বিজনেস আওয়ার প্রতিবেদক : সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তালিকাভুক্ত সিকিউরিটিজের বাজার মূল্য নিয়ে ভবিষ্যত বাণী দিয়ে সাধারন বিনিয়োগকারীদের সঙ্গে প্রতারণার দায়ে অভিযুক্ত হল্টেড মিজানুর রহমানকে শনাক্ত করেছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। এরইমধ্যে তার মোবাইল নাম্বার ও মেইল আইডি দিয়ে সব বিও হিসাব বের করার কাজ শুরু হয়ে গেছে। এরপরে তার বিও হিসাব জব্দসহ শাস্তি প্রদানে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এছাড়া আশরাফুল, শরীফুল, কল্লোলদের মতো অন্যান্যদেরকেও এই শাস্তির আনতে ২ সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়েছে।
বিএসইসির অতিরিক্ত পরিচালক মোহাম্মদ দেলোয়ার হোসাইন সাক্ষরিত এক আদেশে ২ সদস্যর ইনভেস্টিগেশন টিম গঠন করা হয়েছে। এই টিমে রয়েছেন- সহকারী পরিচালক মো. কামাল হোসাইন ও এইচ.এম সালে সাদমান।
এই কমিটিকে আগামি ১০ দিনের মধ্যে হল্টেড মিজানুর রহমানসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে গুজব ছড়ানোদের নিয়ে রিপোর্ট জমা দিতে বলা হয়েছে। যে তালিকায় আশরাফুল ইসলাম, আয়মান নাহিয়ান কল্লোল, শরীফুল ইসলামরা রয়েছেন।
এরইমধ্যে হল্টেড মিজানুর রহমানের দুটি ফোন নাম্বার ও মেইল আইডি সনাক্ত করা হয়েছে। যা দিয়ে তার বিও হিসাব খুজে বের করবে তদন্ত কমিটি। যে কমিটি গুজব ছড়িয়ে বিনিয়োগকারীদের আকৃষ্টের মাধ্যমে মিজানুর রহমান কি পরিমাণ লাভবান হয়েছেন, তা বের করবে। এরপরে তার বিও হিসাব জব্দসহ জেলে পাঠাতে আইনগত ব্যবস্থা নেবে কমিশন।

হল্টেড মিজানের ফোন নাম্বার দুটি হচ্ছে- ০১৯০৭৩২০০১১ ও ০১৯০৭৩২০০২২। তার ইমেইল আইডি- [email protected] ও ফেসবুক আইডি লিংক-https://www.facebook.com/mizang632

মিজানের মতো সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একইভাবে বিভিন্ন কোম্পানির শেয়ার দর ভবিষ্যতে বাড়বে বলে বিনিয়োগকারীদের আকৃষ্ট করে যাচ্ছে আশরাফুল ইসলাম, আয়মান নাহিয়ান কল্লোল, শরীফুল ইসলামসহ অন্যান্যরা।

এ বিষয়ে বিএসইসির নির্বাহি পরিচালক ও মূখপাত্র মোহাম্মদ রেজাউল করিম বিজনেস আওয়ারকে বলেন, সাধারন বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ রক্ষায় কমিশন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে গুজব রটনাকারীদের শাস্তির আওতায় আনতে কাজ করছে। এরইমধ্যে মিজানুর রহমানের ফোন নাম্বার ও মেইল সনাক্ত করা হয়েছে। যাকে দ্রুত শাস্তির আওতায় আনতে ২ সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়েছে। যারা আগামি ১০ দিনের মধ্যে মিজানুর রহমানের সব বিও হিসাব এবং গুজব ছড়িয়ে কি পরিমাণ মুনাফা করেছেসহ অন্যান্য তথ্য খুজে বের করবে। এরপরে তাকে কমিশন দ্রুত শাস্তির আওতায় আনবে। একইসঙ্গে ওই কমিটিকে অন্য গুজবকারীদের বিষয়েও তথ্য বের করে আনতে বলা হয়েছে।
এর আগে গত ১৭ মে ফেসবুক পেজ-এর মাধ্যমে বিভিন্ন সময় শেয়ারবাজার নিয়ে গুজব সৃষ্টিকারী মোঃ মাহবুবুর রহমান-কে ব্রাক্ষ্মণবাড়ীযা থেকে গ্রেফতার করে ডিবি পুলিশের একটি দল। বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইস) সাধারণ ডায়েরীর ভিত্তিতে তাকে গ্রেফতার করা হয়।
উল্লেখ্য, ফেসবুক, হোয়াটস অ্যাপসহ বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শেয়ারবাজার নিয়ে গুজব রটনাকারীদের চিহ্নিত করতে ‘সোস্যাল মিডিয়া মনিটরিং সেল’ গঠন করে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। বিএসইসি’র মার্কেট সার্ভিল্যান্স অ্যান্ড ইন্টেলিজেন্স ডিপার্টমেন্টের (এমএসআইডি) কমিশনার অধ্যাপক ড. শেখ শামসুদ্দিন আহমেদের তত্ত্বাবধানে এ ‘সোস্যাল মিডিয়া মনিটরিং সেল’ এর কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে।
শেয়ারবাজারে গুজব নিযন্ত্রণে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিযন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি) ও বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিলের ডিজিটাল সিকিউরিটি এজেন্সির সঙ্গে সমন্বিতভাবে কাজ করে আসছে বিএসইসি। ইতোমধ্যে বিএসইসির অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে ৩১টি গুজব সৃষ্টিকারী ফেসবুক আইডি নিষ্ক্রিয় করা হয়েছে। পর্যায়ক্রমে গুজব সৃষ্টিকারী সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের সব আইডির বিরুদ্ধে প্রযোজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণে কাজ করছে কমিশন।
শেয়ারবাজার ও বিনিয়োগকারীদের স্বার্থে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন ২০ সালের ০২ সেপ্টেম্বর কমিশনের চেয়্যারম্যান প্রফেসর শিবলী রুবাইয়াত-উল ইসলাম স্বাক্ষরিত জারিকৃত আদেশ নং বিএসইসি/এমএসআই/২০২০-৯৮১/১১৪ এ শেয়ারবাজারের সাথে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে সংশ্লিষ্ট অথবা শেয়ারবাজার বা সিকিউরিটিজ লেনদেনের সাথে যে কোন উপায়ে সম্পর্কিত সকল ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানসমূহকে সিকিউরিটিজ মার্কেট ও বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ রক্ষায় সোশ্যাল মিডিয়া বা অন্য কোন মাধ্যমে বিএসইসি, ডিএসই এবং সিএসই এর নাম বা লোগো ব্যবহার করে কোন তথ্য বা প্রতিবেদন প্রকাশ করা থেকে বিরত থাকার বিষয়ে আদেশ প্রদান করা হয়েছে। সেই সাথে সোশ্যাল মিডিয়াতে যে কোন লিস্টেড সিকিউরিটিজের বাজার মূল্য বা অন্য কোন বিষয়ে পূর্বানুমান কিংবা বিনিয়োগকারীর স্বার্থ ক্ষুন্ন করে এমন কোন মন্তব্য করা থেকে বিরত থাকতেও আদেশ প্রদান করা হয়।
উল্লেখ্য যে, কমিশন, সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ অর্ডিন্যান্স ১৯৬৯ (১৮ নং আইন, ১৯৬৯) এর সেকশন ২০ এ প্রদত্ত ক্ষমতাবলে পুঁজিবাজার ও বিনিয়োগকারীদের স্বার্থে উল্লেখিত আদেশটি জারি করা হয়। উল্লিখিত আদেশটি অমান্য করলে অমান্যকারীদের বিরুদ্ধে সিকিউরিটিজ আইন এবং ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন, ২০১৮ অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে বলে উল্লেখ করা হয়।
বিজনেস আওয়ার/৩১ আগস্ট, ২০২২/আরএ