ঢাকা , সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

অর্ধেকে নেমে এসেছে সোনালি পেপারের মূল ব্যবসায় মুনাফা

  • পোস্ট হয়েছে : ১১:০৫ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ৫ জুন ২০২২
  • 73

বিজনেস আওয়ার প্রতিবেদক : শেয়ার ব্যবসায় ঝুঁকে পড়া স্বল্প পরিশোধিত মূলধনের ও গেম্বলিং আইটেম সোনালি পেপার অ্যান্ড বোর্ড মিলসের মূল ব্যবসায় মুনাফা অর্ধেকে নেমে এসেছে। কোম্পানিটির ৩য় প্রান্তিকে (জানুয়ারি-মার্চ ২০২২) ৫০ শতাংশ বিক্রি বৃদ্ধি সত্ত্বেও এই পতন হয়েছে।

দেখা গেছে, সোনালি পেপারের চলতি অর্থবছরের ৩য় প্রান্তিকে ৫৭ কোটি ৫১ লাখ টাকার নিট পণ্য বিক্রি হয়েছে। যার পরিমাণ আগের বছরের একই সময়ে হয়েছিল ৩৭ কোটি ৮২ লাখ টাকা। এ হিসাবে চলতি অর্থবছরের ৩য় প্রান্তিকে বিক্রি বেড়েছে ১৯ কোটি ৬৯ লাখ টাকার বা ৫২ শতাংশ।

এই বিক্রি বৃদ্ধি সত্ত্বেও কোম্পানিটির পরিচালন বা মূল ব্যবসায় মুনাফা ১ কোটি ৩৬ লাখ টাকা বা ৪৯ শতাংশ কমে এসেছে। কোম্পানিটির আগের অর্থবছরের ৩য় প্রান্তিকের ২ কোটি ৭৫ লাখ টাকার পরিচালন মুনাফা চলতি অর্থবছরের একইসময়ে নেমে এসেছে ১ কোটি ৩৯ লাখ টাকায়।

এই পতনের কারনে কোম্পানিটির আগের দুই প্রান্তিকের তুলনায় ৩য় প্রান্তিকে মুনাফায় বড় পতন হয়েছে। এ কোম্পানিটির চলতি অর্থবছরের ১ম প্রান্তিকে শেয়ারপ্রতি মুনাফা (ইপিএস) হয়েছিল ৬.৬৬ টাকা। যা ২য় প্রান্তিকে হয় ৬.১৩ টাকা। তবে ৩য় প্রান্তিকে নেমে এসেছে ৩.০৪ টাকায়।

শেয়ার ব্যবসায় ভর করে কোম্পানিটির চলতি অর্থবছরের নয় মাসে নিট মুনাফা হয়েছে ৩২ কোটি ৩৩ লাখ টাকা বা ইপিএস ১৪.৭২ টাকা। যার পরিমাণ আগের অর্থবছরের একইসময়ে হয়েছিল ৪ কোটি ১৯ লাখ টাকা বা ইপিএস ১.৯১ টাকা।

আরও পড়ুন…..
সোনালি পেপারের দলে ফরচুন সুজ
সোনালি পেপারের জালিয়াতির অভিযোগ তদন্দের মধ্যে রাইট অনুমোদন

সোনালি পেপারের ৯ মাসে নিজস্ব ব্যবসায় পরিচালন মুনাফা হয়েছে ১৯ কোটি ১৫ লাখ টাকা। একইসময়ে কোম্পানি ঝুঁকিপূর্ণ শেয়ারবাজার থেকে এসেছে ২৫ কোটি ৯১ লাখ টাকা। অর্থাৎ কোম্পানিটির মূল ব্যবসার থেকে শেয়ারবাজার এখন মুনাফার প্রধান হাতিয়ার।

অথচ ১৯৭৮ সালে প্রতিষ্ঠিত সোনালি পেপারের মূল ব্যবসা হচ্ছে ডুপ্লেক্স পেপার বোর্ড, নিউজ প্রিন্ট ও হোয়াইট পেপারস তৈরী করা। যা বিক্রি থেকে মুনাফা অর্জন করা। যে কোম্পানিটি ১৯৮৫ সালে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত হলেও পরবর্তীতে মন্দা ব্যবসার কারনে তালিকাচ্যুত করা হয়। তবে ২০২০ সালের ১৫ জুন পূণ:তালিকাভুক্ত করা হয়েছে।

শেয়ারবাজার থেকে মুনাফা করতে গিয়ে সোনালি পেপার কর্তৃপক্ষ গেম্বলারদের সঙ্গে হাত মিলিয়েছে বলে অভিযোগ আছে। যারা সবাই মিলে এক কোম্পানি থেকে আরেক কোম্পানি বা পরস্পর বিনিয়োগের মাধ্যমে শেয়ার দর বৃদ্ধি করছেন। অনেকটা ‘এ’ কোম্পানি থেকে ‘বি’ কোম্পানিতে বিনিয়োগ করে ওই কোম্পানির শেয়ার দর বৃদ্ধি এবং ‘বি’ কোম্পানি থেকে আবার ‘এ’ কোম্পানিতে বিনিয়োগ করে ওই কোম্পানির শেয়ার দর বৃদ্ধির মতো কারসাজির ঘটনা ঘটছে। যেখানে পরস্পর যোগসাজোশে এক কোম্পানি আরেক কোম্পানির শেয়ার দর বৃদ্ধিতে দায়িত্ব পালন করছে।

যা পুঁজি করে গত কয়েক মাসে শেয়ারটির দর উঠে গেছে অন্য উচ্চতায়। গত বছরের ২৭ জুনের ১৯৭.৪০ টাকার শেয়ারটি রাইট শেয়ার সংক্রান্ত রেকর্ড ডেট পরবর্তী দর সমন্বয়ের পরেও ৪ জুন বেড়ে দাড়িঁয়েছে ৫৫৪.৪০ টাকায়। এক্ষেত্রে দর বেড়েছে ৩৫৭ টাকা বা ১৮১ শতাংশ।

শেয়ারবাজার থেকে মুনাফা করতে উচ্চ সুদের মার্জিন ঋণে জড়িঁয়েছে সোনালি পেপার। যে ঋণের কবলে ২০১০ সালের ধসে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে বিনিয়োগকারীরা। সোনালি পেপারের দুটি বিও হিসাবেই মার্জিন ঋণ নেওয়া হয়েছে। এরমধ্যে এসবিএল ক্যাপিটাল ম্যানেজমেন্টের পোর্টফোলিওতে ৬ কোটি ৪৮ লাখ টাকা ও ইবিএল সিকিউরিটিজের পোর্টফোলিওতে ৭ কোটি ৫১ লাখ টাকার মার্জিন নেওয়া হয়েছে।

মার্জিন ছাড়াও ২২ কোটি টাকার সোনালি পেপার আরও ৯০ কোটি ২৩ লাখ টাকার ব্যাংক ঋণে জর্জরিত। গত ৩১ মার্চ কোম্পানিটির কাছে মধুমতি ব্যাংক ও পূবালি ব্যাংকের কারেন্ট পোরশনসহ দীর্ঘমেয়াদি ঋণের পরিমাণ দাড়িঁয়েছে ৩৫ কোটি ৮ লাখ টাকা। এছাড়া ব্যাংক দুটির কাছে স্বল্পমেয়াদি আরও ৫৫ কোটি ১৫ লাখ টাকার ঋণ রয়েছে।

বিজনেস আওয়ার/০৫ জুন, ২০২২/আরএ

ফেসবুকের মাধ্যমে আপনার মতামত জানান:
ট্যাগ :

2 thoughts on “অর্ধেকে নেমে এসেছে সোনালি পেপারের মূল ব্যবসায় মুনাফা

আপনার মতামত লিখুন

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার মেইলে তথ্য জমা করুন

অর্ধেকে নেমে এসেছে সোনালি পেপারের মূল ব্যবসায় মুনাফা

পোস্ট হয়েছে : ১১:০৫ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ৫ জুন ২০২২

বিজনেস আওয়ার প্রতিবেদক : শেয়ার ব্যবসায় ঝুঁকে পড়া স্বল্প পরিশোধিত মূলধনের ও গেম্বলিং আইটেম সোনালি পেপার অ্যান্ড বোর্ড মিলসের মূল ব্যবসায় মুনাফা অর্ধেকে নেমে এসেছে। কোম্পানিটির ৩য় প্রান্তিকে (জানুয়ারি-মার্চ ২০২২) ৫০ শতাংশ বিক্রি বৃদ্ধি সত্ত্বেও এই পতন হয়েছে।

দেখা গেছে, সোনালি পেপারের চলতি অর্থবছরের ৩য় প্রান্তিকে ৫৭ কোটি ৫১ লাখ টাকার নিট পণ্য বিক্রি হয়েছে। যার পরিমাণ আগের বছরের একই সময়ে হয়েছিল ৩৭ কোটি ৮২ লাখ টাকা। এ হিসাবে চলতি অর্থবছরের ৩য় প্রান্তিকে বিক্রি বেড়েছে ১৯ কোটি ৬৯ লাখ টাকার বা ৫২ শতাংশ।

এই বিক্রি বৃদ্ধি সত্ত্বেও কোম্পানিটির পরিচালন বা মূল ব্যবসায় মুনাফা ১ কোটি ৩৬ লাখ টাকা বা ৪৯ শতাংশ কমে এসেছে। কোম্পানিটির আগের অর্থবছরের ৩য় প্রান্তিকের ২ কোটি ৭৫ লাখ টাকার পরিচালন মুনাফা চলতি অর্থবছরের একইসময়ে নেমে এসেছে ১ কোটি ৩৯ লাখ টাকায়।

এই পতনের কারনে কোম্পানিটির আগের দুই প্রান্তিকের তুলনায় ৩য় প্রান্তিকে মুনাফায় বড় পতন হয়েছে। এ কোম্পানিটির চলতি অর্থবছরের ১ম প্রান্তিকে শেয়ারপ্রতি মুনাফা (ইপিএস) হয়েছিল ৬.৬৬ টাকা। যা ২য় প্রান্তিকে হয় ৬.১৩ টাকা। তবে ৩য় প্রান্তিকে নেমে এসেছে ৩.০৪ টাকায়।

শেয়ার ব্যবসায় ভর করে কোম্পানিটির চলতি অর্থবছরের নয় মাসে নিট মুনাফা হয়েছে ৩২ কোটি ৩৩ লাখ টাকা বা ইপিএস ১৪.৭২ টাকা। যার পরিমাণ আগের অর্থবছরের একইসময়ে হয়েছিল ৪ কোটি ১৯ লাখ টাকা বা ইপিএস ১.৯১ টাকা।

আরও পড়ুন…..
সোনালি পেপারের দলে ফরচুন সুজ
সোনালি পেপারের জালিয়াতির অভিযোগ তদন্দের মধ্যে রাইট অনুমোদন

সোনালি পেপারের ৯ মাসে নিজস্ব ব্যবসায় পরিচালন মুনাফা হয়েছে ১৯ কোটি ১৫ লাখ টাকা। একইসময়ে কোম্পানি ঝুঁকিপূর্ণ শেয়ারবাজার থেকে এসেছে ২৫ কোটি ৯১ লাখ টাকা। অর্থাৎ কোম্পানিটির মূল ব্যবসার থেকে শেয়ারবাজার এখন মুনাফার প্রধান হাতিয়ার।

অথচ ১৯৭৮ সালে প্রতিষ্ঠিত সোনালি পেপারের মূল ব্যবসা হচ্ছে ডুপ্লেক্স পেপার বোর্ড, নিউজ প্রিন্ট ও হোয়াইট পেপারস তৈরী করা। যা বিক্রি থেকে মুনাফা অর্জন করা। যে কোম্পানিটি ১৯৮৫ সালে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত হলেও পরবর্তীতে মন্দা ব্যবসার কারনে তালিকাচ্যুত করা হয়। তবে ২০২০ সালের ১৫ জুন পূণ:তালিকাভুক্ত করা হয়েছে।

শেয়ারবাজার থেকে মুনাফা করতে গিয়ে সোনালি পেপার কর্তৃপক্ষ গেম্বলারদের সঙ্গে হাত মিলিয়েছে বলে অভিযোগ আছে। যারা সবাই মিলে এক কোম্পানি থেকে আরেক কোম্পানি বা পরস্পর বিনিয়োগের মাধ্যমে শেয়ার দর বৃদ্ধি করছেন। অনেকটা ‘এ’ কোম্পানি থেকে ‘বি’ কোম্পানিতে বিনিয়োগ করে ওই কোম্পানির শেয়ার দর বৃদ্ধি এবং ‘বি’ কোম্পানি থেকে আবার ‘এ’ কোম্পানিতে বিনিয়োগ করে ওই কোম্পানির শেয়ার দর বৃদ্ধির মতো কারসাজির ঘটনা ঘটছে। যেখানে পরস্পর যোগসাজোশে এক কোম্পানি আরেক কোম্পানির শেয়ার দর বৃদ্ধিতে দায়িত্ব পালন করছে।

যা পুঁজি করে গত কয়েক মাসে শেয়ারটির দর উঠে গেছে অন্য উচ্চতায়। গত বছরের ২৭ জুনের ১৯৭.৪০ টাকার শেয়ারটি রাইট শেয়ার সংক্রান্ত রেকর্ড ডেট পরবর্তী দর সমন্বয়ের পরেও ৪ জুন বেড়ে দাড়িঁয়েছে ৫৫৪.৪০ টাকায়। এক্ষেত্রে দর বেড়েছে ৩৫৭ টাকা বা ১৮১ শতাংশ।

শেয়ারবাজার থেকে মুনাফা করতে উচ্চ সুদের মার্জিন ঋণে জড়িঁয়েছে সোনালি পেপার। যে ঋণের কবলে ২০১০ সালের ধসে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে বিনিয়োগকারীরা। সোনালি পেপারের দুটি বিও হিসাবেই মার্জিন ঋণ নেওয়া হয়েছে। এরমধ্যে এসবিএল ক্যাপিটাল ম্যানেজমেন্টের পোর্টফোলিওতে ৬ কোটি ৪৮ লাখ টাকা ও ইবিএল সিকিউরিটিজের পোর্টফোলিওতে ৭ কোটি ৫১ লাখ টাকার মার্জিন নেওয়া হয়েছে।

মার্জিন ছাড়াও ২২ কোটি টাকার সোনালি পেপার আরও ৯০ কোটি ২৩ লাখ টাকার ব্যাংক ঋণে জর্জরিত। গত ৩১ মার্চ কোম্পানিটির কাছে মধুমতি ব্যাংক ও পূবালি ব্যাংকের কারেন্ট পোরশনসহ দীর্ঘমেয়াদি ঋণের পরিমাণ দাড়িঁয়েছে ৩৫ কোটি ৮ লাখ টাকা। এছাড়া ব্যাংক দুটির কাছে স্বল্পমেয়াদি আরও ৫৫ কোটি ১৫ লাখ টাকার ঋণ রয়েছে।

বিজনেস আওয়ার/০৫ জুন, ২০২২/আরএ

ফেসবুকের মাধ্যমে আপনার মতামত জানান: