি গঠনের মাধ্যমে আমাদের সমস্যাগুলো চিহ্নিত করে অন্যান্য খাতের ন্যায় আমাদের কারখানাগুলোর রপ্তানির সক্ষমতা ফিরে আনা ও পুনর্বাসনের অনুরোধ জানাচ্ছি।

বিজনেস আওয়ার/০৯ মে, ২০২২/আরএ

ফেসবুকের মাধ্যমে আপনার মতামত জানান: