বিজনেস আওয়ার ডেস্ক: জীবনে চলার পথে আমরা নানা গুণাহে-জর্জরিত হয়ে নিরাশ হয়ে পড়ি। হতাশা আমাদের গ্রাস করে নেয়। তখন নিজেকে ব্যর্থ মনে হয়। এমন মুহূর্তগুলোতে আমরা আশ্রয় খুঁজি, যেখানে পেতে পারি সামনে এগিয়ে চলার প্রেরণা।
মহান আল্লাহ আমাদের জন্য তেমনই আশ্রয়। তার চেয়ে আর কোনো উত্তম আশ্রয়দাতা নেই। একমাত্র তিনিই যাবতীয় সমস্যা সমাধান করে আমাদের হৃদয়ে আশার সঞ্চার করেন।
এখানে পবিত্র কুরআন থেকে অনুপ্রেরণামূলক ১০টি আয়াত উল্লেখ করা হলো, যা আপনার হতাশা দূর করে আপনাকে সামনে এগিয়ে চলার আশার সঞ্চার করবে।
১. বান্দা যতক্ষণ ক্ষমা প্রার্থনা করতে থাকবে, আল্লাহ কখনও তাদের উপর আযাব দেবেন না। (সূরা আল-আনফাল, আয়াত: ৩৩)
এ আয়াত দ্বারা বুঝতে পারি, বান্দা যতক্ষণ পর্যন্ত আল্লাহর দয়া ও ক্ষমা প্রার্থনা করতে থাকবে, ততক্ষণ পর্যন্ত সে কোনো গুরুতর বিপদে পড়তে পারে না। সকল মুহূর্তের জন্য আল্লাহ তার সহায় হয়ে থাকবেন।
২. তিনি নভোমন্ডল ও ভূমন্ডলকে যথাযথভাবে সৃষ্টি করেছেন এবং তোমাদেরকে আকৃতি দান করেছেন, অতঃপর সুন্দর করেছেন তোমাদের আকৃতি। তারই কাছে সকলকে ফিরতে হবে। (সূরা তাগাবুন, আয়াত: ৩)
এখানে আল্লাহ মানুষকে সুন্দরতম আকৃতিতে তৈরি ও তার কাছেই নিশ্চিত ফিরে যাওয়ার কথা ঘোষণা করেছেন।
আল্লাহ তার যে সৃষ্টিকে সুন্দরতম আকৃতিতে সৃষ্টি করেছেন, তাকে সৃষ্টি করেই তিনি ছেড়ে দেননি। পাশাপাশি তার উপর সর্বদা খেয়াল রাখছেন। সকল মানুষকেই তার কাছে ফিরে যেতে হবে। সুতরাং, আল্লাহ সবসময় তার বান্দাদের সাথে আছেন।
৩. আর যে আল্লাহকে ভয় করে, আল্লাহ তার জন্যে নিস্কৃতির পথ করে দেবেন। এবং তাকে তার ধারণাতীত জায়গা থেকে রিযিক দেবেন। যে ব্যক্তি আল্লাহর উপর ভরসা করে, তার জন্যে তিনিই যথেষ্ট। (সূরা তালাক, আয়াত: ২-৩)
আল্লাহ তার উপর নির্ভরকারী ব্যক্তিতে এ আয়াতে সুসংবাদ দিচ্ছেন যে, তার জন্য তিনিই যথেষ্ট। বান্দা যখন এক আল্লাহর উপর নির্ভর করতে পারে, তখন দুনিয়ার সকল আপদ-বিপদ, দুশ্চিন্তা থেকে সে নিশ্চিন্ত হয়ে যায়।
৪. আমার রহমত সব বস্তুকে আবৃত করে আছে। (সূরা আরাফ, আয়াত: ১৫৬)
আল্লাহ তার সকল সৃষ্টির প্রতি যেমন প্রতিমুহূর্তে খেয়াল রাখছেন, তেমনি প্রতিটি মানুষের প্রতিটি মুহূর্তে খেয়াল রাখছেন। সুতরাং, মানুষের হতাশার কোনো কারণই থাকতে পারে না।
৫. যা তোমার পালনকর্তা বলেন, তাই হচ্ছে যথার্থ সত্য। কাজেই তোমরা সংশয়বাদী হইও না। (সূরা আলে ইমরান, আয়াত: ৬০)
আল্লাহর চেয়ে অধিক জ্ঞানী আর কেউ হতে পারে না। সুতরাং যে ব্যক্তি তার উপর নির্ভর করতে পারে, তার জীবনে সাফল্যের অনিশ্চয়তার কোনো শঙ্কা থাকতে পারে না।
৬. আল্লাহ কাউকে তার সাধ্যাতীত কোনো কাজের ভার দেন না। (সূরা বাকারা, আয়াত: ২৮৬)
মানুষকে আল্লাহপাক যে পরিস্থিতিতেই রাখুন না কেন, মানুষ যদি সহনশীলতার সাথে সামনে অগ্রসর হয়, তবে কোনো কিছুই তার সামনে বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে না।
৭. নিশ্চয় কষ্টের সাথে স্বস্তি রয়েছে। (সূরা আলাম নাশরাহ, আয়াত: ৬)
মানুষের জীবন একাধারে দুঃখের আধার নয়, সার্বক্ষণিক সুখেরও নয়। জীবনে যেমন দুঃখ আছে, তেমনি সুখও আছে। কষ্টের পাশাপাশি স্বস্তিরও অনেক মুহূর্ত আসে জীবনে। জীবনে চূড়ান্ত হতাশার কিছুই নেই।
৮. উত্তম কাজ করো। আল্লাহ উত্তম কাজ করা ব্যক্তিদের ভালোবাসেন। (সূরা বাকারা, আয়াত: ১৯৫)
আল্লাহ এখানে মানুষকে সর্বদা উত্তম কাজে নিজেদের ব্যস্ত রাখার জন্য আহ্বান জানাচ্ছেন। যে ব্যক্তি উত্তম কাজের সাথে থাকবে, আল্লাহও তাকে ভালোবাসবেন।
৯. অতপর কেউ অণু পরিমাণ সৎকর্ম করলে তা দেখতে পাবে। এবং কেউ অণু পরিমাণ অসৎকর্ম করলে তাও দেখতে পাবে। (সূরা যিলযাল, আয়াত: ৬-৭)
মানুষ যে কাজই করুক না কেন, তা কখনোই ব্যর্থ হতে পারে না। যত ছোট কাজই হোক, তার প্রতিদান সে পাবে। সুতরাং, তার হতাশার কোনো কারণ নেই।
১০. বলুন, হে আমার বান্দাগণ, যারা নিজেদের উপর যুলুম করেছো, তোমরা আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হইও না। নিশ্চয় আল্লাহ সমস্ত গোনাহ মাফ করেন। তিনি ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু। (সূরা যুমার, আয়াত: ৫৩)
আল্লাহর ক্ষমাশীলতার মহাসমুদ্রের প্রমাণ এ আয়াত। আল্লাহ এখানে বান্দাকে তার রহমত থেকে নিরাশ হতে নিষেধ করেছেন। আল্লাহর কাছে যদি সঠিকভাবে কেউ ক্ষমা চাইতে পারে, আল্লাহ তাকে ক্ষমা করে তার রহমতের চাদরের নিচে আশ্রয় দেন
বিজনেস আওয়ার/১৫ সেপ্টেম্বর,২০২২/এএইচএ