ঢাকা , রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

সর্বনিম্ন দামে বিক্রি হচ্ছে মসলা!

  • পোস্ট হয়েছে : ১০:৪৩ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২৫ জুলাই ২০২০
  • 152

বিজনেস আওয়ার প্রতিবেদক : বছরের শুরু থেকেই মসলার বাজার ছিল চড়া। ধারণা করা হচ্ছিল রোজার ঈদের মতো কোরবানির ঈদেও মসলার বাজারকে নিয়ন্ত্রণ করা অনেক কঠিন হয়ে পড়বে। তবে সে ধারণা এখন পর্যন্ত ভুল প্রমাণিত হয়েছে। বাজারে চলতি বছরের মধ্যে সবচেয়ে কম দামে বিক্রি হচ্ছে মসলা।

শুধু তাই নয়, ঈদুল আজহার ঠিক আগের সময়ে গত কয়েক বছরের মধ্যে এবারই মসলার দাম সবচেয়ে কম! শুক্রবার (২৪ জুলাই) কারওয়ান বাজারের কিচেন মার্কেটের পাইকারি ও খুচরা বাজারে বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে।

বিক্রেতারা কেউ কেউ বলছেন, লকডাউনের সময় মসলাজাতীয় পণ্য অতিরিক্ত মজুত করায় বাজারে এখন এর সরবরাহ বেশি। ফলে দাম পড়ে গেছে। তাছাড়া বাজারে ক্রেতা কম থাকা ও সরবরাহ বেশি থাকায় এবার মসলা জাতীয় পণ্যের দাম এতটা কমে গেছে।

এ প্রসঙ্গে পাইকারি গরম মসলা ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি মো. এনায়েত উল্লাহ বলেন, করোনাভাইরাসের কারণে এবার বেচাকেনা নেই। মানুষের হাতেও টাকা নেই। কিন্তু বাজারে মসলার সরবরাহ বেশি। আর আন্তর্জাতিক বাজারেও মসলার দাম কমে গেছে। ফলে বাজারে এখন মসলাজাতীয় পণ্যের দাম অনেক কম।

কারওয়ান বাজারের পাইকারিতে জিরা ২৭০ থেকে ৩৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। অথচ এ বছরেই সর্বোচ্চ ৪৮০ টাকা কেজি দরেও বিক্রি হয়েছে। এলাচ বিক্রি হচ্ছে ২ হাজার ৬০০ টাকা থেকে ৩ হাজার ৫০০ টাকা কেজি দরে। অথচ মাস তিনেক আগেও ৫ হাজার ২০০ টাকা পর্যন্ত কেজি দরে বিক্রি হয়েছে এলাচ।

সর্বোচ্চ ৮৮০ টাকা পর্যন্ত উঠে যাওয়া লবঙ্গের এখনকার দর ৭০০ থেকে ৭৫০ টাকা কেজি। অন্যদিকে বাজারের সবচেয়ে ভালো কিসমিসও বিক্রি হচ্ছে ২৫০ টাকা কেজিতে, যা ২৮০ থেকে ৩০০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হয়েছে। আর দারুচিনি ৩৬০ থেকে ৩৭০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে, এর দাম ছিল সর্বোচ্চ ৪০০ টাকা।

এ ব্যাপারে পাইকারি বিক্রেতা মের্সাস দেওয়ান এন্টারপ্রাইজের কর্মচারী রাসেল মিয়া বলেন, মসলার বাজার এখন খুবই নিম্নমুখী। গত পাঁচ বছরের মধ্যে এবারই মসলার দাম সবচেয়ে কম। এ বছরের মতো কম দাম আর কখনো ছিল বলে মনে হয় না।

পাইকারি দোকান ফরিদগঞ্জ স্টোরের মালিক বলেন, লকডাউনের সময় মসলাজাতীয় পণ্যের দাম বেড়েছিল। পরে রোজার মধ্যে তা কমে এসেছে। রোজার ঈদেও দাম তুলনামূলক কম ছিল। আর কোরবানি ঈদের আগে তো একেবারেই কমে গেছে। দুই-চার-দশ বছরেও মসলাজাতীয় পণ্যের দাম এত কম কখনোই ছিল না।

খুচরা দোকানের মধ্যে কারওয়ান বাজারের মায়ের দোয়া স্টোরের বিক্রয়কর্মী আজগর বলেন, মসলার দাম অনেক কমছে। যখন দাম বেড়েছিল, তখন সবাই মজুত করেছিল। এখন সরবরাহ বেশি থাকায় দামও কমেছে।

তিনি জানান, বর্তমানে জিরা ৩৩০ থেকে ৩৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করছেন। মাসখানেক আগে ৩৫০ থেকে ৩৮০ টাকা। বর্তমানে খুচরা বাজারে প্রতি কেজি এলাচ ৩ হাজার থেকে ৪২০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। মাস খানেক আগে ৩ হাজার ৬০০ থেকে ৪ হাজার ৬০০ টাকায় বিক্রি হয়েছে এই এলাচা।

এছাড়া বর্তমানে খুচরা বাজারে লবঙ্গ ৮০০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। মাসখানেক আগে আগে ৯০০ টাকায় বিক্রি হয়েছিল। মাসখানেক আগে ৪৩০ টাকার দারচিনি এখন বিক্রি হচ্ছে ৩৭০ টাকা কেজিতে। একইভাবে কিসমিসের দাম ২৮০ থেকে ৩৫০ টাকা কেজি। ১৫ দিন আগে তা ৩০০ থেকে ৩৭০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। আর কাঠবাদাম এখন ৬০০ টাকা কেজি, যা একমাস আগে ৭০০ টাকা ছিল।

লবঙ্গ রোজার ঈদে বিক্রি হয়েছে হাজার টাকা কেজিতে, আর এখন বিক্রি হচ্ছে ৭০০ টাকায়। এই বিক্রেতা জানান, বাজারে এবার মসলা বেশি রয়েছে। সরবরাহ ভালো। কিন্তু ক্রেতা ও বিক্রেতা কম, তাই দাম কম।

খুচরা বাজারের আরেক দোকানি আব্দুল কাদের বলেন, প্রতিবার কোরবানি ঈদে মসলার দাম বাড়লেও এবার বাড়েনি। বরং কমেছে। এবার মসলার বাজার অন্যান্য সব বছরের চেয়ে ব্যতিক্রম।

এর আগে, চলতি বছরের মে মাসে মসলার দাম ১০ থেকে ২৫ ভাগ কমানোর ঘোষণা দেয় বাংলাদেশ পাইকারি গরম মসলা ব্যবসায়ী সমিতি। বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি’র সঙ্গে বৈঠকের পর ওই সিদ্ধান্ত আসে।

তখন ঈদুল ফিতরকে সামনে রেখে বিভিন্ন নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মতো গরম মসলার মূল্য স্থিতিশীল রাখার বিষয়ে একমত পোষণ করা হয়। পরে বাংলাদেশ পাইকারি গরম মসলা ব্যবসায়ী সমিতি গরম মসলার মূল্য তালিকা ঘোষণা করে।

বিজনেস আওয়ার/২৫ জুলাই, ২০২০/এ

ফেসবুকের মাধ্যমে আপনার মতামত জানান:
ট্যাগ :

আপনার মতামত লিখুন

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার মেইলে তথ্য জমা করুন

সর্বনিম্ন দামে বিক্রি হচ্ছে মসলা!

পোস্ট হয়েছে : ১০:৪৩ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২৫ জুলাই ২০২০

বিজনেস আওয়ার প্রতিবেদক : বছরের শুরু থেকেই মসলার বাজার ছিল চড়া। ধারণা করা হচ্ছিল রোজার ঈদের মতো কোরবানির ঈদেও মসলার বাজারকে নিয়ন্ত্রণ করা অনেক কঠিন হয়ে পড়বে। তবে সে ধারণা এখন পর্যন্ত ভুল প্রমাণিত হয়েছে। বাজারে চলতি বছরের মধ্যে সবচেয়ে কম দামে বিক্রি হচ্ছে মসলা।

শুধু তাই নয়, ঈদুল আজহার ঠিক আগের সময়ে গত কয়েক বছরের মধ্যে এবারই মসলার দাম সবচেয়ে কম! শুক্রবার (২৪ জুলাই) কারওয়ান বাজারের কিচেন মার্কেটের পাইকারি ও খুচরা বাজারে বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে।

বিক্রেতারা কেউ কেউ বলছেন, লকডাউনের সময় মসলাজাতীয় পণ্য অতিরিক্ত মজুত করায় বাজারে এখন এর সরবরাহ বেশি। ফলে দাম পড়ে গেছে। তাছাড়া বাজারে ক্রেতা কম থাকা ও সরবরাহ বেশি থাকায় এবার মসলা জাতীয় পণ্যের দাম এতটা কমে গেছে।

এ প্রসঙ্গে পাইকারি গরম মসলা ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি মো. এনায়েত উল্লাহ বলেন, করোনাভাইরাসের কারণে এবার বেচাকেনা নেই। মানুষের হাতেও টাকা নেই। কিন্তু বাজারে মসলার সরবরাহ বেশি। আর আন্তর্জাতিক বাজারেও মসলার দাম কমে গেছে। ফলে বাজারে এখন মসলাজাতীয় পণ্যের দাম অনেক কম।

কারওয়ান বাজারের পাইকারিতে জিরা ২৭০ থেকে ৩৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। অথচ এ বছরেই সর্বোচ্চ ৪৮০ টাকা কেজি দরেও বিক্রি হয়েছে। এলাচ বিক্রি হচ্ছে ২ হাজার ৬০০ টাকা থেকে ৩ হাজার ৫০০ টাকা কেজি দরে। অথচ মাস তিনেক আগেও ৫ হাজার ২০০ টাকা পর্যন্ত কেজি দরে বিক্রি হয়েছে এলাচ।

সর্বোচ্চ ৮৮০ টাকা পর্যন্ত উঠে যাওয়া লবঙ্গের এখনকার দর ৭০০ থেকে ৭৫০ টাকা কেজি। অন্যদিকে বাজারের সবচেয়ে ভালো কিসমিসও বিক্রি হচ্ছে ২৫০ টাকা কেজিতে, যা ২৮০ থেকে ৩০০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হয়েছে। আর দারুচিনি ৩৬০ থেকে ৩৭০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে, এর দাম ছিল সর্বোচ্চ ৪০০ টাকা।

এ ব্যাপারে পাইকারি বিক্রেতা মের্সাস দেওয়ান এন্টারপ্রাইজের কর্মচারী রাসেল মিয়া বলেন, মসলার বাজার এখন খুবই নিম্নমুখী। গত পাঁচ বছরের মধ্যে এবারই মসলার দাম সবচেয়ে কম। এ বছরের মতো কম দাম আর কখনো ছিল বলে মনে হয় না।

পাইকারি দোকান ফরিদগঞ্জ স্টোরের মালিক বলেন, লকডাউনের সময় মসলাজাতীয় পণ্যের দাম বেড়েছিল। পরে রোজার মধ্যে তা কমে এসেছে। রোজার ঈদেও দাম তুলনামূলক কম ছিল। আর কোরবানি ঈদের আগে তো একেবারেই কমে গেছে। দুই-চার-দশ বছরেও মসলাজাতীয় পণ্যের দাম এত কম কখনোই ছিল না।

খুচরা দোকানের মধ্যে কারওয়ান বাজারের মায়ের দোয়া স্টোরের বিক্রয়কর্মী আজগর বলেন, মসলার দাম অনেক কমছে। যখন দাম বেড়েছিল, তখন সবাই মজুত করেছিল। এখন সরবরাহ বেশি থাকায় দামও কমেছে।

তিনি জানান, বর্তমানে জিরা ৩৩০ থেকে ৩৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করছেন। মাসখানেক আগে ৩৫০ থেকে ৩৮০ টাকা। বর্তমানে খুচরা বাজারে প্রতি কেজি এলাচ ৩ হাজার থেকে ৪২০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। মাস খানেক আগে ৩ হাজার ৬০০ থেকে ৪ হাজার ৬০০ টাকায় বিক্রি হয়েছে এই এলাচা।

এছাড়া বর্তমানে খুচরা বাজারে লবঙ্গ ৮০০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। মাসখানেক আগে আগে ৯০০ টাকায় বিক্রি হয়েছিল। মাসখানেক আগে ৪৩০ টাকার দারচিনি এখন বিক্রি হচ্ছে ৩৭০ টাকা কেজিতে। একইভাবে কিসমিসের দাম ২৮০ থেকে ৩৫০ টাকা কেজি। ১৫ দিন আগে তা ৩০০ থেকে ৩৭০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। আর কাঠবাদাম এখন ৬০০ টাকা কেজি, যা একমাস আগে ৭০০ টাকা ছিল।

লবঙ্গ রোজার ঈদে বিক্রি হয়েছে হাজার টাকা কেজিতে, আর এখন বিক্রি হচ্ছে ৭০০ টাকায়। এই বিক্রেতা জানান, বাজারে এবার মসলা বেশি রয়েছে। সরবরাহ ভালো। কিন্তু ক্রেতা ও বিক্রেতা কম, তাই দাম কম।

খুচরা বাজারের আরেক দোকানি আব্দুল কাদের বলেন, প্রতিবার কোরবানি ঈদে মসলার দাম বাড়লেও এবার বাড়েনি। বরং কমেছে। এবার মসলার বাজার অন্যান্য সব বছরের চেয়ে ব্যতিক্রম।

এর আগে, চলতি বছরের মে মাসে মসলার দাম ১০ থেকে ২৫ ভাগ কমানোর ঘোষণা দেয় বাংলাদেশ পাইকারি গরম মসলা ব্যবসায়ী সমিতি। বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি’র সঙ্গে বৈঠকের পর ওই সিদ্ধান্ত আসে।

তখন ঈদুল ফিতরকে সামনে রেখে বিভিন্ন নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মতো গরম মসলার মূল্য স্থিতিশীল রাখার বিষয়ে একমত পোষণ করা হয়। পরে বাংলাদেশ পাইকারি গরম মসলা ব্যবসায়ী সমিতি গরম মসলার মূল্য তালিকা ঘোষণা করে।

বিজনেস আওয়ার/২৫ জুলাই, ২০২০/এ

ফেসবুকের মাধ্যমে আপনার মতামত জানান: