ঢাকা , শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

চার দিনেও খোঁজ মেলেনি হিমালয়ের, শয্যাশায়ী নববধূ

  • পোস্ট হয়েছে : ০৫:৪৫ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২২
  • 0

বিজনেস আওয়ার প্রতিবেদক: পঞ্চগড়ের করতোয়ায় নৌকাডুবিতে নিখোঁজ হিমালয় চন্দ্র রায়ের মা সারদা রানীকে সান্ত্বনা দেওয়াার ভাষা নেই স্বজনদের। চার দিনেও খোঁজ না মেলায়, শয্যাশায়ী হিমালয়ের নববধূ ‘বন্যা রানী রায়’।

মহালয়া অনুষ্ঠানে যোগ দিতে গত রোববার নববধূ বন্যা রানীকে সঙ্গে নিয়ে নদী পার হচ্ছিলেন হিমালয় চন্দ্র রায়। নৌকায় মানুষের ভিড়ে বন্যার হাত ধরেই ছিলেন হিমালয়। মাঝনদীতে নৌকাডুবিতে তলিয়ে যান তারা। এ সময় অন্য একজনের ধাক্কায় হিমালয়ের হাত থেকে ছুটে যান বন্যা। উদ্ধারকারীদের সহায়তায় বন্যা রানী পাড়ে উঠতে পারলেও হারিয়ে যান হিমালয়।

বুধবার (২৮ সেপ্টেম্বর) সকাল পর্যন্তও মেলেনি হিমালয়ের খোঁজ। স্বামীকে হারিয়ে এখন বাকরুদ্ধ হয়ে পাগলপ্রায় বন্যা রানী।

হিমালয় চন্দ্র রায়ের বাড়ি পঞ্চগড়ের বোদা উপজেলার ময়দানদীঘি ইউনিয়নের খালপাড়া এলাকায়। তিনি ওই এলাকার বীরেন্দ্র নাথ রায়ের ছেলে।

বুধবার সকালের দিকে গিয়ে দেখা যায়, বাড়িতে স্বজনদের ভিড়। নববধূ বন্যা শয্যাশায়ী। এদিকে একমাত্র ছেলেকে হারিয়ে পাগলপ্রায় হিমালয়ের মা-বাবা। ঘরের বারান্দায় বসে বিলাপ করছেন তারা। যেকোনো মূল্যে নদীতে ডুবে যাওয়া ছেলেকে ফিরে পেতে চান তারা।

দিনাজপুর সরকারি কলেজে প্রাণিবিদ্যা বিভাগের স্নাতকোত্তরের ছাত্র হিমালয়। গত ৩ আগস্ট পার্শ্ববর্তী ঝলইশালশিরি ইউনিয়নের বড়ুয়াপাড়া এলাকার রবীন চন্দ্র রায়ের মেয়ে বন্যার সঙ্গে বিয়ে হয় হিমালয়ের। বন্যা এবার এইচএসসি পাস করেছেন।

পরিবার সূত্রে জানা যায়, মহালয়া অনুষ্ঠানে যোগ দিতে যাওয়ার সময় হিমালয়সহ তাদের আট স্বজন দুর্ঘটনার শিকার হন। এই দুর্ঘটনায় মারা গেছেন হিমালয়ের মামি শিমলা রানী, মাসি সফলতা রানী ও মাসতুতো বোন আঁখি রানী। নদী থেকে তাদের লাশ উদ্ধার করা হলেও নিখোঁজ হিমালয়। নৌকাডুবির সময় কোনোমতে উদ্ধারকারী নৌকায় উঠেছিলেন হিমালয়ের স্ত্রী বন্যা রানী। পরে তাকে নেওয়া হয়েছিল হাসপাতালে।

হিমালয়ের বাবা বীরেন্দ্র নাথ রায় বলেন, ‘আমার একটাই ছেলে। কৃষিকাজ আর কবিরাজি করে অনেক কষ্টে তাকে পড়াশোনা করিয়ে বিয়ে দিয়েছি। কত স্বপ্ন ছিল তাকে নিয়ে। আমার সব স্বপ্ন, আশা-ভরসা শেষ হয়ে গেল।’

উল্লেখ্য, গত রোববার দুপুরে পঞ্চগড়ের বোদা উপজেলার মাড়েয়া বাজারের পাশে করতোয়া নদীর আউলিয়া ঘাট থেকে শতাধিক যাত্রী নিয়ে শ্যালো ইঞ্জিনচালিত একটি নৌকা বড়শশী ইউনিয়নের বদেশ্বরী মন্দিরের দিকে যাচ্ছিল। ঘাট থেকে কিছুদূর যাওয়ার পর নৌকাটি ডুবে যায়। এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত মোট ৬৮ জনের লাশ উদ্ধার হয়েছে। এখনো কয়েকজন নিখোঁজ রয়েছে।

বিজনেস আওয়ার/ ২৮ সেপ্টেম্বর,২০২২/এএইচএ

ফেসবুকের মাধ্যমে আপনার মতামত জানান:
ট্যাগ :

আপনার মতামত লিখুন

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার মেইলে তথ্য জমা করুন

চার দিনেও খোঁজ মেলেনি হিমালয়ের, শয্যাশায়ী নববধূ

পোস্ট হয়েছে : ০৫:৪৫ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২২

বিজনেস আওয়ার প্রতিবেদক: পঞ্চগড়ের করতোয়ায় নৌকাডুবিতে নিখোঁজ হিমালয় চন্দ্র রায়ের মা সারদা রানীকে সান্ত্বনা দেওয়াার ভাষা নেই স্বজনদের। চার দিনেও খোঁজ না মেলায়, শয্যাশায়ী হিমালয়ের নববধূ ‘বন্যা রানী রায়’।

মহালয়া অনুষ্ঠানে যোগ দিতে গত রোববার নববধূ বন্যা রানীকে সঙ্গে নিয়ে নদী পার হচ্ছিলেন হিমালয় চন্দ্র রায়। নৌকায় মানুষের ভিড়ে বন্যার হাত ধরেই ছিলেন হিমালয়। মাঝনদীতে নৌকাডুবিতে তলিয়ে যান তারা। এ সময় অন্য একজনের ধাক্কায় হিমালয়ের হাত থেকে ছুটে যান বন্যা। উদ্ধারকারীদের সহায়তায় বন্যা রানী পাড়ে উঠতে পারলেও হারিয়ে যান হিমালয়।

বুধবার (২৮ সেপ্টেম্বর) সকাল পর্যন্তও মেলেনি হিমালয়ের খোঁজ। স্বামীকে হারিয়ে এখন বাকরুদ্ধ হয়ে পাগলপ্রায় বন্যা রানী।

হিমালয় চন্দ্র রায়ের বাড়ি পঞ্চগড়ের বোদা উপজেলার ময়দানদীঘি ইউনিয়নের খালপাড়া এলাকায়। তিনি ওই এলাকার বীরেন্দ্র নাথ রায়ের ছেলে।

বুধবার সকালের দিকে গিয়ে দেখা যায়, বাড়িতে স্বজনদের ভিড়। নববধূ বন্যা শয্যাশায়ী। এদিকে একমাত্র ছেলেকে হারিয়ে পাগলপ্রায় হিমালয়ের মা-বাবা। ঘরের বারান্দায় বসে বিলাপ করছেন তারা। যেকোনো মূল্যে নদীতে ডুবে যাওয়া ছেলেকে ফিরে পেতে চান তারা।

দিনাজপুর সরকারি কলেজে প্রাণিবিদ্যা বিভাগের স্নাতকোত্তরের ছাত্র হিমালয়। গত ৩ আগস্ট পার্শ্ববর্তী ঝলইশালশিরি ইউনিয়নের বড়ুয়াপাড়া এলাকার রবীন চন্দ্র রায়ের মেয়ে বন্যার সঙ্গে বিয়ে হয় হিমালয়ের। বন্যা এবার এইচএসসি পাস করেছেন।

পরিবার সূত্রে জানা যায়, মহালয়া অনুষ্ঠানে যোগ দিতে যাওয়ার সময় হিমালয়সহ তাদের আট স্বজন দুর্ঘটনার শিকার হন। এই দুর্ঘটনায় মারা গেছেন হিমালয়ের মামি শিমলা রানী, মাসি সফলতা রানী ও মাসতুতো বোন আঁখি রানী। নদী থেকে তাদের লাশ উদ্ধার করা হলেও নিখোঁজ হিমালয়। নৌকাডুবির সময় কোনোমতে উদ্ধারকারী নৌকায় উঠেছিলেন হিমালয়ের স্ত্রী বন্যা রানী। পরে তাকে নেওয়া হয়েছিল হাসপাতালে।

হিমালয়ের বাবা বীরেন্দ্র নাথ রায় বলেন, ‘আমার একটাই ছেলে। কৃষিকাজ আর কবিরাজি করে অনেক কষ্টে তাকে পড়াশোনা করিয়ে বিয়ে দিয়েছি। কত স্বপ্ন ছিল তাকে নিয়ে। আমার সব স্বপ্ন, আশা-ভরসা শেষ হয়ে গেল।’

উল্লেখ্য, গত রোববার দুপুরে পঞ্চগড়ের বোদা উপজেলার মাড়েয়া বাজারের পাশে করতোয়া নদীর আউলিয়া ঘাট থেকে শতাধিক যাত্রী নিয়ে শ্যালো ইঞ্জিনচালিত একটি নৌকা বড়শশী ইউনিয়নের বদেশ্বরী মন্দিরের দিকে যাচ্ছিল। ঘাট থেকে কিছুদূর যাওয়ার পর নৌকাটি ডুবে যায়। এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত মোট ৬৮ জনের লাশ উদ্ধার হয়েছে। এখনো কয়েকজন নিখোঁজ রয়েছে।

বিজনেস আওয়ার/ ২৮ সেপ্টেম্বর,২০২২/এএইচএ

ফেসবুকের মাধ্যমে আপনার মতামত জানান: