ঢাকা , শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

নেতাকর্মীদের দুর্নীতি, অপকর্ম আর বেপরোয়া কর্মকাণ্ডে বিচলিত আ. লীগ

  • পোস্ট হয়েছে : ১১:৪৯ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৩০ জুলাই ২০২০
  • 0

বিজনেস আওয়ার প্রতিবেদক : দলের এক শ্রেণীর নেতাকর্মীদের দুর্নীতি, অপকর্ম আর বেপরোয়া কর্মকাণ্ডে কারণে বারবার সমালোচনার মুখে পড়তে হচ্ছে আওয়ামী লীগকে। যেটা সরকার ও দলের ভাবমূর্তি নষ্ট হচ্ছে বলে মনে করছেন আওয়ামী লীগ নেতারা।

তারা বলছেন, গত বছর থেকে শুরু হওয়া দুর্নীতি ও অপকর্মের বিরুদ্ধে সরকারের শুদ্ধি অভিযান অব্যাহত রয়েছে। এই শুদ্ধি অভিযানের মধ্যেও দলের এক শ্রেণীর নেতাকর্মীর বেপরোয়া আচরণ আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতাদের ভাবিয়ে তুলেছে।

সম্প্রতি করোনার সনদ জালিয়াতিসহ বিভিন্ন অপকর্মের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে গ্রেফতার হওয়া শাহেদ করিম দীর্ঘ দিন ধরে আওয়ামী লীগের আন্তর্জাতিক উপকমিটির সদস্য হিসেবে পরিচয় দিয়ে এসেছেন। ঘটনার পর আওয়ামী লীগ থেকে বলা হয়েছে, তিনি দলের উপকমিটিতে নেই।

শাহেদের পর নকল মাস্ক সরবরাহ করে ধরা পড়েছেন আওয়ামী লীগের আরেক উপকমিটির সদস্য শারমিন জাহান। তিনি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ) নকল এন ৯৫ মাস্ক সরবরাহ করেন। নকল মাস্ক সরবরাহের দায়ে বিএসএমএমইউয়ের মামলায় গত ২৪ জুলাই তিনি গ্রেফতার হন।

শারমিন ছাত্র লীগের সাবেক নেত্রী ও আওয়ামী লীগের বিগত কমিটির মহিলা ও শিশুবিষয়ক কেন্দ্রীয় উপকমিটির সদস্য। শুধু তাই নয়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সহকারী রেজিস্ট্রার হিসেবে চাকরিরত অবস্থায় অপরাজিতা ইন্টারন্যাশনাল নামে একটি প্রতিষ্ঠান করে ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছিলেন।

দুর্নীতি অনিয়মের সঙ্গে জড়িত থাকায় কয়েকজন গুরুত্বপূর্ণ নেতাকে সাংগঠনিক দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়। তারা নিজেকে অনেকটাই আত্মগোপন করে রেখেছেন। এর পরও দল ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদের এ ধরণের আচরণে বিচলিত আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারকরা।

দলের নেতারা বলছেন, আওয়ামী লীগ পর পর তিনবার ক্ষমতায় আসায় বিএনপি-জামায়াতসহ অন্য দলের লোকেরাও আওয়ামী লীগে এসে দলের নাম ভাঙিয়ে দুর্নীতি, লুটপাট করছে আর দোষ হচ্ছে আওয়ামী লীগের। তারা আওয়ামী লীগে আসছে আওয়ামী লীগ করতে নয়, কিছু ধান্দা করতে।

ওই নেতারা আরও বলেন, আওয়ামী লীগ যখন ক্ষমতায় থাকবে না তখন এই লোকগুলোও সরে যাবে। তারা আবার নিজেদের দলে ফিরে যাবে। সেখানে গিয়ে নেতা হয়ে যাবে। কারণ তখন তাদের অনেক টাকা হাতে থাকবে। সাহেদরা এই উদ্দেশ্যেই আওয়ামী লীগে আসে।

অপরাধীদের যথাযথ শাস্তি না হওয়ায় দলের মধ্যেও কোনো কোনো নেতাকর্মীর ভয় কমে গেছে। তারা ভাবছে ধরা পড়লে কী হবে, বিভিন্ন মন্ত্রী, এমপি, উচ্চ পর্যায়ের নেতাদের ধরাধরি করে ও বিভিন্নভাবে পার পেয়ে যাওয়া যাবে, এটা হাচ্ছেও। এ কারণে লুটপাটকারী, দুর্নীতিবাজ, অপকর্মকারীদের সাহস বেড়ে যাচ্ছে।

এ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কাজী জাফরুল্লাহ বলেন, আওয়ামী লীগ টানা তিনবার ক্ষমতায় থাকার কারণে বিভিন্ন দল থেকে কৌশলে লোকজন আওয়ামী লীগে ঢুকে পড়ছে। একটা উদ্দেশ্যে নিয়ে দলে ঢুকে দুর্নীতি, অপকর্ম করছে, নিজের স্বার্থ উদ্ধার করছে। ভাবমূর্তি নষ্ট হচ্ছে আওয়ামী লীগের।

ক্ষমতায় না থাকলে এরা ফিরে যাবে। শাহেদরা এভাবেই এসেছে। সরকার এদের ধরছে, ব্যবস্থা নিচ্ছে। তারপরও এ ধরণের ঘটনা ঘটছে। আর দলের এক শ্রেণীর নেতাকর্মীর মধ্যে কেউ কেউ বেপরোয়া হয়ে উঠছে। তারা যেনো ভয়ও পেতে চাচ্ছে না।

বিজনেস আওয়ার/৩০ জুলাই, ২০২০/এ

ফেসবুকের মাধ্যমে আপনার মতামত জানান:
ট্যাগ :

আপনার মতামত লিখুন

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার মেইলে তথ্য জমা করুন

নেতাকর্মীদের দুর্নীতি, অপকর্ম আর বেপরোয়া কর্মকাণ্ডে বিচলিত আ. লীগ

পোস্ট হয়েছে : ১১:৪৯ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৩০ জুলাই ২০২০

বিজনেস আওয়ার প্রতিবেদক : দলের এক শ্রেণীর নেতাকর্মীদের দুর্নীতি, অপকর্ম আর বেপরোয়া কর্মকাণ্ডে কারণে বারবার সমালোচনার মুখে পড়তে হচ্ছে আওয়ামী লীগকে। যেটা সরকার ও দলের ভাবমূর্তি নষ্ট হচ্ছে বলে মনে করছেন আওয়ামী লীগ নেতারা।

তারা বলছেন, গত বছর থেকে শুরু হওয়া দুর্নীতি ও অপকর্মের বিরুদ্ধে সরকারের শুদ্ধি অভিযান অব্যাহত রয়েছে। এই শুদ্ধি অভিযানের মধ্যেও দলের এক শ্রেণীর নেতাকর্মীর বেপরোয়া আচরণ আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতাদের ভাবিয়ে তুলেছে।

সম্প্রতি করোনার সনদ জালিয়াতিসহ বিভিন্ন অপকর্মের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে গ্রেফতার হওয়া শাহেদ করিম দীর্ঘ দিন ধরে আওয়ামী লীগের আন্তর্জাতিক উপকমিটির সদস্য হিসেবে পরিচয় দিয়ে এসেছেন। ঘটনার পর আওয়ামী লীগ থেকে বলা হয়েছে, তিনি দলের উপকমিটিতে নেই।

শাহেদের পর নকল মাস্ক সরবরাহ করে ধরা পড়েছেন আওয়ামী লীগের আরেক উপকমিটির সদস্য শারমিন জাহান। তিনি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ) নকল এন ৯৫ মাস্ক সরবরাহ করেন। নকল মাস্ক সরবরাহের দায়ে বিএসএমএমইউয়ের মামলায় গত ২৪ জুলাই তিনি গ্রেফতার হন।

শারমিন ছাত্র লীগের সাবেক নেত্রী ও আওয়ামী লীগের বিগত কমিটির মহিলা ও শিশুবিষয়ক কেন্দ্রীয় উপকমিটির সদস্য। শুধু তাই নয়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সহকারী রেজিস্ট্রার হিসেবে চাকরিরত অবস্থায় অপরাজিতা ইন্টারন্যাশনাল নামে একটি প্রতিষ্ঠান করে ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছিলেন।

দুর্নীতি অনিয়মের সঙ্গে জড়িত থাকায় কয়েকজন গুরুত্বপূর্ণ নেতাকে সাংগঠনিক দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়। তারা নিজেকে অনেকটাই আত্মগোপন করে রেখেছেন। এর পরও দল ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদের এ ধরণের আচরণে বিচলিত আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারকরা।

দলের নেতারা বলছেন, আওয়ামী লীগ পর পর তিনবার ক্ষমতায় আসায় বিএনপি-জামায়াতসহ অন্য দলের লোকেরাও আওয়ামী লীগে এসে দলের নাম ভাঙিয়ে দুর্নীতি, লুটপাট করছে আর দোষ হচ্ছে আওয়ামী লীগের। তারা আওয়ামী লীগে আসছে আওয়ামী লীগ করতে নয়, কিছু ধান্দা করতে।

ওই নেতারা আরও বলেন, আওয়ামী লীগ যখন ক্ষমতায় থাকবে না তখন এই লোকগুলোও সরে যাবে। তারা আবার নিজেদের দলে ফিরে যাবে। সেখানে গিয়ে নেতা হয়ে যাবে। কারণ তখন তাদের অনেক টাকা হাতে থাকবে। সাহেদরা এই উদ্দেশ্যেই আওয়ামী লীগে আসে।

অপরাধীদের যথাযথ শাস্তি না হওয়ায় দলের মধ্যেও কোনো কোনো নেতাকর্মীর ভয় কমে গেছে। তারা ভাবছে ধরা পড়লে কী হবে, বিভিন্ন মন্ত্রী, এমপি, উচ্চ পর্যায়ের নেতাদের ধরাধরি করে ও বিভিন্নভাবে পার পেয়ে যাওয়া যাবে, এটা হাচ্ছেও। এ কারণে লুটপাটকারী, দুর্নীতিবাজ, অপকর্মকারীদের সাহস বেড়ে যাচ্ছে।

এ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কাজী জাফরুল্লাহ বলেন, আওয়ামী লীগ টানা তিনবার ক্ষমতায় থাকার কারণে বিভিন্ন দল থেকে কৌশলে লোকজন আওয়ামী লীগে ঢুকে পড়ছে। একটা উদ্দেশ্যে নিয়ে দলে ঢুকে দুর্নীতি, অপকর্ম করছে, নিজের স্বার্থ উদ্ধার করছে। ভাবমূর্তি নষ্ট হচ্ছে আওয়ামী লীগের।

ক্ষমতায় না থাকলে এরা ফিরে যাবে। শাহেদরা এভাবেই এসেছে। সরকার এদের ধরছে, ব্যবস্থা নিচ্ছে। তারপরও এ ধরণের ঘটনা ঘটছে। আর দলের এক শ্রেণীর নেতাকর্মীর মধ্যে কেউ কেউ বেপরোয়া হয়ে উঠছে। তারা যেনো ভয়ও পেতে চাচ্ছে না।

বিজনেস আওয়ার/৩০ জুলাই, ২০২০/এ

ফেসবুকের মাধ্যমে আপনার মতামত জানান: