রেজোয়ান আহমেদ : জেএমআই সিরিঞ্জ অ্যান্ড ডিভাইস ২০০৩ সালে শুধুমাত্র চট্ট্রগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) তালিকাভুক্ত হয়। তবে পরবর্তীতে ২০১৩ সালে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) তালিকাভুক্তকে কেন্দ্র করে কোম্পানিটির শেয়ার অস্বাভাবিক হারে বাড়ায় একটি গ্রুপ। ওই তালিকাভুক্তিতে কোম্পানির ব্যবসায় কোন প্রভাব না পড়লেও অযৌক্তিকভাবেই দাম বাড়ানো হয়। এতে সাধারন বিনিয়োগকারীরাও জড়িয়ে পড়ে। একইভাবে মূল মার্কেটে ফেরা নিয়ে দূর্বল সোনালি পেপারের শেয়ারেও তেমনটি লক্ষ্য করা গেছে। অথচ এরচেয়ে অনেক ভালো ব্যবসা করা কোম্পানির শেয়ার দর আরও নিচে রয়েছে। তবে সেদিকে বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ নেই। কিন্তু তালিকাভুক্ত হওয়ার আগেই সোনালি পেপার নিয়ে অনেকের আগ্রহ তৈরী হয়ে গেছে।
বাংলাদেশের শেয়ারবাজারে যতগুলো আস্থাশীল ও ভালো ব্যবসায়িক কোম্পানি আছে, তারমধ্যে প্রথম সারিতে রয়েছে স্কয়ার ফার্মা। এ কোম্পানিটির ৯ মাসে (জুলাই ১৯-মার্চ ২০) শেয়ারপ্রতি মুনাফা (ইপিএস) হয়েছে ১২.৪৪ টাকা। যে কোম্পানিটি থেকে নিয়মিত ৪০ শতাংশের উপরে লভ্যাংশ দেওয়া হয়। আর শেয়ারটির দর এখন ১৮০ টাকা। কিন্তু দূর্বল সোনালি পেপারের শেয়ার দর ২৭৩ টাকা। মূল মার্কেটে ফেরা নিয়ে এ কোম্পানিটির শেয়ার দর গেম্বলাররা এই আকাশচুম্বি করেছে। তা দেখে সাধারন বিনিয়োগকারীরাও অংশগ্রহনে ঝাপিয়ে পড়তে রাজি। শুধু দরকার মূল মার্কেটে লেনদেন চালু হওয়া। এরইমধ্যে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শেয়ারটি হল্টেড হবে বলে খবর ছড়ানো হয়েছে।
এতো উচ্চ দরে শেয়ারটি কেনার ক্ষেত্রে নিয়ন্ত্রক সংস্থার কোন ভূমিকা না থাকলেও সামনে লোকসানের সময় দায় দেওয়া হবে। ভবিষ্যতে যখন গেম্বলাররা তাদের স্বার্থ হাসিল করে শেয়ারটি থেকে বেরিয়ে যাবে, তখন দোষ দেওয়া হবে নিয়ন্ত্রক সংস্থাকে। লোভের লাভে নিয়ন্ত্রক সংস্থার কোন ভূমিকা না থাকলেও লোকসানের ক্ষেত্রে দায় দেওয়া হবে।
শেয়ারবাজার বিশ্লেষক অধ্যাপক আবু আহমেদ বিজনেস আওয়ারকে বলেন, বাংলাদেশের বিনিয়োগকারীরা দ্রুত ও অনাকাঙ্খিত হারে ক্যাপিটাল গেইন চায়। তারা লভ্যাংশে খুশি না। যে কারনে তারা এখনো গেম্বলারদেরকে অনুসরন করে। এরফলে অধিকাংশ সময়ই অনাকাঙ্খিত লোকসানের কবলে পড়ে। এক্ষেত্রে যাকে যতই দোষারোপ করা হোক না কেনো, সবার আগে নিজেদেরকে সচেতন বা সাবধান হতে হবে। পুজিঁ নিজের, ঝুকিঁও নিজের।
ডিএসইর এক সদস্য বিজনেস আওয়ারকে বলেন, ব্যবসায় দূর্বল কিংবা সবল, সেদিকে বিনিয়োগকারীদের নজড় খুব কমই থাকে। তারা দেখে গেম্বলাররা কোনদিকে যাচ্ছে। সেটা লোকসানি কোম্পানি হলেও তাদের সমস্যা নেই। এই সোনালি পেপারের শেয়ার যদি ১ হাজার টাকাও উঠে, সেদিকেই দৌড়াবে সাধারন বিনিয়োগকারীরা। পরে লোকসান করে দোষ দেবে অন্যের ঘাড়ে। কিন্তু লোকসানের সম্পূর্ণ কারন কিন্তু সে নিজেই।
উৎপাদন বন্ধ থাকা, বার্ষিক সাধারণ সভা (এজিএম) না করা, ধারাবাহিক লোকসান, শেয়ারহোল্ডারদের নিয়মিত লভ্যাংশ না দেওয়া এবং কাগুজে শেয়ার ইলেকট্রনিকে রূপান্তর না করায় ২০০৯ সালের ১ অক্টোবর সোনালী পেপারকে মূল মার্কেট থেকে তালিকাচ্যুত করে ওটিসি মার্কেটে পাঠানো হয়।
সোনালী পেপারের সর্বশেষ আর্থিক প্রতিবেদন অনুযায়ী, চলতি হিসাব বছরের তৃতীয় প্রান্তিক (২০২০ সালের জানুয়ারি-মার্চ) ইপিএস হয়েছে ৩২ পয়সা। এতে করে ৯ মাসের (২০১৯ সালের জুলাই থেকে চলতি বছরের মার্চ পর্যন্ত) ইপিএস হয়েছে ২ টাকা ৮ পয়সা। আর গত বছরের ৩০ জুন শেয়ারপ্রতি সম্পদ মূল্য (এনএভিপিএস) দাঁড়িয়েছে ৩৩৬ টাকা ৯০ পয়সা।
প্রায় ১১ বছর ওটিসিতে থাকার পর মূল বাজারে ফিরতে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনে (বিএসইসি) আবেদন করে সোনালী পেপার। ওই আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে বেশ কিছু ধারা থেকে অব্যাহতি দিয়ে গত ২৭ নভেম্বর ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ এবং চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের মূল বাজারে পুনঃতালিকাভুক্তির অনুমোদন দেয় বিএসইসি।
মূল বাজারে ফিরতে যেকোনো কোম্পানির পরিশোধিত মূলধন ৩০ কোটি টাকা থাকার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। একইসঙ্গে ধারাবাহিক ৩ বছর মুনাফায় থেকে শেয়ারহোল্ডারদের লভ্যাংশ দিতে হয়। তবে, সোনালী পেপারকে এই দুটি শর্ত থেকে অব্যাহতি দিয়ে মূল বাজারে ফিরিয়ে আনা হয়েছে।
সোনালী পেপারকে মূল বাজারে ফিরিয়ে আনা সংক্রান্ত ডিএসইর বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, ডিএসইতে লেনদেনের প্রথম দিন থেকেই কোম্পানির সার্কিট ব্রেকার এবং সার্কিট ফিল্টার (প্রাইস লিমিট) থাকবে। ডিএসইতে কোম্পানিটির ট্রেডিং কোড হবে “SONALIPAPR”। আর ডিএসইতে সোনালী পেপারের কোম্পানি কোড হবে ১৯৫০৩।
কোম্পানির রেফারেন্স প্রাইস এবং ফ্লোর প্রাইস নির্ধারণ করা হয়েছে ওটিসি মার্কেটের সর্বশেষ দাম। সর্বশেষ গত ৩০ জানুয়ারি ওটিসিতে কোম্পানিটির শেয়া ২৭৩ টাকায় লেনদেন হয়।
ডিএসই আরও জানিয়েছে, কোম্পানিটি ওটিসি মার্কেট থেকে মূল মার্কেটে ফিরে ‘জেড’ ক্যাটাগরিতে লেনদেন করবে। সোনালী পেপারকে পরবর্তী বার্ষিক সাধারণ সভা (এজিএম) অনুষ্ঠানের আগ পর্যন্ত জেড ক্যাটাগরিতে লেনদেন করতে হবে। ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) লেনদেন বিধিমালা, ২০১৩ অনুযায়ী পরবর্তীতে কোম্পানির ক্যাটাগরি পরিবর্তন করা হবে।
বিজনেস আওয়ার/২৮ জুলাই, ২০২০/আরএ