ঢাকা , রবিবার, ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ৩০ ভাদ্র ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

ফেসবুকে শরিফুলের বিভিন্ন আইটেম

  • পোস্ট হয়েছে : ১১:৪৪ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২২
  • 102

বিজনেস আওয়ার প্রতিবেদক : সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার করে বিনিয়োগকারীদের ঠকিয়ে নিজের আঙ্গুল ফুলে কলাগাছে পরিণত হয়েছে শরিফুল ইসলাম নামের এক বিনিয়োগকারী। ইএমইস নামের ব্রোকারেজ হাউসে নিম্নপদে চাকরি করা শরিফুল ইসলাম এখন অনেক টাকার মালিক। রাজধানীর যাত্রাবাড়ী এলাকায় রয়েছে তার ফ্লাট। তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর শেয়ারগুলো নির্ধারিত দর বেঁধে দিয়ে আগামীতে আরও বাড়বে এমন গুজব ছড়িয়ে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের কাছে তা বিক্রি করে কমিশন এবং মুনাফা তুলে নেওয়াই শরিফুলের কাজ।

চার বছর আগে ফরচুন সুজ যখন ৬৫ টাকা ছিল, ঠিক তখন শেয়ারটি ১৫০ টাকা যাবেই এমন গুজব ছড়ায় শরিফুল। তার কথায় বিনিয়োগকারীরা বিভ্রান্ত হয়ে যারা শেয়ার কিনতে থাকে, তারা পরবর্তীতে নি:স্ব হয়ে যায়। পরে সেই শেয়ার কমতে কমতে ১৩-১৪ টাকায় নেমে আসে। বিনিয়োগকারীদের কাছে ফরচুন সুজের শেয়ার ধরিয়ে কেটে পড়ে শরিফুল ইসলাম। ফরচুন সুজ মার্কেটে ফিডিংয়ের পর তার নাম জুতাবাবা নামে পরিচিত হয়। তখন থেকেই শরিফুল জুতাবাবা নামে পরিচিত। এখনও শরিফুলকে জুতাবাবা নামেই চিনে, যারা এখন মতিঝিল এলাকায় যাতায়াত করে।

জুতাবাবা বলে ডাকার কারন জানতে চাইলে শরিফুল ইসলাম বিজনেস আওয়ারকে বলেন, ওইসময় ফরচুন সুজের ইপিএস দেখে শেয়ারটি ভালো হবে বলেছিলাম। কিন্তু দাম কমে যাওয়ার পরে অনেকে আমার পেছনে লাগে। ফেসবুক থেকে ছবি নিয়ে এডিট করে বিভিন্নভাবে ছড়ায়। আমাকে গ্রেফতার করেছে, এ জাতীয় ছবি পর্যন্ত বানিয়ে ভোগান্তি দেয়। এ কাজটি করে মূলত কল্লোল, রাজিবদের মতো পেইড এডমিনরা। যারা টাকার বিনিময়ে বিভিন্ন আইটেম দেয়। তাদের বিরুদ্ধে আমি লেখালেখির কারনে, তারা এমন করে। যাতে পরবর্তীতে বাধ্য হয়ে থানায় সাধারন ডায়েরি (জিডি) করি।

(ফেসবুকে শেয়ারবাজার নিয়ে বিভিন্ন পোস্ট)

শুরুতে ইএমইএস ব্রোকারেজ হাউসে ছোট পদে চাকরি শুরু করে শরিফুল। মূলত এই ব্রোকারেজ হাউসে জেড ক্যাটাগরির শেয়ার বেশি কেনা-বেচা হয়ে থাকে। হাউসটির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা রফিকুল ইসলাম জেড রফিক নামে পরিচিত। তাদের সঙ্গে মিলিয়ে শরিফ কে অ্যান্ড কিউ, দুলামিয়া কটনের মতো নিম্নমানের শেয়ারের দর বাড়ায়। সেক্ষেত্রে শরিফ নিজের ফেসবুক আইডি ব্যবহার করে শেয়ারগুলোর মার্কেটিং করতে থাকে। যখন শেয়ারবাজারে বিমা কোম্পানিগুলোর শেয়ার দর আকাশ ছোঁয়া ঠিক তখনই শরিফুল ইসলাম বিমার কোম্পানিগুলো নিয়ে নানা ইতিবাচক পোস্ট দিতে থাকে। সাধারণ বিনিয়োগকারীদের উচ্চ দরে শেয়ার ধরিয়ে শরিফরা কেটে পড়ে। যারা তখন বিমার শেয়ার কিনেছিল, তারা এখন নি:স্ব, সর্বশান্ত।

(ফেসবুকে শেয়ারবাজার নিয়ে বিভিন্ন পোস্ট)

সমতা লেদার ছাড়াও শরিফুল বর্তমানে বিলুপ্ত ওটিসির কাগুজে শেয়ার নিয়ে কারসাজি করছেন। তার ব্রোকারেজ হাউসের কর্তাব্যক্তিরা ওয়ান্ডারল্যান্ড টয়েসসহ বেশ কয়েকটি জেড ক্যাটাগরির শেয়ার নিয়ে কাজ করছে। এছাড়া বর্তমানে জেড ক্যাটাগরির জুটস স্পিনার্স নামের কোম্পানিটির উৎপাদন চালু হচ্ছে এমন গুজব ছড়িয়ে দর বাড়াচ্ছে শরিফরা। শরিফ গ্রুপই ফেসবুকে নানা তথ্য ছড়িয়ে বিনিয়োগকারীদের বিভ্রান্ত করছে।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিভিন্ন কোম্পানির শেয়ার দরের ভবিষ্যতবাণী নিয়ে লেখালেখির বিষয়ে শরিফুল বলেন, আমি সবসময় শেয়ারবাজার নিয়ে ইতিবাচক। তাই বিনিয়োগকারীরা যখন গুজবে আতঙ্কিত হয়ে পড়ে, তখন সঠিক খবর দেওয়ার চেষ্টা করি। তবে কিছু কোম্পানির শেয়ার দর নিয়ে ভবিষ্যতবাণী করে ভুল করেছি। সেটা চেয়ারম্যান স্যারকে (বিএসইসি চেয়ারম্যান) জানিয়ে দু:খ প্রকাশ করেছি এবং ভবিষ্যতে না করার প্রতিজ্ঞা করেছি।

বিজনেস আওয়ার/১৪ সেপ্টেম্বর, ২০২২/আরএ

ফেসবুকের মাধ্যমে আপনার মতামত জানান:
ট্যাগ :

আপনার মতামত লিখুন

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার মেইলে তথ্য জমা করুন

সর্বাধিক পঠিত

ফেসবুকে শরিফুলের বিভিন্ন আইটেম

পোস্ট হয়েছে : ১১:৪৪ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২২

বিজনেস আওয়ার প্রতিবেদক : সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার করে বিনিয়োগকারীদের ঠকিয়ে নিজের আঙ্গুল ফুলে কলাগাছে পরিণত হয়েছে শরিফুল ইসলাম নামের এক বিনিয়োগকারী। ইএমইস নামের ব্রোকারেজ হাউসে নিম্নপদে চাকরি করা শরিফুল ইসলাম এখন অনেক টাকার মালিক। রাজধানীর যাত্রাবাড়ী এলাকায় রয়েছে তার ফ্লাট। তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর শেয়ারগুলো নির্ধারিত দর বেঁধে দিয়ে আগামীতে আরও বাড়বে এমন গুজব ছড়িয়ে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের কাছে তা বিক্রি করে কমিশন এবং মুনাফা তুলে নেওয়াই শরিফুলের কাজ।

চার বছর আগে ফরচুন সুজ যখন ৬৫ টাকা ছিল, ঠিক তখন শেয়ারটি ১৫০ টাকা যাবেই এমন গুজব ছড়ায় শরিফুল। তার কথায় বিনিয়োগকারীরা বিভ্রান্ত হয়ে যারা শেয়ার কিনতে থাকে, তারা পরবর্তীতে নি:স্ব হয়ে যায়। পরে সেই শেয়ার কমতে কমতে ১৩-১৪ টাকায় নেমে আসে। বিনিয়োগকারীদের কাছে ফরচুন সুজের শেয়ার ধরিয়ে কেটে পড়ে শরিফুল ইসলাম। ফরচুন সুজ মার্কেটে ফিডিংয়ের পর তার নাম জুতাবাবা নামে পরিচিত হয়। তখন থেকেই শরিফুল জুতাবাবা নামে পরিচিত। এখনও শরিফুলকে জুতাবাবা নামেই চিনে, যারা এখন মতিঝিল এলাকায় যাতায়াত করে।

জুতাবাবা বলে ডাকার কারন জানতে চাইলে শরিফুল ইসলাম বিজনেস আওয়ারকে বলেন, ওইসময় ফরচুন সুজের ইপিএস দেখে শেয়ারটি ভালো হবে বলেছিলাম। কিন্তু দাম কমে যাওয়ার পরে অনেকে আমার পেছনে লাগে। ফেসবুক থেকে ছবি নিয়ে এডিট করে বিভিন্নভাবে ছড়ায়। আমাকে গ্রেফতার করেছে, এ জাতীয় ছবি পর্যন্ত বানিয়ে ভোগান্তি দেয়। এ কাজটি করে মূলত কল্লোল, রাজিবদের মতো পেইড এডমিনরা। যারা টাকার বিনিময়ে বিভিন্ন আইটেম দেয়। তাদের বিরুদ্ধে আমি লেখালেখির কারনে, তারা এমন করে। যাতে পরবর্তীতে বাধ্য হয়ে থানায় সাধারন ডায়েরি (জিডি) করি।

(ফেসবুকে শেয়ারবাজার নিয়ে বিভিন্ন পোস্ট)

শুরুতে ইএমইএস ব্রোকারেজ হাউসে ছোট পদে চাকরি শুরু করে শরিফুল। মূলত এই ব্রোকারেজ হাউসে জেড ক্যাটাগরির শেয়ার বেশি কেনা-বেচা হয়ে থাকে। হাউসটির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা রফিকুল ইসলাম জেড রফিক নামে পরিচিত। তাদের সঙ্গে মিলিয়ে শরিফ কে অ্যান্ড কিউ, দুলামিয়া কটনের মতো নিম্নমানের শেয়ারের দর বাড়ায়। সেক্ষেত্রে শরিফ নিজের ফেসবুক আইডি ব্যবহার করে শেয়ারগুলোর মার্কেটিং করতে থাকে। যখন শেয়ারবাজারে বিমা কোম্পানিগুলোর শেয়ার দর আকাশ ছোঁয়া ঠিক তখনই শরিফুল ইসলাম বিমার কোম্পানিগুলো নিয়ে নানা ইতিবাচক পোস্ট দিতে থাকে। সাধারণ বিনিয়োগকারীদের উচ্চ দরে শেয়ার ধরিয়ে শরিফরা কেটে পড়ে। যারা তখন বিমার শেয়ার কিনেছিল, তারা এখন নি:স্ব, সর্বশান্ত।

(ফেসবুকে শেয়ারবাজার নিয়ে বিভিন্ন পোস্ট)

সমতা লেদার ছাড়াও শরিফুল বর্তমানে বিলুপ্ত ওটিসির কাগুজে শেয়ার নিয়ে কারসাজি করছেন। তার ব্রোকারেজ হাউসের কর্তাব্যক্তিরা ওয়ান্ডারল্যান্ড টয়েসসহ বেশ কয়েকটি জেড ক্যাটাগরির শেয়ার নিয়ে কাজ করছে। এছাড়া বর্তমানে জেড ক্যাটাগরির জুটস স্পিনার্স নামের কোম্পানিটির উৎপাদন চালু হচ্ছে এমন গুজব ছড়িয়ে দর বাড়াচ্ছে শরিফরা। শরিফ গ্রুপই ফেসবুকে নানা তথ্য ছড়িয়ে বিনিয়োগকারীদের বিভ্রান্ত করছে।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিভিন্ন কোম্পানির শেয়ার দরের ভবিষ্যতবাণী নিয়ে লেখালেখির বিষয়ে শরিফুল বলেন, আমি সবসময় শেয়ারবাজার নিয়ে ইতিবাচক। তাই বিনিয়োগকারীরা যখন গুজবে আতঙ্কিত হয়ে পড়ে, তখন সঠিক খবর দেওয়ার চেষ্টা করি। তবে কিছু কোম্পানির শেয়ার দর নিয়ে ভবিষ্যতবাণী করে ভুল করেছি। সেটা চেয়ারম্যান স্যারকে (বিএসইসি চেয়ারম্যান) জানিয়ে দু:খ প্রকাশ করেছি এবং ভবিষ্যতে না করার প্রতিজ্ঞা করেছি।

বিজনেস আওয়ার/১৪ সেপ্টেম্বর, ২০২২/আরএ

ফেসবুকের মাধ্যমে আপনার মতামত জানান: