ঢাকা , রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

জায়েদ খানকে নিয়ে যা বললেন ফেরদৌস

  • পোস্ট হয়েছে : ০৫:১২ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৭ জুলাই ২০২০
  • 52

বিনোদন ডেস্ক : বাংলাদেশ চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির সভাপতি মিশা সওদাগর ও সাধারণ সম্পাদক জায়েদ খানকে বয়কটের ঘোষণা নিয়ে জল ঘোলা হয়েই যাচ্ছে সিনেমাপাড়ায়। ১৮ সংগঠনের বাইরে নিজেদের সংগঠনেও বিদ্রোহের মুখে পড়েছেন মিশা ও জায়েদ।

শীল্পী সমিতির সেকেন্ড ইন কমান্ড জায়েদ খানের বিরুদ্ধে শিল্পী সমিতির সদস্যদের সঙ্গে ক্ষমতার অপব্যবহার করাসহ নানা অভিযোগ উঠেছে। সবকিছু মিলিয়ে ইন্ডাস্ট্রিতে যে সংকটময় অবস্থা দেখা দিয়েছে তাকে লজ্জাজনক বলে মন্তব্য করেছেন চিত্রনায়ক ফেরদৌস।

তিনি বলেন, এর আগেও বহুবার বিভিন্ন সময় অনেক প্রযোজক-পরিচালকের সঙ্গে শিল্পীদের ঝামেলা হয়েছে, সেগুলো মিটমাটও হয়েছে। শিল্পী সমিতির মধ্যেও ঝামেলা হয়েছে। সেজ্ঞুলোও মিটে গেছে। কিন্তু বর্তমানে যে অবস্থা দেখা যাচ্ছে তা কখনো হয়নি।

ফেরদৌস বলেন, করোনার মধ্যেও মৃত্যুর পরোয়া না করে প্রথমবারের মতো শিল্পী সমিতির প্রেসিডেন্ট ও সেক্রেটারির পদত্যাগ চেয়ে আন্দোলন নেমেছে সদস্যরা। তারা রাস্তায় নেমেছে কি এমনি এমনি? অবশ্যই তীব্র ক্ষোভ রয়েছে তাদের। শিল্পী সমিতির ইমেজ, গুরুত্ব বিবেচনা করে এই বিষয়টা কিন্তু ভয়াবহ। চরম লজ্জার।

তিনি বলেন, আমি কখনোই এসব বিষয় নিয়ে কথা বলতে চাইনি। আমি মনে করি উপরে থুথু দিলে নিজের গায়েই পড়ে। সিনেমার একটা বাজে লোককে নিয়ে কথা বললেও সেটা কিছুটা হলেও আমাকে ছোট করবে। তাই চুপ থাকতে চেয়েছি। কিন্তু যে অবস্থা দেখছি তাতে আসলে চুপ করে থাকাই মুশকিল হয়ে যাচ্ছে।

২০১৭ সালে মৌসুমীর প্যানেল থেকে নির্বাচনে এসেছিলাম। রিয়াজ, পপি, পূর্ণিমাসহ অনেককেই দেখেছিলাম সে বছর। একটা উৎসবমুখর পরিবেশ ছিলো। কিন্তু নির্বাচনের পরই দেখলাম সবকিছু স্বার্থের খেলা। জায়েদ একের পর এক ভুল সিদ্ধান্ত নিয়েছে। প্রতিবাদ করেও তাকে ফেরানো যায়নি।

মিশা ভাইয়ের মতো লোক তাকে অন্ধের মতো সমর্থন দিয়েছেন। তিনি আপাদমস্তক শিল্পী। তার একটা সুনাম আছে। তাকে এসব মানায় না। তাকে নিয়েই অন্যায়ভাবে জায়েদ ১৮৪ জন শিল্পীকে বাদ দিয়েছে।

আমি বলেছিলাম এইসব শিল্পীরা অবৈধ হলেও যেন এদের শাস্তি না দেয়া হয়। কারণ এখানে অনেক শিল্পী রয়েছেন যারা অনেক সিনিয়র। তাদেরও একটা অধিকার আছে এই সমিতির প্রতি। এদের অধিকাংশই নাম-খ্যাতিও হয়নি। শিল্পী সমিতির সদস্যপদটাকে তারা গর্বের সাথে নেয়। থাকুক, বাতিল করার দরকার নেই।

বরং শাস্তির আওতায় আনা হোক তাদেরকে যারা এইসব শিল্পীদের নিয়ম না মেনে সদস্যপদ দিয়েছিলো। জায়েদ আমার এই কথাটা শুনলো না। সে তার ইচ্ছেমতো যাকে খুশি বাদ দিয়েছে। আবার নিজের মতো করে অনেককেই সদস্যপদ দিয়েছে। এখান থেকেই বোঝা যায় পুরো ব্যাপারটা পরিকল্পিত এবং রাজনৈতিক।

কারণ যে দোষে তুমি অন্যদের বাতিল করলে তারচেয়ে বড় দোষ থাকা সত্বেও আরেকজনকে তুমি যোগ করে নিয়েছো! সে বলে ফারুক, সোহেল রানা, ইলিয়াস কাঞ্চনসহ কয়েকজন সিনিয়ররা এটা করেছেন। ভুল। এনাদেরকে ভুল বোঝানো হয়েছে। মিশা ভাই সব জেনে বুঝেও চুপ ছিলেন।

শুধু তাই নয়, মিশা ভাইয়ের মতো একজন শিল্পী থাকতেও জায়েদ টাকা পয়সা নিয়ে আমাদের সঙ্গে মিথ্যাচার করেছে। দিনের পর দিন আমি, রিয়াজ, পপি, পূর্ণিমাসহ আরও অনেকেই বিনামূল্যে পারফর্ম করে শিল্পী সমিতিরি তহবিলে টাকা জমিয়েছি। যখনই টাকার হিসেব চাইলাম জায়েদ উল্টা পাল্টা বলতে শুরু করলো।

মিশা ভাই থাকতেও এফডিসিতে শিল্পী সমিতির প্রোগ্রাম থেকে রিয়াজের মতো জনপ্রিয় একজন শিল্পীকে কষ্ট নিয়ে বেরিয়ে আসতে হয়। তাকে কথা বলতে দেয়া হয়নি। কেন? কার স্বার্থে? এগুলো কিন্তু হতাশাজনক। তারা চায় না কেউ কথা বলুক। এভাবে তো সমিতি চলতে পারে না।

শিল্পীদের এই সমিতির মূল কাজ হলো শিল্পীদের দেখভাল করা। কেউ তো এটাকে ব্যক্তিগত সম্পত্তি মনে করতে পারেন না। একজন মানুষ সারাদিন এখানে অফিস করেন। রাত নিশুতি হলেও সে চেনা নেই জানা নেই লোকজন নিয়ে এখানে আড্ডা দেয়, চাল পড়া খাওয়ায়। এগুলো কী?

তার বিরুদ্ধে কান পাতলেই অভিযোগ শোনা যায়। কেন? তার যদি কোনো দোষ না থাকতো তাহলে তার পদত্যাগ নিয়ে এত সরব হতো না সবাই। ১৮টি সংগঠনের মানুষের এক হওয়া কিন্তু যা তা ব্যাপার নয়। সেটাও করোনার এই ঝুঁকিপূর্ণ সময়ে। অন্যায় হয়েছে বলেই শাস্তির দাবি উঠেছে।

প্রযোজক-পরিচালক সমিতিগুলো আমাদের মাদার সংগঠন। তারা আমাদের সমিতি কিন্তু বয়কট করেনি। দুজন অন্যায়কারীকে, অভিযুক্তকে অবাঞ্ছিত করেছে। তারা যদি পারে নিজেদের নির্দোষ প্রমাণ করতে তবে করুক। কিন্তু আবেগে অন্যায়কারীকে সমর্থন দেয়াটা ঠিক নয়।

ফেরদৌস বলেন, জায়েদ খানের মতো একজন শিল্পীকে নিয়ে সবার এত আগ্রহ কেন আমার মাথায় ঢুকছে না। যার নামের পাশে একটি ভালো হিট ছবি নেই। সে কী সব অপরাধের উর্দ্ধে? আমি সবাইকে বিবেচনা করার জন্য অনুরোধ করবো।

আমি মনে করি, একজন শিল্পীর জন্য ক্ষমতার চেয়েও বেশি জরুরি আত্মসম্মানবোধ থাকা। আমি মিশা ভাইকে বিচক্ষণ ও বিবেচক মানুষ হিসেবেই জানি। অন্যদের মতো পরের মাথায় কাঁঠাল ভেঙে খাওয়ার দরকার নেই তার। তাই মিশা ভাইকে বলবো একজন শিল্পী হিসেবে আপনাকে সমালোচিত দেখতে চাই না।

বিজনেস আওয়ার/২৭ জুলাই, ২০২০/এ

ফেসবুকের মাধ্যমে আপনার মতামত জানান:
ট্যাগ :

আপনার মতামত লিখুন

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার মেইলে তথ্য জমা করুন

জায়েদ খানকে নিয়ে যা বললেন ফেরদৌস

পোস্ট হয়েছে : ০৫:১২ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৭ জুলাই ২০২০

বিনোদন ডেস্ক : বাংলাদেশ চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির সভাপতি মিশা সওদাগর ও সাধারণ সম্পাদক জায়েদ খানকে বয়কটের ঘোষণা নিয়ে জল ঘোলা হয়েই যাচ্ছে সিনেমাপাড়ায়। ১৮ সংগঠনের বাইরে নিজেদের সংগঠনেও বিদ্রোহের মুখে পড়েছেন মিশা ও জায়েদ।

শীল্পী সমিতির সেকেন্ড ইন কমান্ড জায়েদ খানের বিরুদ্ধে শিল্পী সমিতির সদস্যদের সঙ্গে ক্ষমতার অপব্যবহার করাসহ নানা অভিযোগ উঠেছে। সবকিছু মিলিয়ে ইন্ডাস্ট্রিতে যে সংকটময় অবস্থা দেখা দিয়েছে তাকে লজ্জাজনক বলে মন্তব্য করেছেন চিত্রনায়ক ফেরদৌস।

তিনি বলেন, এর আগেও বহুবার বিভিন্ন সময় অনেক প্রযোজক-পরিচালকের সঙ্গে শিল্পীদের ঝামেলা হয়েছে, সেগুলো মিটমাটও হয়েছে। শিল্পী সমিতির মধ্যেও ঝামেলা হয়েছে। সেজ্ঞুলোও মিটে গেছে। কিন্তু বর্তমানে যে অবস্থা দেখা যাচ্ছে তা কখনো হয়নি।

ফেরদৌস বলেন, করোনার মধ্যেও মৃত্যুর পরোয়া না করে প্রথমবারের মতো শিল্পী সমিতির প্রেসিডেন্ট ও সেক্রেটারির পদত্যাগ চেয়ে আন্দোলন নেমেছে সদস্যরা। তারা রাস্তায় নেমেছে কি এমনি এমনি? অবশ্যই তীব্র ক্ষোভ রয়েছে তাদের। শিল্পী সমিতির ইমেজ, গুরুত্ব বিবেচনা করে এই বিষয়টা কিন্তু ভয়াবহ। চরম লজ্জার।

তিনি বলেন, আমি কখনোই এসব বিষয় নিয়ে কথা বলতে চাইনি। আমি মনে করি উপরে থুথু দিলে নিজের গায়েই পড়ে। সিনেমার একটা বাজে লোককে নিয়ে কথা বললেও সেটা কিছুটা হলেও আমাকে ছোট করবে। তাই চুপ থাকতে চেয়েছি। কিন্তু যে অবস্থা দেখছি তাতে আসলে চুপ করে থাকাই মুশকিল হয়ে যাচ্ছে।

২০১৭ সালে মৌসুমীর প্যানেল থেকে নির্বাচনে এসেছিলাম। রিয়াজ, পপি, পূর্ণিমাসহ অনেককেই দেখেছিলাম সে বছর। একটা উৎসবমুখর পরিবেশ ছিলো। কিন্তু নির্বাচনের পরই দেখলাম সবকিছু স্বার্থের খেলা। জায়েদ একের পর এক ভুল সিদ্ধান্ত নিয়েছে। প্রতিবাদ করেও তাকে ফেরানো যায়নি।

মিশা ভাইয়ের মতো লোক তাকে অন্ধের মতো সমর্থন দিয়েছেন। তিনি আপাদমস্তক শিল্পী। তার একটা সুনাম আছে। তাকে এসব মানায় না। তাকে নিয়েই অন্যায়ভাবে জায়েদ ১৮৪ জন শিল্পীকে বাদ দিয়েছে।

আমি বলেছিলাম এইসব শিল্পীরা অবৈধ হলেও যেন এদের শাস্তি না দেয়া হয়। কারণ এখানে অনেক শিল্পী রয়েছেন যারা অনেক সিনিয়র। তাদেরও একটা অধিকার আছে এই সমিতির প্রতি। এদের অধিকাংশই নাম-খ্যাতিও হয়নি। শিল্পী সমিতির সদস্যপদটাকে তারা গর্বের সাথে নেয়। থাকুক, বাতিল করার দরকার নেই।

বরং শাস্তির আওতায় আনা হোক তাদেরকে যারা এইসব শিল্পীদের নিয়ম না মেনে সদস্যপদ দিয়েছিলো। জায়েদ আমার এই কথাটা শুনলো না। সে তার ইচ্ছেমতো যাকে খুশি বাদ দিয়েছে। আবার নিজের মতো করে অনেককেই সদস্যপদ দিয়েছে। এখান থেকেই বোঝা যায় পুরো ব্যাপারটা পরিকল্পিত এবং রাজনৈতিক।

কারণ যে দোষে তুমি অন্যদের বাতিল করলে তারচেয়ে বড় দোষ থাকা সত্বেও আরেকজনকে তুমি যোগ করে নিয়েছো! সে বলে ফারুক, সোহেল রানা, ইলিয়াস কাঞ্চনসহ কয়েকজন সিনিয়ররা এটা করেছেন। ভুল। এনাদেরকে ভুল বোঝানো হয়েছে। মিশা ভাই সব জেনে বুঝেও চুপ ছিলেন।

শুধু তাই নয়, মিশা ভাইয়ের মতো একজন শিল্পী থাকতেও জায়েদ টাকা পয়সা নিয়ে আমাদের সঙ্গে মিথ্যাচার করেছে। দিনের পর দিন আমি, রিয়াজ, পপি, পূর্ণিমাসহ আরও অনেকেই বিনামূল্যে পারফর্ম করে শিল্পী সমিতিরি তহবিলে টাকা জমিয়েছি। যখনই টাকার হিসেব চাইলাম জায়েদ উল্টা পাল্টা বলতে শুরু করলো।

মিশা ভাই থাকতেও এফডিসিতে শিল্পী সমিতির প্রোগ্রাম থেকে রিয়াজের মতো জনপ্রিয় একজন শিল্পীকে কষ্ট নিয়ে বেরিয়ে আসতে হয়। তাকে কথা বলতে দেয়া হয়নি। কেন? কার স্বার্থে? এগুলো কিন্তু হতাশাজনক। তারা চায় না কেউ কথা বলুক। এভাবে তো সমিতি চলতে পারে না।

শিল্পীদের এই সমিতির মূল কাজ হলো শিল্পীদের দেখভাল করা। কেউ তো এটাকে ব্যক্তিগত সম্পত্তি মনে করতে পারেন না। একজন মানুষ সারাদিন এখানে অফিস করেন। রাত নিশুতি হলেও সে চেনা নেই জানা নেই লোকজন নিয়ে এখানে আড্ডা দেয়, চাল পড়া খাওয়ায়। এগুলো কী?

তার বিরুদ্ধে কান পাতলেই অভিযোগ শোনা যায়। কেন? তার যদি কোনো দোষ না থাকতো তাহলে তার পদত্যাগ নিয়ে এত সরব হতো না সবাই। ১৮টি সংগঠনের মানুষের এক হওয়া কিন্তু যা তা ব্যাপার নয়। সেটাও করোনার এই ঝুঁকিপূর্ণ সময়ে। অন্যায় হয়েছে বলেই শাস্তির দাবি উঠেছে।

প্রযোজক-পরিচালক সমিতিগুলো আমাদের মাদার সংগঠন। তারা আমাদের সমিতি কিন্তু বয়কট করেনি। দুজন অন্যায়কারীকে, অভিযুক্তকে অবাঞ্ছিত করেছে। তারা যদি পারে নিজেদের নির্দোষ প্রমাণ করতে তবে করুক। কিন্তু আবেগে অন্যায়কারীকে সমর্থন দেয়াটা ঠিক নয়।

ফেরদৌস বলেন, জায়েদ খানের মতো একজন শিল্পীকে নিয়ে সবার এত আগ্রহ কেন আমার মাথায় ঢুকছে না। যার নামের পাশে একটি ভালো হিট ছবি নেই। সে কী সব অপরাধের উর্দ্ধে? আমি সবাইকে বিবেচনা করার জন্য অনুরোধ করবো।

আমি মনে করি, একজন শিল্পীর জন্য ক্ষমতার চেয়েও বেশি জরুরি আত্মসম্মানবোধ থাকা। আমি মিশা ভাইকে বিচক্ষণ ও বিবেচক মানুষ হিসেবেই জানি। অন্যদের মতো পরের মাথায় কাঁঠাল ভেঙে খাওয়ার দরকার নেই তার। তাই মিশা ভাইকে বলবো একজন শিল্পী হিসেবে আপনাকে সমালোচিত দেখতে চাই না।

বিজনেস আওয়ার/২৭ জুলাই, ২০২০/এ

ফেসবুকের মাধ্যমে আপনার মতামত জানান: