ঢাকা , শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

পাঁচ মাস পার হলেও ঊর্ধ্বগতিতেই করোনা!

  • পোস্ট হয়েছে : ১১:১৪ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১৫ অগাস্ট ২০২০
  • 68

বিজনেস আওয়ার প্রতিবেদক: দেশে করোনা শনাক্তের ১৬০তম দিনে মোট শনাক্ত হওয়া রোগীর সংখ্যা ছাড়িয়েছে দুই লাখ ৭০ হাজার এবং মোট মৃত্যু হয়েছে তিন হাজার ৫৯১ জনের। শুক্রবার (১৪ আগস্ট) বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নতুন রোগী বাড়ার তালিকাতে বাংলাদেশের নাম রয়েছে পাঁচ নম্বরে।

গত ৮ মার্চ তিন জন করোনা আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হওয়ার খবর দেয় রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান (আইইডিসিআর)। আর গত ৭ আগস্ট আড়াই লাখ ছাড়িয়ে যায়। এরমধ্যে গত ২ জুলাই একদিনে সর্বোচ্চ চার হাজার ১৯ জন নতুন রোগী শনাক্ত হয়। প্রথম রোগী শনাক্তের ঠিক ১০ দিন পর প্রথম মৃত্যুর খবর দিয়েছিল প্রতিষ্ঠানটি। আর ৩০ জুলাই সর্বোচ্চ ৬৪ জনের মৃত্যুর খবর দেয় স্বাস্থ্য অধিদফতর।

প্রথম রোগী শনাক্ত হওয়ার পর পরবর্তী ১০০ জন শনাক্ত হয় ৬ এপ্রিল, এক হাজার ১৪ এপ্রিল, ১০ হাজার ৩ মে, ২৫ হাজার ১৮ মে, ৫০ হাজার ১ জুন, ৭৫ হাজার জন শনাক্ত হয় ১১ জুন। করোনা শনাক্তের পর ১০৩তম দিনে গত ১৮ জুন এক লাখ ছাড়ায় শনাক্তের সংখ্যা। ওইদিন পর্যন্ত মোট শনাক্ত ছিল এক লাখ দুই হাজার ২৯২ জন, তার ঠিক এক মাস পর গত ১৮ জুলাই শনাক্তের সংখ্যা দুই লাখ ছাড়ায়।

স্বাস্থ্য অধিদফতর জানায়, সেদিন পর্যন্ত দেশে করোনা শনাক্ত হয়েছেন ২ লাখ ২ হাজার ৬৬ জন। অর্থাৎ তার আগের ৩১ দিনে শনাক্ত হয় ৯৯ হাজার ৭৭৪ জন।

গত ২৫ জুলাই শনাক্তের ১৩৮তম দিনে স্বাস্থ্য অধিদফতর জানায়, সেদিন পর্যন্ত দেশে করোনা আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়েছেন দুই লাখ ১৬ হাজার ১১০ জন। এর ঠিক ১৫ দিনের মাথায় রোগী শনাক্ত আড়াই লাখ ছাড়িয়ে যায় ৭ আগস্ট। ১৪ আগস্ট ঠিক এক সপ্তাহ পর এসে মোট রোগীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে দুই লাখ ৭১ হাজার ৮৮১ জন। অর্থাৎ ৮ দিনে রোগী শনাক্ত হয়েছেন ২০ হাজারের বেশি।

গতকাল ১৪ আগস্ট ৩৪ জন, ১৩ আগস্ট ৪৪ জন, ১২ আগস্ট ৪২ জন, ১১ আগস্ট ৩৩ জন, ১০ আগস্ট ৩৯ জন, ৯ আগস্ট ৩৪ জন, ৮ আগস্ট ৩২ জন এবং ৭ আগস্ট ২৭ জনের মৃত্যুর খবর দেয় স্বাস্থ্য অধিদফতর।

সাত আগস্ট ২৪ ঘণ্টায় শনাক্ত হন দুই হাজার ৮৫১ জন, মোট শনাক্ত হয়েছিলেন দুই লাখ ৫২ হাজার ৫০২ জন বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদফতর। এর মধ্য দিয়ে সেদিন শনাক্তের ১৫৩তম দিনে আন্তর্জাতিক জরিপ পর্যালোচনাকারী সংস্থা ওয়ার্ল্ডোমিটারের পরিসংখ্যান অনুসারে, করোনাভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যায় ইতালিকে পেছনে ফেলেছে বাংলাদেশ। ইতালিকে পেছনে ফেলে বর্তমানে ১৫ নম্বরে অবস্থান করছে বাংলাদেশ।

প্রথম রোগী শনাক্তের ৩৯তম দিনে গত ১৬ এপ্রিল পুরো দেশকে করোনাভাইরাসের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে ঘোষণা করে স্বাস্থ্য অধিদফতর। সেদিনের ঘোষণায় স্বাস্থ্য অধিদফতর জানায়, বাংলাদেশের বিভিন্ন এলাকায় করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯)-এর সংক্রমণ ঘটেছে।

জনস্বাস্থ্য বিশ্লেষক এবং বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দেশে রোগী শনাক্তের ষষ্ঠ মাসে এসেও করোনার ঊর্ধ্বমুখী হার এখনও চলমান। আর এসবের জন্য সঠিকভাবে স্বাস্থ্যবিধি না মানা, কিছু জেলা লকডাউনসহ ঢাকার ভেতরে ক্লাস্টার ভিত্তিতে লকডাউন, কোরবানির ঈদে পশুর হাট, রাজধানী ছেড়ে গ্রামে যাতায়াতসহ করোনা নিয়ন্ত্রণে সরকারের কোনও কার্যক্রম না থাকাকেই দায়ী করেছেন তারা।

এ প্রসঙ্গে করোনা বিষয়ক জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটির সদস্য ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ডা. নজরুল ইসলাম বলেন,আর এক সপ্তাহ পরে করোনার সংক্রমণের হার আরও ঊর্ধ্বগতি আমরা দেখতে পাবো। সেটা হবে ঈদের ছুটির সময়ে যাতায়াত, পশুর হাটে জনসমাগমের ফলে।

সংক্রমণের যে ঊর্ধ্বগতি চলছিল সেটা এখনও চলমান রয়েছে উল্লেখ করে স্বাস্থ্য অধিদফতরের সাবেক পরিচালক অধ্যাপক ডা. বেনজির আহমেদ বলেন, ঈদের কারণে চলাচল বেড়েছিল, তাতে বিভিন্ন কমিউনিটিতে যদি সংক্রমণ হয়, সেটা কতটুকু ছড়ায় তার ওপর ভিত্তি করে বলা যাবে পরবর্তীতে কী অবস্থা ঘটতে যাচ্ছে। রোগী শনাক্ত এখনও সেভাবে অতটা বাড়েনি, কিন্তু প্রচুর বাড়তে পারে- এটা আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে বোঝা যাবে।

বিজনেস আওয়ার/১৫ আগস্ট, ২০২০/এ

ফেসবুকের মাধ্যমে আপনার মতামত জানান:
ট্যাগ :

আপনার মতামত লিখুন

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার মেইলে তথ্য জমা করুন

পাঁচ মাস পার হলেও ঊর্ধ্বগতিতেই করোনা!

পোস্ট হয়েছে : ১১:১৪ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১৫ অগাস্ট ২০২০

বিজনেস আওয়ার প্রতিবেদক: দেশে করোনা শনাক্তের ১৬০তম দিনে মোট শনাক্ত হওয়া রোগীর সংখ্যা ছাড়িয়েছে দুই লাখ ৭০ হাজার এবং মোট মৃত্যু হয়েছে তিন হাজার ৫৯১ জনের। শুক্রবার (১৪ আগস্ট) বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নতুন রোগী বাড়ার তালিকাতে বাংলাদেশের নাম রয়েছে পাঁচ নম্বরে।

গত ৮ মার্চ তিন জন করোনা আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হওয়ার খবর দেয় রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান (আইইডিসিআর)। আর গত ৭ আগস্ট আড়াই লাখ ছাড়িয়ে যায়। এরমধ্যে গত ২ জুলাই একদিনে সর্বোচ্চ চার হাজার ১৯ জন নতুন রোগী শনাক্ত হয়। প্রথম রোগী শনাক্তের ঠিক ১০ দিন পর প্রথম মৃত্যুর খবর দিয়েছিল প্রতিষ্ঠানটি। আর ৩০ জুলাই সর্বোচ্চ ৬৪ জনের মৃত্যুর খবর দেয় স্বাস্থ্য অধিদফতর।

প্রথম রোগী শনাক্ত হওয়ার পর পরবর্তী ১০০ জন শনাক্ত হয় ৬ এপ্রিল, এক হাজার ১৪ এপ্রিল, ১০ হাজার ৩ মে, ২৫ হাজার ১৮ মে, ৫০ হাজার ১ জুন, ৭৫ হাজার জন শনাক্ত হয় ১১ জুন। করোনা শনাক্তের পর ১০৩তম দিনে গত ১৮ জুন এক লাখ ছাড়ায় শনাক্তের সংখ্যা। ওইদিন পর্যন্ত মোট শনাক্ত ছিল এক লাখ দুই হাজার ২৯২ জন, তার ঠিক এক মাস পর গত ১৮ জুলাই শনাক্তের সংখ্যা দুই লাখ ছাড়ায়।

স্বাস্থ্য অধিদফতর জানায়, সেদিন পর্যন্ত দেশে করোনা শনাক্ত হয়েছেন ২ লাখ ২ হাজার ৬৬ জন। অর্থাৎ তার আগের ৩১ দিনে শনাক্ত হয় ৯৯ হাজার ৭৭৪ জন।

গত ২৫ জুলাই শনাক্তের ১৩৮তম দিনে স্বাস্থ্য অধিদফতর জানায়, সেদিন পর্যন্ত দেশে করোনা আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়েছেন দুই লাখ ১৬ হাজার ১১০ জন। এর ঠিক ১৫ দিনের মাথায় রোগী শনাক্ত আড়াই লাখ ছাড়িয়ে যায় ৭ আগস্ট। ১৪ আগস্ট ঠিক এক সপ্তাহ পর এসে মোট রোগীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে দুই লাখ ৭১ হাজার ৮৮১ জন। অর্থাৎ ৮ দিনে রোগী শনাক্ত হয়েছেন ২০ হাজারের বেশি।

গতকাল ১৪ আগস্ট ৩৪ জন, ১৩ আগস্ট ৪৪ জন, ১২ আগস্ট ৪২ জন, ১১ আগস্ট ৩৩ জন, ১০ আগস্ট ৩৯ জন, ৯ আগস্ট ৩৪ জন, ৮ আগস্ট ৩২ জন এবং ৭ আগস্ট ২৭ জনের মৃত্যুর খবর দেয় স্বাস্থ্য অধিদফতর।

সাত আগস্ট ২৪ ঘণ্টায় শনাক্ত হন দুই হাজার ৮৫১ জন, মোট শনাক্ত হয়েছিলেন দুই লাখ ৫২ হাজার ৫০২ জন বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদফতর। এর মধ্য দিয়ে সেদিন শনাক্তের ১৫৩তম দিনে আন্তর্জাতিক জরিপ পর্যালোচনাকারী সংস্থা ওয়ার্ল্ডোমিটারের পরিসংখ্যান অনুসারে, করোনাভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যায় ইতালিকে পেছনে ফেলেছে বাংলাদেশ। ইতালিকে পেছনে ফেলে বর্তমানে ১৫ নম্বরে অবস্থান করছে বাংলাদেশ।

প্রথম রোগী শনাক্তের ৩৯তম দিনে গত ১৬ এপ্রিল পুরো দেশকে করোনাভাইরাসের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে ঘোষণা করে স্বাস্থ্য অধিদফতর। সেদিনের ঘোষণায় স্বাস্থ্য অধিদফতর জানায়, বাংলাদেশের বিভিন্ন এলাকায় করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯)-এর সংক্রমণ ঘটেছে।

জনস্বাস্থ্য বিশ্লেষক এবং বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দেশে রোগী শনাক্তের ষষ্ঠ মাসে এসেও করোনার ঊর্ধ্বমুখী হার এখনও চলমান। আর এসবের জন্য সঠিকভাবে স্বাস্থ্যবিধি না মানা, কিছু জেলা লকডাউনসহ ঢাকার ভেতরে ক্লাস্টার ভিত্তিতে লকডাউন, কোরবানির ঈদে পশুর হাট, রাজধানী ছেড়ে গ্রামে যাতায়াতসহ করোনা নিয়ন্ত্রণে সরকারের কোনও কার্যক্রম না থাকাকেই দায়ী করেছেন তারা।

এ প্রসঙ্গে করোনা বিষয়ক জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটির সদস্য ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ডা. নজরুল ইসলাম বলেন,আর এক সপ্তাহ পরে করোনার সংক্রমণের হার আরও ঊর্ধ্বগতি আমরা দেখতে পাবো। সেটা হবে ঈদের ছুটির সময়ে যাতায়াত, পশুর হাটে জনসমাগমের ফলে।

সংক্রমণের যে ঊর্ধ্বগতি চলছিল সেটা এখনও চলমান রয়েছে উল্লেখ করে স্বাস্থ্য অধিদফতরের সাবেক পরিচালক অধ্যাপক ডা. বেনজির আহমেদ বলেন, ঈদের কারণে চলাচল বেড়েছিল, তাতে বিভিন্ন কমিউনিটিতে যদি সংক্রমণ হয়, সেটা কতটুকু ছড়ায় তার ওপর ভিত্তি করে বলা যাবে পরবর্তীতে কী অবস্থা ঘটতে যাচ্ছে। রোগী শনাক্ত এখনও সেভাবে অতটা বাড়েনি, কিন্তু প্রচুর বাড়তে পারে- এটা আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে বোঝা যাবে।

বিজনেস আওয়ার/১৫ আগস্ট, ২০২০/এ

ফেসবুকের মাধ্যমে আপনার মতামত জানান: