বিজনেস আওয়ার প্রতিবেদকঃ সৌম্য সরকারের হাতে উপহার তুলে দিচ্ছেন ওয়ালটন হাইটেক ইন্ডাস্ট্রিজ পিএলসি’র এমডি ও সিইও গোলাম মুর্শেদ
ফ্র্যাঞ্চাইজিভিত্তিক ক্রিকেট আসর বাংলাদেশ ক্রিকেট লিগের গত মৌসুমে লংগার ভার্সনের শিরোপা জিতেছে ওয়ালটন সেন্ট্রাল জোন। শুধু বড় দৈর্ঘ্যেই নয়, শর্টার ভার্সনেও শিরোপা জিতেছে ওয়ালটন গ্রুপের মালিকানাধীন দলটি। বিসিএলের নবম আসরের আগে প্রথম ও চতুর্থ আসরেরও শিরোপা জিতেছিল ওয়ালটন সেন্ট্রাল জোন।
প্রথম দল হিসেবে এক মৌসুমে দুটি শিরোপা জয়ের অনন্য কীর্তি গড়েছে বিসিএলের হট ফেভারিট দলটি। তাই তো ক্রিকেটারদের নিয়ে শিরোপা উদযাপনও হলো বড় আয়োজনে। রোববার রাতে রাজধানীর ওয়ালটন করপোরেট অফিসে জমকালো আয়োজনে ক্রিকেটারদের নিয়ে শিরোপা উদযাপন করে দলটি।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন ওয়ালটন হাই-টেক ইন্ডাস্ট্রিজ পিএলসি’র ম্যানেজিং ডিরেক্টর ও সিইও গোলাম মুর্শেদ।
জাতীয় দলের হয়ে সফরে থাকায় অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকতে পারেননি সাকিব আল হাসান ও মোসাদ্দেক হোসেন সৈকত। তবে শুভাগত হোম, সৌম্য সরকার, মোহাম্মদ মিঠুন, নাজমুল ইসলাম অপুসহ বাকিদের উপস্থিতিতে অনুষ্ঠান ভিন্ন মাত্রা পায়।
অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন ওয়ালটন হাই-টেক ইন্ডাস্ট্রিজের ডেপুটি ম্যানেজিং ডিরেক্টর নজরুল ইসলাম সরকার, এমদাদুল হক সরকার, ইভা রেজওয়ানা নিলু, শোয়েব হোসেইন নোবেল ও হুমায়ূন কবীর, সিনিয়র এক্সিকিউটিভ ডিরেক্টর এস এম জাহিদ হাসান, ফিরোজ আলম ও আমিন খান, এক্সিকিউটিভ ডিরেক্টর আজিজুল হাকিম, ডেপুটি এক্সিকিউটিভ ডিরেক্টর ও ওয়ালটন সেন্ট্রাল জোনের ম্যানেজার মিলটন আহমেদ প্রমুখ।
দলটির কো অর্ডিনেটর ও ওয়ালটনের সিনিয়র এক্সিকিউটিভ ডিরেক্টর ফিরোজ আলমের সঞ্চালনায় পুরো অনুষ্ঠান হয়ে উঠে প্রাণবন্ত। পবিত্র কোরআন থেকে তেলাওয়াত ও জাতীয় সংগীত দিয়ে শুরু হয় অনুষ্ঠান। পরবর্তীতে ওয়ালটন সেন্ট্রাল জোন পরিবারের সদস্য প্রয়াত ক্রিকেটার মোশাররাফ হোসেন রুবেলকে স্মরণ করে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। ক্যান্সারের সঙ্গে যুদ্ধ করে হার মানা এই ক্রিকেটার ওয়ালটনের হয়ে প্রথম দুটি শিরোপা জিতেছিলেন।
অনুষ্ঠানের শুরুতে দলটির ম্যানেজার মিলটন আহমেদ স্বাগত বক্তব্যে বলেন, ‘ওয়ালটন সেন্ট্রাল জোন একটি পরিবার। একটি পরিবার যখন এক হয়ে কোনো যুদ্ধে মাঠে নামে, তখন তাদের কেউ হারাতে পারে না। তাদের জৌলুস, তাদের নিবেদন, তাদের শ্রম বৃথা যেতে পারে না। আমাদের ক্রিকেটাররা ওয়ালটনকে শুধুমাত্র দল হিসেবেই দেখে না। এটা তাদের পরিবারের অবিচ্ছেদ্য অংশ। তাই তো শিরোপা জয়ের শেষ হাসিটা আমরাই হেসেছি।’
প্রধান অতিথি গোলাম মুর্শেদ বলেন, ‘ওয়ালটন আপনাদের ঘর। আপনাদেরই ব্র্যান্ড। আজকের সন্ধ্যা আপনাদেরই জন্য। আমরা শুধুমাত্র আয়োজক। ওয়ালটন ব্র্যান্ডকে বুকে ধারণ করে আপনারা যে অসাধ্য সাধন করেছেন এজন্য আমরা কৃতজ্ঞ। আপনাদের জন্য ওয়ালটনের দরজা সব সময় খোলা। আমরা ওয়ালটন সেন্ট্রাল জোনকে নিয়ে থাকতে চাই এবং লড়াই করে চ্যাম্পিয়ন হতে চাই।’
তিনি আরও বলেন, ‘ক্রিকেট আমাদের আবেগ, জাতীয় স্বত্ত্বার বড় জায়গা জুড়ে রয়েছে। আমি গত মাসে সাউথ কোরিয়া গিয়েছিলাম। সেখানে একটি কোম্পানির ভাইস প্রেসিডেন্ট জানতে চেয়েছিল, ‘তোমাদের দেশ কী নিয়ে বিখ্যাত।’ পাশ থেকে তারই একজন কলিগ বলে ওঠেন, ‘তারা ক্রিকেট প্রচণ্ড ভালো খেলে।’ আমার আর কিছু বলা লাগেনি। ক্রিকেট দিয়ে একটি দেশ আরেকটি দেশকে চিনতে পারছে। এটা গর্বের ব্যাপার। আর এটা সম্ভব হয়েছে আপনাদেরই জন্য।’
‘আমি ক্রিকেট, ক্রিকেটারদের বিরাট ভক্ত। ক্রিকেট খেলা সহজ না। বাইরে থেকে অনেকেই অনেক কিছু মনে করেন। সারাদিন খেলা, কত সহজ কাজ। কিন্তু মোটেও তা নয়। এজন্য দিন রাত এক করে অনুশীলন করতে হয়। একটা বিষয়, আপনি যখন ব্যাট ধরবেন তখন আপনাকে ব্যাট নিয়েই থাকতে হবে। অন্য কিছু নিয়ে ভাবলে হবে না।’- বলেন গোলাম মুর্শেদ।
তিনি আরও বলেন, ‘ক্রিকেট আমাদের সবার আগে, জাতির আবেগ, ক্রিকেট নিয়েই আমাদের যত গর্ব। দেশকে সম্মান দেওয়ার জন্য আপনারা যে কষ্ট করে যাচ্ছেন সেই যাত্রায় ওয়ালটন আপনাদের পাশে আছে। ক্রিকেটকে সঙ্গে নিয়ে ওয়ালটন ব্র্যান্ডের মাধ্যমে লাল-সবুজের পতাকা ধারণ করে বিশ্বজয় করতে চাই।’
মোহাম্মদ মিঠুন এবারের বিসিএলে ক্যারিয়ারের একমাত্র ডাবল সেঞ্চুরি হাঁকিয়েছেন। প্রতিযোগিতায় নিজের যাত্রা নিয়ে দারুণ খুশি এই ক্রিকেটার। নিজের বক্তব্যে তিনি বলেছেন, ‘একটা দলকে যখন ক্রিকেটাররা পরিবারের মতো দেখে তখনই সে অনেক কিছু স্যাক্রিফাইস করতে পারে। আমরা এই দলটাকে অনেক বেশি ভালোবাসি। এজন্য এই দলে অনেকেই খেলতে চায়। আমরাও চাই।’
আরেক ক্রিকেটার সৌম্য সরকার বলেন, ‘এরকম সন্ধ্যা উপহার দেওয়ার জন্য ওয়ালটন কর্তৃপক্ষকে ধন্যবাদ। চ্যাম্পিয়ন হতে প্রয়োজন হয় একটা টিমের একতা। আমাদের চ্যাম্পিয়ন হওয়ার মূল কারণ ছিল দলীয় একতা। প্রথম থেকেই সবার বিশ্বাস ছিল। আমরা প্রথম ম্যাচ যেভাবে জিতেছিলাম, তখন থেকেই বিশ্বাস করছিলাম এবার চ্যাম্পিয়ন হওয়ার সুযোগ থাকবে। আমরা সেই কাজটা করে দেখিয়েছি। সবার একতা ও বিশ্বাসে এই শিরোপা পেয়েছি।’
চারদিনের ক্রিকেটে ওয়ালটনকে নেতৃত্বে দিয়েছিলেন শুভাগত হোম। স্পিন অলরাউন্ডার বলেন, ‘একটা টুর্নামেন্টের দুই ফরম্যাটে চ্যাম্পিয়ন হওয়া খুব ভালো লাগার বিষয়। প্রত্যেকটি সদস্যের, ওয়ালটন কর্মকর্তাদের চাওয়া ছিল শিরোপা। কোচিং স্টাফ, সাপোর্টিং স্টাফ ও টিম বয় থেকে শুরু করে যারা সম্পৃক্ত ছিলেন সবার অবদান ছিল বলেই আমরা এখানে পৌঁছাতে পেরেছি। ওয়ালটন গ্রুপকে ধন্যবাদ জানাই, আমাদের পাশে থাকার জন্য, ক্রিকেটের পাশে থাকার জন্য।’
ক্রিকেটারদের উৎসাহিত করতে টিমের সদস্যদের একটি করে ৪০ ইঞ্চি ওয়ালটন অ্যান্ড্রয়েড স্মার্ট টিভি উপহার দেওয়া হয়।
বিজনেস আওয়ার/ ২৭ জুন, ২০২২/ এস এইচ