বিজনেস আওয়ার প্রতিবেদক : সম্প্রতি শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত বে লিজিং অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট কর্তৃপক্ষ প্রান্তিক আর্থিক হিসাবগুলোতে বড় মুনাফা দেখায়। কিন্তু পুরো বছরে নিরীক্ষায় কোম্পানিটির লোকসানের তথ্য বেরিয়ে আসে। এই লোকসানের আগে কৃত্রিম মুনাফা দেখিয়ে বে লিজিং কর্তৃপক্ষ শেয়ার দর বাড়িয়ে বিক্রি করেছে। এই অবস্থায় কোম্পানিটির প্রান্তিকগুলোর আর্থিক হিসাবে অস্বাভাবিক উত্থান-পতনের কারন অনুসন্ধানে তদন্ত কমিটি গঠন করেছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)।
বে লিজিংয়ের মতো বুধবার (২৬ অক্টোবর) একই ধরনের আর্থিক হিসাব প্রকাশ করেছে গেম্বলিং আইটেম সোনালি পেপার অ্যান্ড বোর্ড মিলস কর্তৃপক্ষ। এই কোম্পানি কর্তৃপক্ষ ২০২১-২২ অর্থবছরের ৯ মাসে (জুলাই ২১-মার্চ ২২) শেয়ারপ্রতি মুনাফা (ইপিএস) দেখায় ১৪.৭২ টাকা। তবে ২০২১-২২ এর পুরো অর্থবছরের আর্থিক হিসাব নিরীক্ষায় ইপিএস কমে এসেছে ৬.০৩ টাকা। অর্থাৎ শেষ প্রান্তিকে লোকসান হয়েছে ৮.৬৯ টাকা। যেটা আগের প্রান্তিকগুলোতে বেশি দেখিয়ে এখন সমন্বয় বা নিরীক্ষায় প্রকৃত তথ্যও বেরিয়ে আসতে পারে।
একই প্রক্রিয়ায় বে লিজিং কর্তৃপক্ষ ২০২১ সালের ১ম ৯ মাসে (জানুয়ারি-সেপ্টেম্বর ২১) শেয়ারপ্রতি মুনাফা (ইপিএস) দেখায় ২.৭৫ টাকা। তবে ১২ মাসে বা ২০২১ সালের নিরীক্ষা প্রতিবেদনে এই মুনাফাতো দূরের কথা ৯৯ পয়সা করে লোকসানের তথ্য বেরিয়ে আসে।
এমন আর্থিক হিসাবকে অস্বাভাবিক মনে করে গত ২২ সেপ্টেম্বর বিএসইসি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। কমিটিকে ২০ কার্যদিবসের মধ্যে কোম্পানিটির ৯ মাসের অনিরীক্ষিত ও ১২ মাসের নিরীক্ষিত আর্থিক হিসাবের মধ্যে কোন জাগলারি হয়েছে কিনা, ইনসাইডার ট্রেডিং আছে কিনা, ওই অস্বাভাবিক আর্থিক হিসাবের কারনে শেয়ার দরে প্রভাব ও মার্কেট ম্যানুপুলেশন হয়েছে কিনা, তা খতিয়ে দেখে প্রতিবেদন জমা দিতে বলেছে কমিশন।
বে লিজিংয়ের ন্যায় সোনালি পেপার নিয়েও বিএসইসি তদন্ত কমিটি গঠন করবে বলে মনে করছেন সাধারন বিনিয়োগকারীরা। এর মাধ্যমে অধ্যাপক শিবলী কমিশন ব্যক্তিগত সর্ম্পক্যকে দূরে ঠেলে অন্যদের ন্যায় এই কোম্পনির ক্ষেত্রেও সুশাসন বজায় রাখবেন বলে তারা আশাবাদি।
কারন এই জাতীয় কোম্পানিগুলোর উদ্যোক্তা/পরিচালকেরাই শেয়ার কারসাজির জন্য কৃত্রিম মুনাফা দেখায় এবং গেম্বলারদের সঙ্গে সখ্যতা গড়ে তুলে। তারা সম্মিলিতভাবে অতিরঞ্জিত মুনাফার মাধ্যমে শেয়ার দর বৃদ্ধিতে সাধারন বিনিয়োগকারীদেরকে আকৃষ্ট করে। যখন সাধারন বিনিয়োগকারীরা বিনিয়োগে নামে, তখন তারা শেয়ার বিক্রি করে টাকা তুলে নেয়। পরবর্তীতে লোকসানে পড়ে সাধারন বিনিয়োগকারীরা। যেমনটি বে লিজিংয়ের ক্ষেত্রেও ঘটেছে।
শেয়ারবাজারে নিরীক্ষত আর্থিক হিসাবের বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়েই দীর্ঘদিন ধরে প্রশ্ন রয়েছে। সেখানে অনিরীক্ষিত কোয়ার্টারলি (প্রান্তিক) আর্থিক হিসাব বিশ্বাস করা যে কতটা কঠিন, তা সাধারন বিনিয়োগকারীরা ভালোভাবেই টের পান। এই বাজারে কোম্পানিগুলোর অনিরীক্ষিত আর্থিক হিসাব ম্যানেজমেন্টের সুবিধামতো তৈরী করা হয়। যে কারনে অনেক কোম্পানির এক প্রান্তিকের সঙ্গে আরেক প্রান্তিকের ব্যবসার কোন মিল থাকে না। ফলে প্রতারণার ফাদেঁ পড়তে হয় সাধারন বিনিয়োগকারীদের।
আরও পড়ুন……
কারসাজির তদন্ত রিপোর্টে সোনালি পেপার ও চেয়ারম্যান ইউনুস
বাংলাদেশের শেয়ারবাজারে ইনসাইডার ট্রেডিং যে অন্যতম প্রধান সমস্যা, এটা একবাক্যে স্বীকার করেন বাজার সংশ্লিষ্টরা। তাদের মতে, কোম্পানির উদ্যোক্তা/পরিচালকেরা সরাসরি শেয়ার ব্যবসায় জড়িয়ে রয়েছে। যে কারনে অনেক কোম্পানির প্রান্তিক আর্থিক হিসাবগুলো তাদের শেয়ার ব্যবসার সুবিধার্থে প্রস্তুত করা হয়। এক্ষেত্রে কোন প্রান্তিকে মুনাফা বাড়িয়ে বা কমিয়ে দেখানো হয়। যেটা পুরো বছরের হিসাবে কিংবা এক প্রান্তিকের হিসাব আরেক প্রান্তিকের সঙ্গে সমন্বয় করে দেখানো হয়।
সোনালি পেপার কর্তৃপক্ষ নিরীক্ষা প্রতিবেদনে মুনাফা তলানিতে নেমে আসার খবরের সঙ্গে সঙ্গে পূর্বের ন্যায় ২০২২-২৩ অর্থবছরের ১ম প্রান্তিকের অনিরীক্ষিত হিসাবে বড় মুনাফা দেখিয়েছে। কোম্পানিটির ২০২১-২২ অর্থবছরে ইপিএস ৬.০৩ টাকা হলেও ২০২২-২৩ অর্থবছরের ১ম প্রান্তিকে দেখিয়েছে ৭.০২ টাকা।
এর মাধ্যমে সোনালি পেপার কর্তৃপক্ষ কারসাজির মাধ্যমে আকাশচুম্বি শেয়ার দরকে ধরে রাখার চেষ্টা করছেন বলে মনে করছেন সাধারন বিনিয়োগকারীরা । এই কোম্পানিটির গতকাল লেনদেন শেষে শেয়ার দর রয়েছে ৮২২.৮০ টাকায়।
বিজনেস আওয়ার/২৭ অক্টোবর, ২০২২/পিএস