বিজনেস আওয়ার ডেস্ক: কোন ব্যক্তি নিজেই নিজেকে ঝাড়ফুঁক করতে কোন বাধা নেই। এটা বরং উত্তম সুন্নত। অন্য কাউকে ঝাড়ফুঁক করে দেওয়াও জায়েয। কেননা নবীজি (সা.) নিজে নিজেকে ঝাড়ফুঁক করেছেন এবং তিনি তার কোন কোন সাহাবীকেও ঝাড়ফুঁক করেছেন।
আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত আছে, রাসূলুল্লাহ (সা.) যখন কোনো অসুস্থতা অনুভব করতেন তখন তিনি নিজের উপর মুআওয়িযাত (সূরা ইখলাস, সূরা ফালাক্ব, সূরা নাস) পড়ে ফুঁ দিতেন। যখন তাঁর ব্যথা তীব্র হলো তখন আমি পড়ে তাকে ফু দিতাম এবং তাঁর হাত দিয়ে মাসেহ করতাম; তাঁর হাতের বরকতের আশায়। [সহীহ বুখারী, হাদীস নং:৪৭২৮; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং:২১৯২]
ঝাড়ফুঁক এমন মহৌষধ, যা একজন মুমিনের নিয়মিত গ্রহণ করা বাঞ্ছনীয়। একজন মুসলিম নিজেকে ও অন্যকে ঝাড়ফুঁক করার সময় শরিয়ত অনুমোদিত যে দুআগুলো পড়তে পারেন সেগুলো অনেক। সে দুআগুলোর মধ্যে সর্বোত্তম দুআ ও আশ্রয়ণীয় হচ্ছে—সূরা ফাতিহা।
আবু সাঈদ (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, “নবীজি (সা.) এর একদল সাহাবী এক সফরে বের হন। এক পর্যায়ে তারা এক বেদুঈন মহল্লায় যাত্রা বিরতি করলেন এবং মহল্লার লোকদের কাছে মেহমানদারির আবদার করলেন। তারা মেহমানদারি করতে অস্বীকৃতি জানাল। ইতোমধ্যে মহল্লার সর্দারকে কোন কিছু কামড় দিল। তাকে সুস্থ করার জন্য তারা সব ধরণের চেষ্টা চালাল; কিন্তু কোন কাজ হলো না।
অবশেষে তাদের একজন বলল, এখানে যারা যাত্রা বিরতি করেছে আমরা তাদের কাছে যাই, হতে পারে তাদের কারো কাছে কোন কিছু থাকতে পারে। প্রস্তাবমত তারা এসে বলল, ওহে কাফেলা! আমাদের সর্দারকে কিছু একটা কামড় দিয়েছে। আমরা সব চেষ্টা করেছি; কাজে আসেনি। তোমাদের কারো কাছে কি কিছু আছে?
সাহাবীদের একজন বললেন: আল্লাহর শপথ! হ্যাঁ। আমি ঝাড়ফুঁক করি। তবে আমরা তোমাদের কাছে মেহমানদারির আবদার করেছি, কিন্তু তোমরা আমাদের মেহমানদারি করনি। আল্লাহর কসম! আমি ঝাড়ফুঁক করব না; যদি তোমরা আমাদের জন্য কোন সম্মানি নির্ধারণ না করো।
অবশেষে একপাল মেষ দেওয়ার ভিত্তিতে উভয় পক্ষ একমত হলো। সেই সাহাবী গিয়ে الحمد لله رب العالمين (তথা সূরা ফাতিহা) পড়ে তার গায়ে থুথুসমেত ফুঁ দিতে লাগলেন। এক পর্যায়ে সর্দার লোকটি যেন বন্ধন থেকে মুক্ত হলো, সে উঠে হাঁটা শুরু করল, যেন তার কোন রোগ নেই।
বর্ণনাকারী বলেন, মহল্লাবাসী যে সম্মানি দেওয়ার চুক্তি করেছিল সেটা তাদেরকে প্রদান করল। তখন এক সাহাবী বললেন, বণ্টন করে ফেলো। কিন্তু ঝাড়ফুঁককারী সাহাবী বললেন, নবীজি (সা.) এর কাছে গিয়ে যা ঘটেছে সেটা বর্ণনা করার আগে বণ্টন করবে না। আমরা দেখি, তিনি আমাদেরকে কী নির্দেশ দেন।
তারা রাসূলুল্লাহ (সা.) এর কাছে আসার পর তাঁকে ঘটনাটি জানালেন। তখন তিনি বললেন, কীসে তোমাকে জানাল যে, এটি (সূরা ফাতিহা) ঝাড়ফুকের উপকরণ (রুকিয়া)। এরপর বললেন, তোমরা ঠিকই করেছো, ভাগ করে ফেলো, তোমাদের সাথে আমাকেও এক ভাগ দিও। এই বলে তিনি হেসে দিলেন।” [সহীহ বুখারী, হাদীস নং:২১৫৬; সহীহ মুসলিম:২২০১]
হাদীসে বর্ণিত ঝাড়ফুঁক করার দুআগুলোর মধ্যে রয়েছে:
উসমান বিন আবিল আস (রা.) থেকে বর্ণিত আছে যে, ইসলাম গ্রহণের পর থেকে তার শরীরে একটা ব্যথা করে মর্মে তিনি রাসূলুল্লাহ (সা.) এর কাছে অভিযোগ করেন। তখন রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, আপনার শরীরের যে স্থানে ব্যথা হচ্ছে সেখানে আপনার হাত রেখে তিনবার ‘বিসমিল্লাহ’ বলুন এবং সাতবার বলুন:
أَعُوذُ بِعِزَّةِ اللَّهِ وَقُدْرَتِهِ مِنْ شَرِّ مَا أَجِدُ وَأَحَاذِرُ
উচ্চারণ: আঊজু বি-ইযযাতিল্লাহি ওয়া কুদরাতিহি মিন শাররি মা আজিদু ওয়া উহাজিরু।
অর্থ: আমি যে অনিষ্ট পাচ্ছি ও যে অনিষ্টের আশংকা করছি তা থেকে আল্লাহ্র ইজ্জত ও কুদরতের আশ্রয় প্রার্থনা করছি।
তিরমিযিতে আরেকটু বাড়তি অংশসহ এসেছে, “তিনি বলেন: আমি তা করলাম। ফলে আল্লাহ আমার সে ব্যথা দূর করে দেন। এখনও আমি আমার পরিবারকে ও অন্যদেরকে এভাবে করার আদেশ দিই।” [আলবানী ‘সহিহুত তিরমিযি’ গ্রন্থে (১৬৯৬) হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন]
ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন, নবী (সা.) হাসান ও হুসাইনকে ঝাড়ফুঁক করতেন এবং বলতেন, নিশ্চয় তোমাদের পিতা ইব্রাহীম (আ.) এই দুআ দিয়ে ইসমাঈল ও ইসহাক্বকে ঝাড়ফুঁক করতেন:
أَعُوْذُ بِكَلِمَاتِ اللَّهِ التَّامَّةِ مِنْ كُلِّ شَيْطَانٍ وَهَامَّةٍ، وَمِنْ كُلِّ عَيْنٍ لاَمَّةٍ
উচ্চারণ: আঊজু বিকালিমাতিল্লাহিত-তাম্মাতি মিন কুল্লি শাইত্বানিন ওয়া হাম্মাতিন, ওয়া মিন কুল্লি আইনিন লাম্মাতিন।
অর্থ: আমি আল্লাহর পরিপূর্ণ বাণীসমূহ দিয়ে প্রত্যেক শয়তান, বিষধর প্রাণী ও প্রত্যেক অনিষ্টকর চক্ষু (বদনযর) থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করছি। [সহীহ বুখারী, হাদীস নং: ৩১৯১]
বিজনেস আওয়ার/ ২৩ সেপ্টেম্বর, ২০২২/ এএইচএ