বিজনেস আওয়ার প্রতিবেদক : শেয়ারবাজারে গেম্বলার বা কারসাজিকর হিসেবে সবার কাছে পরিচিত আবুল খায়ের হিরু। যার কারসাজিতে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে অনেক বিনিয়োগকারী। যাদেরকে ফাঁদে ফেলে গুটি কয়েকজনের হাতে তুলে নেওয়া হয়েছে কোটি কোটি টাকা। সেই কারসাজিকরকে রক্ষায় সর্বোচ্চ চেষ্টা করে যাচ্ছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। অথচ শেয়ারবাজারের উন্নয়ন ও বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ রক্ষায় সুশাসন প্রতিষ্ঠায় তাকে সর্বোচ্চ শাস্তির আওতায় আনা দরকার।
সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ অধ্যাদেশ ১৯৬৯ অনুযায়ি বিএসইসির দায়িত্ব হচ্ছে, যথার্থ ইস্যু নিশ্চিত করা, বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ রক্ষা করা এবং পুঁজি ও সিকিউরিটি বাজারের উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ করা। যা সুশাসন নিশ্চিত না করে বাস্তবায়ন করা সম্ভব না।
কিন্তু বিএসইসি শেয়ারবাজারে বর্তমানে সবচেয়ে বেশি আলোচিত গেম্বলারকে রক্ষায় সর্বোচ্চ চেষ্টা করে যাচ্ছে। যার বিরুদ্ধে কয়েকটি কোম্পানির শেয়ারে কারসাজির প্রমাণ পেলেও তাকে শাস্তি দেওয়া হয়নি। সবকয়টিতে অন্যদেরকে আর্থিক শাস্তি দিয়ে চিঠি ইস্যু করা হয়েছে। এর পেছনে অন্যতম কারন হিসেবে রয়েছে- হিরুর সরকারি চাকরি বহাল রাখা। কারন তাকে শাস্তি দেওয়া হলে সমবায় অধিদপ্তরের ডেপুটি রেজিস্ট্রার পদে তার সরকারি চাকরীতে থাকা কঠিন হয়ে পড়বে।
এই কারনে একজন অপরাধীকে রক্ষায় কৌশলের পথ অবলম্বন করেছে বিএসইসি। হিরু কারসাজির সঙ্গে জড়িত এবং নেতৃত্বে থাকলেও শাস্তি প্রদান করা সবকয়টিতে অন্যদের নামে চিঠি ইস্যু করা হয়েছে। এক্ষেত্রে প্রতিটি কোম্পানির শেয়ার কারসাজিতে একজন ব্যক্তি বা কোম্পানির সঙ্গে সহযোগিদের জরিমানার কথা বলা হয়েছে। এই সহযোগি কারা এবং কে কি পরিমাণ জরিমানা প্রদান করবেন, তা উল্লেখ করেনি বিএসইসি।
অথচ সবকয়টি কারসাজির নেতৃত্ব দিয়েছে গেম্বলার হিরু। যিনি নিজের একাধিক বিও এর পাশাপাশি শাস্তির চিঠি দেওয়া ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানেরগুলোও পরিচালনা করেন। যিনি শাস্তি প্রদান করা সবকয়টি কোম্পানির ক্ষেত্রেই বিএসইসির শুনানিতে আত্মপক্ষ সমর্থনে ব্যাখ্যা দিয়েছেন। অথচ শাস্তির চিঠি অন্যদের নামে।
কিন্তু এই বিএসইসি অন্যদের অনিয়মের ক্ষেত্রে প্রত্যেকের শাস্তির পরিমাণ পৃথক পৃথকভাবে উল্লেখ করে। এছাড়া সবার বরাবর শাস্তির বিষয়ে চিঠি ইস্যু করে।
বিএসইসি আবুল খায়ের হিরুকে এড়িয়ে বা বাদ দিলেও, তারা ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) যে তদন্ত রিপোর্টের উপর ভিত্তি করে অন্যদের নামে শাস্তির চিঠি ইস্যু করেছে, সেই তদন্ত রিপোর্টে কারসাজিতে হিরু ও সহযোগিদের কথা বলা হয়।
একইভাবে বিএসইসি প্রধান গেম্বলার হিরুর নামে শাস্তির চিঠি ইস্যু না করে তাকে রক্ষা করার সর্বোচ্চ চেষ্টা করলেও গণমাধ্যমে তেমনটি ঘটেনি। সবকয়টি কারসাজিতেই এবং প্রায় সব গণমাধ্যমে হিরুকে শাস্তির দেওয়ার খবর শিরোনাম করা হয়েছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে অধ্যাপক আবু আহমেদ আবুল খায়ের হিরুর বিষয়ে কোন মন্তব্য করতে বিরক্তি প্রকাশ করেন। কেনো তাকে এভাবে কারসাজি করতে সুযোগ দেওয়া হল এবং কেনোই বা তাকে শাস্তি দেওয়া হচ্ছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, এ বিষয়ে বিএসইসির কাছে জানতে চাওয়াই সবচেয়ে ভালো হবে। তারাই হিরুর নামে শাস্তির চিঠি ইস্যু না করার কারন বলতে পারবে।
আরও পড়ুন…..
বিএসইসির শুভেচ্ছাদূতের সঙ্গে শেয়ারবাজারের এক নম্বর গেম্বলার সখ্যতা
এ পর্যন্ত এনআরবিসি ব্যাংক, ফরচুন সুজ, বিডিকম অনলাইন, ওয়ান ব্যাংক, এশিয়া ইন্স্যুরেন্স, গ্রিন ডেল্টা ইন্স্যুরেন্স এবং ঢাকা ইন্স্যুরেন্সের শেয়ার কারসাজির দায়ে হিরুর বাবা, স্ত্রী, বোন ও তার প্রতিষ্ঠিত প্রতিষ্ঠানের নামে আর্থিক শাস্তির চিঠি ইস্যু করা হয়েছে। এরমধ্যে ওয়ান ব্যাংকের শেয়ার কারসাজিতে হিরুর বাবা আবুল কালাম মাতবরের নামে শাস্তির চিঠি ইস্যু করা হয়েছে। ওই শেয়ার কেলেঙ্কারিতে আবুল কালাম মাতবর ও তার সহযোগিদেরকে ৩ কোটি টাকা জরিমানা করা হয়েছে বলে বিএসইসি চিঠিতে উল্লেখ করেছে।
একইভাবে বিডিকম অনলাইনের শেয়ার কারসাজিতে হিরুর ডিআইটি কো-অপারেটিভ লিমিটেড ও সহযোগিদেরকে ৫৫ লাখ টাকা, ফরচুন সুজের ইস্যুতে আবুল কালাম মাতবর ও সহযোগিদেরকে ১ কোটি ৫০ লাখ টাকা, এনআরবিসি ব্যাংকের ইস্যুতে হিরুর বোন কনিকা আফরোজ ও সহযোগিদেরকে ৩ কোটি ৭৫ লাখ টাকা, গ্রীনডেল্টা ইস্যুতে হিরুর স্ত্রী কাজী সাদিয়া হাসান ও সহযোগিদেরকে ৪২ লাখ টাকা, এশিয়া ইন্স্যুরেন্স ইস্যুতে ডিআইটি কো-অপারেটিভ ও সহযোগিদেরকে ৭২ লাখ টাকা এবং ঢাকা ইন্স্যুরেন্স ইস্যুতে কাজী সাদিয়া হাসান ও সহযোগিদেরকে ৯৫ লাখ টাকা জরিমানা করার কথা চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিএসইসির এক কমিশনার কোন মন্তব্য করতে চায়নি।
এ বিষয়ে বিএসইসির নির্বাহি পরিচালক ও মূখপাত্র মোহাম্মদ রেজাউল করিম বিজনেস আওয়ারকে বলেন, তদন্ত রিপোর্টের উপর ভিত্তি করে কমিশন ব্যবস্থা গ্রহন করে থাকে। যার উপর ভিত্তি করে প্রকৃত দোষীকে শাস্তির আওতায় আনা হয়। এরমধ্যে অভিযুক্ত কারো ব্যাখ্যা সন্তোষজনক হলে, তাকে শাস্তির আওতার বাহিরে রাখে।
বিজনেস আওয়ার/২০ অক্টোবর, ২০২২/পিএস
One thought on “কারসাজিকর হিরুকে বাচাঁতে বিএসইসির সর্বোচ্চ চেষ্টা”