বিজনেস আওয়ার প্রতিবেদক : শেয়ারবাজারে কারসাজিকর হিসেবে বর্তমানে সবচেয়ে বেশি আলোচনায় আবুল খায়ের হিরু। যার সহযোগি হিসেবে তার পরিবারের সদস্যসহ অনেকে রয়েছেন। যারা করোনাকালীন কঠিন সময়ে শেয়ারবাজারের উন্নতি করতে ও লেনদেন বাড়াতে সিরিজ ট্রেডিং করেছেন বলে শুনানিতে দাবি করেছেন বলে দাবি। যার পেছনে অন্যকোন উদ্দেশ্য ছিল না। তবে তাদের এই দাবি কমিশনের কাছে বিবেচনাযোগ্য হয়নি। যে কারনে এনআরবিসি ব্যাংকের শেয়ার কারসাজির দায়ে আবুল খায়ের হিরু সংঘবদ্ধ চক্রকে ৩ কোটি ৭৫ লাখ টাকা জরিমানা করেছে কমিশন।
বিভিন্ন কোম্পানির ন্যায় আবুল খায়ের চক্রটি এনআরবিসি ব্যাংকের শেয়ার নিয়ে কারসাজি করে। এই কারসাজিতে তারা ২০ দিনের ব্যবধানে (৫ মে-২৪ মে ২০২১) ব্যাংকটির ১২.৪০ টাকার শেয়ার ৩৩.৮০ টাকায় উঠায়। এক্ষেত্রে দর বাড়ানো হয় ১৭২.৫৮%। এই দর বৃদ্ধিতে ক্রিকেটার সাকিব আল হাসান, মোহাম্মদ ইউনুসসহ আবুল খায়ের হিরুর সংঘবদ্ধ চক্র জড়িত বলে ডিএসইর তদন্তে বেরিয়ে এসেছে। এই চক্রের মধ্যে ডিআইটি কো-অপারেটিভ লিমিটেডের ইউসিবি স্টক ব্রোকারেজের ক্লায়েন্ট কোড ৭০২২ থেকে সবচেয়ে বেশি কেনা-বেচা হয়েছে। ওই ডিআইটি কো-অপারেটিভ এনআরবিসি ব্যাংকের শীর্ষ ২০ ক্রেতা-বিক্রেতার সঙ্গে যোগসাজশে জড়িত। যে বিও হিসাব পরিচালনার অথোরাইজড ব্যক্তি আবুল খায়ের।
এনআরবিসি ব্যাংকের শেয়ার কারসাজিতে আবুল খায়ের হিরু ১১টি বিও হিসাব থেকে ২০২১ সালের ৫ থেকে ২৪ মে পর্যন্ত সময়ে অনেক শেয়ার লেনদেন করে। এই লেনদেনে অংশ নেয় ইউসিবি ব্রোকারেজের ৫ গ্রাহক ডিআইটি কো-অপারেটিভ (বিও ১২০৫৫৯০০৬৫৭৫৭৮১১), কাজী সাদিয়া হাসান (বিও ১২০৫৫৯০০৬৮২৮৪৯৭৩), আবুল কালাম মাতবর (বিও ১২০৫৫৯০০৭৩৪৪৭২২২), কনিকা আফরোজ (বিও ১২০৫৫৯০০৭২৫৫৩২৯০) ও আবুল খায়ের (বিও ১২০৫৫৯০০৭১০৯১১১৬)। এছাড়া ইবিএল সিকিউরিটিজের ২ গ্রাহক ডিআইটি কো-অপারেটিভ (বিও ১২০১৯৫০০৬৫৭৫৭৮১১) ও আবুল খায়ের (বিও ১২০১৯৫০০৬২১৬৪৫৩৫), অগ্রনি ইক্যুইটির গ্রাহক আবুল খায়ের (বিও ১৬০৫১১০০৭১০৯১১১৬), এসবিএল ক্যাপিটাল ম্যানেজমেন্টের গ্রাহক ডিআইটি কো-অপারেটিভ (বিও ১৬০৪৫৩০০৬৫৭৫৭৮১১), প্রিমিয়ার ব্যাংক সিকিউরিটিজের গ্রাহক আবুল খায়ের (বিও ১২০৪৫৯০০৬৭৭১২৭৮১) ও এসবিএল ক্যাপিটালের গ্রাহক কাজী সাদিয়া হাসান (বিও ১৬০৪৫৩০০৬৬৩৮৫৫০৪)।
কারসাজির জন্য বেছে নেওয়া এনআরবিসি ব্যাংকের শেয়ার গত বছরের ৫ মে সিরিজ ট্রেডিং করে আবুল খায়ের সংঘবদ্ধ। ব্যাংকটির ওইদিন ২৪৪০ বার লেনদেন হয়। এরমধ্যে আবুল খায়ের চক্রটি করেছে ৬৪৪ বার বা ২৬.৩৯%। এছাড়া ওইদিন ব্যাংকটির ১৫ কোটি ৯৫ লাখ টাকার লেনদেনের মধ্যে চক্রটির কেনার পরিমাণ ছিল ৫ কোটি ৬০ লাখ টাকার বা মোট লেনদেনের ৩৫.১০%।
ওইদিন ব্যাংকটির শেয়ার ১২.৬০ টাকায় লেনদেন শুরু হয়। তবে আবুল খায়ের সংঘবদ্ধ চক্রটি সিরিয়াল ট্রেডিং শুরু করে ১১:৫৩:৫২-তে। যা ১১:৫৯:২০-তে ১৩.৬০ টাকায় হল্টেড প্রাইসে উঠে যায়। এরপরে ১২:৪২:০৭টা পর্যন্ত হল্টেড প্রাইসে লেনদেন করে খায়ের চক্র। ওই ১১:৫৯:২০ থেকে ১২:৪২:০৭ পর্যন্ত সময়ে লেনদেনকালীন খায়ের গ্রুপ মোট ৫৭ লাখ ৮ হাজার লেনদেন হওয়া শেয়ারের মধ্যে তারাই করে ৪১ লাখ ৬৭ হাজার।
এই লেনদেন থেকে আবুল খায়ের চক্রটি ব্যাংকটির শেয়ার আগের দিনের থেকে দর বাড়াতে সক্রিয় ভূমিকা রাখে বলে ডিএসইর তদন্ত কমিটি মনে করে। এই প্রক্রিয়ায় খায়ের গ্রুপ ব্যাংকটির শেয়ারকে ২৪ মে ৩৩.৮০ টাকায় তুলে।
ওই ৫ মে থেকে ২৪ মে পর্যন্ত সময়ে খায়ের গ্রুপ ৪ কোটি ৭৫ লাখ শেয়ার কেনে। এর বিপরীতে বিক্রি করে ২ কোটি ৬১ লাখ। এই বিক্রি থেকে ১৫ কোটি ২৩ লাখ টাকার রিয়েলাইজড গেইন করে। এছাড়া আনরিয়েলাইজড গেইন দাড়াঁয় ২৩ কোটি ৩৪ লাখ টাকা।
এভাবে মুনাফা করতে গিয়ে সিরিজ ট্রেডিংয়ের মাধ্যমে আবুল খায়ের চক্রটি সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচঞ্জ অধ্যাদেশ ১৯৬৯ এর ধারা ১৭(ই)ভি) ভঙ্গ করেছে। এ বিষয়ে চলতি বছরের ৭ মার্চ কারন দর্শাতে কনিকা আফরোজ ও সহযোগিদেরকে শুনানিতে তলব করা হয়। যার পক্ষে শুনানিতে বক্তব্য দেন আবুল খায়ের।
শুনানিতে খায়ের বলেন, বাজারের উন্নতি করতে ও লেনদেন বাড়াতে আমরা বিপুল পরিমাণে লেনদেনের চেষ্টা করেছি। যে সময় করোনার কারনে বাজারের লেনদেনের পরিমাণ খুবই কমে গিয়ে কঠিন পরিস্থিতির তৈরী হয়েছিল। তবে দেশের অর্থনীতির ভালো অবস্থার কারনে শেয়ারবাজারের মন্দাবস্থা থাকবে না এবং ঘুরে দাঁড়াবে বলে জানতাম। এজন্য বিএসইসি চেয়ারম্যানের মতো ভালো নেতৃত্ব ও কিছু ভালো পার্টিসিপেন্ট দরকার।
তিনি দাবি করেন, ট্রেডারকে এনআরবিসি ব্যাংকের শেয়ার বিভিন্ন তারিখে কেনার জন্য আদেশ দিয়েছিলাম। যেখানে ম্যানুপুলেটিংয়ের কোন উদ্দেশ্য ছিল না। এছাড়া ব্যাংকটির শেয়ার অবমূল্যায়িত ছিল বলে আমরা বিশ্বাস করি। আমাদের অন্যকোন মোটিভ ছিল না, কিন্তু অবমূল্যায়িত শেয়ারে বিনিয়োগ করে মুনাফার সুযোগ পেয়েছি।
তিনি বলেন, সবসময় রুলস অ্যান্ড রেগুলেশনস মেনে চলার চেষ্টা করি। আমাদের লেনদেনে শেয়ারবাজারে তারল্য বৃদ্ধিতে সহায়তা করেছে, যা চূড়ান্তভাবে স্টক এক্সচেঞ্জে লেনদেন বৃদ্ধি করেছে। তারপরেও ভুলের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করেন তিনি। যা অবহেলার কারনে ও অচ্ছিাকৃতভাবে ঘটেছে। ভবিষ্যতে লেনদেনের ক্ষেত্রে সতর্ক থাকব।
তার বক্তব্যে উপস্থাপিত অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে বলে কমিশন মনে করে। যে কারনে তার ব্যাখ্যা কমিশনের কাছে বিবেচনাযোগ্য হয়নি। এই পরিস্থিতিতে শেয়ারবাজারের উন্নয়ন, বাজারে শৃঙ্খলা ও স্বচ্ছতা রক্ষার স্বার্থে কনিকা আফরোজ ও তার সহযোগিদেরকে জরিমানা করা প্রয়োজন এবং সমীচীন বলে কমিশন মনে করে। যে কারনে কমিশন কনিকা আফরোজ ও তার সহযোগিদেরকে ৩ কোটি ৭৫ লাখ টাকা জরিমানা করেছে। এই শাস্তির বিষয়ে সম্প্রতি চিঠির মাধ্যমে জানিয়ে দিয়েছে কমিশন।
ak darker gainer kory looser koray na