ঢাকা , সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

আছিয়ার ভবন নির্মাণে অস্বাভাবিক ব্যয়ের ব্যাখ্যা চেয়ে চিঠি, আটকে যেতে পারে অর্থ উত্তোলন

  • পোস্ট হয়েছে : ০১:৪২ অপরাহ্ন, সোমবার, ২০ জুন ২০২২
  • 63

বিজনেস আওয়ার প্রতিবেদক : অস্বাভাবিক ভবন নির্মাণ ব্যয় দেখিয়ে শেয়ারবাজারে সাধারন বিনিয়োগকারীদের কাছ থেকে অর্থ উত্তোলন করতে যাওয়া আছিয়া সী ফুডসের কাছে ব্যাখ্যা চেয়ে ২০ জুন চিঠি দিয়েছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) । এতে তাদের ভবন নির্মাণে অস্বাভাবিক ব্যয়ের যৌক্তিকতা তুলে ধরতে বলা হয়েছে। যা প্রদানে ব্যর্থ হলে, কমিশন কঠোর পদক্ষেপ নেবে।

এই কোম্পানি কর্তৃপক্ষ শেয়ারবাজার থেকে অর্থ উত্তোলনের লক্ষ্যে ভবনবাবদ অস্বাভাবিক সম্পদ দেখিয়েছে। যা নিয়ে গত ১২ জুন বিজনেস আওয়ারে ‘ভূয়া সম্পত্তি দেখিয়ে শেয়ারবাজারে আসছে আছিয়া সী ফুডস’ শীর্ষক সংবাদ প্রকাশ করা হয়। এর আলোকে কোম্পানি কর্তৃপক্ষের কাছে ব্যাখ্যা চেয়েছে কমিশন।

(আছিয়া সী ফুডসের ভবনের ছবি)

বিএসইসির চিঠিতে, গণমাধ্যমে আছিয়া সী ফুডসের অস্বাভাবিক ভবনবাবদ সম্পদ নিয়ে প্রকাশিত সংবাদের বিষয়ে ব্যাখ্যা চাওয়া হয়েছে। এ বিষয়ে আগামি ৩ কার্যদিবসের মধ্যে ব্যাখ্যা দিতে বলা হয়েছে।

এ বিষয়ে বিএসইসির একজন উর্ধ্বতন কর্মকর্তা বিজনেস আওয়ারকে বলেন, কমিশন যেকোন অনিয়মের বিরুদ্ধে কঠোর। আর সাধারন বিনিয়োগকারীদের কাছ থেকে কোন কোম্পানির অর্থ উত্তোলনের ক্ষেত্রে তা বলার অপেক্ষা রাখে না। ফলে আছিয়া সী ফুডস কর্তৃপক্ষ ভবন নিয়ে কোন অনিয়ম করে থাকলে, তা মেনে নেওয়া হবে না। সেক্ষেত্রে অবশ্যই শাস্তি পেতে হবে। যা ফান্ড উত্তোলন বাতিলের মতো সিদ্ধান্ত নেওয়াসহ অন্যান্য শাস্তি হতে পারে।

(আছিয়া সী ফুডসের ভবনের ছবি)

প্রসপেক্টাসে প্রদত্ত তথ্য অনুযায়ি,আছিয়া সী ফুডসের ২৭ হাজার ২৩ স্কয়ার ফিটের ভবন রয়েছে। পুরাতন ভবন সত্ত্বেও যা নির্মাণে (জমি ছাড়া) ১২ কোটি ৮ লাখ ৩৮ হাজার ৬৮১ টাকা ব্যয় হয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে। অর্থাৎ প্রতি স্কয়ার ফিট ভবন নির্মাণে ব্যয় হয়েছে ৪ হাজার ৪৭২ টাকা। যা কোনভাবেই বাস্তবসম্মত নয় বলে সংশ্লিষ্টদের দাবি।

এ বিষয়ে প্রকৌশলী ও একটি ডেভেলপার কোম্পানির কর্ণধার মো: হাবিবুর রহমান বিজনেস আওয়ারকে বলেন, ভবন নির্মাণে সাড়ে ৪ হাজার টাকা ব্যয় হওয়ার কোন সুযোগ নেই। যত ভালো মানেরই করা হোক না কেনো, সেটা বর্তমান জিনিসপত্রের বাজার দরেও ৩ হাজার টাকা অতিক্রম করতে পারে না। তবে আসল কথা হলো প্রায় সব কোম্পানিই শেয়ারবাজারে আসার আগে প্রতারণার জন্য বেশি করে দেখিয়ে থাকে।

(আছিয়া সী ফুডসের ভবনের ছবি)

প্রকৌশলী হাবিবুর রহমানের বক্তব্য অনুযায়ি, কমপক্ষে ৩ কোটি ৯৮ লাখ টাকার ভবন হিসাবেই সম্পদ বেশি দেখিয়েছে আছিয়া সী ফুডস। কোম্পানিটি যদি প্রতি স্কয়ার ফিটে ১ হাজার ৪৭২ (৪৪৭২-৩০০০) টাকা করে বেশি দেখিয়ে থাকে, তাহলে (১৪৭২*২৭০২৩) ৩ কোটি ৯৮ লাখ টাকার বেশি সম্পদ দেখিয়েছে।

একই বিষয়ে আছিয়া সী ফুডসের খুলনা অঞ্চলের এবং সমজাতীয় ব্যবসায়ী এক কোম্পানির কর্মকর্তা বিজনেস আওয়ারকে বলেন, আছিয়া সী ফুডসের ভবন প্রায় ১৫-২০ বছর আগের। ওই সময় ভবন নির্মাণে সর্বোচ্চ ৫০০-৭০০ টাকা স্কয়ার ফিট ব্যয় হতে পারে। তবে সেটা কোনভাবেই ৪ হাজার ৪৭২ টাকা হওয়ার সুযোগ নেই। এছাড়া আছিয়া সী ফুডসের ভবনে এমন কোন বিশেষত্ত্ব নেই, যে কারনেও খরচ বেশি হতে পারে।

তিনি বলেন, আছিয়া সী ফুডসের যে ২৭ হাজার স্কয়ার ফিট ভবনের দাবি করা হয়েছে, সেটাও সঠিক না। এর পরিমাণ অনেক কম হবে। এমনকি ওই কোম্পানি কর্তৃপক্ষ যদি সঠিক হারে ও নিয়মিত অবচয় চার্জ করত, তাহলে তাদেরই দাবিকৃত ১২ কোটি ৮ লাখ টাকার ভবনের এতো বছর পরে এসে রিটেইন ডাউন ভ্যালু ৮ কোটি ৬০ লাখ টাকা থাকত না।

এমন অস্বাভাবিক ভবন নির্মাণ ব্যয়ের বিষয়ে ডিএসইর সাবেক পরিচালক মিনহাজ মান্নান ইমন বিজনেস আওয়ারকে বলেন, সার্বিক পারিপার্শ্বিক অবস্থা বিবেচনায় সাড়ে ৪ হাজার টাকা নির্মাণ ব্যয় সন্দেহজনক। কিন্তু প্রায় সব কোম্পানিই কোন না কোনভাবে এমন অস্বাভাবিক ও সন্দেহজনক ব্যয়ের সম্পদ দেখিয়ে থাকে। তারপরেও শেয়ারবাজার থেকে তাদের অর্থ উত্তোলনের ক্ষেত্রে সমস্যা হয় না।

বিজনেস আওয়ার/২০ জুন, ২০২২/আরএ

ফেসবুকের মাধ্যমে আপনার মতামত জানান:
ট্যাগ :

আপনার মতামত লিখুন

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার মেইলে তথ্য জমা করুন

আছিয়ার ভবন নির্মাণে অস্বাভাবিক ব্যয়ের ব্যাখ্যা চেয়ে চিঠি, আটকে যেতে পারে অর্থ উত্তোলন

পোস্ট হয়েছে : ০১:৪২ অপরাহ্ন, সোমবার, ২০ জুন ২০২২

বিজনেস আওয়ার প্রতিবেদক : অস্বাভাবিক ভবন নির্মাণ ব্যয় দেখিয়ে শেয়ারবাজারে সাধারন বিনিয়োগকারীদের কাছ থেকে অর্থ উত্তোলন করতে যাওয়া আছিয়া সী ফুডসের কাছে ব্যাখ্যা চেয়ে ২০ জুন চিঠি দিয়েছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) । এতে তাদের ভবন নির্মাণে অস্বাভাবিক ব্যয়ের যৌক্তিকতা তুলে ধরতে বলা হয়েছে। যা প্রদানে ব্যর্থ হলে, কমিশন কঠোর পদক্ষেপ নেবে।

এই কোম্পানি কর্তৃপক্ষ শেয়ারবাজার থেকে অর্থ উত্তোলনের লক্ষ্যে ভবনবাবদ অস্বাভাবিক সম্পদ দেখিয়েছে। যা নিয়ে গত ১২ জুন বিজনেস আওয়ারে ‘ভূয়া সম্পত্তি দেখিয়ে শেয়ারবাজারে আসছে আছিয়া সী ফুডস’ শীর্ষক সংবাদ প্রকাশ করা হয়। এর আলোকে কোম্পানি কর্তৃপক্ষের কাছে ব্যাখ্যা চেয়েছে কমিশন।

(আছিয়া সী ফুডসের ভবনের ছবি)

বিএসইসির চিঠিতে, গণমাধ্যমে আছিয়া সী ফুডসের অস্বাভাবিক ভবনবাবদ সম্পদ নিয়ে প্রকাশিত সংবাদের বিষয়ে ব্যাখ্যা চাওয়া হয়েছে। এ বিষয়ে আগামি ৩ কার্যদিবসের মধ্যে ব্যাখ্যা দিতে বলা হয়েছে।

এ বিষয়ে বিএসইসির একজন উর্ধ্বতন কর্মকর্তা বিজনেস আওয়ারকে বলেন, কমিশন যেকোন অনিয়মের বিরুদ্ধে কঠোর। আর সাধারন বিনিয়োগকারীদের কাছ থেকে কোন কোম্পানির অর্থ উত্তোলনের ক্ষেত্রে তা বলার অপেক্ষা রাখে না। ফলে আছিয়া সী ফুডস কর্তৃপক্ষ ভবন নিয়ে কোন অনিয়ম করে থাকলে, তা মেনে নেওয়া হবে না। সেক্ষেত্রে অবশ্যই শাস্তি পেতে হবে। যা ফান্ড উত্তোলন বাতিলের মতো সিদ্ধান্ত নেওয়াসহ অন্যান্য শাস্তি হতে পারে।

(আছিয়া সী ফুডসের ভবনের ছবি)

প্রসপেক্টাসে প্রদত্ত তথ্য অনুযায়ি,আছিয়া সী ফুডসের ২৭ হাজার ২৩ স্কয়ার ফিটের ভবন রয়েছে। পুরাতন ভবন সত্ত্বেও যা নির্মাণে (জমি ছাড়া) ১২ কোটি ৮ লাখ ৩৮ হাজার ৬৮১ টাকা ব্যয় হয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে। অর্থাৎ প্রতি স্কয়ার ফিট ভবন নির্মাণে ব্যয় হয়েছে ৪ হাজার ৪৭২ টাকা। যা কোনভাবেই বাস্তবসম্মত নয় বলে সংশ্লিষ্টদের দাবি।

এ বিষয়ে প্রকৌশলী ও একটি ডেভেলপার কোম্পানির কর্ণধার মো: হাবিবুর রহমান বিজনেস আওয়ারকে বলেন, ভবন নির্মাণে সাড়ে ৪ হাজার টাকা ব্যয় হওয়ার কোন সুযোগ নেই। যত ভালো মানেরই করা হোক না কেনো, সেটা বর্তমান জিনিসপত্রের বাজার দরেও ৩ হাজার টাকা অতিক্রম করতে পারে না। তবে আসল কথা হলো প্রায় সব কোম্পানিই শেয়ারবাজারে আসার আগে প্রতারণার জন্য বেশি করে দেখিয়ে থাকে।

(আছিয়া সী ফুডসের ভবনের ছবি)

প্রকৌশলী হাবিবুর রহমানের বক্তব্য অনুযায়ি, কমপক্ষে ৩ কোটি ৯৮ লাখ টাকার ভবন হিসাবেই সম্পদ বেশি দেখিয়েছে আছিয়া সী ফুডস। কোম্পানিটি যদি প্রতি স্কয়ার ফিটে ১ হাজার ৪৭২ (৪৪৭২-৩০০০) টাকা করে বেশি দেখিয়ে থাকে, তাহলে (১৪৭২*২৭০২৩) ৩ কোটি ৯৮ লাখ টাকার বেশি সম্পদ দেখিয়েছে।

একই বিষয়ে আছিয়া সী ফুডসের খুলনা অঞ্চলের এবং সমজাতীয় ব্যবসায়ী এক কোম্পানির কর্মকর্তা বিজনেস আওয়ারকে বলেন, আছিয়া সী ফুডসের ভবন প্রায় ১৫-২০ বছর আগের। ওই সময় ভবন নির্মাণে সর্বোচ্চ ৫০০-৭০০ টাকা স্কয়ার ফিট ব্যয় হতে পারে। তবে সেটা কোনভাবেই ৪ হাজার ৪৭২ টাকা হওয়ার সুযোগ নেই। এছাড়া আছিয়া সী ফুডসের ভবনে এমন কোন বিশেষত্ত্ব নেই, যে কারনেও খরচ বেশি হতে পারে।

তিনি বলেন, আছিয়া সী ফুডসের যে ২৭ হাজার স্কয়ার ফিট ভবনের দাবি করা হয়েছে, সেটাও সঠিক না। এর পরিমাণ অনেক কম হবে। এমনকি ওই কোম্পানি কর্তৃপক্ষ যদি সঠিক হারে ও নিয়মিত অবচয় চার্জ করত, তাহলে তাদেরই দাবিকৃত ১২ কোটি ৮ লাখ টাকার ভবনের এতো বছর পরে এসে রিটেইন ডাউন ভ্যালু ৮ কোটি ৬০ লাখ টাকা থাকত না।

এমন অস্বাভাবিক ভবন নির্মাণ ব্যয়ের বিষয়ে ডিএসইর সাবেক পরিচালক মিনহাজ মান্নান ইমন বিজনেস আওয়ারকে বলেন, সার্বিক পারিপার্শ্বিক অবস্থা বিবেচনায় সাড়ে ৪ হাজার টাকা নির্মাণ ব্যয় সন্দেহজনক। কিন্তু প্রায় সব কোম্পানিই কোন না কোনভাবে এমন অস্বাভাবিক ও সন্দেহজনক ব্যয়ের সম্পদ দেখিয়ে থাকে। তারপরেও শেয়ারবাজার থেকে তাদের অর্থ উত্তোলনের ক্ষেত্রে সমস্যা হয় না।

বিজনেস আওয়ার/২০ জুন, ২০২২/আরএ

ফেসবুকের মাধ্যমে আপনার মতামত জানান: