বিজনেস আওয়ার প্রতিবেদক : কয়েক দিন আগেই রেকর্ড পরিমাণ গম রপ্তানির কথা বললেও হঠাৎ করেই এই খাদ্য শস্যটি রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে ভারত। শনিবার (১৪ মে) থেকেই এই সিদ্ধান্ত কার্যকর করেছে দেশটি। বার্তা সংস্থা রয়টাস এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে।
দেশটির সরকার জানিয়েছে, ইতিমধ্যে রপ্তানির জন্য ইস্যু হওয়া লেটার অব ক্রেডিটের (এলসি) বিপরীতে রপ্তানির সুযোগ থাকছে। এ ছাড়া ‘নিজেদের খাদ্য নিরাপত্তার চাহিদা পূরণের’ চেষ্টা করছে, এমন প্রতিবেশী দেশগুলোর অনুরোধ বিবেচনায় থাকবে।
ভারত বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম গম উৎপাদক হলেও বৈশ্বিক রপ্তানিতে তাদের অংশ মাত্র এক শতাংশের মতো। পরিমাণ ও মূল্য উভয় দিক থেকে ভারতীয় গমের সবচেয়ে বড় ক্রেতা বাংলাদেশ।
২০২০-২১ অর্থবছরে ভারতের মোট গম রপ্তানির ৫৪ শতাংশই এসেছে বাংলাদেশে। ওই বছর ভারতীয় গমের শীর্ষ ১০ ক্রেতা ছিল বাংলাদেশ, নেপাল, সংযুক্ত আরব আমিরাত, শ্রীলঙ্কা, ইয়েমেন, আফগানিস্তান, কাতার, ইন্দোনেশিয়া, ওমান ও মালয়েশিয়া।
বিশ্বের মোট গম রপ্তানির ২৯ শতাংশই সরবরাহ করে রাশিয়া ও ইউক্রেন। গত ২৪ ফেব্রুয়ারি দুই দেশের মধ্যে সংঘাত শুরুর পর থেকে আন্তর্জাতিক ভোগ্যপণ্যের বাজারে রীতিমতো আগুন লেগেছে। হু হু করে দাম বেড়েছে গমেরও।
এ অবস্থায় বৈশ্বিক চাহিদা ও মূল্যের ঊর্ধ্বগতি বিবেচনায় এ বছর রেকর্ড পরিমাণ গম রপ্তানির লক্ষ্য নির্ধারণ করেছিল ভারত। ২০১২-১৩ অর্থবছরে দেশটি রেকর্ড ৬৫ লাখ টন গম রপ্তানি করেছিল। তবে চলতি অর্থবছর শেষ হওয়ার আগেই সেই সীমা পার হয়ে গেছে তারা। কিন্তু স্থানীয় বাজারে গমের দাম ক্রমাগত বাড়তে থাকায় শেষপর্যন্ত রপ্তানি নিষিদ্ধ করলো ভারত সরকার।
বিজনেস আওয়ার/১৪ মে, ২০২২/কমা
ফেব্রুয়ারির শেষের দিকে ইউক্রেনে হামলা চালায় রাশিয়া। এতে কৃষ্ণসাগর অঞ্চল থেকে রপ্তানিতে ধস নামায় বিশ্বের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ গম উৎপাদনকারী ভারতের ওপর নির্ভর করে আসছিল বৈশ্বিক ক্রেতারা। নিষেধাজ্ঞার ঘোষণার আগে চলতি বছর এক কোটি মেট্রিক টন গম রপ্তানির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছিল দেশটি।
ভারতের রপ্তানি–নিষেধাজ্ঞার কারণে বৈশ্বিক বাজারে গমের দাম নতুন উচ্চতায় গিয়ে ঠেকবে। এতে এশিয়া ও আফ্রিকার দরিদ্র ভোক্তারা ভোগান্তিতে পড়বে। বৈশ্বিক বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে ব্যবসা করে আসা মুম্বাইয়ের একজন ডিলার বলেন, ‘রপ্তানি–নিষেধাজ্ঞা খুবই হতাশার। আমরা আশা করছিলাম, দুই থেকে তিন মাস পর রপ্তানির ওপর বিধিনিষেধ আসবে। কিন্তু মুদ্রাস্ফীতির অঙ্ক বেড়ে যাওয়ার কারণে সরকারের মনোভাবে পরিবর্তন আসে।’
খাদ্য ও জ্বালানির দামের ঊর্ধ্বগতির কারণে এপ্রিলে ভারতের মুদ্রাস্ফীতি আট বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ পর্যায়ে গিয়ে ঠেকে। এতে মূল্য নিয়ন্ত্রণে সুদহার বাড়ানোর ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের আরও আগ্রাসী ভূমিকার প্রয়োজন বলে অর্থনীতিবিদদের ধারণা আরও পোক্ত হলো।