বিজনেস আওয়ার প্রতিবেদক : বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া শর্ত সাপেক্ষে ছয় মাসের জন্য মুক্তি পেয়েছেন। এরই মধ্যে পেরিয়ে গেছে চার মাস। এখন প্রশ্ন বাকি দুই মাস পর তিনি কোথায় থাকবেন? কারাগারে, গুলশানের ভাড়া বাসা ফিরোজায়, নাকি লন্ডনে ছেলের কাছে যাওয়ার সুযোগ পাবেন?
বলা হয়েছে, শর্ত ভাঙলেই মুক্তির আদেশ বাতিল হয়ে যাবে।যেহেতু ফৌজদারি কার্যবিধির ৪০১ ধারার উপধারা-১ অনুযায়ী খালেদা জিয়ার সাজা ছয় মাসের জন্য স্থগিত রেখে তাকে ঢাকার নিজ বাসায় থেকে চিকিৎসা গ্রহণ এবং এই সময়ের মধ্যে দেশের বাইরে না যাওয়ার শর্তে মুক্তি দেওয়া হয়েছে।
সেই সময় আইনমন্ত্রী গণমাধ্যমকে জানিয়েছিলেন, সরকার অনুমতি দিলে খালেদা জিয়াকে বিদেশে নিয়েও চিকিৎসা দেওয়া যাবে। খালেদা জিয়ার পরিবার ও বিএনপি নেতাদের বিশ্বাস, সেই অনুমতি পাবেন। ফলে সাময়িক মুক্তির মেয়াদের ছয় মাস শেষে কারাগার ফিরোজা বা লন্ডন— যেকোনো স্থানেই খালেদা জিয়ার থাকার সমান সম্ভবনা আছে।
কিন্তু খালেদা জিয়ার পরিবার ও দল ইউনাইটেড হাসপাতালে চিকিৎসা গ্রহণ অথবা যুক্তরাজ্যের ভালো কোনো হাসপাতালে চিকিৎসা গ্রহণের ব্যবস্থা করতে সরকারের উচ্চ মহলের সঙ্গে কথাবার্তা শুরু করেছেন। এই কথাবার্তা ও বোঝাপড়ার ওপরই খালেদা জিয়ার ভাগ্য নির্ধারণ হবে।
বিএনপির নেতাকর্মীদের বিশ্বাস, বিশেষ কোনো পরিস্থিতি তৈরি না হলে খালেদা জিয়াকে আর কারাগারে নেবেন না প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। কিন্তু মুক্তির সময় যে দু’টি শর্ত দেওয়া হয়েছে, সেগুলো বহাল থাকলে পছন্দের হাসপাতালে চিকিৎসা অথবা চিকিৎসার জন্য দেশের বাইরে যাওয়া খালেদা জিয়ার পক্ষে সম্ভব হবে না।
সে কারণে ওই দুই শর্ত শিথিল এবং ‘সাময়িক’ মুক্তিকে স্থায়ী মুক্তিতে রূপান্তরিত করতে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছেন খালেদা জিয়ার ভাই শামীম এস্কান্দার ও বোন সেলিমা ইসলাম।
জানা গেছে, করোনা সংকটের উন্নতি হলে প্রাথমিক অবস্থায় ইউনাইটেড হাসপাতালেই চিকিৎসা নিতে চান খালেদা জিয়া। এতে করে ‘বাসায় থেকে চিকিৎসা গ্রহণের শর্ত’ কিছুটা ভঙ্গ হলেও এ ব্যাপারে সরকারের পক্ষ থেকে খুব একটা আপত্তি আসবে না বলেই ধারণা বিএনপি নেতাদের। পরিবারের সদস্যরাও তাই মনে করেন
সম্প্রতি খালেদা জিয়ার বোন সেলিমা ইসলাম বলেন, আমরা তো তাকে ইউনাইটেড হাসপাতালে ট্রিটমেন্টের জন্য নিতে চাই। কিন্তু করোনার কারণে সেখানে নেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। করোনা সংকট কেটে গেলে বিষয়টি বিবেচনা করা হবে।
খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসক বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন বলেন, উনাকে ভালো কোনো হাসপাতালে পছন্দের চিকিৎসককে দিয়ে ট্রিটমেন্ট করানো দরকার। মুক্তিতে শর্ত যাই থাকুক, বাসার পাশের হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে গেলে সরকার বাধা দেবে এমনটি মনে হয় না।
কিন্তু আগামী দুই মাসের মধ্যে যদি করোনা পরিস্থিতির উন্নতি না হয়, তাহলে খালেদা জিয়া ইউনাইটেড হাসাপাতালে চিকিৎসা নিতে পারবেন না। আবার সরকারের তরফ থেকে তার মুক্তির মেয়াদ না বাড়ালে ‘ফিরোজা’তেও থাকতে পারবেন না। তাকে ফিরতে হবে কারাগারে।
এমন জটিল সমীকরণের মধ্যে পরিবারের পক্ষ থেকে চেষ্টা করা হচ্ছে, যেকোনো মূল্যে খালেদা জিয়ার মুক্তির মেয়াদ বাড়াতে হবে এবং করোনা পরিস্থিতি উন্নতি হলে যত দ্রুতসম্ভব খালেদা জিয়াকে লন্ডন পাঠাতে হবে। সেখানে বড় ছেলের স্ত্রী ডা. জুবাইদা রহমানের তত্ত্বাবধানে চিকিৎসা গ্রহণ এবং নাতনীদের সঙ্গে সময় কাটালে খালেদা জিয়া দ্রুত আরোগ্য লাভ করবেন বলে বিশ্বাস তাদের।
তাই পরীবারের পক্ষ থেকে আপ্রাণ চেষ্টা চালানো হচ্ছে, আগামী দুই মাসের মধ্যেই অর্থাৎ সাময়িক মুক্তির মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই খালেদা জিয়ার ‘স্থায়ী মুক্তি’র ব্যবস্থা করা এবং সরকারকে রাজি করিয়ে উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে দেশের বাইরে পাঠানো।
এ প্রসঙ্গে বিএনপির স্থায়ী কমিটির একজন সদস্য বলেন, পরিবারের পক্ষ থেকে সরকারের সঙ্গে আলোচনা করা হচ্ছে। তারা চেষ্টা করছে উন্নত চিকিৎসার জন্য বেগম খালেদা জিয়াকে দেশের বাইরে নেওয়ার। সরকার অনুমতি দিলে হয়তো ম্যাডামকে লন্ডন নিয়ে যাওয়া হবে।
এর আগে অবশ্য আইনমন্ত্রী মিডিয়াকে বলেন, চিকিৎসার জন্য বিদেশ যাইতে চাইলে খালেদা জিয়াকে অবশ্যই সরকারের অনুমতি নিতে হবে। সরকার অনুমতি দিলে তিনি বিদেশে যেতে পারবেন।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সব দিক বিবেচনায় আগামী দুই মাস পর কারাগার, লন্ডন, ‘ফিরোজা’— সব ক’টিতে থাকার সমান সম্ভবনা রয়েছে খালেদা জিয়ার। তবে সবকিছু নির্ভর করছে প্রধানমন্ত্রীর ওপর। তিনি যেখানে রাখতে চান, সেখানেই থাকতে হবে সাবেক প্রধানন্ত্রীকে।
উল্লেখ্য, গত ২৪ মার্চ সরকারের নির্বাহী আদেশে সাজা স্থগিত করে দুই শর্তে খালেদা জিয়াকে ছয় মাসের জন্য মুক্তি দেওয়া হয়। বাকি প্রক্রিয়া শেষ করে ২৫ মার্চ বিকেল সোয়া ৪টায় বিএসএমএমইউ হাসপাতাল থেকে গুলশানের ভাড়া বাসা ফিরোজায় নেয়া হয় খালেদা জিয়াকে।
বিজনেস আওয়ার/২৭ জুলাই, ২০২০/এ