ঢাকা , বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

হিজাব না পরায় পুলিশের নির্যাতন, ইরানি তরুণীর মৃত্যু

  • পোস্ট হয়েছে : ১০:০৮ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১৬ সেপ্টেম্বর ২০২২
  • 0

আন্তর্জাতিক ডেস্ক: মাথায় হিজাব না পরার দায়ে প্রেফতার হওয়া ২২ বছর বয়সী ইরানি তরুণী মাহসা আমিনি পুলিশের হাতে (মর‌্যালিটি পুলিশ) নির্যাতনের শিকার হয়ে গুরুতর আহতবস্থায় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান।

বৃহস্পতিবার তাকে হাসপাতালে হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে ভর্তি করা হয়, তার ২৪ ঘণ্টারও কম সময়ের মধ্যে মারা যান তিনি।

ইরানের স্থানীয় একাধিক সংবাদমাধ্যমের বরাত দিয়ে এএফপির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পড়াশোনা সূত্রে ইরানের কুর্দিস্তান প্রদেশে থাকতেন তিনি, গত সপ্তাহে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে দেখা করতে রাজধানী তেহরান এসেছিলেন।

হিজাব ও বোরকা না পড়ে বাড়ির বাইরে বের হওয়ায় বৃহস্পতিবার মাশা আমিনিকে গ্রেফতার করে থানা হেফাজতে নিয়ে যায় ইরানের মর‌্যালিটি পুলিশ। হেফাজতে নিয়ে যাওয়ার দু’ঘণ্টা পরই গুরুতর আহত অবস্থায় অ্যাম্বুলেন্সে করে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয় তাকে।

হাসপাতালের একটি সূত্র জানিয়েছে, গুরুতর শারীরিক নির্যাতনের জেরেই মৃত্যু হয়েছে মাশার।

বৃহস্পতিবার মাশাকে গ্রেফতারের খবর শুনেই থানায় ছুটে গিয়েছিলেন তার ভাই কিয়ারেশ। গোটা ঘটনার চাক্ষুষ সাক্ষী কিয়ারেশ ইরানের অনলাইন সংবাদমাধ্যম ইরান ওয়্যারকে বলেন, ‘আমি থানায় গিয়ে পুলিশ কর্মকর্তাদের আমার বোনকে ছেড়ে দেওয়ার জন্য মিনতি জানাচ্ছিলাম। তারা আমাকে জানান, মাশাকে গাশত-ই এরশাদের (হিজাব না পরা) আওতায় গ্রেফতার করা হয়েছে এবং সাধারণ কিছু জিজ্ঞাসাবাদের পর তাকে ছেড়ে দেওয়া হবে। তারা আমাকে থানার বাইরে অপেক্ষাও করতে বলেছিলেন।’

‘সেইমতো আমি থানার বাইরে অপেক্ষা করছিলাম, কিছুক্ষণ পরই একটি অ্যাম্বুলেন্সকে থানার সামনে এসে থামতে দেখলাম। তারপর দেখলাম থানার ভেতর থেকে কয়েকজন পুলিশ সদস্য কাউকে পাঁজাকোলা করে অ্যাম্বুলেন্সে তুলছে।’

‘সঙ্গে সঙ্গে থানায় খোঁজ নিয়ে জানতে পারি, যাকে এইমাত্র অ্যাম্বুলেন্সে তোলা হলো, সে আমার বোন মাশা। থানার কমর্ককর্তারা বললেন, হেফাজতে থাকার সময় তার হৃদযন্ত্রে সমস্যা (হার্ট অ্যাটাক) হয়েছে। আমি সময় হিসেব করে দেখলাম, থানায় নিয়ে আসার মাত্র দু’ঘণ্টার মধ্যে মাশাকে অ্যাম্বুলেন্সে তোলা হয়েছে।’

ইরানের মর‌্যালিটি পুলিশের বিরুদ্ধে মামলা করবেন উল্লেখ করে ইরান ওয়্যারকে কিয়ারেশ বলেন, ‘আমার আর এখন হারানোর কিছু নেই। তাদের (মর‌্যালিটি পুলিশ) কাউকে ছাড়ব না আমি।’

অন্যদিকে আমিনির পরিবারের দাবি, তিনি একজন সুস্থ তরুণী ছিলেন। এবং তার হৃদরোগের কোনো লক্ষণ ছিল না কিংবা তিনি চিকিৎসাধীনও ছিলেন না।

শুক্রবার মাশা আমিনির মৃত্যুর পর একটি বিবৃতিতে তেহরান পুলিশ জানিয়েছে, ইরানে নারীদের পোষাকবিধি সম্পর্কে ‘ব্যাখ্যা ও নির্দেশনা’ দিতে মাশাকে হেফাজতে নেওয়া হয়েছিল। কিন্তু থানা হেফাজতে আসার পর আকস্মিকভাবে তার হৃদযন্ত্রে সমস্যা শুরু হয়, সঙ্গে সঙ্গেই পুলিশের উদ্যোগে তাকে জরুরিভিত্তিতে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল।

এ বিষয়ে বিস্তারিত জানতে তেহরান পুালিশের সঙ্গে যোগাযোগ করেছে দেশি-বিদেশি বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম; কিন্তু কোনো কর্মকর্তা মন্তব্য করতে রাজি হননি।

এদিকে মাশা আমিনি মৃত্যুতে বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তীব্র প্রতিবাদ ও ক্ষোভ শুরু হওয়ার পর ইরানের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসি এই ঘটনাটি যথাযথভাবে তদন্ত করতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে নির্দেশ দিয়েছেন বলে জানা গেছে।

বিজনেস আওয়ার/১৬ সেপ্টেম্বর,২০২২/এএইচএ

ফেসবুকের মাধ্যমে আপনার মতামত জানান:
ট্যাগ :

আপনার মতামত লিখুন

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার মেইলে তথ্য জমা করুন

হিজাব না পরায় পুলিশের নির্যাতন, ইরানি তরুণীর মৃত্যু

পোস্ট হয়েছে : ১০:০৮ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১৬ সেপ্টেম্বর ২০২২

আন্তর্জাতিক ডেস্ক: মাথায় হিজাব না পরার দায়ে প্রেফতার হওয়া ২২ বছর বয়সী ইরানি তরুণী মাহসা আমিনি পুলিশের হাতে (মর‌্যালিটি পুলিশ) নির্যাতনের শিকার হয়ে গুরুতর আহতবস্থায় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান।

বৃহস্পতিবার তাকে হাসপাতালে হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে ভর্তি করা হয়, তার ২৪ ঘণ্টারও কম সময়ের মধ্যে মারা যান তিনি।

ইরানের স্থানীয় একাধিক সংবাদমাধ্যমের বরাত দিয়ে এএফপির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পড়াশোনা সূত্রে ইরানের কুর্দিস্তান প্রদেশে থাকতেন তিনি, গত সপ্তাহে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে দেখা করতে রাজধানী তেহরান এসেছিলেন।

হিজাব ও বোরকা না পড়ে বাড়ির বাইরে বের হওয়ায় বৃহস্পতিবার মাশা আমিনিকে গ্রেফতার করে থানা হেফাজতে নিয়ে যায় ইরানের মর‌্যালিটি পুলিশ। হেফাজতে নিয়ে যাওয়ার দু’ঘণ্টা পরই গুরুতর আহত অবস্থায় অ্যাম্বুলেন্সে করে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয় তাকে।

হাসপাতালের একটি সূত্র জানিয়েছে, গুরুতর শারীরিক নির্যাতনের জেরেই মৃত্যু হয়েছে মাশার।

বৃহস্পতিবার মাশাকে গ্রেফতারের খবর শুনেই থানায় ছুটে গিয়েছিলেন তার ভাই কিয়ারেশ। গোটা ঘটনার চাক্ষুষ সাক্ষী কিয়ারেশ ইরানের অনলাইন সংবাদমাধ্যম ইরান ওয়্যারকে বলেন, ‘আমি থানায় গিয়ে পুলিশ কর্মকর্তাদের আমার বোনকে ছেড়ে দেওয়ার জন্য মিনতি জানাচ্ছিলাম। তারা আমাকে জানান, মাশাকে গাশত-ই এরশাদের (হিজাব না পরা) আওতায় গ্রেফতার করা হয়েছে এবং সাধারণ কিছু জিজ্ঞাসাবাদের পর তাকে ছেড়ে দেওয়া হবে। তারা আমাকে থানার বাইরে অপেক্ষাও করতে বলেছিলেন।’

‘সেইমতো আমি থানার বাইরে অপেক্ষা করছিলাম, কিছুক্ষণ পরই একটি অ্যাম্বুলেন্সকে থানার সামনে এসে থামতে দেখলাম। তারপর দেখলাম থানার ভেতর থেকে কয়েকজন পুলিশ সদস্য কাউকে পাঁজাকোলা করে অ্যাম্বুলেন্সে তুলছে।’

‘সঙ্গে সঙ্গে থানায় খোঁজ নিয়ে জানতে পারি, যাকে এইমাত্র অ্যাম্বুলেন্সে তোলা হলো, সে আমার বোন মাশা। থানার কমর্ককর্তারা বললেন, হেফাজতে থাকার সময় তার হৃদযন্ত্রে সমস্যা (হার্ট অ্যাটাক) হয়েছে। আমি সময় হিসেব করে দেখলাম, থানায় নিয়ে আসার মাত্র দু’ঘণ্টার মধ্যে মাশাকে অ্যাম্বুলেন্সে তোলা হয়েছে।’

ইরানের মর‌্যালিটি পুলিশের বিরুদ্ধে মামলা করবেন উল্লেখ করে ইরান ওয়্যারকে কিয়ারেশ বলেন, ‘আমার আর এখন হারানোর কিছু নেই। তাদের (মর‌্যালিটি পুলিশ) কাউকে ছাড়ব না আমি।’

অন্যদিকে আমিনির পরিবারের দাবি, তিনি একজন সুস্থ তরুণী ছিলেন। এবং তার হৃদরোগের কোনো লক্ষণ ছিল না কিংবা তিনি চিকিৎসাধীনও ছিলেন না।

শুক্রবার মাশা আমিনির মৃত্যুর পর একটি বিবৃতিতে তেহরান পুলিশ জানিয়েছে, ইরানে নারীদের পোষাকবিধি সম্পর্কে ‘ব্যাখ্যা ও নির্দেশনা’ দিতে মাশাকে হেফাজতে নেওয়া হয়েছিল। কিন্তু থানা হেফাজতে আসার পর আকস্মিকভাবে তার হৃদযন্ত্রে সমস্যা শুরু হয়, সঙ্গে সঙ্গেই পুলিশের উদ্যোগে তাকে জরুরিভিত্তিতে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল।

এ বিষয়ে বিস্তারিত জানতে তেহরান পুালিশের সঙ্গে যোগাযোগ করেছে দেশি-বিদেশি বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম; কিন্তু কোনো কর্মকর্তা মন্তব্য করতে রাজি হননি।

এদিকে মাশা আমিনি মৃত্যুতে বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তীব্র প্রতিবাদ ও ক্ষোভ শুরু হওয়ার পর ইরানের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসি এই ঘটনাটি যথাযথভাবে তদন্ত করতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে নির্দেশ দিয়েছেন বলে জানা গেছে।

বিজনেস আওয়ার/১৬ সেপ্টেম্বর,২০২২/এএইচএ

ফেসবুকের মাধ্যমে আপনার মতামত জানান: