ঢাকা , বুধবার, ০৬ অগাস্ট ২০২৫, ২২ শ্রাবণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

পটুয়াখালী মেয়রের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা, ময়নাতদন্তের জন্য বৃদ্ধের লাশ উত্তোলন

  • পোস্ট হয়েছে : ১২:৫৯ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৯ অক্টোবর ২০২২
  • 98

বিজনেস আওয়ার প্রতিবেদক: জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের চেয়ারম্যানের সামনে খাল রক্ষার দাবি করার পর পটুয়াখালীতে এক বৃদ্ধের লাশ মেলে শ্মশানে। এঘটনায় পটুয়াখালী পৌরসভার মেয়রের বিরুদ্ধে ওই বৃদ্ধের পরিবার হত্যা মামলা করে।

মামলার পেরিপেক্ষিতে দাফনের ৪১ দিন পর আদালতের নির্দেশে ময়নাতদন্তের জন্য মঙ্গলবার লাশ উত্তোলন করে পটুয়াখালী ২৫০ শয্যা হাসপাতালের মর্গে নেওয়া হয়েছে। বুধবার লাশের ময়নাতদন্তের জন্য পটুয়াখালী হাসপাতাল মর্গ থেকে বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হবে।

লাশটি দাফন করা হয়েছিল পটুয়াখালী পৌর এলাকার কবরস্থানে। নিহত মাকসুদুর রহমান পৌর শহরের কালিকাপুর এলাকার বাসিন্দা। তাকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে, এমন অভিযোগে মামলার পর আদালতের নির্দেশে ময়নাতদন্তের জন্য মঙ্গলবার মৃতদেহ কবর থেকে উত্তোলন করেছে সিআইডি পুলিশ।

লাশ উত্তোলনের কাজ তদারক করেন পটুয়াখালীর নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. কামরুল হাসান। এ সময় তার সঙ্গে ছিলেন পটুয়াখালী সিভিল সার্জনের প্রতিনিধি, পটুয়াখালী সদর থানার উপপরিদর্শক নজরুল ইসলাম, মামলার তদন্ত কর্মকর্তা সিআইডির উপপরিদর্শক মো. জাহাঙ্গীর আলম, মামলার বাদী এনাম হক ওরফে নাসির।

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা সিআইডির উপপরিদর্শক মো. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, এর আগে‌ ৩ অক্টোবর মরদেহ উত্তোলনের কথা ছিল। কিন্তু পটুয়াখালী হাসপাতালে ফরেনসিক মেডিসিন বিভাগের কোনো চিকিৎসক না থাকায় লাশ উত্তোলন করা হয়নি। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের বিষয়টি পটুয়াখালীর সিভিল সার্জন এস এম কবির হাসান ওই দিন লিখিতভাবে আদালতকে অবহিত করেন।

ওই ঘটনার পর ৬ অক্টোবর আদালত শের-ই-বাংলা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের পরিচালককে ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দেন। আদালতের এই আদেশটি ১৫ অক্টোবর শের-ই-বাংলা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের সহকারী পরিচালক এস এম মনিরুজ্জামান লিখিতভাবে হাসপাতালের অধ্যক্ষকে জানান।

কলেজের অধ্যক্ষ মনিরুজ্জামান শাহীন এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেন। সে অনুযায়ী বৃদ্ধের ময়নাতদন্ত সম্পন্ন করতে ফরেনসিক মেডিসিন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডাক্তার রেফায়েতুল হায়দারকে নির্দেশ দেন।

ডা. রেফায়েতুল হায়দার বলেন, ‘সকাল ১০টার মধ্যে ময়নাতদন্ত শুরু করতে হয়। মঙ্গলবার সকালে ওই বৃদ্ধের লাশ উত্তোলন করা হয়েছে। লাশ পটুয়াখালী হাসপাতালের মর্গে রয়েছে। আগামীকাল বুধবার লাশ বরিশালে এনে ময়নাতদন্ত করা হবে। ’

জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের চেয়ারম্যান মনজুর আহমেদ চৌধুরী গত ৬ সেপ্টেম্বর পটুয়াখালী পৌরসভার সুতাখালী খাল দেখতে যান। তখন খাল রক্ষার দাবি নিয়ে এগিয়ে আসেন বৃদ্ধ মাকসুদুর রহমান তালুকদার। এ সময় চেয়ারম্যানের সামনেই ওই বৃদ্ধকে হুমকি দেন পৌরসভার মেয়র মহিউদ্দিন আহমেদ।

মেয়রের বিপক্ষে অবস্থান নেওয়ায় ওই বৃদ্ধের ভাতিজা এনামুল হক ওরফে নাসিরকে পুলিশ গ্রেপ্তারও করে। ওই ঘটনার পরে মাকসুদুর রহমান তালুকদারের লাশ পাওয়া যায় খালের পারের শ্মশানের ভেতর।

এঘটনায় পৌর মেয়র মহিউদ্দিন আহমেদসহ ছয়জনের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা দায়ের করা হয়েছে। ১৫ সেপ্টেম্বর পটুয়াখালী সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মামলাটি দায়ের করেন নিহতের ভাতিজা এনামুল হক। বিচারক মো. আশেকুর রহমান মামলাটি আমলে নিয়ে লাশের ময়নাতদন্ত শেষে সিআইডিকে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের আদেশ দিয়েছেন।

মামলার অপর আসামিরা হলেন পৌরসভার কাউন্সিলর এস এম ফারুক, মো. এনামুল, মো. নিজাম, অপু শিকদার, আমিুল ইসলাম মামুন। এ ছাড়া আরো ১০ থেকে ১২ জনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়।

মাকসুদুর রহমান তালুকদারের মেয়ে অনামিকা আক্তার বলেন, আমার বাবাকে মেয়র এবং তার লোকজন পরিকল্পিতভাবে হত্যা করেছে। এখন আমাদেরকে মামলা তুলে নিতে মেয়র মহিউদ্দিনসহ তার লোকজন বিভিন্নভাবে হুমকি দিচ্ছেন। আমাদেরকে পটুয়াখালী ছাড়তে বলা হয়েছে। মামলার পর বিভিন্নভাবে হয়রানি করা হচ্ছে, আমরা বাসা থেকে বের হলে মারধর করা হয়। ৫ অক্টোবর রাতে পৌর শহরের ফটিকের খেয়াঘাট এলাকায় গেলে আমার ওপর হামলা চালান মেয়রের পিএস এনামুলসহ ১৫-১৬ জনের একটি দল। এ সময় আমাকে উদ্ধার করতে এগিয়ে আসেন বোন রিসতা আক্তার, মিম আক্তার ও ভাতিজা নিশাত তালুকদার। ওই দিন আমাদের মারধর করা হয়। পরে থানায় খবর দিলে পুলিশ এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। আমার বাবা হত্যার বিচার চাই।

বিজনেস আওয়ার/১৯ অক্টোবর, ২০২২/এএইচএ

ফেসবুকের মাধ্যমে আপনার মতামত জানান:
ট্যাগ :

আপনার মতামত লিখুন

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার মেইলে তথ্য জমা করুন

পটুয়াখালী মেয়রের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা, ময়নাতদন্তের জন্য বৃদ্ধের লাশ উত্তোলন

পোস্ট হয়েছে : ১২:৫৯ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৯ অক্টোবর ২০২২

বিজনেস আওয়ার প্রতিবেদক: জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের চেয়ারম্যানের সামনে খাল রক্ষার দাবি করার পর পটুয়াখালীতে এক বৃদ্ধের লাশ মেলে শ্মশানে। এঘটনায় পটুয়াখালী পৌরসভার মেয়রের বিরুদ্ধে ওই বৃদ্ধের পরিবার হত্যা মামলা করে।

মামলার পেরিপেক্ষিতে দাফনের ৪১ দিন পর আদালতের নির্দেশে ময়নাতদন্তের জন্য মঙ্গলবার লাশ উত্তোলন করে পটুয়াখালী ২৫০ শয্যা হাসপাতালের মর্গে নেওয়া হয়েছে। বুধবার লাশের ময়নাতদন্তের জন্য পটুয়াখালী হাসপাতাল মর্গ থেকে বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হবে।

লাশটি দাফন করা হয়েছিল পটুয়াখালী পৌর এলাকার কবরস্থানে। নিহত মাকসুদুর রহমান পৌর শহরের কালিকাপুর এলাকার বাসিন্দা। তাকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে, এমন অভিযোগে মামলার পর আদালতের নির্দেশে ময়নাতদন্তের জন্য মঙ্গলবার মৃতদেহ কবর থেকে উত্তোলন করেছে সিআইডি পুলিশ।

লাশ উত্তোলনের কাজ তদারক করেন পটুয়াখালীর নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. কামরুল হাসান। এ সময় তার সঙ্গে ছিলেন পটুয়াখালী সিভিল সার্জনের প্রতিনিধি, পটুয়াখালী সদর থানার উপপরিদর্শক নজরুল ইসলাম, মামলার তদন্ত কর্মকর্তা সিআইডির উপপরিদর্শক মো. জাহাঙ্গীর আলম, মামলার বাদী এনাম হক ওরফে নাসির।

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা সিআইডির উপপরিদর্শক মো. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, এর আগে‌ ৩ অক্টোবর মরদেহ উত্তোলনের কথা ছিল। কিন্তু পটুয়াখালী হাসপাতালে ফরেনসিক মেডিসিন বিভাগের কোনো চিকিৎসক না থাকায় লাশ উত্তোলন করা হয়নি। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের বিষয়টি পটুয়াখালীর সিভিল সার্জন এস এম কবির হাসান ওই দিন লিখিতভাবে আদালতকে অবহিত করেন।

ওই ঘটনার পর ৬ অক্টোবর আদালত শের-ই-বাংলা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের পরিচালককে ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দেন। আদালতের এই আদেশটি ১৫ অক্টোবর শের-ই-বাংলা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের সহকারী পরিচালক এস এম মনিরুজ্জামান লিখিতভাবে হাসপাতালের অধ্যক্ষকে জানান।

কলেজের অধ্যক্ষ মনিরুজ্জামান শাহীন এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেন। সে অনুযায়ী বৃদ্ধের ময়নাতদন্ত সম্পন্ন করতে ফরেনসিক মেডিসিন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডাক্তার রেফায়েতুল হায়দারকে নির্দেশ দেন।

ডা. রেফায়েতুল হায়দার বলেন, ‘সকাল ১০টার মধ্যে ময়নাতদন্ত শুরু করতে হয়। মঙ্গলবার সকালে ওই বৃদ্ধের লাশ উত্তোলন করা হয়েছে। লাশ পটুয়াখালী হাসপাতালের মর্গে রয়েছে। আগামীকাল বুধবার লাশ বরিশালে এনে ময়নাতদন্ত করা হবে। ’

জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের চেয়ারম্যান মনজুর আহমেদ চৌধুরী গত ৬ সেপ্টেম্বর পটুয়াখালী পৌরসভার সুতাখালী খাল দেখতে যান। তখন খাল রক্ষার দাবি নিয়ে এগিয়ে আসেন বৃদ্ধ মাকসুদুর রহমান তালুকদার। এ সময় চেয়ারম্যানের সামনেই ওই বৃদ্ধকে হুমকি দেন পৌরসভার মেয়র মহিউদ্দিন আহমেদ।

মেয়রের বিপক্ষে অবস্থান নেওয়ায় ওই বৃদ্ধের ভাতিজা এনামুল হক ওরফে নাসিরকে পুলিশ গ্রেপ্তারও করে। ওই ঘটনার পরে মাকসুদুর রহমান তালুকদারের লাশ পাওয়া যায় খালের পারের শ্মশানের ভেতর।

এঘটনায় পৌর মেয়র মহিউদ্দিন আহমেদসহ ছয়জনের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা দায়ের করা হয়েছে। ১৫ সেপ্টেম্বর পটুয়াখালী সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মামলাটি দায়ের করেন নিহতের ভাতিজা এনামুল হক। বিচারক মো. আশেকুর রহমান মামলাটি আমলে নিয়ে লাশের ময়নাতদন্ত শেষে সিআইডিকে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের আদেশ দিয়েছেন।

মামলার অপর আসামিরা হলেন পৌরসভার কাউন্সিলর এস এম ফারুক, মো. এনামুল, মো. নিজাম, অপু শিকদার, আমিুল ইসলাম মামুন। এ ছাড়া আরো ১০ থেকে ১২ জনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়।

মাকসুদুর রহমান তালুকদারের মেয়ে অনামিকা আক্তার বলেন, আমার বাবাকে মেয়র এবং তার লোকজন পরিকল্পিতভাবে হত্যা করেছে। এখন আমাদেরকে মামলা তুলে নিতে মেয়র মহিউদ্দিনসহ তার লোকজন বিভিন্নভাবে হুমকি দিচ্ছেন। আমাদেরকে পটুয়াখালী ছাড়তে বলা হয়েছে। মামলার পর বিভিন্নভাবে হয়রানি করা হচ্ছে, আমরা বাসা থেকে বের হলে মারধর করা হয়। ৫ অক্টোবর রাতে পৌর শহরের ফটিকের খেয়াঘাট এলাকায় গেলে আমার ওপর হামলা চালান মেয়রের পিএস এনামুলসহ ১৫-১৬ জনের একটি দল। এ সময় আমাকে উদ্ধার করতে এগিয়ে আসেন বোন রিসতা আক্তার, মিম আক্তার ও ভাতিজা নিশাত তালুকদার। ওই দিন আমাদের মারধর করা হয়। পরে থানায় খবর দিলে পুলিশ এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। আমার বাবা হত্যার বিচার চাই।

বিজনেস আওয়ার/১৯ অক্টোবর, ২০২২/এএইচএ

ফেসবুকের মাধ্যমে আপনার মতামত জানান: