বিজনেস আওয়ার প্রতিবেদক : দেশের শেয়ারবাজারে এখনো প্রিমিয়াম নেওয়া ও শুধুমাত্র অভিহিত মূল্যে শেয়ার ইস্যু করা সব কোম্পানিকে সমানভাবে মূল্যায়ন করা হয়। সবারই দৃষ্টি থাকে শেয়ার দর অভিহিত মূল্যের উপরে নাকি নিচে এবং লভ্যাংশ ১০ শতাংশ বা তার বেশি দিয়ে ‘এ’ ক্যাটাগরিতে আছে কিনা। উচ্চ প্রিমিয়াম নেওয়া কোম্পানির দর কাট-অফ প্রাইসের নিচে আসলে যেমন সমস্যা হয় না, একইভাবে শুধুমাত্র অভিহিত মূল্যে তালিকাভুক্ত হওয়া কোম্পানির ন্যায় ১০ শতাংশ লভ্যাংশ দিয়ে ‘এ’ ক্যাটাগরিতে থাকলেও সমস্যা হয় না। যে কারনেই অভিহিত মূল্যে আসা কোম্পানির গড় শেয়ার দর ও লভ্যাংশ যে প্রিমিয়াম নেওয়া কোম্পানির থেকে বেশি, সেটা বেশিরভাগ বিনিয়োগকারী জানেই না।
তেমনই একটি প্রিমিয়াম নেওয়া কোম্পানি আমরা নেটওয়ার্কস। বিশ্ব যখন তথ্য প্রযুক্তিতে (আইটি) প্রতিনিয়ত এগিয়ে যাচ্ছে, সেখানে বাংলাদশের শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত একই খাতের আমরা নেটওয়ার্ক কোম্পানি পিছিয়ে পড়ছে। অথচ শেয়ারবাজারে আসার আগে ভালো ব্যবসা দেখিয়ে উচ্চ প্রিমিয়ামে বিনিয়োগকারীদের কাছ থেকে টাকা নিয়েছে। যা দিয়ে ব্যবসা আরও বড় করা হবে বলে জানিয়েছিল। কিন্তু সেই কোম্পানির মুনাফা তালিকাভুক্তির পরে নিয়মিতভাবে কমছে।
ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
২০১৭ সালে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত হওয়া আমরা নেটওয়ার্কস বুক বিল্ডিং পদ্ধতিতে যোগ্য বিনিয়োগকারীদের কাছ থেকে প্রতিটি শেয়ার ৩৯ টাকা করে ও সাধারন বিনিয়োগকারীদের কাছে ৩৫ টাকা করে ইস্যুর মাধ্যমে ৫৬ কোটি ২৫ লাখ টাকা সংগ্রহ করেছিল। কোম্পানিটির সেসময় আইপিওতে আসার আগে ২০১৫-১৬ অর্থবছরের ৯ মাসে ইপিএস হয়েছিল ২.৬২ টাকা। সেই কোম্পানিটির ইপিএস পুরো ২০২১-২২ অর্থবছরে ২ টাকার নিচে নেমে এসেছে।

কোম্পানিটির ২০১৮-১৯ অর্থবছর থেকে মুনাফা টানা পতনের মধ্যে রয়েছে। ওই অর্থবছরে আগের অর্থবছরের ৪.০১ টাকার ইপিএস কমে ৪ টাকায় নামে। যা ২০১৯-২০ অর্থবছরে আরও কমে ৩.১৯ টাকায় ও ২০২০-২১ অর্থবছরে ২.১৪ টাকায় নেমে আসে। তবে ২০২১-২২ অর্থবছরে আরও পতনের মাধ্যমে ২ টাকার নিচে অর্থাৎ ১.৮৫ টাকায় নেমে এসেছে।

অথচ ব্যবসায় বাড়ানোর কথা বলে শেয়ারবাজার থেকে ২০১৭ সালে ৫৬ কোটি টাকার বেশি সংগ্রহ করেছে। এই টাকার মধ্য থেকে ১৮ কোটি ৫৯ লাখ টাকার ঋণ পরিশোধ ও বাকি টাকা দিয়ে আইটি খাতের বিভিন্ন উন্নয়নে ব্যবহারের কথা বলা হয়েছিল।

এমন উচ্চ প্রিমিয়ামে টাকা উত্তোলন করা আমরা নেটওয়ার্কসের লভ্যাংশ আটকে আছে ১০ শতাংশে। গত ৬ বছরের মধ্যে ৫ বছরই ১০ শতাংশ করে লভ্যাংশ দিয়েছে। যা কাট-অফ প্রাইসের তুলনায় ২.৫৬ শতাংশ। ব্যাংকের এফডিআর করলে এর চেয়ে অনেক বেশি পাওয়া যায়।
আরও পড়ুন……
শেয়ারহোল্ডারদের মুনাফার ভাগ দিতে আইটি কনসালটেন্টসের অনীহা
দুই কোটি টাকার রেনউইক যঞ্জেশ্বরের সাড়ে ৮ কোটি লোকসান
অভিহিত মূল্যের কোম্পানি থেকে রিটার্ন ৪.৬৭%, প্রিমিয়ামের কোম্পানি থেকে ২.৮৯%
আমরা নেটওয়ার্কসের ২০২১-২২ অর্থবছরে শেয়ারপ্রতি ১.৮৫ টাকা করে মোট ১০ কোটি ৯২ লাখ টাকার নিট মুনাফা হয়েছে। এরমধ্য থেকে ৫% হারে শেয়ারপ্রতি ৫০ পয়সা করে ২ কোটি ৯৫ লাখ টাকার নগদ লভ্যাংশ শেয়ারহোল্ডারদের মাঝে বিতরন করা হবে। বাকি ৭ কোটি ৯৭ লাখ টাকা কোম্পানিতে রেখে দেওয়া হবে। এরমধ্যে ৫% বোনাস হিসেবে ২ কোটি ৯৫ লাখ টাকা দিয়ে পরিশোধিত মূলধন বাড়ানো হবে এবং বাকি ৫ কোটি ২ লাখ টাকা রিজার্ভে রাখা হবে।
মুনাফায় এই পতনের কারন হিসেবে আমরা নেটওয়ার্কস কর্তৃপক্ষ ডিএসইকে জানিয়েছেন, আয় বা বিক্রি কিছুটা বাড়লেও অধিকাংশ ব্যয় বেড়েছে। এছাড়া সুদজনিত ব্যয় বেড়েছে। যাতে মুনাফা কমেছে।
আমরা নেটওয়ার্কসকে শেয়ারবাজারে আনার ক্ষেত্রে ইস্যু ম্যানেজারের দায়িত্ব পালন করে লংকাবাংলা ইনভেস্টমেন্টস। আর নিরীক্ষক হিসেবে ছিল কে.এম হাসান অ্যান্ড কোং।
উল্লেখ্য ২০১৭ সালে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত হওয়া আমরা নেটওয়ার্কসের বর্তমানে ৫৯ কোটি ৪ লাখ টাকা পরিশোধিত মূলধন রয়েছে। মঙ্গলবার (১৮ অক্টোবর) লেনদেন শেষে কোম্পানিটির শেয়ার দর দাঁড়িয়েছে ৩৮ টাকায়।
বিজনেস আওয়ার/২৬ অক্টোবর, ২০২২/আরএ