জুয়েল রানা : দেশের শেয়ারবাজারের মূল মার্কেট দোলাচালের মধ্য দিয়ে চললেও এসএমই মার্কেট চাঙ্গা। একসময় এই বাজারে ক্রেতা না থাকলেও এখন ব্যাপক চাহিদা। যে কারনে মূল মার্কেট পতনের ধারার মধ্যেও এসএমই মার্কেটে উত্থান রয়েছে। এছাড়া কয়েকদিন আগে এসএমই কোম্পানির কোয়ালিফাইড ইনভেস্টর অফারে (কিউআইও) সাবস্ক্রিপশন পূরণ হওয়া নিয়ে শঙ্কা থাকলেও এখন ৫০ গুণ পর্যন্ত হচ্ছে।
তবে গত ৩ মাস ভালো যায়নি মূল মার্কেট। গত ৩ মাস আগে বা ২৭ মার্চ ডিএসইর প্রধান মূল্যসূচক ডিএসইএক্স ছিল ৬৭৪১.৫৫ পয়েন্ট। আর ওইদিন লেনদেনের পরিমাণ ছিল ৮৫৮ কোটি ৮৯ লাখ টাকা। এরমধ্যে ৩ মাসের ব্যবধানে সূচকটি ৪১৩.৯০ পয়েন্ট বা ৬% কমে এখন ৬৩২৭.৬৫ পয়েন্টে নেমে এসেছে। আর লেনদেন নেমে এসেছে ৬৮৩ কোটি ৭৪ লাখ টাকায়।
এসএমই খাতের শেয়ারে আগ্রহ তৈরীর পেছনে সবচেয়ে বড় কারন হিসেবে রয়েছে বিনিয়োগকারীদের কোয়ালিফাইড ইনভেস্টর হওয়ার জন্য রেজিস্ট্রেশন জটিলতা লাঘব। যা আরও সহজ হয়েছে এই বাজারের কোম্পানিগুলোর লেনদেনযোগ্য শেয়ার সংখ্যা কম হওয়ার জন্য। এছাড়া কোম্পানিগুলোর শেয়ার দর অবমূল্যায়িত পর্যায়ে থাকার কারনেও এক শ্রেণীর বিনিয়োগকারীর মধ্যে চাহিদা বেড়েছে।
গত ২৮ মার্চ বিকালে ডিএসইর ঘোষণা দেওয়ার আগ পর্যন্ত শেয়ারবাজারে এসএমইতে লেনদেন করার যোগ্য হওয়ার জন্য কোয়ালিফাইড ইনভেস্টর হতে ডিএসইর ইএসএস ওয়েবসাইটে প্রদত্ত অনলাইন ফর্ম পূরণ করে, তা ডিএসইতে মেইল করতে হতো। এরপরে ডিএসই তা যাচাই-বাছাই করে অনুমোদন দিত। এরপরে একজন বিনিয়োগকারী ওই বাজারে লেনদেন করতে পারতেন। তবে এখন থেকে বিনিয়োগকারীদেরকে রেজিস্ট্রশন করা লাগবে না। পোর্টফোলিওতে ২০ লাখ টাকার বিনিয়োগ (ক্রয় মূল্য বা বাজার দরের সর্বোচ্চটা বিবেচ্য) থাকলেই ডিএসই স্বয়ংক্রিয়ভাবে রেজিস্ট্রেশন করে দেবে।
এই ঘোষণার পর থেকেই এসএমই মার্কেটের শেয়ার দরে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে বিশেষ আগ্রহ তৈরী হয়েছে। যাতে করে শেয়ারগুলোর এখন দর বাড়ছে। যে শেয়ারগুলো এর আগে অভিহিত মূল্যের নিচে বা অবমূল্যায়িত পর্যায়ে ছিল। তবে এখন সব শেয়ারের দর ২০ টাকার উপরে। এরমধ্যে দু-একটি কোম্পানির অস্বাভাবিক দর বৃদ্ধির মতো ঘটনাও ঘটেছে।
বর্তমানে এসএমই মার্কেটের কোম্পানিগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশিতে অবস্থান করছে ওটিসি থেকে আসা বেঙ্গল বিস্কুটের দর। এ কোম্পানিটির গত ৩ মাসে ৫৭% দর বেড়ে ১৫৯ টাকায় এসে দাঁড়িয়েছে। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৮২.১০ টাকায় অবস্থানে রয়েছে ৫০ লাখ শেয়ার ইস্যু করা স্টার অ্যাডহেসিভের দর।
নিম্নে গত ৩ মাসে এসএমই কোম্পানিগুলোর দর বৃদ্ধির তথ্য তুলে ধরা হল-
কোম্পানির নাম | ২৭ মার্চের দর (টাকা) | ২৫ জুনের দর (টাকা) | বৃদ্ধির হার |
এপেক্স ওয়েভিং | ১৪.৬০ | ৪৪.৫০ | ২০৫% |
নিয়ালকো অ্যালয়েজ | ১৮.৮০ | ৪৯.৭০ | ১৬৪% |
মামুন অ্যাগ্রো | ১০.৪০ | ২৬.৫০ | ১৫৫% |
ওয়ান্ডারল্যান্ড টয়েজ | ২৫.২০ | ৬২.৪০ | ১৪৮% |
মোস্তফা মেটাল | ১১.২০ | ২৬.৭০ | ১৩৮% |
কৃষিবিদ ফিড | ১০.৪০ | ২৪ | ১৩১% |
ওরিজা অ্যাগ্রো | ১০.২০ | ২৩.১০ | ১২৬% |
হিমাদ্রি | ১৩.৮০ | ২৯.২০ | ১১২% |
মাস্টার ফিড অ্যাগ্রো | ১০.৪০ | ২১.৫০ | ১০৭% |
বেঙ্গল বিস্কুট | ১০১.৫০ | ১৫৯ | ৫৭% |
*স্টার অ্যাডহেসিভ | ১০ | ৮২.১০ | ৭২১% |
*কৃষিবিদ সীড | ১০ | ২৮.৫০ | ১৮৫% |
*বিডি পেইন্টস | ১০ | ২১.২০ | ১১২% |
*তারকা চিহ্নিত কোম্পানিগুলোর লেনদেনের বয়স এখনো ৩ মাস হয়নি।
এই মার্কেটে হঠাৎ করে বিনিয়োগকারীদের আগ্রহের অন্যতম কারন হিসাবে রয়েছে তুলনামূলক কম শেয়ার দর। এছাড়া লেনদেনযোগ্য শেয়ার সংখ্যা কম। এছাড়া মূল মার্কেটে একটি নতুন কোম্পানির শুরুতে কয়েক গুণ দর বৃদ্ধি স্বাভাবিক হলেও এখানে সেটা হয়নি। যাতে অবমূল্যায়িত ছিল এসএমইর কোম্পানিগুলোর দর।
এসএমই মার্কেটে ওটিসি থেকে ৪টি আনা হলেও বাকি ৯টি নতুন কোম্পানি। আইপিওর ন্যায় অর্থ সংগ্রহ করে লেনদেন শুরু হয়েছে। সেসব শেয়ারও অভিহিত মূল্যের নিচে ছিল। তবে মূল মার্কেটে এমন নতুন শেয়ারে শুরুতে টানা দর বৃদ্ধির মাধ্যমে কয়েক গুণ হয়ে যাওয়া স্বাভাবিক ঘটনা।
এসএমই মার্কেটের শেয়ার দর বৃদ্ধিতে অনুসন্ধান করেছে ডিএসই। এতে নিয়ালকো অ্যালয়েজ, এপেক্স ওয়েভিং, ওয়ান্ডারল্যান্ড টয়েজ, স্টার অ্যাডহেসিভের শেয়ার দর অস্বাভাবিক বেড়েছে বলে জানিয়েছে ডিএসই কর্তৃপক্ষ।
এসএমই মার্কেটে লেনদেন হওয়া নতুন কোম্পানিগুলোর মধ্যে সর্বোচ্চ লেনদেনযোগ্য শেয়ার সংখ্যা কোম্পানি কৃষিবিদ ফিডের। এ কোম্পানিটি ২২ কোটি টাকা সংগ্রহে ২ কোটি ২০ লাখ শেয়ার ইস্যু করে, শুধুমাত্র সেগুলো লেনদেনযোগ্য। এরপরের অবস্থানে থাকা বিডি পেইন্টসের ১ কোটি ২০ লাখ শেয়ার লেনদেনযোগ্য।
নিম্নে অর্থ উত্তোলনের মাধ্যমে এসএমই মার্কেটে আসা কোম্পানিগুলোর শেয়ার সংখ্যা তুলে ধরা হল-
কোম্পানির নাম | অর্থ উত্তোলন | শেয়ার ইস্যু |
কৃষিবিদ ফিড | ২২ কোটি | ২ কোটি ২০ লাখ |
বিডি পেইন্টস | ১২ কোটি | ১ কোটি ২০ লাখ |
কৃষিবিদ সীড | ১১ কোটি ৬০ লাখ | ১ কোটি ১৬ লাখ |
মোস্তফা মেটাল | ১১ কোটি | ১ কোটি ১০ লাখ |
ওরিজা অ্যাগ্রো | ১০ কোটি | ১ কোটি |
মাস্টার ফিড | ১০ কোটি | ১ কোটি |
মামুন অ্যাগ্রো | ১০ কোটি | ১ কোটি |
নিয়ালকো অ্যালয়েজ | ৭ কোটি ৫০ লাখ | ৭৫ লাখ |
স্টার অ্যাডহেসিভ | ৫ কোটি | ৫০ লাখ |
এদিকে ওটিসি থেকে আনা কোম্পানিগুলোরও সাধারন বিনিয়োগকারীদের হাতে থাকা লেনদেনযোগ্য শেয়ার সংখ্যা বেশি না। সবচেয়ে কম লেনদেনযোগ্য হিমাদ্রির শেয়ার। যে কোম্পানির শেয়ারে বিনিয়োগকারীর আগ্রহ থাকলেও কোন বিক্রেতা থাকে না। এই কোম্পানিটির মাত্র ১১ হাজার ৭৭৫টি শেয়ার লেনদেনযোগ্য।
কোম্পানির নাম | মোট শেয়ার | উদ্যোক্তা/পরিচালকদের শেয়ার | বিনিয়োগকারীদের শেয়ার |
এপেক্স ওয়েভিং | ৩ কোটি ৮৯ লাখ | ১ কোটি ১৭ লাখ | ২ কোটি ৭২ লাখ |
বেঙ্গল বিস্কুট | ৭৯ লাখ | ২৪ লাখ | ৫৫ লাখ |
ওয়ান্ডারল্যান্ড টয়েজ | ১ কোটি | ৪৭ লাখ | ৫৩ লাখ |
হিমাদ্রি লিমিটেড | ৭৫০০০০টি | ৭৩৮২২৫টি | ১১৭৭৫টি |
উল্লেখ্য, এসএমইতে আসা নতুন কোম্পানিগুলোর কিআইও বা শেয়ারবাজার থেকে অর্থ সংগ্রহের পূর্বে থাকা শেয়ারে ১ বছরের লক-ইন থাকে।
বিজনেস আওয়ার/২৬ জুন, ২০২২/আরএ