ঢাকা , সোমবার, ১৪ জুলাই ২০২৫, ২৯ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

হিজাব বিরোধী বিক্ষোভে উত্তাল ইরানের ৮০ শহর

  • পোস্ট হয়েছে : ০৫:২৭ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২২
  • 99

ISTANBUL, TURKEY - SEPTEMBER 21: People hold signs and chant slogans during a protest over the death of Iranian Mahsa Amini outside the Iranian Consulate on September 21, 2022 in Istanbul,Turkey. Mahsa Amini fell into a coma and died after being arrested in Tehran by the morality police, for allegedly violating the countries hijab rules. Amini's death has sparked days of violent protests across Iran, which has so far seen more the five people killed. (Photo by Chris McGrath/Getty Images)

আন্তর্জাতিক ডেস্ক: ইরানে হিজাব না পরার অভিযোগে পুলিশের হেফাজতে ২২ বছর বয়সী মাশা আমিনি নামে এক তরুণীর মৃত্যু ঘিরে হিজাব এবং নৈতিকতা পুলিশের বিরুদ্ধে বিক্ষোভে উত্তাল দেশটির ৮০ শহর। এ বিক্ষোভে এখন পর্যন্ত কমপক্ষে ৩১জন নিহত হয়েছে।

শুরুর দিকে এই বিক্ষোভ ইরানের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় প্রদেশ কুর্দিস্তানে সীমাবদ্ধ থাকলেও বর্তমানে তা দেশের সর্বত্র ছড়িয়ে পড়েছে এই বিক্ষোভ। শুক্রবার এই বিক্ষোভ ৭ম দিনে গড়িয়েছে। সেই সঙ্গে বিক্ষোভ দমনে সক্রিয় হয়ে উঠেছে দেশটির নিরাপত্তা বাহিনীও।

বৃহস্পতিবার ইরানের মানবাধিকার সংস্থা ইরান হিউম্যান রাইটসের (আইএইচআর) পরিচালক মাহমুদ আমিরি মোঘাদ্দাম এক লিখিত বিবৃতিতে জানিয়েছেন, দেশজুড়ে নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যদের সঙ্গে বিক্ষোভকারীদের সংঘর্ষ হচ্ছে এবং চলমান বিক্ষোভে গত ছয়দিনে ইরানের বিভিন্ন অঞ্চলে নিহত হয়েছেন অন্তত ৩১ জন। বিক্ষোভ নিয়ন্ত্রণে নিরাপত্তা বাহিনী রাজধানী তেহরানসহ বিভিন্ন শহরে গণগ্রেফতার অভিযান চালাচ্ছে বলেও অভিযোগ করেছে আইএইচআর।

বিবৃতিতে মাহমুদ আমিরি মোঘাদ্দাম বলেন, ‘নিজের মৌলিক অধিকার ও সম্মান ফিরে পাওয়ার দাবিতে রাস্তায় নেমেছে ইরানের সাধারণ জনগণ; কিন্তু জনগণের এই শান্তিপূর্ণ আন্দোলনকে দমন করতে বুলেট ব্যবহার করছে সরকার’।

কুর্দি নারী মাহসা আমিনিকে গত ১৩ সেপ্টেম্বর তেহরানের ‘নৈতিকতা পুলিশ’ গ্রেফতার করে। ইরানের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় শহর সাকেজ থেকে ভাইয়ের সঙ্গে তেহরানে ঘুরতে আসা মাহসাকে একটি মেট্রো স্টেশন থেকে গ্রেফতার করা হয়। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল, তিনি সঠিকভাবে হিজাব করেননি।

পুলিশ হেফাজতে থাকার সময়েই মাহসার হার্ট অ্যাটাক হয়, এরপর তিনি কোমায় চলে যান। ২২-বছর বয়সী কুর্দি নারী মাহসা আমিনি কোমায় তিন দিন কাটানোর পর শুক্রবার হাসপাতালে মারা যান।

পুলিশ মাহসাকে হেফাজতে নির্যাতনের অভিযোগ অস্বীকার করলেও পরিবারের অভিযোগ গ্রেফতারের পর তাকে পেটানো হয়। পুলিশ আমিনির বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছিল যে তিনি নারীদের হিজাব বা চাদর দিয়ে চুল ঢেকে রাখা এবং ঢিলেঢালা পোশাক পরার আইন ভঙ্গ করেছেন। পুলিশের একটি ডিটেনশন সেন্টারে অজ্ঞান হয়ে যাওয়ার পরপরই তিনি কোমায় চলে যান।

জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক ভারপ্রাপ্ত হাইকমিশনার নাদা আল-নাশিফ বলেছেন, পুলিশ মিজ আমিনির মাথায় লাঠি দিয়ে বাড়ি মারে এবং তাদের একটি গাড়ির সাথে আঘাত করার পর তার মাথা ফেটে যায়।

মাহসার মৃত্যুর পর থেকেই উত্তাল ইরান। ফেসবুক ও টুইটারে #mahsaamini এবং #Mahsa_Amini হ্যাশট্যাগ ব্যবহার করে চলছে প্রতিবাদ। দেশটির বিভিন্ন জায়গায় নারীর পোশাকের স্বাধীনতার পক্ষে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে সংঘর্ষ চলছে নিরাপত্তা বাহিনীর।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে দেখা যায়, বিক্ষোভকারীরা ‘স্বৈরশাসকের মৃত্যু’ ‘খামিনির মৃত্যু’, ‘নারী, জীবন, স্বাধীনতা’ বলে স্লোগান দিচ্ছেন। কিছু নারী বিক্ষোভকারীকে হিজাব খুলে আগুনে পুড়িয়ে ফেলতেও দেখা গেছে। প্রতীকীভাবে নারীদের চুল কেটে ফেলার ভিডিও ভাইরাল হয়েছে ফেসবুক-টুইটারে।

বিজনেস আওয়ার/ ২৩ সেপ্টেম্বর, ২০২২/ এএইচএ

ফেসবুকের মাধ্যমে আপনার মতামত জানান:
ট্যাগ :

আপনার মতামত লিখুন

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার মেইলে তথ্য জমা করুন

হিজাব বিরোধী বিক্ষোভে উত্তাল ইরানের ৮০ শহর

পোস্ট হয়েছে : ০৫:২৭ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২২

আন্তর্জাতিক ডেস্ক: ইরানে হিজাব না পরার অভিযোগে পুলিশের হেফাজতে ২২ বছর বয়সী মাশা আমিনি নামে এক তরুণীর মৃত্যু ঘিরে হিজাব এবং নৈতিকতা পুলিশের বিরুদ্ধে বিক্ষোভে উত্তাল দেশটির ৮০ শহর। এ বিক্ষোভে এখন পর্যন্ত কমপক্ষে ৩১জন নিহত হয়েছে।

শুরুর দিকে এই বিক্ষোভ ইরানের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় প্রদেশ কুর্দিস্তানে সীমাবদ্ধ থাকলেও বর্তমানে তা দেশের সর্বত্র ছড়িয়ে পড়েছে এই বিক্ষোভ। শুক্রবার এই বিক্ষোভ ৭ম দিনে গড়িয়েছে। সেই সঙ্গে বিক্ষোভ দমনে সক্রিয় হয়ে উঠেছে দেশটির নিরাপত্তা বাহিনীও।

বৃহস্পতিবার ইরানের মানবাধিকার সংস্থা ইরান হিউম্যান রাইটসের (আইএইচআর) পরিচালক মাহমুদ আমিরি মোঘাদ্দাম এক লিখিত বিবৃতিতে জানিয়েছেন, দেশজুড়ে নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যদের সঙ্গে বিক্ষোভকারীদের সংঘর্ষ হচ্ছে এবং চলমান বিক্ষোভে গত ছয়দিনে ইরানের বিভিন্ন অঞ্চলে নিহত হয়েছেন অন্তত ৩১ জন। বিক্ষোভ নিয়ন্ত্রণে নিরাপত্তা বাহিনী রাজধানী তেহরানসহ বিভিন্ন শহরে গণগ্রেফতার অভিযান চালাচ্ছে বলেও অভিযোগ করেছে আইএইচআর।

বিবৃতিতে মাহমুদ আমিরি মোঘাদ্দাম বলেন, ‘নিজের মৌলিক অধিকার ও সম্মান ফিরে পাওয়ার দাবিতে রাস্তায় নেমেছে ইরানের সাধারণ জনগণ; কিন্তু জনগণের এই শান্তিপূর্ণ আন্দোলনকে দমন করতে বুলেট ব্যবহার করছে সরকার’।

কুর্দি নারী মাহসা আমিনিকে গত ১৩ সেপ্টেম্বর তেহরানের ‘নৈতিকতা পুলিশ’ গ্রেফতার করে। ইরানের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় শহর সাকেজ থেকে ভাইয়ের সঙ্গে তেহরানে ঘুরতে আসা মাহসাকে একটি মেট্রো স্টেশন থেকে গ্রেফতার করা হয়। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল, তিনি সঠিকভাবে হিজাব করেননি।

পুলিশ হেফাজতে থাকার সময়েই মাহসার হার্ট অ্যাটাক হয়, এরপর তিনি কোমায় চলে যান। ২২-বছর বয়সী কুর্দি নারী মাহসা আমিনি কোমায় তিন দিন কাটানোর পর শুক্রবার হাসপাতালে মারা যান।

পুলিশ মাহসাকে হেফাজতে নির্যাতনের অভিযোগ অস্বীকার করলেও পরিবারের অভিযোগ গ্রেফতারের পর তাকে পেটানো হয়। পুলিশ আমিনির বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছিল যে তিনি নারীদের হিজাব বা চাদর দিয়ে চুল ঢেকে রাখা এবং ঢিলেঢালা পোশাক পরার আইন ভঙ্গ করেছেন। পুলিশের একটি ডিটেনশন সেন্টারে অজ্ঞান হয়ে যাওয়ার পরপরই তিনি কোমায় চলে যান।

জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক ভারপ্রাপ্ত হাইকমিশনার নাদা আল-নাশিফ বলেছেন, পুলিশ মিজ আমিনির মাথায় লাঠি দিয়ে বাড়ি মারে এবং তাদের একটি গাড়ির সাথে আঘাত করার পর তার মাথা ফেটে যায়।

মাহসার মৃত্যুর পর থেকেই উত্তাল ইরান। ফেসবুক ও টুইটারে #mahsaamini এবং #Mahsa_Amini হ্যাশট্যাগ ব্যবহার করে চলছে প্রতিবাদ। দেশটির বিভিন্ন জায়গায় নারীর পোশাকের স্বাধীনতার পক্ষে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে সংঘর্ষ চলছে নিরাপত্তা বাহিনীর।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে দেখা যায়, বিক্ষোভকারীরা ‘স্বৈরশাসকের মৃত্যু’ ‘খামিনির মৃত্যু’, ‘নারী, জীবন, স্বাধীনতা’ বলে স্লোগান দিচ্ছেন। কিছু নারী বিক্ষোভকারীকে হিজাব খুলে আগুনে পুড়িয়ে ফেলতেও দেখা গেছে। প্রতীকীভাবে নারীদের চুল কেটে ফেলার ভিডিও ভাইরাল হয়েছে ফেসবুক-টুইটারে।

বিজনেস আওয়ার/ ২৩ সেপ্টেম্বর, ২০২২/ এএইচএ

ফেসবুকের মাধ্যমে আপনার মতামত জানান: